উত্তাল ঘোষের সঙ্গে অনলাইন আলাপ

Post date: Apr 26, 2012 2:06:12 PM

পশ্চিমবঙ্গে অল্টারনেটিভ মিডিয়া নিয়ে কাজ করেন। তাদের ওয়েবসাইট www.banglabazar.co.in ।

দুপুর মিত্র: আপনাদের ওখানে ইন্টারনেট সংস্কৃতির ধরণ কেমন বা আপনি কিভাবে দেখছেন?

উত্তাল ঘোষ: পশ্চিমবঙ্গে ইন্টারনেট খুব জনপ্রিয় হয়েছে, তা নয়। তবে আগ্রহ বেড়েছে। ওয়েব দুনিয়াকে কাজে লাগিয়ে নানা প্রচারও চলছে। কিন্তু অল্টারনেটিভ মিডিয়া করার ভাবনা এখনও জোরাল নয়।

দু: অল্টারনেটিভ মিডিয়া ভাবনা সেখানে জোরাল না হবার পেছনের কারণ কোনগুলো মনে করেন।

উ: এখানে রাজনৈতিক দলকেন্দ্রিক আত্মপরিচয়টা খুব প্রবল। তার প্রভাব মিডিয়াতেও জোরাল ভাবে আছে।

দু: আমাদের এখানে একেবারেই বুর্জোয়া সরকার আর আপনাদের এখানে বাম সরকার ছিল, এখন নাই। এর ফলে সেখানে অল্টারনেটিভ মিডিয়াতে কোনও প্রভাব ফেলেছে কিনা।

উ: বাম সরকারই তো দলকেন্দ্রিক সমাজটা গড়ার কারিগর। বর্তমান সরকারও সেই পথে চলছে।

দু: অল্টারনেটিভ মিডিয়া তাহলে ওখানে কি করতে পারে?

উ: সত্যি সত্যি মানুষের কথা তুলে ধরতে পারে। দলকেন্দ্রিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে একটা মানুষের কথা বলার জায়গা করতে পারে।

দু: এই অনুশীলন কিভাবে সম্ভব বলে আপনি মনে করেন মানে অল্টারনেটিভ মিডিয়া থাকলেই কি সেটা সম্ভব না এখানে আরও কিছু করার আছে?

উ: আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা তো গড়ার কারণ। তবে সেজন্য মনটা তৈরি করতে হয়। সে কাজটা করার যায় মন খোলে কথা বলার জায়গা বানান গেলে।

দু: তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন বাম সরকারই হোক আর বুর্জোয়া সরকারই হোক। কথা বলার জায়গা নেই সেটা একমাত্র অল্টারনেটিভ মিডিয়াই তৈরি করতে পারে। সত্যি সত্যি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় খোলামেলা কথা বলার জায়গা থেকে। 

উ: পশ্চিমবঙ্গ বহু বছর ধরে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত। জীবনটাই বড় বেশি রাজনৈতিক দল কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। মানুষের আত্মপরিচয় দল কেন্দ্রিক।

দু: এর ফলে সাহিত্য- সংস্কৃতিতে কি ধরণের প্রভার পড়েছে।

উ: সমাজ বন্ধ্যা হয়ে গেলে সাহিত্য সংস্কৃতিও বন্ধ্যা হয়ে যায়।

দু: সাম্প্রতিক মমতা সরকার ও কার্টুন বিষয়ে কিছু বলুন। শুনেছি অনেকেই এর বিরোধিতা করেছে এখানে আপনাদের ভূমিকা কি ছিল?

উ: হ্যাঁ একটা ভিন্নতর সুর শোনা যাচ্ছে। সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের আন্দোলনের সময় থেকেই তার শুরু। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা দলের হাতে বন্দী হয়ে যায়। কার্টুন-কাণ্ড বা অন্য সব ক্ষেত্রেও মূল বিরোধিতা একেবারেই দলকেন্দ্রিক। কিছু শিল্পী-সাহিত্যিক ভিন্ন স্বর শোনাচ্ছেন। সেটাই আশা। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের মত আন্দোলন হল, কিন্তু সাহিত্য-সংস্কৃতিতে তার চাপ কতটা পড়ল? এখানকার সংস্কৃতিটা একদমই বিরোধিতামূলক। আগে সিপিএমের বিরোধিতা ছিল। এখন টিএমসিএর বিরোধিতা। কিন্তু তাতে মুক্ত চিন্তার, মুক্ত আলোচনার পরিসর তৈরি হচ্ছে না।

দু: আপনার ওয়েবম্যাগ নিয়ে কি ভাবছেন?

উ: সারা দুনিয়ায় ২৬ কোটি বাঙ্গালি। তাদের নিজেকে প্রকাশ করার নিশ্চয়ই মঞ্চ হিসেবে ভাবছি বাংলাবাজার ওয়েব মিডিয়াকে। ওয়েব মিডিয়া, এর ভবিষ্যত আর পশ্চিম বাংলার বিশেষ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে মতামত ও সৃষ্টি প্রকাশের খোলা মঞ্চ হিসেবে  আমরা গড়ে তুলতে চাই www.banglabazar.co.in কে।

অপার বাংলার মানুষ, যারা বাংলা ভাষা নিয়ে অনেক গভীর ভাবে ভাবেন, তাদের সার্বিক সহযোগিতা চাই। বাংলাদেশ ও ধর্মীয় মৌলবাদের সমস্যা, আর পশ্চিম বঙ্গে রাজনৈতিক দলীয় মৌলবাদের বিপদ। বাঙ্গালি জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে গেলে এই মৌলবাদটা থেকে বেরুতে হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাবাজার ওয়েবমিডিয়া সামান্য ভূমিকা রাখতে পারলেও খুশি হবে।

দু: আপনি এই ম্যাগের সম্পাদক হিসেবে বাংলাদেশের ওয়েব দুনিয়াকে অল্টারনেটিভ মিডিয়ার জায়গা থেকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

উ: বাংলাদেশ নিয়ে, বাঙ্গালি জাতিসত্তা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ অনেক বেশি সচেতন। তাই মৌলবাদী বিপদ থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে বিকল্প সংবাদ মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আশা করি।

দু: ধন্যবাদ আপনাকে সময় দেবার জন্য।

উ: আপনাদের সঙ্গে চাই। আমরা সবাই মিলে আসুন একটা নতুন ধারা তৈরির চেষ্টা করি।

দু: অবশ্যই দাদা। আমরা আপনার পাশে থাকতে চাই।