আমি কোনও বালই ছিঁড়ি নাই যে কবিতা লইয়া ইন্টারভিউ দিমু: ইফতেখার হেলালের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jun 18, 2012 8:52:40 AM

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

ইফতেখার হেলাল: আমি কেন কবিতা লিখি সেটা বড় বিষয় না, আমি কেন কবিতা লিখবো না বরং সেটা একটা বিষয় হইতে পারে..... ইচ্ছে করলে এইখানে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন দেওয়া যেতে পারে, যদিও বিষয়টা খুবই আপেক্ষিক।

দু: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

ই: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কোন প্রকারের যদি প্রস্তুতিই যদি নিতে হয়, তাহলে আর কবিতা লেখা কেন? সেতো অন্য যে কোন বিষয়েই অগ্রহী হতে পারে। প্রস্তুতি নিয়ে কবিতা হয় বলে আমি বিশ্বাস করি না। এ ক্ষেত্রে অনেক ধরনের দ্বিমত থাকতে পারে, এবং থাকাটাও স্বাভাবিক। প্রস্তুতি হতে পারে কবিতা স্ম্পর্কিত, সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু প্রস্তুতি নিয়ে কবিতা হয় বা ভালো কবিতা লিখা সম্ভব বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না। তবে প্রস্তুতি নিজেকে অনেক সচেতন করে, ঋদ্ধ করে বলে বিশ্বস করি। হতে পারে প্রস্তুতি নিয়ে কবিতা বোদ্ধা হওয়া সম্ভব। কিন্তু এমনতো নয় যে এই ঋদ্ধতা নিজের লেখার উপর প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করে। হ্যাঁ, এটা সত্য কবির জানার প্ররিধির কোন শেষ নেই। তার সাথে প্রতিষ্ঠানিত কোন প্রস্তুতির সাথে আমি কখনোই একমত হতে পারবো না। উদাহরণ স্বরূপ নজরুলের কথা বলতে পারি.....

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন? সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

ই: সমসাময়িক ক্ষেত্রে অনেকের কবিতাই ভাল লাগে আবার অনেকের কবিতাই ভাল লাগে না। ভাল লাগার সংখ্যাটা খুবই কম। তবে সবার কবিতা ভাল লাগতে হবে ব্যাপারটা তেমনও নয়। তাদের নাম নাইবা নিলাম। তবে ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি যারা প্রাতিষ্ঠানিক চিন্তা চেতনার বাইরে কিছু একটা করার চেষ্টা করছে, তারাই একটা জায়গায় এসে দাঁড়াবে বলে মনে করি।

দু: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

ই: দুপুর মিত্র দশক দিয়ে কবিতা বিবেচ্য হয় কি? নব্বই যে একটা সময় পেরিয়ে এসেছে সে দিক দিয়ে বিচার করলে শূন্যের কবিতা নিয়ে কথা বলার সময় হয়েছে বলে আমি মনে করি না। তাছাড়া, নব্বইয়ের সামনে ৮০র মতো একটা দশক ছিল, যাদেরকে চ্যলেঞ্জ করে তারা লিখার স্পৃহা খুঁজে পেতো। সে ক্ষেত্রে শূন্যের সামনে তেমন কিছু ছিল বলে মনে হয় না। কারণ নব্বইয়ের কবিরা সামগ্রিকভাবে কিছু করেছে বলে আমার মনে হয় না, হাতে গুনা কয়েকজন ছাড়া।

দু: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

ই: পশ্চিম বঙ্গের সাথে পূর্ববঙ্গের কবিতার ফারাক বলে যা মনে হয় তা হলো সামাজিক, রাজনৈতিক এবং দৃষ্টি ভঙ্গির। এই ব্যাপারটা অনেক বড় একটা দিক বলে আমার মনে হয়। এবং কবিতা লিখার ক্ষেত্রে তাদের অনেক উদার মনে হয় কখনো কখনো। যদিও এই বংলায় যে তার একটা খুব বেশি ব্যাতিক্রম তাও বলা যাবে না। তবে আমাদেরও মনে রাখতে হবে বিষ্ণু বিশ্বাসের কথা, সোয়েব সাদাবের কথা, নব্বইয়ের শামীম কবিরের কথা। সমসাময়িক সময়ে এই তিনজনের কবিতা অনেক গুরুত্ব বহন করে। তাছাড়া আমাদের এইখানকার আরেক বৈচিত্র্যময় সমস্যা হলো সাহিত্য পলেটিক্স। এটা খুব খারাপ, খুবই খারাপ। এটা যেমন প্রতিষ্ঠান বিরুধীদের মধ্যে আছে তার বাইরে আরও বেশি সক্রিয়। এটা কখনোই কবিতা বা কোন প্রকার সৃজসশীলতার জন্য সুফল বয়ে আনবে না, কুফল ছাড়া।

দু: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

ই: ব্লগ সাহিত্য তেমনভাবে কিছু দিচ্ছে বলেতো মনে হচ্ছে না, আপাতত। জানি না সামনের দিনগুলোতে এর প্রভাব কতটুকু বিস্তার হবে।

দু: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

ই: লিটলম্যাগ আর ব্লগকে কি করে এক করে দেখি বলুন, দুপুর মিত্র। ব্লগ ব্যাক্তি সত্ত্বার বিকাশ ঘটায় আর লিলটম্যাগাজিন সামগ্রিত সাহিত্যের মুখপত্র হিসেবে জবাবদিহিতা করে। দু’টো কি কখনো এক হতে পারে? আপনিই চিন্তা করুণ...

দু: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

ই: দৈনিকতো একটা প্রতিষ্ঠানিক সাহিত্যের চাটুকারিতা ছাড়া আর কিছুই না। না পারে তারা নিজেরা কোন সৃজনশীল লেখক তৈরী করতে না পারে কোন সৃজনশীল কোন লেখকের মূল্যায়ন করতে। যা করে তা শুধু তৈল মরদন। তাদের নিজস্ব কোন দর্শন নেই, এক বানিজ্য ছাড়া...

এইটাকে ইন্টারভিউ না বলে কবিতা সর্ম্পকিত আলাপ আলোচনা বলাই শ্রেয় মনে হয়। কারণ আমি কোন বালই ছিঁড়ি নাই যে কবিতা লইয়া ইন্টারভিউ দিমু...ভালো থাকবেন।