টোকন ঠাকুর, ব্রাত্য রাইসু, আশরাফ শিশির, আলফ্রেড খোকনের কবিতা আমার ভাল লাগে: সিপাহী রেজার সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: May 28, 2012 6:41:52 AM

সিপাহী রেজা: কবি

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

সিপাহী রেজা: আমার নিজস্ব চিন্তা-চেতনা, অনুভূতিগুলোকে শব্দের নিজস্ব একটা কাব্যিকভাষায় রূপ দিতে পারি, বিধায় কবিতা লিখি।

দু: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

সি: কবিতা লেখার জন্য অন্য কারো প্রস্তুতির দরকার হয় কিনা আমার জানা নাই। তবে আমার ক্ষেত্রে কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন পরে না; আমি মনে করি, কবিতা জোর করে অথবা আয়োজন করে লেখার বিষয় না। কবিতা হচ্ছে মস্তিষ্কের সাথে বাস্তব অথবা কাল্পনিক ঘটনার একটা যোগসূত্র, আর সেটা তৈরির জন্য আমি মনে করিনা আদৌ কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে!

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

সি: ইদানীং যাদের লেখা পড়ে ভালো লাগছে তারা হচ্ছেন টোকন ঠাকুর, ব্রাত্য রাইসু, আশরাফ শিশির, আলফ্রেড খোকন। ভালোলাগার কারণটা হতে পারে তাদের লেখার ধাঁচ! তাদের লেখার বক্তব্যগুলোর সুস্পষ্টতা এবং সেই সাথে ভিন্ন ধারায় প্রকাশের ভঙ্গিমা! কারো লেখায় একটা গদ্যের মত চিত্রকল্প আছে, কারো লেখায় ভাষাগত পরিবর্তন থাকে, এদের মধ্যে আবার আশরাফ শিশিরের সুররিয়ালিজম ধাঁচটাও ভালো লাগে।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

সি: যাদের কবিতা ভালো লাগে না তাদের নাম এমনকি ভালো না লাগা লেখাটা মুখস্থ করে রাখার প্রয়োজন মনে করি না। আর ভালো না লাগার কারণ মূলত সময়, ঘটনা ও মস্তিষ্ক সাপেক্ষ!

দু: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

সি: আমি কবিতায় সময় ভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ জিনিসটাই পছন্দ করি না! কবিতা থাকবে চিরতরুন (লেখার যোগ্যতা অনুযায়ী); কবিতাকে বিভিন্ন সময়ের ভাঁজে ফেলে বয়স নির্ণয়ের বিষয়টায় আমার একটু আপত্তি আছে! মূলকথা হচ্ছে এই দশকভিত্তিক ভাবনাটাই আমার পছন্দ হয় না! তবে যেই সময়ের মধ্যদিয়ে আমি চলে এলাম বর্তমানে; সেখানে সাহিত্য নিয়ে ভাবনা, সাহিত্যের চর্চা মোটেও হতাশাব্যাঞ্জক ছিল না! যেহেতু আমিও এই সময়েরই একজন, তাই বলবো সাহিত্য নিয়ে ভাবনা, সাহিত্যের চর্চা অনুযায়ী মূল্যায়নের দিক থেকে আমরা একটু পিছিয়ে আছি। আপনাদের সেই দশকভিত্তিক ধারায়, বিগত দশকের সৃজনশীলেরা নিজেদের নিয়ে খুব ব্যস্ত... আমাদের মূল্যায়নের সময় কই তাদের!

দু: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

সি: ফারাক তো আছেই, আমাদের বাংলাদেশের কবিতায় কবিরা বাস্তববোধ নিয়ে লিখতে বেশি পছন্দ করে; শব্দপ্রয়োগ, রূপকল্প, উপমা, আর প্রকাশের ভঙ্গিমায় চটুলতা থাকে, ঝাঁজ থাকে, যুক্তিতর্ক দিয়ে বাস্তব পুনরুত্থানের একটা ব্যাপার থাকে; আর ভাবনার গভীরতা থাকে অনেক বেশি পরিপক্ব। অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গের কবিতায় থাকে শুধু শব্দ বুননের কৌশল, কিছুটা কল্পনার আশ্রয়ে আশ্রয়ে।

দু: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

সি: ব্লগে মানুষের শতকরা বিচরণের হার যদিও খুবই কম তবুও ভবিষ্যতে ব্লগ সাহিত্যের আঙ্গিনায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে, সবাই মনে করছেন। তবে ব্লগকে আমি ঠিক সাহিত্যের অংশ হিসেবে ধরে নিতে নারাজ।

দু: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

সি: আমার মনেহয় লিটলম্যাগ আর ব্লগের মধ্যে গুরুত্ব নিয়ে লড়াইয়ে না যাওয়াই যৌক্তিক, কেননা লিটলম্যাগ শুরু হয়েছিল কিছু তরুণ লেখকদের ক্ষুদ্র আকারের বৃহৎ প্রচেষ্টা নিয়ে, যারা দেশীয় মিডিয়ার বড় ও বিশাল অঙ্গনে হুট করে প্রবেশ করতে পারতো না। সত্যিকার অর্থে লিটলম্যাগ হচ্ছে একটা আন্দোলনের নাম! যার হাত ধরে পরবর্তীতে বেরিয়ে আসছে অনেক তরুণ লেখক। লিটলম্যাগ আন্দোলন কেবল শিল্প সাহিত্যকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেনি। সুররিয়ালিজম, এক্সপ্রেশেনিজম প্রভৃতি শিল্প আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যেমন লিটলম্যাগ আন্দোলন গড়ে উঠেছে তেমনি মার্ক্সবাদকে কেন্দ্র করেও লিটলম্যাগ আন্দোলন উঠে এসেছে। অন্যদিকে ব্লগ হচ্ছে অনেকটা অনলাইন জার্নাল৷ এখানে যার ইচ্ছা সে লেখা দিতে পারে লিটলম্যাগের মত ভালো এমনকি ভিন্নতর ধাঁচের লেখা নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের কোন ভূমিকাই নাই। তাছাড়া এখনো এর গ্রহণযোগ্যতা অতো বেশি হয়ে উঠেনি এদেশে। আর সত্যি বলতে কাগজে প্রকাশিত লেখাকে আমি বেশি গুরুত্ব দেই।

দু: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

সি: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ক পর্যবেক্ষণ নিয়ে আমার তেমন কিছু বলার নেই; শুধু বলবো দৈনিকে যা প্রকাশ পাচ্ছে তা হচ্ছে কাগজের পিছনের লোক আর লেখকের শুভাকাঙ্ক্ষী সুলভ আচরণ!

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।