বাংলাদেশের সমাজে বৃদ্ধ হয়ে যাবার আগে কোন নারীর স্বাধীন লেখক স্বত্ত্বা তৈরি হবার সুযোগ নেই: সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমামের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Dec 18, 2013 4:29:56 AM

দুপুর মিত্র: আপনি কবে থেকে লেখালেখি শুরু করেছেন?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: নিয়মিত অর্থে বলতে গেলে বেশিদিন হয়নি । ২০১০ এর মে-জুন থেকে । এর আগেত ক্লাশ ওয়ান থেকে ডায়রি লিখি সেসব অবশ্য লেখা বলা যায়না ।

দুপুর মিত্র: আপনার সবচেয়ে সফল কাজ কোনটা?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: লেখায় ? সফলতা নেই কিছুই তবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও গণমাধ্যম নিয়ে আমি ৫ বছর কাজ করে একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছি। আশা করছি বই হিসেবে প্রকাশ পেলে কিছু একটা ভালো কাজ হবে। রেফারেন্স হিসেবে কাজে আসবে অনেকের । ওখানে গত শতকের উল্লেখযোগ্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও তখনকার গণমাধ্যমের ভূমিকার বেশ কিছু তথ্য রয়েছে ।

দুপুর মিত্র: উপন্যাস লেখায় আপনি সুনির্দিষ্টভাবে কোন সমস্যায় বেশি পড়েন?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: উপন্যাস এখনো লিখিনি।

দুপুর মিত্র: লেখার সময় আপনি কি শিডিউল করেন?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: যেহেতু চাকরী করতে হয়, গবেষণার কাজ করি তাই গল্প লেখার জন্য সময় বের করতে হয় তবে সেটা প্রতিদিন নয় ।

দুপুর মিত্র: আপনি কি কম্পিউটারে লিখেন?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: কম্পিউটারে লিখি তবে হাতের কাছে না পেলে কাগজে রাফ করে শব্দ লিখে রাখি যা পরে ভাবতে সাহায্য করে ।

দুপুর মিত্র: গল্প আর উপন্যাসের ভেতর আপনার পছন্দ কোনটাতে বেশি?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: আগেই বলেছি আমি উপন্যাস লিখিনি। পড়ার ক্ষেত্রে নির্ভর করে কোনটি সুখপাঠ্য তার উপর ।

দুপুর মিত্র: লেখার আগে কি আপনি আউটলাইন করেন? আপনার গদ্যশৈলী কি আলাদা? কিভাবে এটা আলাদা?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: কাগজে কলমে আউটলাইন ঠিক করা হয় না তবে ভাবনায় অবশ্যই একটা ফর্ম করে নেয়া হয়, না হলেত আপনি লিখতেই পারবেননা । নাহ আমি মনে করিনা আমার গদ্যশৈলী আলাদা বলতে যা বোঝায় তেমন বিশেষ কিছু কিন্তু কি জানেন প্রতিটি মানুষেরই আলাদা একটা ঘ্রাণ থাকে। সে লিখুক বা নাই লিখুক তার কষ্ট পাবার অনুভূতি তার হেসে উঠা, অভিমান তার গায়ের ঘ্রাণ, গ্লাস টা পর্যন্ত ধরে এক একজন এক এক রকম করে সেখানে লিখাও নিশ্চয়ই তাই হবে। আমার শব্দে, আমার কথায় আমি থাকবো যেটা শুধু আমারই বৈশিষ্ট্য সেটা খুব সিগনিফিকেন্ট হতে পারে আবার নাও হতে পারে ।

দুপুর মিত্র: নিজের কোন কাজটির জন্য খুব তৃপ্ত বোধ করেন?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: এক বসায় যে গল্পটা লিখে ফেলি সেটা যেমনি হোক লেখার পর মনে হয় পুরোটাই ভেতর থেকে আসা মানে আমি গল্পের প্রতিটি মুহূর্ত অনুভব করেছি । ‘পা’ নামে একটা গল্প আছে আমার, সেখানে মৃত সন্তানের সাথে বাবার একটা পরাবাস্তব সম্পর্ক তৈরি হয়, ‘একা ও প্রতিবেশি’ গল্পে মানুষের একাকীত্ব থেকে মিথ্যে কল্পনার জগত তৈরি আর ‘বদল’ হল সাম্প্রদায়িকতার একটা ছোট্ট ঘটনা এ তিনটি আমার নিজের লেখা পছন্দের গল্প।

দুপুর মিত্র: আপনি কি বিশেষ কোনও পাঠককে সামনে রেখে লিখেন না বিশেষ অডিয়েন্সকে?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: পাঠকের কথা ভেবে লিখিনা তবে আবেগের প্রকাশের সময় এখনো একটা বাধা আছে ভেতরে। ধরুন কোন একটা রাজনৈতিক বিসয় নিয়ে লিখছি তখন মাথার ভেতর কাজ করে পাঠক কি আমার এই লেখা থেকে আমাকে কোন একটি নির্দিষ্ট দলের বলে ভাববে ? আবার প্রেম নিয়ে নিয়ে লিখতে গেলে মনে হয়, এই গল্প আমার বাড়ির মানুষেরা পড়বে তারা কি ঠিক ঠাক নিতে পারবে ? আসলে পুরো স্বাধীন লেখক সত্ত্বা এখনো তৈরি হয়নি । আমারত মনে হয় বাংলাদেশের সমাজে বৃদ্ধ হয়ে যাবার আগে কোন নারীর স্বাধীন লেখক স্বত্বা তৈরি হবার সুযোগও নেই।

দুপুর মিত্র: সাহিত্যের কি সামাজিক বাধ্যবাধকতা আছে? এ নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: আরে কি বলেন, বাধ্যবাধকতা নেই ? তাহলে কি শুধু নিজের কথা বলার জন্য সাহিত্য ? তবে তার আগে আসে দায়িত্ব বোধ । বাধ্যবাধকতা বলতে কিন্তু সীমাবদ্ধতা বোঝায়না যেমন আপনি আপনার নিজস্ব সংস্কৃতিকে তুলে ধরবেন, প্রকাশ করবেন এইত আপনার দায়িত্ব তাইনা কিন্তু সেখানে যদি আপনি পাশ্চাত্যের আধুনিকতা বা আফগানিস্তানের ধর্মীয় মৌলবাদ ভাবনার সাথে নিজেরটা মিলিয়ে দেন সেটা কি মেনে নেয়া উচিত ? এ নিয়ে সমালোচনা হলেই বলতে পারবেন না যে আপনার লেখার স্বাধীনতা হরণ হয়েছে । এটা বাধ্যবাধকতা নয় এটা আপনার দায়বদ্ধতা ।

দুপুর মিত্র: আপনার লেখার কক্ষ নিয়ে কিছু বলুন?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: প্রায় দারিদ্র সীমার কাছাকাছি থেকেও এখানে আমি সৌভাগ্যবান, নিজস্ব একটি পড়ালেখার ঘর রয়েছে যেখানে অন্যদের প্রবেশ নিষেধ । সেটা খুব বড় নয়, কোন বিলাসী দ্রব্য নেই । সেলফ বই আর লেখার চেয়ার টেবিল আছে, ভালো কথা ল্যাপটপের টেবিলের পাশে আমার গিটার আর ভায়োলেন যেমন আছে তেমনি রাস্তার পাশের জানলা দিয়ে মুখোমুখি বাড়ির ভেন্টিলেটরে বাঁধা পাখির বাসাও আছে দেখার জন্য ।

দুপুর মিত্র: আপনি কি বেশি পড়া পছন্দ করেন?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: যদি বলি পছন্দ করিনা সেটাকি বিশ্বাস যোগ্য হবে ? নিঃসন্দেহে পছন্দ করি এমনকি বেশি পড়ালেখা করা শত্রুকে আমি না পড়ুয়া বন্ধুর চেয়ে বেশি সন্মান করি। তবে আমি নিজে কিন্তু অনেক পড়িনা।

দুপুর মিত্র: আপনি কি গল্প খুব দ্রুত শেষ করতে পছন্দ করেন?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: হ্যাঁ কারণ শেষ না করা পর্যন্ত একটা অস্থিরতা কাজ করে।

দুপুর মিত্র: আপনি সাধারণত কোনও গল্প বা উপন্যাসের কিভাবে শুরু করতে জোর দেন? চরিত্র না বাক্যকে? না কোনও ডায়ালগকে?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: যে কোনটাই হতে পারে আসলে নির্ভর করে ভাবনাটা কেমন করে আসে আর সেটা লেখার সময় কোনটা আমাকে সাহায্য করে।

দুপুর মিত্র: লেখে ফেলার পর কি আপনার কখনও এমন হয়েছে যে পুরো লেখাই মানে গল্প বা উপন্যাসকে আপনাকে নতুন করে লিখতে হয়েছে?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: কখনো অনেকটা হয়ত বদলাতে হয় কিন্তু পুরো পাল্টে দিতে হয়নি ।

দুপুর মিত্র: লেখার আগে আপনি কি সমাপ্তি ঠিক করে রাখেন?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: নাহ গল্পই তাকে একটি সমাধানে নিয়ে যায় তবে আবার কখনো থাকেও শেষ টা মাথায় ।

দুপুর মিত্র: আপনি শেষ পৃষ্ঠা লেখার আগেই কিভাবে গল্প বা উপন্যাসের শেষটা ঠিক করেন?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: এটাকি পৃষ্ঠার ওপর নির্ভর করে না ঘটনার ধারাবাহিকতা ? আমারত মনে হয় গল্পের শুরুই অনেক সময় ঠিক করে দেয় এর শেষটা কি হউয়া উচিত।

দুপুর মিত্র: লেখালেখিকে কি সংগ্রাম মনে হয় আপনার?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: কোন অর্থে ? শারীরিক পরিশ্রমে আমার মনে হয় সংগ্রাম না কারণ আমি শুনেছি কবি আল মাহমুদ তার দুই হাতের কনুইয়ে ঘা হয়ে যাবার পরো লিখেছেন। কেন ? সন্মান-খ্যাতি না অর্থের জন্য ? লেখকের জন্য লিখতে পারাটা আসলে এমন এক বিষয় যেটা তার শ্বাস প্রশ্বাসের মত । শুধু প্রকাশের জন্য লেখক লিখেননা। গল্প-কবিতার চেয়ে বেশি লিখে এলোমেলো কথা, নিজের কথা যা হয়ত কোথাও ছাপানোর জন্য পাঠানোও হয়না । তবে এটা সংগ্রাম অবশ্যই সেটা অন্যভাবে, মুক্তির গানের কথা জানেনত? আবার ধরুন মুক্তিযুদ্ধের সময় আকাশবাণী থেকে খবর পড়ছি দেব দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় এসব কিন্তু সংগ্রাম । হাঙ্গর নদী গ্রেনেড , নিষিদ্ধ লোবান বা জোস্না ও জননীর গল্পত সংগ্রাম- ই তাইনা ?

দুপুর মিত্র: লেখার পর আপনি সাধারণত কোন বন্ধুর সাথে শেয়ার করেন?

সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম: হুম , কোন লিখা প্রকাশের জন্য পাঠানোর আগে সংশয় থাকলে যে বন্ধুরা সাহিত্য কম বুঝেন তাদের কখনো কখনো পড়তে দিয়ে জানতে চাই কিছু বুঝলে কিনা । হা হা হা।