আত্মদীপই যে কাউকে কবিতামহলের পথ দেখাবে: পিয়াস মজিদের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jul 14, 2012 10:41:26 AM

প্রকাশিত বই: নাচপ্রতিমার লাশ,মারবেল ফলের মওসুম

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

পিয়াস মজিদ: অন্তরে উত্থিত অগ্নির কল্লোল আর নক্ষত্রের চোখে জমে ওঠা জলকে বাঙ্ময় করতে কবিতা লিখি।

দু: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

পি: কবিতা লেখার জন্য বিশুদ্ধ কারুবাসনা দরকার। এটা থাকলে আত্মদীপই যে কাউকে কবিতামহলের পথ দেখাবে।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

পি: লোরকা, রিলকে, মীর্জা গালিব, মধূসুদন কিংবা জীবনানন্দ; এদের অনেককেই মনে করি আমার সমসাময়িক কবি। কারণ শিল্পের ক্ষেত্রে 'সমসময়' আমার কাছে কালসাপেক্ষ নয় বরং আমার শিল্পরুচির প্রেক্ষণিতে যেসব কবি অনায়াসেই ধরা দেয় তারা শতাব্দী পেরিয়েও হয়ে ওঠে সমসাময়িক। ভালো লাগার প্রশ্নে বলতে পারি মর্মে নিহিত কোনো অজ্ঞাত কারুকার্যের কারণে এদের কবিতা আমার ভালো লাগে।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

পি: আভিধানিক অর্থের দাসত্ব থেকে যাদের কবিতায় মুক্তি খুঁজে পাই না, কালনির্বিশেষে তাদের কবিতা আমার অপছন্দ। ব্যাকরণিক পাঠশালার বাইরের সবুজ বনভূমিতে নিয়ে যেতে না পারলে কোনো কবির কবিতা আমাকে স্পর্শ করে না।

দু: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

পি: দশক বিভাজিত কবিতার আলোচনাতে আস্থা নেই আমার। কারণ পৃথিবী বিপুলা এবং কাল নিরবধি। দশকের বাটখারা কালস্রোতে ভেসে যেতে বাধ্য। তখন শুধু মুখোমুখি বসিবার থাকে দশকভেদী কবিতালক্ষ্মী।

দু: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

পি: জীবনচর্যা, ভাষাভঙ্গি, ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এইসব নানারকম ভিন্নতার ছায়া তো খুব স্বাভাবিকভাবে দুই বাংলার কবিতায় আছে। তবে ঈশ্বর গুপ্ত থেকে শহীদ কাদরী পর্যন্ত আবহমান বাংলা কবিতাকে আমি অখ- ধারাবাহিকতা হিসেবে বিবেচনা করি।

দু: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

পি: ব্লগ চর্চার মাধ্যমে ইতিমধ্যে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, বড় কাগজ-ছোট কাগজ যতটুকু দেখায় তারও বাইরে সাহিত্যের আরও অনেক কেন্দ্র আছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত শক্তিশালী।

দু: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

পি: লিটলম্যাগ ও ব্লগের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে বলে মনে করি। ব্লগে লেখা সিলেকশনটা পুরোপুরি লেখকের হাতে আর লিটলম্যাগের সিলেকশন সম্পাদক বা সম্পাদনা পর্ষদের হাতে। ব্লগিংয়ে লেখকের সাহিত্যরুচিই নিরংকুশভাবে প্রকাশ পায়। অন্যদিকে লিটলম্যাগে লেখকের লেখার সাথে সাথে তা প্রকাশের মধ্য দিয়ে সম্পাদকের রুচিও প্রতিফলিত হয়। তবে এখন লিটলম্যাগের মোড়কে সংকলন বের করার যে ধুম লক্ষ করছি, তাতে অচিরেই মনে হয়- স্বাধীন প্রকাশমাধ্যম হিসেবে ব্লগকেই অধিকাংশ লেখক অগ্রাধিকার দেবেন।

দু: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

পি: ব্লগ বা ফেসবুকে লেখা প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টির ফলে দৈনিকে সাহিত্যপাতার প্রতি পাঠকের আগ্রহ দিন দিন কমছে। বিশিষ্ট লেখকদের জন্মমৃত্যু দিবসের ক্রোড়পত্রকণ্টকিত সাহিত্যপাতায় সাম্প্রতিক সাহিত্যের খোঁজ পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে।