কবিতা একটা উন্মোচন: কিরীটী সেনগুপ্তের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Aug 15, 2014 5:21:40 PM

১। আয় না (মুক্ত গদ্য, বাংলা) ২। দ্য আনহার্ড আই (ইংরেজি নন ফিকশন, আমেরিকা থেকে পুনঃপ্রকাশিত ) ৩। দি রিসাইটিং পেনস্ (আমেরিকা থেকে প্রকাশিত। তিন জন বাঙালি কবির দীর্ঘ সাক্ষাৎকার, তৎসহ ওঁদের নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ) ৪। মাই গ্লাস অফ ওয়াইন (আত্মজীবনীমূলক কবিতা) ৫। মাই দ্যাজলিং বার্ডস (১০ জন ভারতীয় কবির নির্বাচিত কবিতা সংক্রান্ত আলোচনা) ৬। ডিসায়রাস ওয়াটার (কবি সুমিতা নন্দীর "ইচ্ছেমতি" কবিতা সিরিজের অনুবাদ) ৭। পোয়েম কন্টিনিউয়াস (আমেরিকা থেকে প্রকাশিত, কবি বিভাস রায়চৌধুরী'র নির্বাচিত ৩০টি কবিতার অনুবাদ)

 

 

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

 

কিরীটী সেনগুপ্ত: ঠিকঠাক একটা কবিতাও কি লিখতে পেরেছি? মনে হয় না, যদি আমার একটাও কবিতা কোনো পাঠকের মনে দাগ কেটে থাকে, তবে তো লেখকজীবন ধন্য। আর হ্যাঁ, কবিতা সচেতনে লেখা যায় না সম্ভবত। অদ্ভুতভাবে যখন কবিতা-আক্রান্ত হই, আর তারপর তার বিন্যাসটা সচেতনে লিখে ফেলি। কেন লিখি, কি করে বলি বলুন? তাহলে আমাকে বুঝতে হবে, কবিতা-আক্রান্তই বা হই কেন? অনেক খুঁজেও কোনো উত্তর পাইনি।

 

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

 

কিরীটী সেনগুপ্ত: কিসের প্রস্তুতি? কবিতা লেখার? কবি হিসেবে প্রমাণিত হওয়ার? নাহ, কবিতা লেখাটা কোনো কম্পিটিটিভ পরীক্ষা তো নয়, যে আপনি কয়েকটি বই কিনে নিলেন, তৈরি করলেন নিজেকে, আর তারপর পরীক্ষকের সম্মুখীন হলেন। কবিতা একটা উন্মোচন। জাগরণের এক অনন্য প্রকাশ। বই পড়ে, সাহিত্য চর্চা করে সচেতনে কবি হওয়া যায় না। আচ্ছা চলুন, যদি আপনার কথাটাই বাস্তবিক সত্য মনে করি, তবে আমাকে দিন একটি সর্বাঙ্গ সুন্দর, আদর্শ কবিতা লেখার নিশ্চিত ফর্মূলা। পারবেন? তাহলে তো প্রস্তুতি নিতেই হয়।

 

 দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

 

কিরীটী সেনগুপ্ত: সমসাময়িক সকলের কবিতাই ভালো, আবার কারো লেখাই ভালো নয়। কবিতার ভালো-মন্দটা কী? যে কবিতা স্বতঃস্ফূর্ত মনে হয়, তাই ভালো। সেটাই আদরের। একটা কবিতা আদর করতে পারলাম কিনা, আমার কাছে সেটাই বিচার্য। অন্য কিছু নয়।

 

দুপুর মিত্র:  সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

 

কিরীটী সেনগুপ্ত: কখনো নিজের কবিতাই মনে হয় সবথেকে খারাপ। নিজেই হারিয়ে যাই। আদর করতে পারি না। এরকম পরিস্থিতি যখন, তখন তো বলতেই হবে, আমার কবিতাই আমার খারাপ লাগে। আর কার নাম নেব?

 

দুপুর মিত্র: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

 

কিরীটী সেনগুপ্ত: হ্যাঁ, দেখেছি। দেখে চলেছি এখনও। ভালোই তো। অনেক শক্তিশালী কবি উঠে এসেছেন। ওঁদের কবিতা পড়েছি, এখনও পড়ছি। পড়া জারি থাক, এখন মূল্যায়নের সময় নয়।

 

দুপুর মিত্র: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

 

কিরীটী সেনগুপ্ত:  কবিতায় বিশেষ ফারাক আছে বলে মনে তো হয় না। তবে স্বীকার করতেই হয়, বাংলাদেশের মানুষ সাহিত্য-প্রেমের মর্যাদা দিতে কুণ্ঠিত হন না, অথচ দেখুন, পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের ক্ষেত্রে মর্যাদা প্রদানে কুণ্ঠার অভাব নেই। ভারতীয়দের এই কুণ্ঠা তাদের ভেতরকার ইনসিকিউরিটি’র বহিঃপ্রকাশ। নিঃসন্দেহে বলতে পারি এই কথা।

 

দুপুর মিত্র:  ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

 

কিরীটী সেনগুপ্ত: ইন্টারনেট-ফ্রেন্ডলি পাঠক উপকৃত হচ্ছেন। খুব সামান্য অর্থব্যয়ে ওঁরা পড়তে পারছেন। কিন্তু ভাবুন তো, ওই তরুণ যুবকটির কথা। টিউশন করে যাকে কলেজের ফি জমা দিতে হয়, রাতে মুড়ি-বাতাসা খেয়ে ঘুমোতে হয়, অথচ ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে মনে-মনেই লিখে নেয় একটা কবিতা। ওঁরা ব্লগ দেখতে পারছে না। ওঁদের কবিতা চর্চা, কবিতা যাপন প্রভাবিত হচ্ছে না এই ব্লগ-কালচারে।

 

দুপুর মিত্র:  লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

 

কিরীটী সেনগুপ্ত: এই দুইয়ের টার্গেট পাঠক এক নয়। আমার বিশ্বাস, লিটিল ম্যাগ তাঁর নিজস্ব আবেদনেই এগিয়ে থাকবে চিরকাল।

 

দুপুর মিত্র: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

 

কিরীটী সেনগুপ্ত: বেশ প্রশ্ন! গল্প–ছোটোগল্প–প্রবন্ধ–উপন্যাস, এসব বিষয়ে আমার পর্যবেক্ষণ অতি সীমিত, কারণ সাহিত্যের যে প্রকাশে আমি অভ্যস্ত তাকে কবিতা বলি। কিছুটা মুক্ত-গদ্য নিয়েও কাজ করি। হ্যাঁ, কাজ করি। অনেকটা ওই চাষ-বাসের মতন। কবিতা নিয়েই আমার চাষ, আমার বাস। সেই অর্থে আমাকে চাষি বলতেই পারেন। সাহিত্যে শ্রম-দান, এই কবিতাকে কেন্দ্র করেই। এবং এই বিচারে আমাকে কবিতা শ্রমিক বলতে পারেন। শ্রম না দিলে, আর কী দিলাম? আসল কথাটাই হলো, মেহনত। একটি উদ্ধৃতি দিই, “প্রেমের ঘর কোথায় বল দিকিন, প্রেম কি অমনি মেলে? মেহনত কর কিছুদিন”। এই মেহনতের বড়ো অভাব, নিষ্ঠার অভাব, ধৈর্যের অভাব চারিদিকে। সাহিত্যও এর ব্যতিক্রম নয়। শুভ বোধ এবং স্বচ্ছ মনন যে কোনো চর্চার ভিত দৃঢ় করে। এই দুই তেমন আর খুঁজে পাই না। অবশ্য এমনটাও হতে পারে, আমার দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসছে। খুব শীঘ্রই অন্ধ হয়ে যাব, মনে হয়!