দৈনিকের সাহিত্য হতাশাপূর্ণ ও অবক্ষয়ে ভরা: শৌনক দত্ত তনুর সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: May 29, 2012 7:05:04 AM

প্রকাশিত বই: ঠোঁটে দাও জোছনার বিষ, কারুময় খামে অচেনা প্রেম

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

শৌনক দত্ত তনু: আজ এত বছর লিখছি কিন্তু কেন লিখছি তা উদ্ধার করে উঠতে পারিনি। হতে পারে বন্ধুস্বজনহীন নিজের কথোপকথন লিখে যাচ্ছি রোজ রোজ, এতবছর।

দু: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

শৌ: কবিতা লেখার সবচেয়ে বড় প্রস্তুতি কবি মননের সাথে নিজেকে ঈশ্বরের বন্ধু মনে করা। তারপর যেটা দরকার নিজে যে ভাষায় লিখবেন সেই ভাষাটিকে মন থেকে ভালোবেসে জানা এবং প্রচুর পড়াশোনা ও নিজেকে সবসময় আপডেট রাখা।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

শৌ: সমসাময়িক অনেকেরই লেখা ভাল লাগে। ভাল লাগার কারণ বিষয়বস্তু,লেখনভঙ্গি,শব্দচয়ন ও উপস্থাপনকৌশল।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

শৌ: সমসাময়িক যাদের লেখা ভাল লাগেনা তাদের সংখ্যাও কম নয় তবে আমি একজন ভাল পাঠক তাই সবাইকে সমান মূল্যায়নেই পড়ি কিন্তু ভাল না লাগার কারণ বোধ করি পড়াশোনার ঘাটতি এবং উপস্থাপনের চমকহীনতা।

দু: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

শৌ: আমি যদিও দশকে বিশ্বাসী নই।তবুও প্রশ্নের খাতিরে বলছি নব্বই দশক অনেকগুলো প্রতিভাবানকে একসাথে উপহার দিয়েছে। উৎকর্ষতার বিচারে নব্বই দশক সাহিত্যের ইতিহাসে উজ্জ্বলতার সেই অর্থে শূন্যদশক তেমন উজ্জ্বল নয় ঠিকই কিন্তু শূন্যদশক সাহিত্যকে যে নতুন ভাষা,চিন্তাচেতনা ও বাচনভঙ্গি দিয়েছে তা অনন্য।

দু: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

শৌ: আমার শৈশব,কৈশোরের সবটা এবং যৌবনের অনেকটা সময় ভারতে কেটেছে।কাছ থেকে দু-বাংলার অনেককেই আমি দেখার ও সঙ্গলাভের সৌভাগ্য পেয়েছি। যে ফারাকটা আমার সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে তা হচ্ছে পড়া।বাংলাদেশে কবির সংখ্যা যত তার মনে হয় পাঁচ শতাংশ সিরিয়াস পড়ুয়া। দশ শতাংশ অনিয়মিত পাঠক। বাকী সব ভাসা ভাসা কিছু পড়ে সস্তা কথা লিখে কবি।পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো এবং আরেকটা ফারাক দুদেশের মধ্যে লক্ষ্য করা যায় তা হচ্ছে সমালোচক। পশ্চিমবঙ্গে নবীনদের খুঁজে পড়ে প্রবীণরা গঠনমূলক সমালোচনা ও প্রেরণাদাতার কাজটি করেন।বাংলাদেশে এই ঐতিহ্য একটা সময় থাকলেও আজ তা অনুপস্থিত।

দু: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

শৌ: ব্লগ সাহিত্যকে কিছু দিক বা না দিক অনেক কবি দিয়েছে।একটা কথা আজকাল প্রায়ই শুনি কাকের চেয়ে নাকি কবির সংখ্যা বেশি!

দু: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

শৌ: এইমুহুর্তে লিটলম্যাগের গুরুত্ব ব্লগ থেকে বেশি।তবে হ্যাঁ গুণী সম্পাদক দ্বারা সম্পাদিত হলে ব্লগ ও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বৈকি।

দু: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

শৌ: এক কথায় হতাশাপূর্ণ এবং সার্বিক বিচারে এই অবক্ষয় দু-বাংলাতেই দেখা যাচ্ছে। কার্য্য কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে সম্পাদকের অযোগ্যতা কিংবা তার বা দৈনিকের গোষ্ঠীবাদ। আরেকটা ব্যাপার ও হয়ত কাজ করে সম্পাদকের স্বাধীনতা বলে শব্দটার চুরি যাওয়া এবং তাদের নিরীক্ষক দৃষ্টির অন্ধত্ব। সর্বোপরি যে বিষয়টা আজ দৈনিকে বেশি প্রকট বলে আমার মনে হয় তাহলো খুঁজে বের করার চেষ্টা। এই দায় কিছুটা হলেও পাঠকের উপরেও কিন্তু বর্তায়।