বাংলা উপন্যাস তিন বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরাধিকারের বাইরে যেতে পারেনি: প্রশান্ত মৃধার সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Sep 11, 2013 10:10:27 AM

প্রকাশিত বই: ছাড়াভিটার ভূত, যুধিষ্ঠিরের সঙ্গী, আপন সাকিন, কার্জন সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক, ছদ্মবেশী ভূত, বৈঠার টান, ১৩ ও অবশিষ্ট ছয়, ক্ষয়পুরাণ, নদীর তৃতীয় তীর, বিষয়: গল্পগুচ্ছ, মিঠে আশার অন্ধকার, প্রতিদিন অচেনা মুখ, সন্ন্যাসের সহচর, নিজের জন্য খসড়া, রূপকুমার ও হরবোলা সুন্দরী অসমাপ্ত পালা, মৃত্যুর আগে মাটি, গল্পের খোঁজে, আমার রবীন্দ্রনাথ, অগ্রন্থিত কায়েস আহমেদ, শারদোৎসব, কুহক বিভ্রম।

দুপুর মিত্র: আপনি কত বছর থেকে লেখালেখি শুরু করেছেন?

প্রশান্ত মৃধা: প্রশ্নটা আমার জন্যে কিছুটা অস্পষ্ট। কত বছর অর্থে যদি কত বছর বয়স থেকে হয়, সেক্ষেত্রে দশ এগারো বছর বয়সের দিকে কিছু কিছু নিজের কথা কখনো কখনো খাতাপত্রে লিখেছি, মনেআছে। আর যদি হয় কবে থেকে কাগজে ছাপা হবে এমন উদ্দেশ্য নিয়ে লিখেছি, লেখা পাঠিয়েছি ও ছাপা হয়েছে, তাহলে তা ২৫ বছর আগে।

দুপুর মিত্র: ঠিক কী ভেবে বা কোন ধরনের ভাললাগা বা উদ্দেশ্য থেকে আপনি এখনও লেখালেখি করছেন?

প্রশান্ত মৃধা: লিখতে ইচ্ছে করে, তাই লিখি। আবার, লিখলে পত্রিকায় ছাপা হয়, সেজন্যেও লিখি। পত্রিকার লোকজন লেখা চায়, সেজন্যেও লিখি। তাতে কোনও ভালোলাগা বা উদ্দেশ্য থাকে তো আছে, নাথাকলে নেই।

দুপুর মিত্র: বাংলা সাহিত্যে অনেক মাধ্যম থাকা সত্ত্বেও আপনি কেন উপন্যাস বা গল্পে কাজ করলেন?

প্রশান্ত মৃধা: অন্য কোনো মাধ্যমে লিখবার ক্ষমতা নেই, লিখতে পারি না, তাই। এগুলোও যে ঠিকঠাক লিখতে পারি তাই-বা কী করে বলি?

দুপুর মিত্র: উপন্যাস বা গল্পে আপনার বিশেষ অবদান বা কনট্রিবিউশন যদি বলা হয়, তাহলে কোনগুলোকে ধরা হবে এবং কেন?

প্রশান্ত মৃধা: আমার জানা নেই।

দুপুর মিত্র: আপনি কোন লেখা লিখে সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি পেয়েছিলেন এবং কেন?

প্রশান্ত মৃধা: লিখে তৃপ্তিটৃপ্তি পাইটাই না। ওটা পেলে হয়তো আর লিখব না।

দুপুর মিত্র: বাংলাদেশে কোন ধারার উপন্যাস বেশি লেখা হচ্ছে? সাম্প্রতিক দশকগুলোতে কোন ধারার উপন্যাস চর্চা বেশি হচ্ছে এবং কেন?

প্রশান্ত মৃধা: আমার জানা নেই। সম্ভবত উপন্যাস-গবেষকেরা বলতে পারবেন।

দুপুর মিত্র: বাংলা গল্পে অনেক পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন কি? কেন?

প্রশান্ত মৃধা: এখানে গল্প অর্থ যদি কাহিনী হয়, সেক্ষত্রে প্রতিটি গল্পই নতুন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বদলাবে। আর বাংলা গল্প বলতে যদি বাংলা ছোটগল্প হয়, সেক্ষেত্রেও একই কথা। বিষয়ই গল্পের পরিবর্তনঘটায় সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে।

দুপুর মিত্র: কোন ধরনের উপন্যাস লেখার প্রতি তরুণ লেখকদের ঝোঁকা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

প্রশান্ত মৃধা: তরুণ লেখকদের উপন্যাস রচনা সম্পর্কে কোনও উপদেশ দেয়ার অধিকার আমার নেই।

দুপুর মিত্র: বাংলা উপন্যাসে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন কি? পরিবর্তন হলে সেগুলো কেমন? এই পরিবর্তনকে আপনি কিভাবে দেখছেন? পজিটিভলি না নেগেটিভলি?

প্রশান্ত মৃধা: কোনো পরিবর্তন আসেনি। বাংলা উপন্যাস এখনও গত শতকের তিরিশের দশকের তিন ক্ষমতাবান বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরাধিকারের বাইরে যেতে পারেনি।

দুপুর মিত্র: বিশ্বের সাথে বাংলা উপন্যাসের কি তুলনা করা যায়? করলে কিভাবে? সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা উপন্যাস আর বিশ্বের উপন্যাস আপনি কীভাবে দেখছেন?

প্রশান্ত মৃধা: তুলনা করলে তো কতকিছুর সঙ্গে কতকিছুর তুলনা করা যায়। উট ভালো না হাতি ভালো? বাংলা উপন্যাসকে আমি বাংলা উপন্যাস হিসেবেই পড়ি। তা বিশ্বের উপন্যাস শিল্পেরই অংশ। একথাগুলো ওঠে এই জন্যে আমাদের সামনে যে সাহিত্যের বিশ্ব আছে, তা কয়েকটি নির্দিষ্ট ভাষার আর ইংরেজি তর্জমা মারফত, ব্যতিক্রমবাদে বাংলা অনুবাদও ইংরেজি থেকেই হয়। আমাদের তো কদিনআগেও জানা ছিল না, চৈনিক ভাষায় কেমন উপন্যাস লেখা হয়? দুনিয়ার বেশির ভাগ দেশের মানুষ জানে না আমাদের ভাষায় কেমন উপন্যাস লেখা হয়। আন্তর্জাতিক সাহিত্যিক মোড়লদেরসার্টিফিকেট বা প্রশংসাপত্রও নেই আমাদের কাছে। তাই তুলনার প্রশ্ন। পৃথিবীর সব দেশে সব ভাষাই প্রচুর খারাপ লেখা হয়, কিছু ভালো লেখা হয় একই সময়ে। বাংলা ভাষায়ও তাই। তবে, হয়তো বাংলাভাষার ক্ষেত্রে গত অন্তত তিন-চার দশক ধরে গড়পরতা লেখার পক্ষে, এমনকি কখনও কখনও খারাপ লেখার পক্ষে প্রচারের যে অবিরাম যন্ত্রসমূহ আছে, ভালো লেখার পক্ষে তা নেই। ফলে, ওই কিছুভালো লেখা প্রচারের আড়ালেই থাকে। দুনিয়ার অন্যান্য জায়গা বিষয়টা হয়তো একটু ভিন্ন। সেখানে তেলে জলে, ঘিতে মধুতে মিলমিশ কম। কেউ চকটে এক করে না, বাহাবাও দেয় না শুধু শুধু।সাহিত্য সমালোচনা শক্ত পিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে । আমাদের এখানে এসব নেই। তাই এত কথা। তবে, ভালো লেখা ভালো লেখা, তা হারায় না। নিজেদের ভালো লেখাগুলোকে অনুবাদের ব্যবস্থাআমরা করিনি, করতে পারিনি।