যারা ছন্দ ছন্দ করে চেচান ছন্দের মান বজায় রাখতে গিয়ে কবিতার অনুভূতির পিন্ডি চটকান: মৌমিতা ঘোষের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Sep 11, 2014 3:45:28 AM

 

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লেখেন?

মৌমিতা ঘোষ: আমি কবিতা লিখি তার প্রথম কারণ হলো , কবিতাই একমাত্র মাধ্যম যার মধ্যে দিয়ে আমি নিজেকে প্রকাশ করতে পারি। আজ ২০১৪ এ দাঁড়িয়ে বাংলা ভাষাটাই সংকটের মুখে।  আজকের যারা স্কুল কলেজ  পড়ুয়াতারা একটা অদ্ভুত পাঁচমিশালী ভাষায় কথা বলে।  সঠিক বাংলা বলে খুব কম জন, বোঝেও না।  কবিতা শব্দটা শুনলেই প্রথম প্রতিক্রিয়া " ওসব বুঝিনা বাবা"! আমার কবিতা লেখার মূল উদ্দেশ্য এদেরকে কবিতার দিকে ফেরানোআমি একদম সহজ ভাবে লিখি, যাতে এরা সহজেই রিলেট করতে পারে।  এদের কোথাও মনে হয়, " আরে! এটা তো আমাদেরও কথা।" আমি বেশি ব্যাকরণ বুঝি না কবিতায়, ছান্দসিকেরা কোনো ছন্দ খুঁজে পাবেন না আমারকবিতায় কিন্তু এই বাংলা ভাষা বিমুখ, কবিতা বিমুখ ছেলে মেয়েরা যখন আমার কবিতা পড়ে , ফোন বা মেল করে ফিড ব্যাক দেয়। আমার মন আনন্দে ভরে ওঠে। 

 

দুপুর মিত্র: কবিতা  লেখার জন্য একজন কবির কি প্রস্তুতি দরকার?

মৌমিতা ঘোষ: জানিনা ঠিক।  তবে কবিতা পড়াটা দরকার।  অগ্রজ কবিদের এবং সমসাময়িক কবিদেরও।  সব থেকে বেশী দরকার অবকাশ ও অবসরের। নিজের ভিতরে পথ হাঁটলে মানুষের সামনে খুলে যায় অনেক গলি , খুলেযায় অজানা সব দৃশ্যপট। 

 

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতা আপনার ভালো লাগে ও কেন?

মৌমিতা ঘোষ: সমসাময়িক কবিতা ভালো লাগে শ্রীজাত, বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও আমার অনেক বন্ধুর যেমন  অমিত গোস্বামী, ফুল্লরা মুখোপাধ্যায়, বরুন দে, উজান, গৌরব চক্রবর্তী, সৌরভ  মুখোপাধ্যায়, তমোজিৎভট্টাচার্য, শোভন পাত্র, অর্নব দত্ত প্রমুখ । অবশ্যই বাংলাদেশের যে বন্ধুদের কবিতা ভালো লাগে এবং যাদের লেখা নিয়মিত পড়ি - সাহানা পারভীন, আশরাফ জুয়েল, ইকবাল রাশেদীন প্রমুখ। ঐশী দত্ত বলে একটি মেয়ের কবিতাআমার খুব ভালো লাগে। কেন এদের কবিতা ভালো লাগে বলতে গেলে বলতে হবে শ্রীজাতর কবিতা ভাবনায় চমৎকারিত্বে ও বিনায়কের ছন্দের জাদুতে মন কাড়ে। আমার বন্ধু যাদের কথা লিখলাম তাদের বেশিরভাগই এই দুটিকারণে এবং সহজ বলে ভালো লাগে।  আমি সহজবোধ্য কবিতা ভালবাসি যা মনকে ছোঁবে সকলের, কবি ও অকবি সকলকে।  

 

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতা আপনার খারাপ লাগে ও কেন?

মৌমিতা ঘোষ: তাদের কবিতা খারাপ লাগে যারা দুর্বোধ্য করে লেখাকেই কবিত্বের সেরা প্রকাশ বলে মনে করেন। যারা ছন্দ ছন্দ করে চেচান  ছন্দের মান বজায় রাখতে গিয়ে কবিতার অনুভূতির পিন্ডি চটকান। কোনও নামকরতে চাই না। 

 

দুপুর মিত্র: নব্বই ও শুন্য এই দুই দশককেই আপনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন।  এই বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

মৌমিতা ঘোষ: নব্বইয়ে লোকে অনেক ভালো কবিতা লিখত, কবিতা চর্চা করত মানুষ অনেক কষ্ট করে।  আমরাই খুব কষ্ট করে লিটিল ম্যাগাজিন চালাতাম। আমাদের অনেক বন্ধুদের কিন্তু একটাই প্রচেষ্টা ছিল কিভাবে কাজটাভালো হয়।  কবিতার জন্য আমাদের নিজেদের মূল্যবান  জিনিসপত্র ও বিক্রি করে দিয়েছি। পরবর্তী ক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে পত্রিকার সংখ্যা বেড়েছে লোকে ধীরে ধীরে কমার্সিয়াল হয়েছে তবে ভালোবাসাটা বোধ হয় কমেছে।  আমার ভাবনা ভুল ও হতে পারে। 

 

দুপুর মিত্র: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা ও বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

মৌমিতা ঘোষ: জীবনযাত্রার যে ফারাক - সেই ফারাকটাই। আমার মনে হয় পশ্চিমবঙ্গের কবিতায় মানুষের নাগরিক জীবনের বিদ্ধস্ত , ক্লিষ্ট মুখটা বার বার উঠে আসে বেশি।  প্রেমের প্রকাশও একটু বেশি রকমের আর্বান।  বাংলাদেশের কবিদের মধ্যে এখনও মাটির গন্ধটা পাওয়া যায়।  যেটা আমাদের লেখায় মিসিং। বাংলাদেশের কবিদের কবিতায় কংক্রিট অতটা প্রভাব ফেলতে পারেনি ব'লে আমার ধারণা।  রাজনৈতিক সমস্যাগুলো ও যার যারদেশের নিজেদের মত করেই উঠে আসে। 

 

দুপুর মিত্র: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে ?

মৌমিতা ঘোষ: অনেক বেশি লোকের এক্সেস পাওয়ার সুবিধা ছাড়া বাংলা সাহিত্যকে দেওয়ার মত ব্লগের কিছু নেই। 

 

দুপুর মিত্র:লিটিল ম্যাগের চেয়ে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় কি? হলে কেন?

মৌমিতা ঘোষ: আজকের যুগের পরিপ্রেক্ষিতে হয়ত গুরুত্বপূর্ণ।  কেননা আজকের যুগের জীবন মোবাইল বা কম্পুটার সর্বস্ব।  লোকে সব কিছুই অনলাইন করতে ভালবাসে। আর প্রিন্টেড যে কোনো ফরম্যাটের খরচ অনেক বেশি।সেটা সর্বত্র এভেইলেবল করানো যায় না।   একটা  ই ম্যাগাজিন কিন্তু আমেরিকা , লন্ডন, জার্মানি বা বেঙ্গালুরুর যেকোনো মানুষ চাইলেই পড়তে পারে। আবার লিংক স্লো চলার সমস্যাও থাকে।  তাতে পাঠক উৎসাহ হারান ও সেইসাইট থেকে বেড়িয়ে আসেন এবং বিষয়টি পরে ভুলেও যান।   

 

দুপুর মিত্র:দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

মৌমিতা ঘোষ: দৈনিকে সাহিত্য বলতে আমরা পশ্চিমবঙ্গে বুঝি রবিবারের পাতা। নিঃসন্দেহে বেশ কিছু দৈনিক এখনও রবিবারের পাতাটিতে সাহিত্যের মান অসাধারণ ভাবে বাঁচিয়ে রেখেছেন।  শুধু গল্প, কবিতা বা বিষয় ভিত্তিকপ্রবন্ধ নয় , গ্রন্থ সমালোচনাও অনেক কিছুই উপহার দেয় দৈনিক থেকে।  বহু বই আমি ওই সমালোচনা পড়ে তারপর কিনেছি।  কিছুদিন আগে 'প্রতিদিন' দৈনিকের রবিবারের পাতায় জয় গোস্বামীর একগুচ্ছ কবিতা ছাপা হয়েছিল যাএতটাই ভালো ছিল যে চার পাঁচদিন একটা ঘোরে কেটে গিয়েছিল।