শুন্য দশকে কিছুটা শুন্যতা রয়েই গেছে: উদয় শংকর দুর্জয়ের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jul 27, 2012 6:43:21 AM

প্রকাশিত বই: পাঁচ নক্ষত্র (উদয় শংকর দুর্জয়, মজিবুল হক মনি, শাহীন রশিদ, রনি অধিকারী, শামীম আরা)

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লেখেন?

উদয় শংকর দুর্জয়: কবিতা আমাকে লেখায়। মনের টানে কলম ধরি, সে এক অন্যরকম উপলব্ধি।

দু: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরনের প্রস্তুতি দরকার?

উ: কোন প্রস্তুতির দরকার নাই বলবো। কারণ মনের যদি তাগিদ থাকে তবে যে কোনভাবেই সে কবিতা লিখে ফেলবে। এই ধরুন হঠাৎ মনের গহীনে দু’টো লাইন জমা হোল সাথে সাথে সেটা মোবাইলে টাইপ করা তারপর সেটাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতা আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

উ: সমসাময়িক অনেকের কবিতাই আমার ভাল লাগে এই যেমন মহাদেব সাহা, হেলাল হাফিজ, রফিক আজাদ, ফকির ইলিয়াস। তাঁরা সবাই নিজস্ব স্বকীয়তায় উজ্জ্বল। রূপ-রস-গন্ধ ঢেলে কবিতাকে জীবন দিয়েছেন নানাভাবে। কবি হওয়ার জন্য যে স্বপ্ন লালন করা চলা তা প্রতিফলিত হয়েছে নানাভাবে তাদের কবিতার মধ্যে। মহাদেব সাহার অনেক কবিতা আমি বারবার পড়ি।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতা আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

উ: অনেকের কবিতা আমার ভাল লাগে না। প্রথম দু’লাইন পড়ার পর চোখ কিছুতেই নিচে নামতে চায় না। অনেক কবিতার মধ্যে খাপছাড়া কিছু ব্যাপার থাকে আবার এমন কিছু দুর্বোধ্যতা যা সাধারণ পাঠকের কাটিয়ে ওঠা দূরের কথা অনেক কবিরাও পারে না।

দু: নব্বই ও শুন্য দশককে আপনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

উ: কাছে থেকে দেখেছি কিনা জানি না তবে নব্বই দশক এবং শুন্য দশক দুটি ভিন্নরূপে প্রতিফলিত। নব্বই দশকে অনেক কবিই পাঠকের কাছে জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু শুন্য দশকে কিছুটা শুন্যতা রয়েই গেছে। মনে হচ্ছে এইবার বুঝি কিছু হলো আবার কিছুদিন পর – না। আসলে কোথায় যেন কিছু বাকি রয়ে গেছে পূর্ণতায়। তবে ভালো কিছু যে হচ্ছেনা তা না।

দু: পশ্চিম বঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ব্যাবধানটা কোথায়?

উ: ব্যবধানটা খুব বেশি আমি মনে করি। পশ্চিম বঙ্গের কবিতার মধ্যে রসের অভাব এবং পারিপার্শ্বিকতা, আবেগ, প্রেম ও বাস্তবতায় ভাল সমন্বয়। কিন্তু বাংলাদেশের কবিতার মধ্যে রূপ-রস প্রকৃতির নিবিড়তা যেভাবে উপলব্ধি করি পশ্চিম বঙ্গের কবিতার মধ্যে সেভাবে তা করি না। প্রকৃতি-পরিবেশের ভিন্নতার কারনে লেখনির মধ্যে ভিন্নতা তৈরি হবে এটাই স্বাভাবিক।

দু: ব্লগ সাহিত্যকে কি কিছু দিচ্ছে?

উ: ব্যাপারটা নিয়ে আসলে অতটা ভাবিনি অথবা মন্তব্য করার সময়তা এখনো আসেনি হয়তো।

দু: লিটল ম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

উ: ব্লগকে কখনও গুরুত্বপূর্ণ বলব না। ব্লগে তাৎক্ষনিক কিছু বাহবা কুড়ানো যায় কিন্তু সেটার স্থায়িত্ব মূল্যায়ন চিন্তার বিষয়। ব্লগে যে কোন কিছু লিখে ফেললেই হয়। ছদ্ম নামে অনেকে সাহিত্যের নামে যা তা লিখে ফেলে। যেখানে লিটলম্যাগ হলো সাহিত্য চর্চার প্রথম জমিন। যেখানে সুনিপুণভাবে একটি লিটলম্যাগকে সাজান হয় সেখানে ব্লগে কতটা সম্ভব?

দু: দৈনিকের সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

উ: দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকদের প্রতি আমার ভালো ধারনা আছে। ছোট একটা ঘটনার কথা বলি। ২০০৬ সালে দৈনিক ভোরের কাগজের শারদীয় সংখ্যায় আমার একটা কবিতা ছাপা হওয়ার পর গিয়েছিলাম সাহিত্য সম্পাদক অশোক দাশ গুপ্ত বাবুকে ধন্যবাদ জানাতে। আমি বয়সে এতই তরুণ ছিলাম যে আমাকে দেখে উনি কিছুটা উপহাস করেছিলেন। পরে যখন তার টেবিলে কবিতা রেখে আসতাম, ফোনে জিজ্ঞাসা করলে বলতেন কই পাইনিতো। তারপর ২০০৭ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস শুরু করি। ২০০৯ সালের কথা আমার লিটল ম্যাগ “স্পন্দন” এর জন্য লেখা চেয়ে লন্ডন থেকে ভোরের কাগজের সাহিত্য সম্পাদক অশোক দাশ গুপ্ত বাবুকে এবং আমার দেশ পত্রিকার তৎকালীন সাহিত্য সম্পাদক ফারুক মাহমুদ সাহেবকে ফোন করেছিলাম এবং ই-মেইল করেছিলাম, পাঠাচ্ছি বলে আর পাঠান নি। তারপর “স্পন্দন” এর আরও দুইটি সংখ্যা বেরিয়েছে তাদের লেখা ছাড়াই।

আমার মন্তব্য এই যে ভাল লেখা ছাপা হবে আর খারাপ লেখা ছাপা হবে না আসলে তা না। লেখা ছাপাটা নির্ভর করে পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকের রুচি এবং মর্জির উপর।