অচলায়তন ভাঙার মনোভঙ্গিটা ভালো: সরওয়ার কামালের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jan 13, 2014 5:24:05 PM

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের সাথে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার সম্পর্ক থাকতেই হয় বলে মনে করেন কি? হলে কেন?

সরওয়ার কামাল: লিটলম্যাগের সাথে যৌক্তিকভাবেই বা যদি আমরা এটাকে একটা আরগুমেনটেটিভ জায়গা থেকে দেখি আরকি-প্রতিষ্ঠানবিরোধিতাটা ঠিক ধোপে ঠেকে না। তবে,একটা ব্যাপার ঘটে, যে একটা এ্যাংরি, ক্রোধি বা রাগী বা বিস্ফোরিতভাব যাই বলি না কেন-লিটলম্যাগ করনেওয়ালাদের সাইকিতে কাজ করে। এটা তো তার লেখার পেছনের একটা ফোর্স। তবে এরচে বেশি যেটা কাজ করে সেটা হলো যুথবদ্ধতা। এটাও টোটাল সিস্টেমটাকে অন্যভাবে দেখার একটা আঙ্গিকগত সাহিত্যিক ভঙ্গিই বটে। তো ইতিহাসে তো এটা দেখা গেছেই; অনেক লিটলম্যাগ আকারে, প্রতিষ্ঠায় ঠিক একটা প্রতিষ্ঠানও হয়ে ওঠেছে। আবার তার পক্ষে বা বিপক্ষে যুক্তি, ক্ষোভের প্রকাশ ও ঘটেছে। এটা তারুণ্যের একটা সিগনেচার। একটা চিরন্তনতা। তবে-হ্যাঁ। এর কিছু রাজনীতি সচেতনতা তৈরির পজিটিভিটি তো আছেই। বিদ্যমান, বদ্ধ, অচলায়তন ভাঙার যে মনোভঙ্গিটা-সেটা ভালো, আর দরকারি একটা বিষয় তো বটেই। কথা হলো-তরুণরা সব সময়ই লিটলম্যাগ করবেই। নিজেকে সচেতনভাবে হোক বা একটা অন্যরকম,আলাদাভাবে দেখানোর টেন্ডেন্সি থেকেই হোক বা বিদ্যমান রাজনৈতিকতার ক্রিটিক থেকেই হোক-প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা হোক বা না হোক লিটলম্যাগ করবেই। এটা তারই সিগনেচার।

দুপুর মিত্র: আপনার কাছে কবি হয়ে ওঠা বিষয়টা কি?

সরওয়ার কামাল: যদি গুরুত্ব দিতেই চান, তো, কবি হয়ে ওঠা বিষয়টা তেমন কিছুই না। হয়ে ওঠা বিষয়টা তো রিয়েল সেন্সে তেমন কিছু মিন করে না। তবে-হ্যাঁ। কবি বনে যাওয়া বলা যেতে পারে বড়জোর। বিদ্যমান, চিহ্নিত একটা চিহ্ন ব্যবস্থাকে ধারণ করেও এ সকলকিছুকেই আলাদাভাবে,অন্য অর্থে, রঙে, রূপে দেখাটাকেই যদি কবি হয়ে ওঠা বলাহয়-তবে;এখানে কবি বনে যাওয়াটাকেই আমি প্রেফার করবো। কবি হয়ে একজন যেহেতু শব্দকে তার অর্থের জায়গা থেকে সিম্বল আর ইমেজের জায়গায় নিয়ে যায়-তাকে তো আলাদা একটা জায়গা দিতেই হয়। অবশ্য এই সময়ের কবিরা সেটা এই অর্থে না বুঝে ইগোর ভ্রমে যে লাইফস্টাইল প্রশ্ন ফেস করে তার জায়গা থেকে দেখে-যেটা ঠিক না।

দুপুর মিত্র: কবিতা কি?

সরওয়ার কামাল: কবিতা এক অর্থে ননসেন্স, ননপার্টিকুলার পার্টিকুলারাইজেশান অব ফেক্ট, ফেনোমেনান, সাইন, সিম্বল, সেল্ফ এন্ড আদার। এটা অনেকটা অনুশাসনের বাইরের একটা শাসন। একটা হেজিমনি অব নাথিং এন্ড এভরিথিং। কবিতা হলো ছাড়িয়ে যাবার একটা ব্রোকেন সিস্টেম। একটা ইনফিনিটিটি। একটা মেটা মিনিং। একটা বিপ্লব। হ্যাঁ, যদি সবকিছু থেকে বেরিয়ে যাওয়াটাকে আপনি বিপ্লব ভেবে থাকেন আরকি। তবু সত্য হলো কবিতা কবিতাই। ইনফিটিটি অব ডিফেনেশান।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বাংলা কবিতার প্রবণতাগুলো কি?

সরওয়ার কামাল: সমসাময়িক বাংলা কবিতার প্রবনতাগুলো ব্যাপক অর্থে ছড়ানো, ছিটানোভাবে ফাংশানিং। যদি শুধুমাত্র বাংলাদেশ ধরি তবে এখানে যেহেতু স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘঠেছে এবং একটা অঙ্গীকারের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো,সেই বিষয়টার একটা ছাপ আছেই। রাষ্ট্রের বিবিধ সংকট এবং তার বিকৃতির একটা স্পষ্ট প্রভাব যেহেতু ব্যাক্তির বিকাশের ওপর পড়ে-তাই হয়তো ঢাকাকেন্দ্রিক কবিতা চর্চা কেবল ভাষাভিত্তিক একটা মর্বিডিটির ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে বড়বেশী। অর্থহীনতা,অনেকবেশি এসথেটিকসের প্রতি মনোযোগ এবং এক ধরনের হোলো কসমিসিটির প্রকাশ-এটা মোটা দাগে একটা চোখে পড়ার মত ব্যাপার। তবে-এর ভেতরেও কিন্তু অনেকে চেষ্ঠা করছেন অন্যরকমে একটা আলাদা ধরনের কিছু লেখার। এর বাইরে যারা লিখছেন,ম্যাক্সিমাম বেসিকালি মফস্বলি একটা ব্যাপারের বাইরে খুব বেশি ভাবতে পারছেন-এমনটা খুব কম দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের কবিতা বিবিধ অর্থেগ্লোবাল হবার চেষ্টা করছে যেহেতু সেখানে ইটসেল্ফ বাংলা ভাষা বিপন্ন। তারা চেষ্টা করছে ডায়াসফোরিক সাহিত্য করার। তবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ যেহেতু বিভিধ রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রজনিত সংকট ফেস করে এগুচ্ছে-তার সব ছাপ এদেশের কবিদের কবিতাই নানা ভাবেই আসছে যেটা একটা অসাধারণ পজিটিভ ঘঠনা।

দুপুর মিত্র: সাহিত্য আন্দোলন কি কবিতাকে পরিবর্তন করে?

সরওয়ার কামাল: যে কোন নিদ্দিষ্ট অভিমুখ নির্ভর সাহিত্য আন্দোলন লেখালেখিতে একটা পজিটিভ পরিবর্তন আনতে বাধ্য। পরিবর্তন বা বদল তো কেবল দুটো শব্দের ব্যাপার না। এটা একটা মানসিকতা যেটা একটা ব্যাপক এবং বিরাট বোঝাপড়ার ফল। এখন কেবল যদি ইমাজিনেশান দিয়েই একটা কম্প্রিহেনশান আনা যেত তাহলে কিন্তু কবিরা সব বিপ্লবের গুরু হত। কবিরা কবিতা লিখতে পারে পরিবর্তন বা বদলের জন্যে অথবা বদলকে নিয়ে অথবা বদলের ঠিক মাঝখানে। সাহিত্য আন্দোলন একটা খুব দরকারি জিনিস সেটা লেখাকে পরিবর্তন করতে পারুক বা না পারুক।

দুপুর মিত্র: আপনি কিভাবে কবিতা লিখেন?

সরওয়ার কামাল: জীবনানন্দ দাশ একটা কবিতা লিখে অনেক দিন ফেলে রেখে পরে কারেকশান করে ছাপাতেন। রবি ঠাকুরের পান্ডুলিপিতে কত অজস্র কাটাকুটি। আমি ঠিক ওরকম নই। বেশ স্পনটেনিয়াস। এক বসাতেই লেখা। তবে এটা দেখেছি পরিবেশ কবিতাকে বদলে দেয়। ভাষাকে বদলে দেয়।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বিশ্ব কবিতা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

সরওয়ার কামাল: সমসাময়িক বিশ্ব কবিতা তেমন পড়া হয়ে ওঠেনা। কিছু বলাটা ঠিক হবে না-এক্ষেত্রে।

দুপুর মিত্র: আপনার লেখালেখির শুরু কবে থেকে?

সরওয়ার কামাল: সিরিয়াসলি লিখছি বছর দশেক। সেই ইন্টারমিডিয়েটে একটা হালকা চেষ্টা ছিলো। ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে সেটা আরেকটু পানি পায়। তো লাস্ট দশ বছর বেশ ভালোই নড়াচড়া দেখলাম তো তার। তবে ফেবুটাতে এসে সেটা বেড়ে গেছেই তো দেখলাম।

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

সরওয়ার কামাল: কবিতা এমনিতেই লিখি। ভালোই তো লাগে। কোন চেষ্টাচরিত্র, ইচ্ছা, অভিলাষ আর উদ্দেশ্যহীনভাবেই লিখি। বাসনাটাসনা তো নাই। আকাঙ্খা? অনুভূত হয়নি কখনো তো! ঐ। হয়ে গেছে। লিখে ফেলেছি। ঐ মাঝেমাঝে কিছু কবিতা পুরনো কিছু শ্যাওলাকে জাগিয়ে দেয়। চোখে জলটল আসে। খারাপই লাগে বলা যায়। তারপরেও তো লিখছিই।

দুপুর মিত্র: কবিতা লিখতে আপনার কতটুকু সময় লাগে?

সরওয়ার কামাল: সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা।

দুপুর মিত্র: আপনি সাধারণত কোথা থেকে কবিতা লেখার বিষয় খুঁজে নেন?

সরওয়ার কামাল: নিজের ভেতরে ডুব দিই। নিজেকে দেখি। যা কিছু নিজের ভেতর খুঁজে পাই সেটাই বিষয়। সেটাই কবিতা।

দুপুর মিত্র: একটি কবিতা লিখতে আপনার কেমন সময় লাগে?

সরওয়ার কামাল: কবিতা লিখতে তো তেমন সময় লাগে না। লাগে নিজেকে খুঁড়ে ঐ কবিতাটাকে খুঁজে বার করতে।

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার বলে মনে করেন?

সরওয়ার কামাল: প্রস্তুতি বেশি না হওয়াই ভালো। প্রস্তুতিহীন লেখার পক্ষপাতি আমি। তবে, নিজেকে দেখার জন্যে, দেখতে পারার জন্যে, ঠিকঠাক রিড করতে পারার জন্যে যেটুকুপ্রস্তুতি থাকাটা জরুরি, সেটুকু কবিকে বুঝতে হবে। ঐটুকুন না বুঝে লিখতে গেলেই ঝামেলা। সেটা লেখা না হয়ে বকা হয়ে যায়। বকাঝকা কখন কোন পাঠক পড়েছে আর বলুন।