একগুচ্ছ নতুন কবিতা

Post date: Mar 10, 2011 7:38:59 AM

মাহবুব হাসান

এই কবিতাটিকে

এই কবিতাটিকে শ্রাবণের আকাশের মেঘ থেকে টুকে

গ্রামবাংলার মেয়েদের আঁচলে তুলে দিলাম। তুমি মেঘ দেখে

গেয়ে ওঠো, আজি এ-রৌদ্র-মেঘের খেলায়...

আমি আটত্রিশ হাজার ফিট ওপরের নীলাকাশ দেখতে দেখতে কান্ত হয়ে

তোমার কবিতার আঁচলে মন রেখে ঘুমিয়ে পড়ি

বহুদেশি নরনারীর মাঝখানে।

তারা আকাশ দেখে না।

চোখে দেখে না তারা শ্রাবণের রৌদ্রখেলা,

বাতাসের হোলি-নাচ মেঘের গম্বুজে পড়ে না বিমানের ছায়া,...

তবু রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুর হুলিয়া নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন কোনো এক-কালে

এই শ্রাবণের আকাশে আকাশে,

আকাশ দেখায় আমাকে তোমার মুখ

আর নয়নের জলে ভাসমান জীবনের অসুখ-বিসুখ;

আমি বিমানের পেটের ভেতরে কান্ত হয়ে ভাতঘুম দিই ;

ভাতেরা ঘুমায় না জানি, বর্ষায় জলমাপার টোয়া দেয়া স্মৃতির বাথানে

আমি সুপ্তির কোলে আলগোছে শুয়ে থাকি ;

বিমানবালারা হাসিভরা মুখে কেচে নিতে আসে

আমাদের কান্ত বেদনার রসটুকু ;

তাহাদের হাসির খোয়াব থেকে আমি

ছুটি নিতে বাইরের নীলে মন ছেড়ে দিই ;

নীল অনন্ত পাখি...,

ঈশ্বরপ্রতিম যেন,

দিঘীর কালো জলের কাজল এসে ছেয়েছে চারপাশ।

আমি নিরাকার মুখ মনে মনে এঁকে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য তৈরি হই।

০৩/০৮/২০১০/ঢাকা

আরও একটি কবিতার জন্ম হোক

আরও একটি কবিতার জন্ম হতে যাচ্ছে বতিচেল্লির ভেনাসের মতো

নগ্ন-সুন্দর আর স্বাধীন। জন্ম-স্বাধীন কবিতার মগডাল থেকে একরত্তি

ভোর আলো-হাওয়া নিয়ে এসে বসলো পিঁড়ি পেতে আমাদের দিনানুদৈনিক

পান্তার পাতায়। কবিকে বললাম তোমার মন তো পড়ে আছে ধানীজমি আর

লোকমুখর হাটবাজারের খোলায়,

তুমি নাগরিকতার শিকল কেনো পরো?

কবি হাসেন স্বাধীনতা হাসে যেভাবে। উনিশ-শ’একাত্তরে একবার আমি

সেই হাসির বিদ্যুতে গোসল করে

নবজীবনকে উড়তে দেখেছিলাম ইকারুসের মতো রৌদ্রনীল-জ্যোৎস্নায়।

জ্যোৎস্না তো নীলিমারই সহোদরা,

আমাদের পরী-নারীদের পোশাক-আশাক,

আমাদের মনোবাসনার দীপাবলি। আমি একটি

কবিতার শরীর সৃষ্টি হতে দেখছি,

আমি ভাষার দাঁতের ফাঁকে দেখতে পাচ্ছি

কবিতার উপাদানের রক্তাক্ত পঙক্তিমালা -

সেখানে বেদানার মতো লুকোচুরি খেলা চলছে,

ভাঙাচোরা সময়ের নাভিমূলে মাইকেল জ্যাকসনের

শিশুদের নিয়ে করা গানের কলি নাচছে ত্রিভঙ্গ মুরারির মতো

আর মার্কিনি অর্থনীতির মাল্টিন্যাশনাল কালচারাল বিহেবিআর দেখতে পাচ্ছি সেখানে,

আমি দেখছি শোষক আর শাসিতের সম্মিলন

নক্ষত্রপল্লীর মতো নিজস্ব অরবিটে ঘুরপাক খাচ্ছে,

আমরা এখন বলতে পারি পৃথিবী মানুষের,

ধলোদের নয়, কালোদের নয়,

পীত ও হলুদাভদেরও নয় এ-পৃথিবী,

বাঙালি নামক মিশ্রদের কবজিতে যে স্বাধীনতা

গোত্তা খেয়ে পড়েছিলো ডিসেম্বরের শীতার্ত সকালে শিশিরভেজা ঘাসে,

সেখানে কবিতা ছিলো মুক্তিযোদ্ধার চেতনার ভাঁজে ভাঁজে,

আমি আরও কিছু কবিতার জন্ম দেখবো বলে

আশ্বিণ-কার্তিক-অগ্রহায়ণ-পোষ-মাঘ-ফাল্গুন-চৈত্র-বৈশাখের মতো

চক্রাকারে ঘুরছি, আর বুনছি বীজ

পৃথিবীর উর্বরতম মাটিতে ‘স্বাধীনতা’।

১৩ আগস্ট,শুক্রবার, ২০১০/ ঢাকা

ছাই দিয়ে মাখানো কবিতা

যে বুড়িটি সোনার ছাই দিয়ে প্রতিদিন মাজতো রূপাকাঁসার বাসন-কুশন

আমাদের পুকুরঘাটে বসে, সে এখন কাজ করে আমার বাসায়।

তার আর নেই সোনার ছাই,

বাসনকুশনও নেই রূপাকাঁসার।

এখন জীবনের সোনালি দিন

ঠুনকো কাচের বাসন আর পোরসিলেনে ভরা।

ঘড়া উঠে গেছে, ছাই গেছে ছাইগাদায়,

আমরা শহরে বন্দী

আমি কবে মুক্ত হবো এ-বন্দীদশা থেকে!!

১৪/০৮/১০/ঢাকা

রোদ ভেদ করে

রোদ ভেদ করে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি নেমেছে

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর এ-বৃষ্টি,

আজ ৩০ শ্রাবণ

আমাদের মনে বেদনার শীল পড়ছে শাদা ধবধবে,

ভাদ্দুরে তালের ঘ্রাণময় অপেক্ষার কাল গুনছি আমরা,

নরোম বাসনায় পাকা তাল

আমাদের রসনায় ফাল-পারা কৈ-এর মতো নাচায় মহাকাল ;

কারা যেন কালনেমি কাল হয়ে নামে আমাদের লোকবাংলায়

আমি এবং আমরা কি

তাল-পাকা ভাদ্দুরের দিকে পিঠ দিয়ে বসে থাকবো?

ফিরে যাবো পিতা-প্রপিতাদের শেকলপরা কালে?

স্মৃতির শৈশব ধরে রওনা হবো কি আমাদের গ্রামে?

বিল থেকে তুলে আনবো শাপলা-শালুক, কলমি ফুল সকালবেলায়?

বলো রোদ, গুড়িবৃষ্টি! বলো, বলো

আমি কি ফিরে যাবো তোমার খানায়?

১৪ অগস্ট, ২০১০/ ঢাকা

এ-জীবন খন্দকময়

নিষ্প্রদীপ মহড়ায় মাটির পৃথিবী আঁধারের চাদরে ঢাকা থাকলেও

আকাশ তার তারাদের জ্বালিয়ে দিয়ে আমাদের মনে

আলোর ইশারা দেয়, তুমি সেই আলো

তুমি সেই আলো

তুমি সেই আলো; প্রভুর মতো জ্বলছো

নিরবধিকাল ;

আর তুমি হে মাটির মানুষ,

কখনোই আঙুল তুলবে না তোমার অন্যের দিকে-

কারণ তুমি অপরাধী তোমার মনে কাছে, আর তা তুমি কখনোই জানতে চাওনি।

তুমি অন্যের দোষ ক্ষমা করে

নিজেকে সাজাও, প্রস্তুত হও ঈশ্বরের কাছে

তোমার জবান তুলে দিতে;

এখনই ভালো সময়;

এই ইবাদতেরকালে, আল্লাহর গুণ গাইবার শ্রেষ্ঠ সময়ে

তুমি লান্নত দেবার চেষ্টা করো না। আল্লাহ

দুর্বলের পাশে চিরদিন।

২০আগস্ট, ২০১০/ ঢাকা

আকাশের সৌন্দর্যবান তুমি

এক পশলা বৃষ্টি আমাকে ভিজিয়ে গেলো ভাদ্দুরের তালের বাশনায়

আমি বৃষ্টিস্নাত হয়ে ঢুকলাম এসে রোদের ভেতর, তুমি

আকাশ আমার, সোনারোদ এ-পৃথ্বীর, সুন্দরের

বাহন তুমি বাতাবি লেবুর রৌশনি ঘ্রাণ,

আমাকে পথের মাঝে এমনভাবে ফেলে গেলে কেন?

আমি কি আয়াত তোমার পড়িনি নিমগ্নচিত্তে!

আমি কি নিইনি নিশ্বাস বায়ু

তোমার? অবারিত আলোকমালা,

ঘাসের গালিচা

তো আমারই চিরদিনের শয্যা করেছি আমি,

শানবাধানো স্মৃতি আমার,

অমিয়ধারার প্রশ্নে কেন আমাকে গাঁথো অহরহ!!

তুমি সোনারোদ আমার রুপের পৃথিবী আমার

সৌন্দর্যবান, আমাকে স্নাত করো

পারমানবিক বোধের তাওয়ায়,

আমাকে তোমার

নীলাকাশে ভাসাও স্বাধীন! নাচাও বৈশাখ

আমার ঝড়োবাতাস যেমন নাচে রুদ্ররূপ!

ধানের গন্ধের ভেতর ভরো আমাকে অগ্রহায়ণে-

পৌষ-মাঘে তুমি বাঘ হয়ে এসো

আমার খানায়, আত্মার খাঁচার মধ্যে

নিখিলকে জড়াও সোহাসের তাপে ;

তুমি কেন ফেলে গেলে আমাকে নিরালম্ব এই পৃথ্বীর মায়াজালে

অভিমানী জ্যোৎস্নার ঘেরাটোপে কেন আমাকে ভরলে নিরাকার,

রুপের পৃথিবী!!

০৭/০৯/১০/ ঢাকা