কোনো কবি দ্বারাই আমি প্রভাবিত নই: আফরোজা সোমার সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Mar 13, 2014 12:49:54 PM

প্রকাশিত বই: অন্ধঘড়ি, হারমোনিকা।

দুপুর মিত্র: আপনি কি মনে করেন কবিতা সমাজে একটি ভূমিকা রাখে? যদি রাখে সেটা কিভাবে যদি না রাখে সেটা কেন?

আফরোজা সোমা: হ্যাঁ, কবিতা সমাজে ভূমিকা রাখে। রাখে বলেই, দাউদ হায়দারকে দেশান্তরিত হয়ে থাকতে হয়। রাখে বলেই, বনলতা সেন শব্দদ্বয় উচ্চারণ করলেই বঙ্গভাষায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করেছে এমন যুবক বা যে কোনো বয়সেরই পুরুষদের মনে এসে ভীড় করে 'মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য'।

তবে, বিনোদনের বিষয়াদি যেমন- গান, নাটক, সিনেমা- ইত্যাদি কলাসমূহ গণমাধ্যমের কল্যাণে ব্যাপক প্রসারের যুগে কবিতাকে এখন অনেকটাই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী গোত্র বলা যেতে পারে।

বাজার সংস্কৃতির বদৌলতে একটি গান- সেটি যত নবীন শিল্পীরই হোক, যেমনই হোক- সাতক্ষীরা বা বান্দরবানের প্রত্যন্ত উপজেলায়ও সেটির পৌঁছে যাওয়া যতটা সহজ, কবিতার পক্ষে ঢাকার আশ-পাশে পৌঁছানোও ততটাই কঠিন বা বলতে গেলে কবিতার সেই অর্থে পৌছানোর বাস্তবতা এবং সুযোগ কম।

ফলে, যেহেতু কবিতা তার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছেই পৌঁছুতে পারছে না তাই তার প্রভাবও বৃহত জনগোষ্ঠীর ওপরে হবার সুযোগ থাকছে না।

যার যতখানি গন্ডি, তার ততখানি প্রভাব।

দুপুর মিত্র: আপনি কোন কোন কবি দ্বারা বেশি প্রভাবিত?

আফরোজা সোমা: কোনো কবি দ্বারাই আমি প্রভাবিত নই।

দুপুর মিত্র: আপনার কাছে কবি হয়ে ওঠা বিষয়টা কি? কবিতা কি?

আফরোজা সোমা: কবি 'হয়ে ওঠা'র একটা বিষয় আছে নিশ্চয়ই। ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারের সনদ পেতে গেলে বহুবর্ষ ধরে যেমন একটা কাঠামোবদ্ধ পড়ালেখার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, গিয়ে গিয়ে সনদ পেতে হয়, কবিদেরও তেমনি বহুবর্ষ ধরে নিজের ধ্যানের পেছনে লেগে থাকতে হয় বৈকি! তবে, কি-না, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারের সনদপ্রাপ্ত হবার মতন কবির কোনো সনদ প্রাপ্তির ব্যাপার বোধহয় জগতে নেই।

বলা যেতে পারে যে, নিজের বাসনা বা ইচ্ছে বা ধ্যানের পিছনে লেগে থাকার ব্যাপরটাই হয়তো 'হয়ে ওঠা' । 'হয়ে ওঠা'র প্রস্তুতি মানেই হয়ে ওঠা কি-না তা নিয়েও আমি নিঃসন্দেহ নই।

কী-জানি, সনদহীন এক সনদপ্রাপ্তির পিছু ছোটার ঘোরই বোধ হয় কবিতা।

আর কবিতা কী? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ঠিক যতটাই সহজ ততটাই কঠিন। বহিরাঙ্গে কবিতার একটা কাঠামো বা রূপ তো আছেই। সেই রূপে বা কাঠামোতে ফেলে কতই তো কবিতা রচিত হচ্ছে প্রতিদিন।

কিন্তু কবিতা -- যা কেবলই বহিরাঙ্গের কাঠামোতে নেই- যার অন্তরাত্মা বলেও কিছু আছে বলে লোকে বলে, তার কথা আমি কীভাবে দিবো বর্ণনা? বাক্যের জাল দিয়ে যতই তাকে ধরেছি বলে ভাবা যাক না কেন, সে তো মানবাত্মারই মতন; আমার মধ্যে থেকেও সে আমার অধীনে নেই। তাকে শুধু টের পেতে হয়, বয়ানে বা বর্ণনায় বা তর্কে তার প্রমাণ বা দেখা পাওয়া ভার মনে হয়।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বাংলা কবিতার প্রবণতাগুলো কি?

আফরোজা সোমা: সমসাময়িক বাংলা কবিতা তো অনেক ছড়ানো। এই একই সময়ে বসে আল মাহমুদ থেকে শুরু করে, সৈয়দ শামসুল হক, মাসুদ খান, টোকন ঠাকুর, ফেরদৌস মাহমুদ এবং একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকের কবিরা-ও লিখছেন। এরা একেকজন, একেকটা সময়ের হয়ে লিখছেন।

বিংশ শতকের পঞ্চাশ, আশি, নব্বই, একবিংশ শতকের প্রথম দশক, দ্বিতীয় দশক সবগুলো দশক মিলিয়ে তো সত্তর বছরেরও বেশি সময়ের ব্যাপার। পঞ্চাশের কবিতা যা ছিল, আশিতে আর তা নেই। আবার আশিতে যা ছিল এই দ্বিতীয় দশকেও তা সেরকম নেই। নেই কারণ সময়টা একই রকম নেই। দেশীয় ও বৈশ্বিক ঘটনাগুলো একই রকম নেই।

ফলে, সমসাময়িক বাংলা কবিতার প্রবণতাসমূহ একবাক্যে চিহ্নিত করার আগে অন্তত পাঁচদশকের প্রতিনিধিত্বশীল অধিকাংশ কবির গ্রন্থ আমার পুণরায় পাশাপাশি রেখে পাঠ করতে হবে। নইলে, এই মন্তব্য করা আমার পে সম্ভব নয়।

দুপুর মিত্র: সাহিত্য আন্দোলন কি কবিতাকে পরিবর্তন করে?

আফরোজা সোমা: দলীয় ভাবে তো আর কবিতা লেখা যায় না, কবিতাটা রচিত হয় এককভাবেই। কিন্তু একটা আন্দোলন যখন সমাজে ঢেউ তোলে তখন সেই সমাজের অংশ হিসেবে কবি প্রভাবিত হতেই পারেন এবং তার কবিতাও কিছুটা প্রভাবিত হতে পারে।

বিশ্ব পেইন্টিংস-এর ইতিহাসে, সিনেমার ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনের ফলে বিভিন্ন ধারার বিস্তার ঘটেছে। বাংলা কবিতার ক্ষেত্রেও কলকাতার হাংরি জেনারেশন ও শ্রুতি আন্দোলন নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছে। তারা কতখানি পেরেছে কি পারে নি সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু একটা নতুন কিছুর প্রত্যয় নিয়ে তারা এসেছিল, এইটুকু সত্য।

আর চূড়ান্ত সত্য হলো এই যে, বিল্ডিং বানানোর মতই কবিতা কোনো দলগত কাজ নয়। যুগের পর যুগ ধরে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার জনে মিলে কবিতার নিশানটা এক সময় হতে আরেক সময়ের কাছে পৌঁছে দিলেও কবিতা রচিত হয় একা; ঠিক মানব জন্মের মতনই কবিতার জন্মও ঘটে একাকী।

দুপুর মিত্র: আপনি কিভাবে কবিতা লিখেন?

আফরোজা সোমা: বাসনা করি, যাঞ্চনা করি, অপো করি, আয়োজন করি; কবিতার জন্য। এসবের মধ্য দিয়েই হয়তো লেখি কবিতা, এর বেশি জানি না।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বিশ্ব কবিতা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

আফরোজা সোমা: সমসাময়িক বাংলা কবিতা নিয়েই যেখানে হুট করে বলাটা মুশকিলের সেখানে বিশ্ব কবিতা নিয়ে বলবো কী করে!

আক্রান্ত বিধ্বস্ত ইরাকে ও আফগানিস্তানে যে কবিতা রচিত হচ্ছে এবং ইরানের উপরে ক্রমাগত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, ইসরায়েলি হুমকি, আর আন্তর্জাতিক অসহ্য অন্যায় চাপের কারণে তরুন ইরানি কবির চিন্তায় যে রাগ, ক্ষোভ, জেদ আর বেদনা জন্মেছে তা থেকে উৎসারিত হচ্ছে যে কবিতা- ধারণা করি, তা ইরাক, ইরানের পঞ্চাশ বছর আগের চেয়ে আলাদাই বটে।

আবার ল্যাটিন আমেরিকার কবিতা আর আফ্রিকার কবিতাও নিশ্চয়ই আজ থেকে ৫০ বছর আগে যা ছিল এখন সেখানে এসেছে অনেক নুতন স্বর, নতুন অনুসঙ্গ।

আর এশিয়ান কবিতা, ইউরোপিয়ান কবিতা, এবং মার্কিন বা ব্রিটিশ কবিতাতেও ফারাক যে আছে অনুমান করি। কিন্তু সেই সব দেশ বা ভূখন্ডের সমসাময়িক কবিতা তো আমার পাঠের মধ্যে নেই। আমার পাঠের মধ্যে যতসামান্য যা আছে, তা বিখ্যাত লেখকদের, যারা লিখে নাম ধাম-কুড়িয়েছেন, এবং তার পর তাদের বই আমি পড়েছি।

সুতরাং আমারই সময়ে বসে আমারই বয়সী ইরাকি কবি বুকে বেদনা নিয়ে, ইরানি কবি মনে রাগ নিয়ে, সমাজতন্ত্র মুখথুবড়ে পড়ার পর সেই দুঃখ সংগোপনে হৃদয়ে ধারণ করে রাশান যে কবি লিখছে কবিতা আমি তাদের কবিতার সঙ্গে তো এখনো পরিচিত হয়ে উঠি নি।

ফলে, একই সময়ে থেকেও আমাদের মধ্যে যে যোগাযোগহীনতা আছে তা নিয়ে আমি বেদনাক্রান্ত হলেও এই দুঃখ সহসাই ঘুচিয়ে ফেলার সুযোগ কি আছে? আর যা আমার পঠিতই নয়, তা নিয়ে তো মন্তব্য করা যায় না।

দুপুর মিত্র: আপনার লেখালেখির শুরু কবে থেকে?

আফরোজা সোমা: আমার লেখালেখি শুরু আমার কৈশোরে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আমি প্রথম কবিতা লেখি। কবিতাটির নাম ছিল দুঃখ।

তবে, খুব শিশুকাল থেকে আমার একা-একা নিজের সঙ্গে কথা বলার একটা অভ্যাস ছিল। হয়তো কখনো আমি একা-একা রোদের মধ্যে হাঁটতাম বা বাড়ির আশ-পাশের খোলা জায়গায় ঘুরতাম আর শব্দের পিঠে শব্দ জোড়া দিয়ে দিয়ে একটা কি দুইটা বা কয়কেটা বাক্য বানাতাম এবং সেই সব বাক্যে সুর বসিয়ে গুণ গুণ করে গাইতাম। বছরের পর বছর একাগ্র চিত্তে এই কাজটা আমাকে দিয়ে হয়েছে।

হয়তো সেই একা একা কথা বলার বিষয়টাই ছিল ওরালি আমার কবিতা রচনার কাল। পরে আরো বেশ কয়েক বছর পর, কাশ সেভেনে উঠে কবিতা অর্থে লেখা হয় প্রথম কবিতা।

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

আফরোজা সোমা: বাঁচার জন্য লেখি। হয়তো, কবিতা আমাকে দিয়ে লিখিত হতে চায়, তাই লেখি।

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

আফরোজা সোমা: বেঁচে থাকার জন্য একজন মানুষের যেমন প্রস্তুতি দরকার, কবিতা লেখার জন্যও তেমন-ই প্রস্তুতি দরকার। কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য কী প্রস্তুতি নেওয়া দরকার তা আমাকে ফিরে জিজ্ঞেস করবেন না। জীবন যার যার, প্রস্তুতিও তার তার। এক জীবনের প্রস্তুতির কায়দা-কানুন আরেক জীবনের কাজে না-ও আসতে পারে।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন? সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

আফরোজা সোমা: সমসাময়িক বলে তো আবার আল মাহমুদ থেকে এ যাবৎ উঠে আসে। আমি বরং প্রথম দশকের কবিদের কথাই বলি। শুভাশিষ সিনহা, ফেরদৌস মাহমুদ, এবং জুয়েল মুস্তাফিজের লেখা আমাকে টানে এবং ভালো লাগে। এছাড়া সোহেল হাসান গালিব-এর লেখাও ভালো লাগে।

আর খারাপ লাগার কথা এখানে টেনে আনার কোনো যুক্তি আমি দেখি না। ভালো না লাগাটাই স্বাভাবিক। আর ভালো লাগাটাই ঘটনা। সুতরাং, যা ভালো লেগেছে তার সুখটাই সকলের মাঝে বিস্তৃত হলে আমার সুখটাও বাড়িয়ে নেয়াই আনন্দের কাজ হবে বলে বোধ করি।

দুপুর মিত্র: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

আফরোজা সোমা: মানুষের কিছু মৌলিক আবেগ- প্রেম, কাম, রাগ, ক্ষোভ, হতাশা, ভালোবাসা, বিদ্রোহ, একাকীত্ব, অসহায়ত্ব, দুঃখ - ইত্যাদিই সাধারণত প্রকাশিত হয় কবিতায়। সুতরাং বিষয় বস্তুর দিক থেকে পৃথিবীর কোনো দেশের কবিতার সঙ্গেই অন্য দেশের কবিতার কোনো তফাত নেই। সেই হিসেবে অ্যামেরিকার কবিতাও যা বাংলাদেশের কবিতাও তা এবং বাংলাদেশের কবিতাও যা পশ্চিম বঙ্গের কবিতাও তা।

তবে, একেকটি দেশের রাজনীতি, একেক দেশের সংস্কৃতি, সেই ভূখন্ডের ইতিহাস, সেই ভূখন্ডের জলবায়ু, ভূ-বৈচিত্র, এবং পৃথিবীর অপরাপর দেশের সাথে সেই ভূখন্ডের রাজনৈতিক সম্পর্কের উষ্ণতা বা চাপ ইত্যাদি বিষয়ের প্রকাশের কারণেই একেক দেশের একেক ভাষার কবিতা আলাদা আলাদা হয়ে যায়। আর সেই সব ফারাকের কারণেই বাংলাদেশের কবিতার সাথে পাকিস্তানের কবিতার যে ফারাক, বাংলাদেশের কবিতার সাথে পশ্চিমবঙ্গের কবিতারও সেই ফারাক এতো দিনে তৈরি হয়েছে বলে মনে হয়।

ভারতে বাংলা প্রাণ বাঁচানোর চাপে এবং ভারতের মত বিশাল দেশের আরো অনেক ভাষা ও সংস্কৃতি এবং হিন্দি ও ইংরেজির চাপে বাংলা সেখানে- ভাষা অর্থেও, সংস্কৃতি অর্থেও- অস্তিত্ব সংকটে আছে বলেই প্রতীয়মান হয়।

গত বিশ-পঁচিশ বছরে ধরে একদার দুই বাংলা - পূর্ববাংলা ও পশ্চিমবাংলা - এদের অন্তর্গত ফারাক এমনই বেড়েছে যে, বর্তমানে মনে হয় দুই বাংলার কবিতা এখন দুই দেশেরই কবিতা বটে।

তবে, বিদেশী ভূখন্ডের কবিতা হলেও ভাষাগত দিক থেকে, ঐতিহ্যগত দিক থেকে, সংস্কৃতির দিক থেকে আজন্ম মিল থাকায় বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের সাম্প্রতিক কবিতায়ও এখনও অনেক মিল রয়েছে।

দুপুর মিত্র: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

আফরোজা সোমা: সাহিত্যকে কিছু দিচ্ছে কি-না সেটা বোধ হয় এখনি ঠিক করে বলা যাবে না। তবে, বগ সাহিত্য বা চিন্তাগুলোকে প্রকাশের জন্য একটা বিরাট জায়গা তৈরি করে দিয়েছে।

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের চাইতে বগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

আফরোজা সোমা: এক অর্থে লিটল ম্যাগের চেয়ে বগ এগিয়ে রয়েছে। ব্লগ একটা তাৎক্ষণিক প্রকাশের সুযোগ এনে দিয়েছে। পাশাপাশি, সম্পাদকের পছন্দ-অপছন্দ ব্যাপার বা সম্পাদকীয় কাঁচি কাটার ব্যাপার এখানে নেই। ফলে, ব্লগে সাহিত্য - কবিতা, গদ্য, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ - সবকিছুই ব্যক্তি তার ইচ্ছে মতন প্রকাশ করতে পারছে।

তবে, লিটল ম্যাগ এখনো একটা সাধনার নাম। বহু সাধনা করে সেটা করতে হয়। বইয়ের মতনই, লিটলম্যাগের প্রয়োজন ফুরাতেও বোধ হয় আরো বহু দিন লাগবে।

আর তাছাড়া প্রযুক্তি এখনো সমানভাবে দেশের সবখানে পৌঁছায় নি। ফলে, সেই সব জায়গায় এখনো লিটল ম্যাগাজিনই ভরসা।

দুপুর মিত্র: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেণ কি?

আফরোজা সোমা: হচ্ছে তো। ভালো-মন্দ মিলিয়েই হচ্ছে। বিনোদনের আর বিজ্ঞাপনের এই যুগে এক পাতা যে সাহিত্যের জন্য দিচ্ছে সেটাই কম কী!

সেই সব পাতার মান, সাহিত্য মান নিয়ে কারো কারো আপত্তি হয়তো থাকতে পারে। কিন্তু আমার হিসেবে, অনেক ভুলের মাঝখান থেকেই অনেক অসম্পূর্ণ, অসুন্দরের মাঝখান থেকেই বেরিয়ে আসবে এক হঠাত সুন্দর। সেটাই প্রাপ্তি। কেননা, জগতের সব পশু বা প্রাণী-ই ময়ূর নয়। আর ময়ূরও নিত্য দিন পেখম মেলে থাকে না। অতএব, ভুল-ভ্রান্তি-অভিযোগ-সমস্যা থাকবেই। এরপরেও সকলে মিলে একটা ভালো কিছু করার চেষ্টা করছে, অন্তত সপ্তাহে একদিন হলেও নিয়মিত সাহিত্যের একটা পাতা বেরুচ্ছে এবং সেটি দেশের নানা প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে সেটি কম কথা নয়।

হয়তো কেউ বলতে পারে যে: আমরা আরো ভালো চাই, আরো নিখুঁত, আরো সুন্দর চাই। কিন্তু আমি মনে করি যে, যথেষ্ট ভালো বা সুন্দর না হলেও এই যে ভালো কিছু করার এই প্রচেষ্টা, সেটি নিঃসন্দেহে সুন্দর ও প্রশংসাযোগ্য।