মুজিব ইরমের স্মৃতিকথা: রচনা এইম ইন লাইফ পূর্ণমান ১০০। সাধু ও চলিতরীতির সংমিশ্রণ দূষনীয়।

Post date: Oct 20, 2014 5:09:20 PM

(আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যের ফর্ম বাংলা ভাষায় তেমন চর্চিত নয়। আবার এখানে কিছু কুসংস্কারও রয়েছে। যেমন মনেই করা হয় কেবল বুড়োদের স্মৃতি থাকে। তরুণদের নয়। মানে বুড়ো লেখকরাই আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথা লিখবে। তরুণরা এটা লিখবে না। কিন্তু এটা তো জাস্ট একটা সাহিত্যের ফর্ম। যে কোন সময় যে কোন বয়সে যে কেউ- এই স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনী লিখতে পারে।

এবার আমার টার্গেট এই স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনী লেখার প্রচলিত বা প্রথাগত ফর্মটাকে ভেঙে দেওয়া। এখন থেকে অলস দুপুর ওয়েব ম্যাগাজিনে যে কোনও বয়সের যে কোনও লেখকের স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনী ছাপা হবে। অলস দুপুর ওয়েবম্যাগে সকলের স্মৃতিকথা লেখার আহ্বান জানাচ্ছি। স্মৃতিকথা লেখার ভেতর দিয়ে মিথ্যা বা ভুয়ো আত্মজীবনী লেখার জায়গাটাও কমে আসবে।

আসুন আমরা স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনী লেখার প্রচলিত বা প্রথাগত ফর্মটাকে ভেঙে দেই।-দুপুর মিত্র)

বালক তবে কী হইতে চাহিয়াছিলো-এতোদিন পর ভাবিতে বসিলে সেতারের তার কিঞ্চিৎ ঝন করিয়া আব্দুল করিম খা’র অঙ্গুলি হইয়া উঠিলো! অ-বুঝদার হেতু সাধু ও চলিত রীতির সংমিশ্রণ করিয়া বহুবার পরীক্ষার খাতায় নাম্বার কাটা যাইবার উপক্রম হইয়াছে, তথাপি শ্রী রনজিৎ দাশ- যিনি বাংলার শিক্ষক ছিলেন, সংস্কৃত জানিতেন- নাম্বার কাটিতেন না। কহিতেন - বাংলায় এই বালকের সমকক্ষ কোনো ছাত্র তিনি এ যাবৎ পান নাই। তবে কি বালক বাংলার রণজিৎ স্যার হইবার খায়েস করিয়াছিলো?

সেতারে আরেকবার ঝঙ্কার উঠিল।

না, বালক এমত স্বপ্ন রচনা করে নাই। তাহা হইলে তাহার ভিতর এমন অঙ্কুরিত হইয়াছিলো? তাহা কি মনু-জলে উড়াল-পাখিদের ছায়া সন্তরণশীল মাছ হইতে দেখিয়াছিলো বলিয়াই তাহার ভিতর স্বপ্ন হইয়া নামিলো? তাহাও মনে পড়ে বটে, কিন্তু বালক এই রূপ উড়াল পাখির ছায়া হইতে কখনো চাহিলেও মনে তেমন দাগ কাটিয়া নাই। দাগ কাটিয়া আছে অন্যত্র। আজ রজনী গভীর হইলে উড়াল-পাখির ছায়া মনুর উজান জলে সন্তরণমীল মাছ হইয়া ফিরিবার তাড়না জাগায় বটে, বালক তবু পথ ভুল করিয়া উড়াল-পাখির ছায়াকে মায়া ভাবিয়া ভিনবাসে ফানা হইয়া থাকে। তাহা হইলে কোন সে-স্বপ্ন তাহাকে এমত গৃহহীন করিলো?

শীত তাহার ভালো লাগিতো। কেননা, মীতে বিবাহ হয়, শীতে উড়াল-পাখির ছায়া বিলে এসে নামে, শীতে মেলা-বান্নি হয়, পড়শিদের উঠানে নাইন-ও- ক্লক ফোটে। শীতে অনেক কিছুই হইয়া থাকে। এক মীতে তরুণী বালার বিবাহ হইয়াছিলো। ঢাকা-সিলেট বিরতিহীন-এর দরজায় দাঁড়াইয়া হাতে-পায়ে বাতাস কাটিয়া গেলে, তাহাকে তরুণী বালার যোগ্য বর ভাবিতে হয়। যথাসময়ে বড় রাস্তার মোড়ে দাঁড়াইয়া তরুণী বালার বরের বাতাস কাটিয়া যাইতে দেখিয়া বালকের কি তবে বিরতিহীনের কন্ট্রাক্টর হইবার সাধ জাগিয়াছিলো?

সেতারে বেজে ওঠে পাখির ওড়াল।

মানুষ মৎস শিকারে যায়। মানুষ কুড়া শিকারে যায়। মানুষ দূর পাহাড়ে ছন কাটিতে যায়। মনুতে গুণ টানিতে টানিতে উজান স্রোতে নাই হইয়া যায়। শীত শেষে লাল বর্ণ সুপারির বাকলগুলি ছোবড়া হইয়া পথে পথে জঞ্জাল বাড়ায়। গেন্ডাফুলের হলুদ বর্ণ বিবর্ণ হয়।মনুতে বারকির মাছ উজানে বেঁহুশ হইয়া ফিরিতে থাকে। মাঠে মাঠে চান্দিনা ধানের দুলুনি গালিচা বানায়। জঙ্গলে জঙ্গলে বনুয়া ফুল সুগন্ধী বিলায়। রাস্তায় বিয়ারিং গাড়ির দাগ মেঘ-জলে মিশিয়া কাদা হইয়া ওঠে। এতো এতো যায়- এর ভিতর বালক কি তবে বড় বড় পাশ দিয়া নগরবাসী হইতে চায়?

না, তাহাও আজ মনে পড়িতেছে না। আমন ধানের পুরুষ্ট হিজা কুয়াশা-ভোরে বড় রাস্তার পাশে ভিজিয়া থাকে ডাগর নয়নে। বালকের চোখে তাহা মনোমুগ্ধকর হয়। বালক তাহা ভুলিয়া কী করিয়া নগর বন্দনা করিতে শিখিবে!

বালকের একবার জ্বর হইয়াছিলো। জীর্ণবালক ভর দিয়া দক্ষিণ-মাঠের রাই ফুলের ক্ষেতে পৃথিবীর সৌন্দর্য অবলোকন করিতো। বালকের বড়ো বনরুটি, বাটার বন, ক্রিম রুল ভালো লাগিতো হেতু জ্বর কামনা করিয়া সকলের মায়া কাড়িয়া লইলে, একদিন বড় হইয়া পৃথিবীর সব বাটার বনের দোকান কিনিয়া লইবার বাসনা করিয়াছিলো। এই বাসনাও তাহার স্থায় হইলো না। তাহা হইলে বালক কী হইতে চাহিয়াছিলো?

ভাদ গাঁওয়ের ঘোষের সাদা কাপড়ে গোল গোল ছানার গাট্টি লইয়া শহরমুখী হয়। সাইকেল-রিক্সার পিছনে ঝুলাইয়া রাখা ছানার গোল গাট্টিগুলি হইতে জলবিন্দু চুইয়া চুইয়া পড়ে। শীত নামে দূরের শহরে। ৪ নাম্বারী নরম বলের মতো সাদা সাদা মাখনের গোল গাট্টিগুলি বালকের চোখ থেকে আজও তো হায় উধাও হইলো না! তবে কি বালক ভাদগাঁওয়ের ছানা-বিক্রেতা সেই সব ঘোষ হইতে চাহিয়াছিলো?

মানুষ লম্বা চুল রাখে। আমিরী বিচ্ছেদী গায়। করিম হইতে চায়। লক্ষণ ছিরি ছাড়িয়া বন্ধুর জন্য ইববাগী বনে। মালজোড়া গানে শীতরাত কান্না হইয়া ওঠে- ‌‌বাটাতে পান সাজাই রাখলাম বন্ধি এসে খাইলো না‌। বন্ধুর বাড়ি ফুলের গন্ধ এতো সব কান্নার ভিতর কোন সে-সুরের টানে বেপথু বানায়?

উপসংহার: বালক শব্দকে ভালোবাসিয়া বেবুতা হইয়াছে। বালক বাক্যকে ধ্যান করিয়া ফানা হইয়াছে। বালক পদ্যকে জীবন ভাবিয়া ধনহীন/জনহীন হইয়াছে। বালক কি তবে কবি হইয়াছে? তাহা লইয়া এই রচনায় আর কিছু বলা যাইতেছে না। আমেন।