নব্বইয়ের কবিতায় পরিপূর্ণতা দেখা গেলেও শূন্যের কবিতায় দেখা যায় শুধুই আস্ফালন: আবু মকসুদের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jun 3, 2012 3:27:45 PM

সম্পাদক শব্দপাঠ (সাহিত্যের কাগজ)

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

আবু মকসুদ: কবিতা কেন লিখি? ভাবিনি কখনো- হয়তো তাড়িত হই বলে, পরিপার্শ্ব এবং প্রতিপাশের পীড়ন আমাকে কবিতা লেখায় অথবা নিজের অন্তজ্বালা অনুবাদের তাগিদে কবিতা লিখি।

দু: কবিতা লেকার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

আ: প্রস্তুতি নিয়ে কবিতা লেখা যায় বলে আমার মনে হয় না, তবে কবিতা লেখার জন্য কবিতার অন্দর মহলে হাঁটার দরকার আছে। পাঠ প্রয়োজন, ভাল এবং সমঝদার পাঠক হলে কবিতায় হাঁটা সহজ হয়।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

আ: এই তালিকাটা দীর্ঘ হতে পারে। কেন ভাল লাগে এটা ব্যাখ্যা যোগ্য নয়, আমি ব্যাখ্যা করতে অক্ষম। এই মুহুর্ত্ব যে দুজন কবি নিয়ে আমি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি তাঁরা হচ্ছেন মাসুদ খান এবং আবু হাসান শাহরিয়ার বিপরীত ধর্মী এ-দুজনের সাথে আমি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ এবং মজনু শাহকেও পড়ছি। সবসময় যে ভাল লাগছে তাও না কিন্তু যাচাইয়ের একটা সুযোগ পাচ্ছি প্রবাসে এটাও আমার জন্য এক বিরাট পাওয়া।

দু:  সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

আ: খারাপ লাগার তালিকাও দীর্ঘ করা যায় বিশেষ করে অগুনতি কবির ভিড় থেকে তাদের আলাদা করা মুশকিল হবে না, তবে আমি তা করতে চাচ্ছি না শুধু একটা কথা বলে আমার অপছন্দ স্পষ্ট করতে চাই আর সেটা হচ্ছে- কবিতায় ফাজলামি হতে পারে কিন্তু ফাজলামির জন্য কবিতা হয়ে পারে না, রাইসু ঘরানার ফাজিল কবিরা আমার অপছন্দের।

দু: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

আ: কাছ থেকে দেখেছি কিনা নিজেও বুঝতে পারছি না, কিভাবে কাছ থেকে দেখা যায় ধারণাটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। নব্বই এবং শূন্য নিয়ে আমার পাঠ সম্পূর্ণ এটা আমি দাবি করতে পারব না, আমি দেশ ছাড়া ৮৭ থেকে তারপর দীর্ঘবিচ্ছন্নতা। একটা পর্যবেক্ষণের কথা বলতে পারি যদিও এসব কথা বলা বিপদজনক- নব্বইয়ের কবিতায় পরিপূর্ণতা দেখা গেলেও শূন্যের কবিতায় দেখা যায় শুধুই আস্ফালন। নব্বইয়ের মুজিব মেহদী, চঞ্চল আশরাফ, কিংবা মুজিব ইরম কিছু সাধু এবং স্বাদু কবিতা লিখেছেন। তবে শূন্যের কবি মোস্তাফিজ কারিগর, সফেদ ফরাজী, আফরোজা সোমা, সুমন সুপান্থসহ আরো অনেকে নব্বইয়ের ধারাবাহিকতায় কিছুটা হলেও নিজস্বতা দেখাতে পেরেছেন।

 দু: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

আ: আঙ্গিক গত কোন ফারাক আছে বলে আমি মনে করি না। ফারাক যেটা আছে সেটা পারিপার্শ্বিক এবং রাজনৈতিক। সরল দৃষ্টিতে দেখলে বাংলাদেশের কবিতায় উচ্চকণ্ঠ পরিলক্ষিত হয়, আর পশ্চিমবঙ্গের কবিতায় মৃদুলয়। সমৃদ্ধির দিকে থেকে বাংলাদেশের কবিতা ঋদ্ধ এবং দিন দিন তা আরো ঋদ্ধতর হচ্ছে।

দু:  ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

আ: কিছু দিচ্ছে কি না এটা বলার সময় এখনো আসে নি, এটা একটা ফর্ম। ব্লগে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে, চলুক এবং স্থায়িরূপ লাভ করুক তখন বলা যাবে ব্লগে সাহিত্যের ক্ষতিবৃদ্ধি হলো কি না।

দু: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

আ: এই মুহুর্তে ব্লগকে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে না। তাৎক্ষণিক বাহবা পাওয়ার জন্য ব্লগ লোভনীয় হলেও প্রকৃত পাঠক বা সিরিয়াস পাঠকের জন্য এর কার্যকারিতা আমার কাছে যথেষ্ট নয়। যদ্দিন না ব্লগ সিরিয়াস পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারছে তদ্দিন পর্যন্ত ছোট কাগজই গুরুত্বপূর্ণ।অদূর ভবিষ্যতে ছোট কাগজের গুরুত্ব কমার কোন সম্ভাবনা আমি দেখছি না।

দু: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

আ: দৈনিকের সাহিত্য নিয়ে অনেক তর্ক এবং কুতর্ক হয়েছে ভবিষ্যতেও হবে, কিন্তু আমি এতে দোষের কিছু দেখি না। কারো কারো রঙিন হওয়ার খায়েস থাকে এর জন্য আমি তাঁকে নিরুৎসাহিত করব না এটাকে আমি উচিৎ কর্ম মনে করি না। দৈনিক তার জায়গায় থাকুক এবং তার মত কাজ করে যাক- আমার ইচ্ছা না হলে আমি এটাকে সিরিয়াস মনে করব না।