পলিটিক্যাল পলিউশনে এ দুই দশকই কমবেশি আক্রান্ত: অথির শেরপার সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jul 27, 2012 6:23:31 AM

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

অথির শেরপা: জীবনের যে ব্যাপ্তি, যে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অনুভূতি তা প্রকাশের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে কবিতা। আমি অনেক মাধ্যমে কাজ করলেও কবিতার জন্য তুলে রাখি সেই অনিবার্য ধ্যানের মূহূর্ত। কবিতা আমাকে মনে করিয়ে দেয় হিরন্ময় সন্ন্যাসের কথা। সব মিথ্যে প্রোপাগাণ্ডা ,ডামাডোলের ভেতর হঠাৎ শিশুর সত্য সারল্যমাখা হাসির মতো কবিতা আমার কাছে আসে, হতে চায় লিখিত।

দু: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

অ: কবিতা যেহেতু অনুভূতির সর্বোচ্চ পর্যায়, সেহেতু পৃথিবীর রূপ,রস,গন্ধ,রং সবিকছু গ্রহণ করার মতো শক্তি একজন কবির থাকতে হয়। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের পর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের কাজ আমরা জানি। এ ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আসলে মানুষ ও প্রকৃতিকে অবজার্ভ করার শক্তি। জীবন অভিজ্ঞতা এবং বহুপঠন নকশীকাঁথার নকশা হয়ে কাজ করে কবিতায়। হ্যাঁ, সে জন্য প্রস্তুতিরও দরকার আছে। বিকজ ইফ আই রিচ মাই থিংকিং দেন আই উয়িল বি গিভ বেটার থিং।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

অ: এখন অস্থির একটা সময় আমর পার করছি। স্বতঃস্ফূর্ত,গভীরব্যঞ্জনাপূর্ণ কবিতা খুব একটা লেখা হচ্ছে না! আর ভালোর তকমা যদি দিতে চাই তাহলে হয়তো কারে কারো নাম আসবে।

কিন্তু এই "ভালো " আবার দৃষ্টিভঙ্গি উদ্ভূত। বাংলাকবিতার বাঁকবদলের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। মুহূর্তের আনন্দ দিয়ে দীর্ঘজীবী আনন্দের কথা নিশ্চয়ই চিন্তা করা যায় না! তাই বিষয়টি এখানেই থেকে যেতে পারে।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

অ: খারাপ লাগার ব্যাপারটিও দৃষ্টিভঙ্গি উদ্ভূত। ভালো লাগে না এরকম কবির নাম নিতে গেলে তালিকা হবে দীর্ঘ । ব্যক্তিক জায়গা থেকে না বলে যদি সামষ্টিক জায়গা থেকে বলি,তাহলে বলব পড়ামাত্রই সমস্ত অনুভূতি রক্তের মতো লাফিয়ে উঠেছে এমন কবিতা পড়ার অভিজ্ঞতা অনেকদিন থেকেই হচ্ছে না। পড়লে মনে হয় ছাঁচে ফেলা একই মুখ। কেউ কেউ নতুনত্ব আনতে গিয়ে ভাষার সর্বনাশ ঘটিয়ে তবে ক্ষান্ত হচ্ছে। মৃত শব্দের পাশেই মুচিক হাসছে কবিতা।

দু: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

অ: প্রত্যেক দশকেই ভাষাগত পরিবর্তন তো কিছু থাকেই। শূন্য ও নব্বইয়েও হয়েছে। তবে পলিটিক্যাল পলিউশনে এ দুই দশকই কমবেশি আক্রান্ত। জীবনানন্দ দাশ এবং বিনয় মজুমদারকেই বেশি বেশি মনে পড়ছে। কারণ তাঁরা কবিতা এবং জীবনকে সমান্তরাল করতে পেরেছিলেন। কবিতা আর জীবন এখন একে অপরের পরিপূরক নয়। ফলে জাতি হিসেবে আমাদের দৈন্যটুকো কবিতা থেকে আড়াল করা যায়নি এই দুই দশকেও।

দু: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

অ: ভৌগোলিক ফারাক ছাড়া যদি বলি -আমাদের কবিতা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছেছে অনেক আগেই। ভাষাগত চর্চাটা পূ্র্বসূরী কবিদের থেকেই এসেছে। জীবনকে অনেকভাবে দেখারও সুযোগ আছে বাংলাদেশের কবিতায়। যেটা পশ্চিমবঙ্গের অনেকের কবিতায় নেই। বিনয়,জয়,শক্তি,শঙ্খ,বিষ্ণু,উৎপল,সমরেন্দ্র,সমর,ভাস্কর,সুনীল,শামসের আনোয়ার এঁদের পর শক্তিশালী কবির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কম।

দু: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

অ: আমি বলব এটা অবশ্যই সময়োপযোগী। ব্লগ সাহিত্যকে কিছুই দিচ্ছে না বিষয়টি এমন নয়। এটা নির্ভর করছে সাহিত্য সম্পাদকের রুচি ও প্রজ্ঞার ওপর।

দু: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

অ: ব্লগ যেহেতু খুব বেশি দিনের নয়, তাই তা নিয়ে মূল্যায়নের হয়তো এখনো সময় আসেনি।

দু: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

অ: দৈনিক অনেক আগে নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে সাহিত্যের নামে হয় দলচর্চা কিংবা কোটাভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা। যার সাথে যার সম্পর্ক তাকেই ছাপা হয়। তাকেই স্পেস দেয়া হয়। প্রকৃত কবিকে অনুগ্রহ করে মাঝে মাঝে ছাপা হয় কবিতা। সাহিত্য সম্পাদক নিজেকে রাজা মনে করেন আশে-পাশে কিছু ভাঁড়টাইপের কবিকে রেখে। ফলে জঞ্জালে পরিণত হয় সাহিত্যপাতা!