বিশ্বজুড়েই নারীরা কবির জীবন যাপন করতে পারে নাই: শাহনাজ নাসরীনের সাথে অনলাইন আলাপ ও তার কবিতা
Post date: Jun 27, 2012 8:09:14 AM
প্রকাশিত বই: বামনের দীর্ঘ হাত, নারী সাহসিকা,পরাজিত জীবন যাপন
দুপুর মিত্র: আপনি কি নিজেকে নারী লেখক বলে পরিচিত করাতে চান? চাইলে কেন না চাইলে কেন নয়?
শাহনাজ নাসরীন: প্রথমেই জানতে চাই নারী লেখক বলে পরিচিত করাতে চাওয়াটা কী? আমি তো নারীই।তাহলে কি লেখা পড়ে আইডেন্টিফাই করা যে লেখাটি নারীর? সেক্ষেত্রে আমার মনোভাব হলো লেখাকে জেন্ডারে সীমাবদ্ধ না করা।
দু: কবিতার চেয়ে কথা সাহিত্যে নারী অংশগ্রহণ বেশি। আপনারও কি এরকম মনে হয়? হলে কেন না হলে কেন নয়?
শা: ইতিহাস ঘাটলে নারী কবির সংখ্যা কমই হবে মনে হয়। সেটা এজন্য হতে পারে যে বিশ্বজুড়েই নারীরা কবির জীবন যাপন করতে পারে নাই। তবে এই বৈষম্যটা কমে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে থাকবেনা মনে হয় আমার।
দু: বাংলাদেশের সমসাময়িক গল্পচর্চা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
শা: বাংলাদেশের সাহিত্যচর্চায় গল্পের অবস্থান সবচে ভালো মনে হয় আমার।
দু: কথাসাহিত্যের কোন ধারাকে আপনি বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন এবং কেন?
শা: সব ধারাই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো একটি ধারাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করিনা।
দু: লেখার বিষয়ের ক্ষেত্রে আপনি কোন জায়গাকে বেশি গুরুত্ব দেন এবং কেন?
শা: লেখার বিষয়ের পাশাপাশি উপস্থাপনা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ।উপস্থাপনার গুনে বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।
দু: বামনের দীর্ঘ হাত নিয়ে আপনার আশাটা কেমন ছিল? তার কতটুকু আপনি বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন এবং কেন?
শা: লেখার ওপর আমার তেমন নিয়ন্ত্রন নাই। লেখা হয়ে যাওয়ার পর দেখি যা লিখতে চেয়েছিলাম কমই লেখা হয়েছে। বামনের দীর্ঘ হাত নিয়েও তেমনি অভিজ্ঞতা।
হেমন্তের ছায়াসঙ্গী-১
ঘৃণা ও ভালবাসার সম্মিলিত রোদন
অর্ফিয়ুস হয়ে ফোটে নিবিড় আঙুলে
শিল্পীর অনবদ্য প্রতিভায়
দহনকালেও অম্লান হয় গান
প্রযোজিত হয় যৌথ সাঁতার
নগ্নতার সবটুকু নির্যাস
দহন অথবা শিল্প, ঘৃণা অথবা ভালোবাসা
সত্য অথবা শিল্প, শিল্প অথবা সুন্দর
সত্যই সুন্দর হলে শিল্পের শরীর জুড়ে
অবগুণ্ঠন কেন; ডুবসাঁতারে বিকল্প সন্ধান
অগনিত প্রশ্ন নিয়ে ঢেঁকি গানের দিনে
প্রশ্নাতীত কলরব
নাড়ার দহনে বিজন হাড়িতে ফোটে
উৎসবের নবান্ন
কুঁয়াশামাখা চাঁদ, ঝরা পাতার কাঁপন
আর ফসলহীন মাঠের নগ্নতা ঘিরে
জেগে থাকে আগুন, আগুনের অহংকার
বেঁচে থাকে রোদন ও দহনের সমূহ যাপন
হেমন্তের ছায়াসঙ্গী-২
সুখী নাগরিক হয়ে
প্রতিদিন ইভিনিং ওয়াকে যাই
তোমার আঙিনায়
সুদর্শনার হাত নিয়ে তোমার আদিখ্যেতায়
উল্লসিত পড়শীর মুখে;
বিদ্যাপতির আর্তনাদ আবৃত্ত অহরহ
আমি তবু বেঁধেছি আমার হিয়া
সুদর্শনা বা নন্দীনিই হোক
হোক সে চন্দনা বা অনামিকা
যে তোমায় জাগায় তার হাতে রাখো হাত
হোক সে আমার আঙিনা
তুমি শুধু জেগে থাকো সৃষ্টির উল্লাসে
তুমি শুধু ভেসে থাকো মেধাবী সর্বনাশে
তুমি শুধু স্বপ্ন আঁকো পুরো আকাশ জুড়ে
হেমন্তের ছায়াসঙ্গী-৩
স্বেচ্ছাচার ভালবেসে হিমরাতে
শরীর থেকে খুলে নেই উষ্ণ চাদর
আর ঝাঁপ দেই জলের রহস্যে
স্বেচ্ছাচার ভালবেসে খরতাপে
বাস্পীভুত করি চোখের লাজুক জল
আর বিলিয়ে দেই বাতাসে বাতাসে
স্বেচ্ছাচার ভালবেসে আবেগগুলো
বয়ামে ভরে রোদে শুকাই
আর লাইটপোষ্টে ঝুলিয়ে দেই স্বপ্নগুলো
স্বেচ্ছাচার ভালবেসে
ঘৃণার আশ্রয়ে সটান দাড়িয়ে
বিপুল অপচয়ে একটি জীবন
ভাসাই সর্বনাশে