ভালো কবিতা বলে কিছু হয় কি? নাকি ভাল-মন্দ সবই আপেক্ষিক? [ক্ষেপচুরিয়াস-অলস দুপুর অনলাইন আলোচনা প্রকল্পের বিশেষ আলোচনা]

Post date: Jan 22, 2013 3:29:51 PM

ক্ষেপচুরিয়াস-অলস দুপুর অনলাইন আলোচনা প্রকল্পের বিশেষ আলোচনা ক্ষেপচুরিয়াস- অলস দুপুর অনলাইন আলোচনা প্রকল্পের ফেসবুক গ্রুপে গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিষয় ছিল ভালো কবিতা বলে কিছু হয় কি? নাকি ভাল-মন্দ সবই আপেক্ষিক?

আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন-

সুব্রত পাল, অত্রি ভট্টাচার্য্য, জুবিন ঘোষ, পীযূষ কান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীল জলজ, উষসী ভট্টাচার্য্য, রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য, জলধি রায়, আবু এম ইউসূফ, হীরক মুখার্জি,

সরদার আমিন, জিল্লুর রহমান, প্রলয় মুখার্জি, রেজওয়ান তানিম, অমিতাভ রক্ষিত,

কচি রেজা, অমিতাভ প্রহারাজ, মিলন চ্যাটার্জি, আবু জাইদ, শঙ্খশুভ্র দেববর্মণ, পৃথা রায়চৌধুরী, অমিত আশরাফ ও দুপুর মিত্র।

শুক্রবার সকাল থেকে সারারাত চলে এই অনলাইন আলোচনা। নিচে এই আলোচনা তুলে ধরা হলো।

দুপুর মিত্র: ভাল কবিতা আর মন্দ কবিতা বলতে আমরা কি আসলেই কিছু বুঝে থাকি। ভাল কবিতা পড়লে কি আসলেই বোঝা যায় যে এটি ভাল কবিতা আর ওটি মন্দ কবিতা? মন্দ কবিতা আবার কি জিনিস? কখনও কখনও মন্দ কবিতা বলে যে কবিতাকে বলতে দেখেছি সেই কবিতাই এক সময়ের ভাল কবিতা হয়ে দাড়ায়। তাহলে কি দাঁড়াল। ?

সুব্রত পাল: ভাল কবিতা নিশ্চয়ই হয়। বরং মন্দ কবিতা বলে কিছু হয় না।

দুপুর মিত্র: তার মানে ভাল-মন্দের বিচারের বিষয়টা আপনি জানেন। সেটা একটু বলবেন কি?

অত্রি ভট্টাচার্য্য: প্রথমতঃ - এই বিষয়ের মধ্যে মাথামুণ্ডু আমি কিচ্ছু পেলাম না। "ভালো কবিতা বলে কিছু হয় কি? নাকি ভাল-মন্দ সবই আপেক্ষিক?" এই দু'টি কথাকে "নাকি" দিয়ে জুড়বার অর্থ কি একটি অথবা অন্যটি সত্যি? সেক্ষেত্রে তথ্যগত ভুল রয়ে গিয়েছে। ভালো-খারাপ সব-ই আপেক্ষিক - এটি শুধু আপেক্ষিক নয়, একটি ইউনিভার্সাল সত্য ! এর আগে নাকি বসানো যা, না বসানোও তাই - কারণ এ সত্যের বদল হয় না। ভালো খারাপ চিরকাল-ই আপেক্ষিক ! তার আগে আবার একটি খড়্গ উঁচিয়ে রয়েছে - "ভালো কবিতা বলে কিছু হয় কী?" তা সুধীজন, ভালো যদি আপেক্ষিক হয়-ও, তবুও তো ভালো কবিতা বলে কিছু হতে পারে ; নাকি ? এবং যেহেতু এখানে ভালো শব্দের আগে শ্বাশ্বত বা চিরকালীন বলে কোন শব্দ বসেনি - তাই আমরা সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারি - ভালো কবিতা বলতে এখানে হয়তো শ্বাশ্বত ভালো কবিতাই বুঝানো হয়েছে। নাঃ, এ বিষয় নিয়ে খুব গভীরে যাওয়ার প্রশ্ন-ই নেই। কারণ বিষয়টির কোন গভীরতা-ই নাই। দু'টি বাক্য-ই নেহাৎ তথ্য - কোন বিতর্কিত বিষয়-ই নয়। ভালো কবিতা বলে অনেক কিছুই হয় - ভালো খারাপ আপেক্ষিক হ'লেও হয়, না হ'লেও হয় - এ নিয়ে কোন দ্বিধা নেই। আর ভালো খারাপ যে আপেক্ষিক - তা নিয়ে আমার মনে হয় না পৃথিবীর কোথাও দ্বিমত রয়েছে। তবে আর আলোচনার রইলটা কি?

সুব্রত পাল: ভাল-মন্দের বিচার আমি জানি না। অত পাণ্ডিত্য আমার নেই। যে কবিতা পড়ে ভাল লাগে, মন কে অকর্সণ করে, সেটাই আমার কাছে ভাল কবিতা। আগেই বলেছি মন্দ বলে কিছু নেই।

জুবিন ঘোষ: অত্রির কথাই আমার কথা ১০০% সহমত - "ভালো কবিতা বলে অনেক কিছুই হয় - ভালো খারাপ আপেক্ষিক হ'লেও হয়, না হ'লেও হয় - এ নিয়ে কোন দ্বিধা নেই।"

অত্রি ভট্টাচার্য্য: সুব্রতবাবু, ভালো খারাপ বিচারের জন্য পাণ্ডিত্যের প্রয়োজন হয় - এটা কোথায় প্রমাণ হ'ল? অত পাণ্ডিত্য? কত পাণ্ডিত্য সুব্রতবাবু?

সুব্রত পাল: ভাল মন্ত বিচার করতে ওটাই সমস্যা। প্রতীটি লেখাতেই কবির অনেক আবেগ জড়িয়ে থাকে, সেটি ব্যক্তিগতভাবে কারও খারাপ কারও খারাপ লাগতেই পারে। কিন্তু তা বলে সেটি কখনও মন্দ কবিতা হয়ে যায় না।

পীযূষ কান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়: যে কবিতা আপনার ভাল লাগে,সেটা অন্যের কাছেও ভাল হবে সেই নিশ্চয়তা কোথায় ?

অত্রি ভট্টাচার্য্য: ব্যাক্তিগতভাবে মন্দ লাগা ছাড়া আর কি কি ভাবে মন্দ লাগতে পারে? নৈর্ব্যস্কতিকভাবে মন্দ লাগাটা কি জিনিস?

সুব্রত পাল: আমি ভাল দিকেই আছি।

অত্রি ভট্টাচার্য্য: সে তো সবাই থাকে। তাই বলে কি মন্দ আটকায়?

সুনীল জলজ: আমি যে কবিতা পড়ে আলোড়িত হলাম, যে কবিতা আমার ভাবনার জগতকে মুহূর্তের জন্য হলেও আচ্ছন্ন করল, যে কবিতার হঠাত হঠাত মনে হল আমি থমকে দাঁড়াই, আবার ভাবি, আবার পড়ি, সেটাই আমার কাছে ভাল কবিতা। যদিও কোনও বুদ্ধ পাঠকের কাছে এর শিল্প মূল্য নাও থাকে।

সুব্রত পাল: পীযূষ, কোনও নিশ্চয়তা নেই। আমার কাছে যেটি ভাল লাগে সেটি অন্যের কাছে মন্দ লাগতেই পারে।

অত্রি ভট্টাচার্য্য: সুনীল জলজ - কোন কবিতা কেন ভালো - সেটা এই বিতর্কের বিষয় নয়। প্রশ্নটির উত্তর হ্যাঁ বা না দিয়ে শুরু করা উচিত, কারণ প্রশ্নে "কি" রয়েছে।

সরদার আমিন: ‘ভাল জিনিস অল্প বলেঈ তা ভাল, নচেৎ নিজের ভীরের ঠেলায় তা হয়ে যেম মধ্যম মানের’ রবীন্দ্রনাথ এভাবে লিখেছেন শেষের কবিতা‘তে। যে কবিতা প্রভাবিত করে সময়কে তা সে সময়ের ভাল কবিতা। ঠিক বলেছি? যা প্রভাবিত করে না তা পচা কবিতা। কবি মেধাবী হতে হয় না। তার সংবেদনশীলতা যা উত্তম সৃষ্টি করতে পারে তিনি ভাল কবি। অংকে ভাল হলে মেধাবী হতে পারে ভাল কবিতা তাকে দিয়ে হবে এমন কোন কথা নেঈ। ভালবেসে কেউ আত্মবলিদান দেয়, তার জেনেটিক বৈশিষ্ট্যে একটি উত্তম স্থান খূলে যায় যা তাকে শ্রেষ্ঠতর করে। কালো মেয়েকে কেন এত বেশি ভাল লাগে কারো তা কে বুঝতে পারে যে কালোকে পছন্দ করে না। গোধুলির রং কে দেখে, সবার কি সে দৃষ্টি আছে? সুতরাং কবিতাকে ভাল বলতে হলে ভাল মানুষও চাঈ যে সৃষ্টিকে বুঝতে পারে। একজন একটি আঙ্গুল দেখালো, দুঈজন দুঈটা বুঝলো। একজন বললো, এর মানে কাল রাতে একটি গরু চুরি হয়েছে। আরেকজন বললো আল্লা এক এবং অদি্‌তীয়। সুতরাং ভাল কবিতা বুঝতে অনুধাবন করতে কবিতার ভাল পাঠক হতে হবে। না হলে তা যে ভাল তা বলার উপায় কি? ঠিক বলেছি?

দুপুর মিত্র: সময়ে অনেকের কবিতাই প্রভাবিত করতে পারে না যেমন জীবনানন্দ। সেক্ষেত্রে আপনি কি বলবেন?

মজার বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশে যা মন্দ কবিতা বলে খারিজ করা হয় অবশ্যই সমকালে সেটা কিন্তু অনেক দেশে বিশেষ কবিতা আন্দোলনের অংশ। worse poetry বা bad poetry নামে একটা বিষয় আছে। কবিরা সেখানে ঘোষণা দিয়ে এসব লিখেন। মূলত মেইনস্ট্রিম সাহিত্যে কবিতার কিভাবে ভাল-মন্দ নির্ণয় করা হয়, এটা কিন্তু জানার বিষয়। আমাদের আলোচনা এই দিকে গেলে ভাল হয়। আর এটা তো প্রমাণ পাওয়া গেল যে bad poetry মানে খারিজের বিষয় নয়, এটাও লেখার একটি ধরণ। আপনাদের মন্তব্য কি?

উষসী ভট্টাচার্য্য: কবিতা ভালো মন্দ আপেক্ষিক. যে কবিতা আমায় আপ্লুত করলো. তা আরেক জন কেও যে ভালো লাগাতে পারবে তার গ্যারান্টি নেই. ভালো লাগা কবিতা টি আমার প্রেম স্বরুপ. তার খুঁত অন্য কেউ বের করতেই পারেন. স্বরচিত কবিতা মুলত কবির পাজর হয়. সমালোচনায় তা ভালো প্রমাণিত নাও হতে পারে. ভালোলাগা বিষয়ে ব্যাক্তিগত পছন্দ জড়িত থাকে বলে আমার ধারণা.

দুপুর মিত্র: রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্যকে আলোচনায় অংশ নিতে অনুরোধ করছি।

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য: আমি কবিতা লিখি না, তাই এসব আলোচনায় আমার নিজেকে হং সমধ্যে বকো যথা মনে হয় । তবুও এই আলোচনায় আসার লোভ সামলাতে পারলাম না । আমার কবিতা পড়ার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা এবং ইদানীং সংস্কৃত নতুন ভাবে শিখছি বলেই এই আলোচনায় আমার প্রবেশ । আমার ঔদ্ধত্য মার্জনীয় । কবিতার ভাষা,রীতি বা অলংকারের কোনও বাঁধাবাঁধি নিয়ম অসম্ভব । কারণ, রস ছাড়া এই সবের কোন নিয়ামক নেই । পূর্বতন কবিদের কবিতায়, তাঁদের রচনাতে সব কিছুর ব্যবহার দেখে যদি কোনো সাধারণ নিয়ম আবিষ্কার করাও যায়, নবীন কবিদের কবিতা লেখার প্রতিভা সম্পূর্ণ ভিন্ন নিয়মে চলে নতুন এবং সমান রসেদ্বোধক কবিতার সৃষ্টি সম্ভব । কবিতার বাচ্য বা বিষয় সম্বন্ধে ঐ এক কথাই চলে ।

কোন শ্রেণীর বিষয়কে অবলম্বন করে কবি তার কাব্য রচনা করবে, তার গণ্ডী এঁকে দেওয়া সম্ভব নয় । কবির প্রতিভা, অভিনব গুপ্ত যাকে বলেছেন- “অপূর্ববস্তুনির্মাণক্ষমা প্রজ্ঞা” সে যে কোন অনাস্বাদিত এবং অপূর্ব কথা বস্তুর সৃষ্টি করবে, তা সরস্বতীর পক্ষেও বলা সম্ভব নয়, মনুষ্য পরে কা কথা ।

বস্তুর জগতের মত, কবিতার জগতও সীমাহীন । বস্তু, ব্যবহার অনুসারে ভালো- মন্দ হলেও কবিতার জগতে “রসের” কোন ভালো মন্দ হয় না ।

তাই, কোন কবিতা ভালো বা কোন কবিতা খারাপ এটা আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে ভালো হয়ত, তবে রসাস্বাদনে বিঘ্ন ঘটায় ।

এ যেন, অপরাধী জানিল না তার কি অপরাধ, বিচার হইয়া গেল !!!!!!!

#####অল-মিতি ।

অত্রি ভট্টাচার্য্য: দুপুরদা -

http://www.verybadpoetry.com/

Very Bad Poetry - Poems

জলধি রায়: আপেক্ষিক সেটা বুঝলাম । কিন্তু সম্পূর্ণ আপেক্ষিক কি? আপেক্ষিকতার মধ্যেও কি কোনো জেনারেল অ্যাগ্রিমেন্ট নেই? আমি এখানে চারটা কবিতার লিংক দিলাম । প্রথম দুইটা কবিতা আমার কাছে ভালো কবিতা, পরের দুইটা ভালো নয়, আপনারা কি বলেন?

ব্রত/তপন রায়

দারিদ্র ছিল না যেন উপবাসব্রত ছিল কাল বঙ্গোপসাগর থেকে আমি যতদূর ততোটা দূরত্বে

প্রশ্ন/বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়

ও নদী, ও নদী, উপুড় শবদেহটি কার? যাচ্ছে ভেসে স্রোতউদাসীন পার থেকে ওপার... মুখ দে...

ভেবেছিলাম সমুদ্রে আর যাব না,

এই দেহ আর ভেজাব না

পলাতক চাঁদের কিরণ, নোনাদীঘি জলে

কিন্ত সমু্দ্রই’ত আমার নিয়তি !

এই মনের অনঙ্গ দেহে

যা কিছু ছিল ক্ষত,

তোমার স্পর্শের পরাগ পেয়ে

উঠছিল সেরে অবিরত ;

আমার আকাশ জুড়ে ছিল বুনো মেঘ

নীল্ও ছিল কিছু নক্ষত্র বনে ,

আলেয়ার দেখা পেয়ে যে ভুলেছে আঁধার

সে কি জানে ?

অন্ধের নিকষ জীবনে

কখনোবা আর্যের পদধুলি পড়ে

রাজন্যের মৃগয়াকে কাছে পেয়ে

যে পড়েছে প্রেমে, সেই শুধু মরে ।

---রাজন্যের মৃগয়া

অত্রি ভট্টাচার্য্য: ব্রত/তপন রায়

-------------------

দারিদ্র ছিল না যেন উপবাসব্রত ছিল কাল

বঙ্গোপসাগর থেকে আমি যতদূর

ততোটা দূরত্বে থাকে বঙ্গোপসাগর

মনুর বংশের আমি কেউ নই

মানব হিসেবে নই নৌকো বা নাবিক

সমুদ্রের প্রতি শুধু কৌতুকবশত

কাগজের নৌকোগুলো ভাসিয়ে দিয়েছি সব

কবে কোন এলোমেলো বাদলের দিনে

প্রতিভা ছিল না জানি অভিমানব্রত ছিল কাল

আমার আঙুল তুমি কেটে নিয়ে চলে গেছ কবে

হে আচার্য, আমারই আঙুল কাল পড়ে ছিল দিগন্তের ধারে

বহুদিন পর এক নিশাচর

আমার বুকের ভেতরে জেগে উঠেছে

বয়ানে মাতাল, স্পর্শে সরিসৃপ,

ঘোলাচোখে টলটল করছে প্রেমের মদিরা ;

কাশফুলের মত তোমার মুখের মৃত্তিকা

আমার রক্তের ভেতরে

বইয়ে দিয়েছে উন্মাতাল স্রোত ।

সপ্তডিঙ্গা ভাসানিয়া কুমার

আহার, নিদ্রা ভূলে গিয়ে

এ কোন খেলায় মেতেছে ?

কতটা পোড়ালে দেহ প্রণয়ের সিদ্ধি হয়,

তপস্যায় হয় কালান্তরী পাহাড়, জানি না ;

তোমার আঁখি পল্লবের সুষমা,

দৃষ্টির বুনো কবুতর এই বুকের পাঁজরে

কোজাগরী চাঁদের মত বাসা বেঁধেছে ।

অপেক্ষার গোপন প্রহরে

চাঁদেতে গ্রহন লাগে যদি, বুকেতে ক্ষয়,

আঁধারে ঢাকলে দেহ, দেখবার নেই কেহ

এইবার হবে বুঝি গোপন প্রণয় ।

----গোপন প্রণয়

দুপুর মিত্র: আমার মনে হয় মেইনস্ট্রিম সাহিত্য স্পষ্ট কিছু নির্ণায়কের মাধ্যমে ভাল কবিতা আর খারাপ কবিতা নির্ধারণ করে। সেই নির্ণায়কগুলো কি কি সেটা কারও কাছ থেকে জানতে চাই।

আবু এম ইউসূফ: কবিতা ভাল বা মন্দ এটা নির্ণয়ের জন্য সর্বজনের কাছে গ্রহনযোগ্য কি কোন মানদণ্ড আছে ? যদি থাকে তবে সেই মানদন্ডে ফেলে কবিতা ভাল বা মন্দ এই বিচার অথবা মন্তব্য, হয়তো করা যেতে পারে। কিন্তু, এরকম কোন নির্দিষ্ট মানদণ্ড হয়তো নেই। সাহিত্যকর্মের বিভিন্ন রূপের মধ্যে কবিতা কি, সেটা যদিও সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত নয় কিন্তু কোনটা কবিতারীতি সেটা বুঝে নেয়ার একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট হয়তো আছে। কিন্তু, এই বুঝে নেয়ার বিষয়টাকেও কোন নির্দিষ্ট ছকে হয়তো ফেলা যায় না। কারন, এই ছকটি সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল। সাধারনভাবে আমরা হয়তো বুঝতে চাই যে কবিতা ভাবের একটি ঘনীভুত প্রকাশের পদ্ধতি বা উপায়। কিন্তু, ইম্প্রেশনিস্ট যারা তাঁরা হয়তো কবিতায় হৃদয় ছোঁয়া কোন বাস্তব অথবা কল্পিত কোন ঘটনার, প্রকৃতি অথবা পরিবেশের বিশদ বিবরণ ছান্দিক কোন আঙ্গিকে পরিবেশন করতে চাইবেন। সেইক্ষেত্রে সেই কবিতাটি কারো হৃদয় ছোঁবে কারো হৃদয় ততটা আন্দোলিত হল না। যার হৃদয়ে সেই কবিতাটি কোন কম্পন সৃষ্টি করল না সেই কবিতাটি ভাল হল না মন্দ হল সেটা তিনি হয়তো সেই প্রেক্ষিতেই বিচার করতে চাইবেন। অভিব্যক্তিবাদী (এক্সপ্রেশানিস্ট)কবিতা, অনেকের কাছে দুর্বোধ্য ঠেকে, তাই বলে কি সেটা মন্দ কবিতা হয়ে যাবে। কিন্তু, এই প্রশ্ন গুলো ছাপিয়ে যে বৈশিষ্ট্য নিয়ে কবিতার বিচার হতেই পারে, আমি মনে করি- কবিতায় ছন্দ এবং স্থায়িত্ব গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় এবং অন্ততঃ পক্ষে এই দুইটি বাধা অতিক্রম করতে না পারলে একটি কবিতা ঠিক কবিতা হয়ে ওঠে না। কোন পাঠকের মনের ভাবটি প্রকাশ করার জন্য কোন কবির কোন কবিতার কোন লাইন মনে পরে যাওয়া একটি ভাল কবিতার অন্যতম লক্ষণ।

দুপুর মিত্র: কিন্তু ইজম বাদ দিয়েও গড়পড়তা একটা হিসাব আমার ধারণা মেইনস্ট্রিম সাহিত্যে আছে। সে প্রসঙ্গে কিছু বলুন।

অত্রি ভট্টাচার্য্য: মেইন্সট্রিম সাহিত্য-ই হোক বা সমান্তরাল সাহিত্য - নির্ণায়ক শব্দটিই আমার হৃৎকম্প জাগায়। তবু, মানদণ্ড মানেই কোন না কোনদিন তা ব্যাক্তিগত থাকে - তার থেকে ক্রমশঃ জনপ্রিয় হয়। মুশকিল হ'ল - কবিতা আদৌমেইন্সট্রিম সাহিত্যের অংশ নয় - কোনোদিন-ও ছিল না। যেসব কবি বা কবিতা ব্রাত্য নয়, তারা কবি বা কবিতা আদৌ নয় - এই-ই আমার মতামত।

দুপুর মিত্র: না আমি এস ইউজুয়াল বলছিলাম যে সাহিত্যেরও একটা মেইনস্ট্রিম বিষয় আছে। মেইনস্ট্রিম বিষয় আছে বলেই সেখানে নোবেল দেওয়া হয়। সেই মেইনস্ট্রিমের নিশ্চয়ই কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। সেই দিকে তাকাতে চাচ্ছিলাম। আলোচনা গড়াতে চাচ্ছিলাম।

জলধি রায়: আমি বলি কি দুপুর, কবিতা ভালো লাগা বা মনদ লাগা আপেক্ষিত তো বটেই, এই ব্যাপারে কোনো দ্বিমত মনে হয় নেই; তবু যে কিছু বিষয়ে কিছু কবিতায় আমরা একমত হই, কেন হই, সেসব জেনারেল অ্যাগ্রিমেন্টের জায়গাগুলো খোঁজা বেশি কাজের হবে; যদিও এ ব্যাপারে আমি পণ্ডিত নই

অত্রি ভট্টাচার্য্য: নির্ণায়ক বলছিলেন না? সরদার আমিন-এর " যে কবিতা প্রভাবিত করে সময়কে তা সে সময়ের ভাল কবিতা" তত্ত্বের প্রতিকূলে দাড়িয়ে আমার বক্তব্য - যে কবিতাকে সমকাল আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ ক'রে - তাই ভালো কবিতা। এই-ই আমার বিচারে শেষতম নির্ণায়ক।

হীরক মুখার্জি: হা হা হা, মেইনস্ট্রীম কথাটা একটু কানে বাজলো, কবিতাও কি এবার কমার্শিয়াল আর আর্টস ফিল্মের মত ক্যাটেগোরাইজ্‌ড হবে, কিছু সপরিবারে পড়ার মত আর কিছু স্রেফ এলিট ক্লাসের জন্য?

অত্রি ভট্টাচার্য্য: জলধিদা - বিশ্বদেব মুখো-র কবিতা পড়িয়েছ বলে তোমাকে গাদাগুচ্ছের চুমু। আমার বড় প্রিয় কবি। ওর "কহে বিশ্বমুখ" এক অলৌকিক কবিতাগ্রন্থ !

জলধি রায়: আপনার কাছে থাকলে জলদি আপ করুন মশাই

দুপুর মিত্র: হীরক মুখার্জি, আপনার কষ্টটাকে আমি বুঝেছি। কিন্তু সাহিত্যের বাণিজ্যিকিকরণের বাইরে তি আমি আপনি ? আমাদের কি বাইরে থাকতে দেওয়া হচ্ছে। ধরুণ আমি কপিলেফ্ট মুভমেন্টে জড়িত । মানে আমি বই বেঁচি না। নিজে ও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে বই বিণামূল্যে বিতরণ করি। সেই বই যে কেউ লেখক প্রকাশকের অনুমতি না নিয়ে প্রচার প্রকাশ করতে পারে। এটাকেও কিন্তু নানাজন নানা ভাবে আক্রমণ করেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আপনি যদি মেইনস্ট্রিমকে না চিনতে পারেন তাহলে আপনি ফাইট করতে পারবেন না এর বিরুদ্ধে।

জিল্লুর রহমান: কবিতার প্রসঙ্গ ট্রাইএঙ্গুলার। তিনটি রেখার সীমাবন্ধতা। ভালো কবিতা, মন্দ কবিতা ওখানে নেই। ওখানে আছে কবিতা, অকবিতা, অল্পকবিতার রেখা। এবং এটি একটি দর্শন। এই দর্শন একটি বন্ধনী। এর প্রথম চিহ্নের ইঙ্গিত পাওয়া যায় জেমস টেইটের কথায়ঃ All elements of the poem make the poem, are the poem. এবং এর প্রান্তিক চিহ্নের কথা আছে কবি ম্যাকলিশের Ars Poetica এর কবিতায়ঃ A poem shouldn't mean, but be. এর চিহ্নগুলোতে কবিতার বিশদ চেহারা আছে বলে বিশ্বাস করি।

অত্রি ভট্টাচার্য্য: আরে ধুর - ও বই আর ছাপা হয় কিনা আমার সন্দেহ আছে। বেরিয়েছিল "অস্ট্রিক" পত্রিকা থেকে, শিমুলিয়া পূব মেদিনীপুর। দাম মোটে দশ - বোঝো ! তবে বিশ্বমুখ থাকেন কলকাতার কাছেই - ওর সাথে দেখা হবে এবং বইটি আবার সংগ্রহ করব কথা আছে।

আবু এম ইউসূফ: সমকালীন সময়টাকে মেনে নিলে কবিতা আর কবিতা থাকে না- বন্দনাগীতি হয়ে যায়।

দুপুর মিত্র: কিরকম সেটা?

অত্রি ভট্টাচার্য্য: দুপুরদা - এটা কি বললেন? কবিতার সাথে কপিলেফটের সম্পর্ক কি? কবিতা আর প্রচারমাধ্যম - দুটো সম্পূর্ন পৃথক ব্যাপার। একটা আরেকটাকে প্রভাবিত করলে তা ভীষণ অশনী সংকেত।

কচি রেজা: রফিক আজাদ লিখেছিলেন, ' ভাত দে হারামজাদা, নইলে মানচিত্র খাবো'---- এই কবিতা বিশেষ করে এই পংক্তি কে কি বলা যায়, সমসাময়ীক একটি ভালো কবিতা? তাইলে এইটা কী একই সঙ্গে চিরকালীন নয়?

দুপুর মিত্র: না সাহিত্য একটি প্রকাশ মাধ্যম। এই প্রকাশ মাধ্যম কিভাবে প্রকাশিত হবে সেটাই মূলত সাহিত্যের রাজনীতি। সেটা মুদ্রণ প্রচার ও প্রকাশ থেকে সব কিছুই বিবেচনার বিষয়। কপিলেফ্ট মুভমেন্ট বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে এটা সোচ্চার উচ্চারন।

উষসী ভট্টাচার্য্য: কবিতা বাঁচবার , বোঝবার না

হীরক মুখার্জি: কি জানি, আমার তো কবিতা লেখা আর পূজো করা একই লাগে, যে যার মত করে ঠাকুরকে ডাকতে পারে, ভালো-মন্দ / মেইনস্ট্রীম-অফ্‌স্ট্রীম ।

কচি রেজা: অথবা' ফুলগুলো সরিয়ে নাও, আমার লাগছে' এই বোধ তো মানবজাতির বোধ। হয়তো লেখা হয়েছিল তাৎক্ষনিক কোনো অভিঘাত থেকে।

জিল্লুর রহমান: কবিতা সমকালকে ছাপিয়ে মহাকালের হয়ে যাওয়া বিষয় .

বাণীব্রত কুণ্ডু: কবির কাজ কবিতা লেখা। আলোচকের কাজ আলোচনা করা। আলোচকদের অনেক কিছু জানতে হয়, কিন্তু কবিদের অতকিছু না জানলেও চলে। তাছাড়া, যস্মিন দেশে যদাচার! যত মানুষ তত মত। সত্যও সর্বদা ধ্রূব নয়, 'সূর্য পূর্বদিকে ওঠে আর পশ্চিমে অস্ত যায়' এটিও সত্য নয়। কেন নয় সকলেই জানেন। তাই সত্য, ন্যায়, নীতি, আদর্শ- এসবকিছুই যখন স্থান-কাল-পারতভেদে আপেক্ষিক তখন কোন তুলায় মাপবো "কবিতার ভালো-মন্দ"!!! অনুরোধ একটাই পরিশেষে অর্থাৎ আলোচনার সমাপ্তির আগে যেন উপসংহারে আলোচনায় উঠে আসা নির্দিষ্ট বক্তব্যটি উল্লেখ করা হয়। ধন্যবাদ।

জিল্লুর রহমান: সেটাতে আমার কোনো মত নেই হীরক।

হীরক মুখার্জি: কোনটাতে দাদা?

জিল্লুর রহমান: কবিতা কী সেটাই যদি অনির্ধারিত থাকে, কিংবা কোনটা কবিতা হয়ে উঠলো সেটাই যদি নিশ্চিত নাহয়, তাহলে কবি কীভাবে কবিতা লিখবেন? আর সমালোচনা? যেনতেনভাবে ঠাকুরের প্রার্থনার সাথে কবিতা প্রসঙ্গ আসে না, সেটাতে।

হীরক মুখার্জি: কবিতার ডেফিনিশন জানতে আগ্রহী রইলাম দাদা ।

কচি রেজা: কিন্তু মহাকালকে টার্গেট করে কবিতা রচনা কেউ করে না---সমসাময়ীক-কে উপলব্দধি করে -ঘটনা-বোধ-তাড়না---এক পর্যায়ে প্রয়োজন ও কবিতা লিখিয়ে নেয়। নির্ভর করে কবির শক্তি কতটা। তাতে আবার সেই প্রশ্ন চলে আসে। ভালো কবিতা কী!

জিল্লুর রহমান: সেটা আমি উপরে বলিয়াছি। ইহা এক প্রকার আইল বেঁধে জমি সেঁচ দেওয়ুনের মতোন। দুইটা চিহ্নের কথা বলিয়াছি, একখানা থাকিবে শুরুতে, আরেকখানা প্রান্তে। মাঝখানের বিষয়টাই কবিতা। তাহা ছাড়া কবিতা একটি অস্বাভাবিক মাধ্যম বলিয়াও বিশ্বাস রাখিয়াছি। "নারীর বুকের সৌন্দর্য্য উঠে মসজিদের গম্বুজ" ইহা কি স্বাভাবিক কথা হইলো? হইলো না বলিয়াই ইহা কবিতা, কবিতার একখানা পঙ্‌ক্তি

কালকে একটি মাছ ধরলে, এর কাঁটাটা বেছে নেওয়াটা এবং ফেলে দেওয়াটাই সমকালের; বাকিটুকু মহাকালের। সেজন্য কবিকে মনে রাখতে হয়, হে কবি ভুলো না, কাঁটার সঙ্গে হয় না মাছের তুলনা।

আবু এম ইউসূফ: মহাকালকে টার্গেট করে কেউ কবিতা লেখে না- এটা ঠিক কিন্তু, সমকালীন পরিবেশের মধ্যে কবি সময়ের স্রোতে কান্ডারী হয়ে নামে ভবিষ্যতের সন্ধানে। অতীতকে আঁকড়ে ধরে রাখে না - সমকালীন সময়টাকে মেনে নেয় না। তাই আসে 'স্বপ্ন' - স্বপ্ন ভবিষ্যতের।

উষসী ভট্টাচার্য্য: কচি দি, কিছু লাইন বা কবিতা সর্বকালের. তা সমালোচনা ও সাধারণ পাঠক কে অতিক্রম করে গেছে. আর ভালো লাগা যে সার্বিক না তার প্রমাণ. আমরা তো খেপুর আজকের কবিতাতেই ই দেখি

গৌতম চট্টপাধ্যায়: আয় তোকে ভাত দি' কি দিয়ে যে ভাত দেব হায়!

কচি রেজা: রাষ্টের এবং পৃথবীর সংকটকাল এসেছে বার বার। সেই সঙ্গটে-সংঘাতে, আবার একেবারে ছোটো বিষয়কে কেন্দ্র করে ও অনেক কবিতা হয়েছে।' স্বাধীনতা তুমি আসবে বলে সখিনা বিবির কপাল পুড়লো, সিঁথির সিঁদুর মুহে গেল হরিদাসীর----এই কবিতা একটি বড়ো প্রমান একটি দেশের জন্যে। আবার অপ্রয়োজনের কবিতা ( কবিতা কী অপ্রয়োজনের হয়?) 'আমার ঘরের পাশে ফেটেছে কী কার্পাসের ফল/ গলায় গুঞ্জার মালা পরো বালা, প্রাণের শবরী--"

কবিতাতো অতিক্রম করে যাওয়ার--ই। তাকেই বলে কবিতা।

জিল্লুর রহমান: কবিতা সার্বভৌম, সার্বজনীন; কবির পুরো বিশ্বটাই স্বদেশ। বিনয়-কে এখানে পথে আগলে দাঁড় করানো যায়। কালকে অতিক্রম করার বিষয়টি নির্ভর করে কবির নিজস্বতার উপর; শব্দের ব্যঞ্জনার উপর এবং সর্বোপরি সৃষ্টির উপর। কিংবা কবিতার শব্দের সম্ভাবনার উপর। এজরা পাউন্ডের এই লাইন একবার খেয়াল করলে তা আরও পষ্ট হবে... Even in my dream you have denied yourself to me. এই লাইন আমার পূর্বোক্ত কথার পূর্ণ সমর্থন

প্রলয় মুখার্জি: আপেক্ষিকতার দোহাই দিয়ে কবিতাকে এমন একটা স্থানে পৌঁছে দেওয়া হয় যে জল পড়ে পাতা নড়ের বোকা অনুকরণীয় কলমও তার বোকাসোকা আপ্লুতধারীর দোহাই তুলে বলতে পারে, ভালমন্দ তো পুরোটাই আপেক্ষিক। আজ্ঞে, এটুকু বোঝার আগেই তো নোবেল, অস্কার, এ গুলোও আপেক্ষিক হয়ে পড়বে। এই নেট কালচারে, আমি একলাইন লিখছি, মানে

'বড় বড় হাতি

তোর মুখে লাথি'

নির্ঘাত ভালোমন্দের আপেক্ষিক দোহাই দিয়ে পুচ্ছ ধারণা নিয়ে বসে থাকাই যায়, আজ না হলে কাল এই কবিতা দেশ, কাল, সময় অতিক্রম করবে।

এবার আসি কিছু স্পষ্ট প্রসঙ্গে, আদৌ বিখ্যাত কবিতা গুলো কি তথাকথিত আপেক্ষিকতায় পড়েছে কোনোদিন? নাকি কিছু আঁতেলের দোষ ত্রুটি ডিঙ্গিয়ে

তা আমাদের ঠোঁটে বসতি নিয়ে নিয়েছে। সেখানে তো এই ভুল যুক্তি গুলো খোলেনা।

কবিতা বোঝার একটা নির্দিষ্ট গণ্ডী থেকে যখনই নির্বোধ কলমের বোধে কিছু পৌঁছয় না তখনই তারা আপেক্ষিকতার দোহাই তুলে নিজেকে শান্তনা দেয়।

আসলে আপেক্ষিকতা অনেক বিষয়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, আমার নিজস্ব বুদ্ধির ধরা ছোঁয়ার বাইরে যা কিছু পেলামনা মানেই আমার মন্দ, এই ধারণাটা পাল্টাতে হবে। যাদের হাত ধরে উত্তরণ তাদের চোখেও দেখতে হবে কবিতাটা কিভাবে বিশ্লেষণ হচ্ছে। আমার মনে হয় আপেক্ষিকতার মত একটা পাশবিক ভ্রম যা কবিতার মান, গ্রুপ, শ্রেণী নির্নায়ক তা উৎপটাং না হলে

আমিও

'বড় বড় হাতি

তোর মুখে লাথি'

লিখে কিছু স্তুতিকারি যোগার করে বলতেই পারি, ভালো মন্দ তো আপেক্ষিক বাবা!!

জিল্লুর রহমান: ভালো লাগা সার্বিক না, তবে মহার্ঘ কবিতা বা মহাকালের কবিতাতো সার্বিক। এবং হয়তো সার্বিক বলেই সেটা মহাকালের। বিনয়ের, মানুষ নিকটে এলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়। এটা কি সার্বিক ও মহাকালের না?

ইয়াসিন ফিদা হোসেন: আজকের বিষয়টা যেই উত্থাপন করুন, তার প্রতি শ্রদ্ধা রাখছি। কিন্তু একই সাথে বলতে চাইছি বিষয়টা একই সাথে আবির্ভূত হয়েছে এবং আলোচনা/বিতর্কের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছে। আপেক্ষিকতাকে নির্দিষ্ট করা না গেলে কোন আলোচনা বা বিতর্কই জমে উঠতে পারেনা। ... এরপরও একটা বিষয় বলতে চাই। কবিতার ভালো/মন্দকে না হয় আপেক্ষিক রেখে দিলাম, কিন্তু কোন লেখা কবিতা হয়ে উঠলো কিনা তা কিভাবে নির্দেশ করা যায়? বা আদৌ যায় কি?

জিল্লুর রহমান: কবিতা আপেক্ষিক না পরম, তার আগের পাঠ হচ্ছে, কবিতার প্রতিটি শব্দই পরম (Absolute). যেমন ধরুন, আঁখি মেলে তোমার আলো প্রথম আমার চোখ জুড়ালো, সে আলোতে নয়ন রেখে মুদব নয়ন শেষে। এখানে আঁখির প্রতিশব্দ "চোখ" "নেত্র" "লোচন" বসিয়ে দেখুন তাহলে কবিতা থাকে কিনা।

হীরক মুখার্জি: ঠিক এটুকুই বুঝতে চেয়েছিলাম প্রলয়'দা , এর কমও নয় , বেশী তো নয়ই।

প্রলয় মুখার্জি: আপেক্ষীকতার দোহাই দিয়ে নিজের সীমাবদ্ধতা অস্বীকার করা এক ধরণের জান্তব রোগ, আমার ভালোলাগা খারাপ লাগার ওপর কবিতা তখনই একটা সিদ্ধান্তে আসবে যখন কবিতার ওপর তোমার অবস্থান আমি জানতে পারব।

ইয়াসিন ফিদা হুসেন: আমার তো মনে হয় আপেক্ষিকতার দ্বারস্থ হওয়া তারই সাজে যে আপেক্ষিকতার বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট করে অডিয়েন্সকে কনভিন্স না হোক,অ্যাট লিস্ট রিচ করতে পারে।

দুপুর মিত্র: ব্যক্তির ভাল লাগা মন্দ লাগাকে বাদ দিয়ে সকলের কবিতার ভাল-মন্দ লাগার বৈশিষ্ট্য কি তুলে ধরা সম্ভব?

উষসী ভট্টাচার্য্য: একমত দিদি.কিন্তু সবই যে সর্বকালের কবিতা হয় না.সেগুলো কিন্তু কবিতা. সেগুলি সর্বকালের কবিতা না হলেও সময়ের জ্বলন্ত দলিল হয়ে ওঠে তাতেও ভালোলাগার মত পার্থক্য থাকে. কচি দি

পীযূষ কান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়: তাহলে ভালো কবিতা মন্দ কবিতা হয়?এবার প্রশ্ন হলো এই ভালো বা মন্দ লাগাটা সার্বিক নয় কেন?ভালো কবিতা কেন সবার কাছে ভালো হয়না?কিংবা মন্দ কবিতা সকলের কাছে মন্দ?একই কবিতায় সম্পূর্ণ বিপরীতধারণার উদাহরণও অজস্র lআমি একটা উদাহরণ দিই,হাংরি নিয়ে কেও বলেন,বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বাঁক,যা বেশ কিছু প্রবাদস্থানীয় কবিতা দিয়ে কবিতার তথাকথিত ন্যাকামী খুঁচিয়ে বাংলা কাব্যসাহিত্যকে একটা নতুন দিশা দিয়ে গেছে...আবার কারো মতে এই ঘটনা পুরো কাব্যসাহিত্যের পিন্ডি চটকে ছেড়েছে lএটা কি আপেক্ষিকতাকেই সমর্থন করেনা?আমার ভালো লেগেছে বলেই ভালো,এই পাতি সিদ্ধান্ত মানতে পারলাম না l

আবু এম ইউসূফ: নান্দনিক রুচিবোধের ভিন্নতাকে 'আপেক্ষিক' শব্দটি দিয়ে ব্যখ্যা করা সম্ভব কি না ?

উষসী ভট্টাচার্য্য: প্রলয় দা.. তোমার বক্তব্য স্পষ্ট ও যুক্তি যুক্ত .কিন্তু কবিতা যে যার নিজের মতকরে বোঝেন. কারুর কোনো কবিতা ভালো লাগলোনা অথচ আমার লাগলো তার মানে সে অর্বাচীন. এ ধারণা কবিতাটি কে আহত করে নাকি?

কচি রেজা: এই জন্যেই সেই পুরনো বচন, ;সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি' তবে কথা আছে, কবিতা কী অলিখিত রয়ে যাবে? একটি কালোর্তীর্ণ কবিতা তো চাইলেই লেখা যায় না। সময়ের সাথে ভালোলাগার সাথে, দরকারের সাথে, যুদ্ধের সাথে, গার্মেন্টসের অগ্নিতে, খনির ধসে, অতিবৃষ্টিতে ফসল ধুয়ে যাবার সাথে অন্নহীনতার উপলব্দধিতে, প্রেমে কতধরনের মানবিক জ্বালা-যন্ত্রনা নিয়েই না কবির হাতে কবিতা রচিত হতে পারে। কে জানে কবিতা-যাত্রায় কোনটা টিকবে আবার যা টিকবে না তাও পুনরজ্জীবিত হবে কালের প্রয়োজনে। আসল কথা কবি লিখবেন কবিতা। লিখবেন ই--তবে কবিকে সেই সাথে ধারণ করতে হবে বিশ্বজগত আর তার বাইরেকেও।

প্রলয় মুখার্জি: কিছু কিছু কথা সময় বলে পিয়ূষ, 'যেমন সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে' এই তথ্যটাও বিকৃতি ছিল একসময়ে, আবার ডারউইনের বক্তব্য আমরা বানর শ্রেণী থেকে এসেছি, এ সত্যিটাও সময়ে কেউ মেনে নেয়নি, ক্রমশ সত্যিটা কাছে এসেছে। আবার হাংরি একটা মুভমেন্ট, একে ভাললাগা বা খারাপ লাগা শুধুমাত্র দুটো শব্দে না ব্যাখ্যা না করে ইতিহাসটা জেনে রাখা ভাল। হতে পারে দ্বিমত অনেকেই। তবে দ্বিমতকে আপেক্ষিক বলাটা ভুল। কারোর কারোর দ্বিমানসিকতা আজ পাল্টেছে। কেউ কেউ মেনে নিয়েছে। আপেক্ষিকতার জন্যে এটা নয়, এটা আদৌ দুরদর্শিতার অভাব, যেমন সাহিত্যে শ্লীল, অশ্লীল আজও ভেংচি কাটছে অসভ্যতার আবদারে। একে আপেক্ষিকতা বললে দুম করে আপেক্ষিকতা একটা পদার্থে পরিণত হবে, যাকে কেউ লুচি বলবে, কেউ মাজন অথবা কেউ রুমাল ভেবে বিড়াল ডাকবে। এই সুবিধাটা এখন অনেকেই নিচ্ছে।

উষসী ভট্টাচার্য্য: আমি একটি পত্রিকায় লেখা দিলাম, লেখাটি নির্বাচন হলোনা. সেই একি লেখা অন্য পত্রিকা তে নির্বাচন হলো, এটা কি আপেক্ষিক না?

প্রলয় মুখার্জি: না, আমি ধান খর ভালোবাসি, তোমার কবিতা ধান খর। আমি ছাপলাম। আমি ধাতু আঘাত ভালবাসি, আমি লৌহ চেতনা ভালবাসি, তোমার লেখাটা আমার পছন্দের। এখানে আপেক্ষিকতার থেকে ভিন্ন দিকের প্রতি আকৃষ্টতা, স্বজন আবদার,সম্পাদকের সীমাবদ্ধতা, ব্যবসা এ গুলো একটা গাঁট হয়ে যায়, যা আমরা আপেক্ষিকতা বলে থাকি।

উষসী ভট্টাচার্য্য: ভিন্ন দিকের আকৃষ্টটা আছে বলেই তো আপেক্ষিকতা সৃষ্টি হয়েছে।

দুপুর মিত্র: যাই হোক আপেক্ষিকতার আলোচনা মনে হয় শেষ। আমার ধারণা তুলনা আর একটি বিষয়ের প্রেক্ষিতে আরেকটি বিষয় মানে আপেক্ষিকতা দুইটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু আমাদের আলোচনায় এখনও পর্যন্ত কিন্তু এল না আমরা যাকে বলি মেইনস্ট্রিম সেই সাহিত্যের ভাল কবিতার বৈইশিষ্ট্যগুলো কি?

উষসী ভট্টাচার্য্য:ভালো কবিতা হল যা দেশ কাল সব অতিক্রম করে যায়.আর সমালোচক কে বোবা করে দেয়.

দুপুর মিত্র: কয়েকটা বৈশিষ্ট্য দিন ভাল কবিতার।

পীযূষ কান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়: ভাষা কিংবা ভাব অথবা উভয়দিক দিয়েই যা পাঠককে ছুঁতে পারবে...

দুপুর মিত্র: কবিতার দুর্বলতা ধরার সহজ কিছু নির্ণায়ক দেখাচ্ছি ১. কেউ যদি ছন্দে কবিতা লিখেন তাহলে ভুল ছন্দ। ২. যে বিষয় নিয়ে কবিতা লেখা হয়েছে লেখায় সেই বিষয়ের অস্পষ্টতা। ৩. কবি যে ফর্মে কবিতা লিখছেন বিষয় আর সেই ফর্মের ফারাক। ৪. অনুপযুক্ত অলংকার ৫. দুর্বল ইমেজ, দুর্বল অলংকার ইত্যাদি।

পীযূষ কান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়: যেহেতু পাঠক একটা সিঙ্গল এনটিটি

নয়,তাই ধরে নেওয়া যাক অধিকাংশ পাঠক তাত্ক্ষনিক পাঠপ্রতিক্রিয়ার পর একটা মুগ্ধতা লাভ করবেন ভালো কবিতা থেকে...

ব্যক্তিগত শোক কিংবা আনন্দকে সামগ্রিক করে তুলতে হবে

দুপুরবাবু,অনুপযুক্ত অলংকারটার ব্যাপারটা বিশদে বলুন..

অমিত আশরাফ: সাহিত্যের যে কোন শাখায় টিকে তার পাঠকের রচিবোধের উপর নির্ভর করে । যেহেতু এখনো কবিতা লিখা হচ্ছে, তরুণরা এগিয়ে আসছে তারমানে ভালো কিছু হচ্ছে বলেই । কিন্তু বক্সে বন্দি করে বলতে পারবেন না এভাবে লিখো তাহলে তুমি ভালো কবির তকমা গায়ে লাগাতে পারবে ।

পীযূষ কান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়: তার মানে ভালো লাগাটা কো-ইনসিডেন্ট?ভালো যখন লাগে তখন তার কারণও আছে l যদিও ব্যক্তিবিশেষে ভালোলাগার কারণটা পাল্টায়

দুপুর মিত্র: ভাল কবি বা কবিতার হয়ত বা ম্যানুয়াল দেওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু কিছু গড়পড়তা বৈশিষ্ট্য অবশ্যই কবিতাকে বহন করতে হয়; যা দেখে বোঝা যায় গড় হিসাবে এটা কবিতা। বা ভাল কবিতা।

উষসী ভট্টাচার্য্য: ভালো কবিতার বৈশিষ্ট্য বলা সেভাবে যাবেনা। আমি একটা সাধারণ গড়পড়তা বৈশিষ্ট্য দেওয়ার চেষ্টা করছি , ১) পদ্য ছন্দের কবিতা হলে তা নির্ভুল হতে হবে, গদ্য ছন্দের হলে চলন ঠিক হওয়া চাই / ২) বক্তব্য স্পষ্ট হওয়া আবশ্যক/ ৩) গতি থাকবে, অনাবশ্যক বাক্যের আড়ম্বর বর্জিত হবে । / ৪) আবেগ নির্ভর কবিতা নয়, আবেগও কাব্য রীতিতে উত্তীর্ণ হবে ৫) জটিল বা অনাবশ্যক কঠিন শব্দের প্রাচুর্য থাকবে না ৬) আধুনিকতার ছোঁয়া অবশ্যই থাকবে সমগ্র কবিতাতেই/৭) বাক্য বা শব্দ বা ব্যঞ্জনা বা নামকরণ কবিতার জন্যই হবে, ওগুলির জন্য কবিতা না/ ৮ ) কবিতাটিকে সর্বস্তরের পাঠকের হৃদয় গ্রাহী হবে, তাতে কবির কোন দায় নেই জদিও।তবু ভালো কবিতা সব পাঠককেই আকৃষ্ট করে। ... ...... মুলতঃ একটি কবিতা মনের অন্দর মহলে প্রবেশ করলেই তা ভালো কবিতা হয়ে ওঠে। যা প্রতি মুহূর্তে মনে রিনিরিনি বাজে ,ও যা আমাদের ইহজীবনে একাকার হয়ে যায় তাই ভালো ও চিরকালীন কবিতা ।।

পৃথা রায়চৌধুরী: কবিতা ভালো না মন্দ, তার প্রমাণ কবিতাটি পাঠক কবার পড়লেন, অর্থাৎ পাঠক যখনি কবিতাটি একবারের বেশি পড়ছেন (বোদ্ধা ব্যতিরেকে), তখনই ভাবতে হবে, ওই নির্দিষ্ট লেখাটি তাকে কোথাও যেন নাড়া দিয়েছে। ভালো কবিতা হলে পাঠক পড়বেন, আর যেটাকে আপেক্ষিক ভাবে মন্দ বলা হচ্ছে, সেটি গড়াগড়ি যাবে। কবিতা আমার কাছে দুরকম- একটা ভালো, আরেকটা অখাদ্য (আপেক্ষিক )।

শঙ্খ শুভ্র দেববর্মণ: সবার আগে আসলে এই বোধটুকু সঞ্চারিত হওয়া দরকার প্যাশনের রস মিশিয়ে অনুভূতির যে ভাবমূর্তি সৃজিত হল সেটা আদৌ কবিতা হয়ে উঠল কিনা। কবিতা যদি সত্যি হয় - তখন তার আবার ভালো মন্দ কী। কবিতার অন্তস্থল থেকে উত্থিত প্রতিধ্বনিতে সর্বদা নেচে চলে কাদের যেন অশরীরী ছায়া। কবিতার ভালো মন্দ নিয়ে তবে কেন এই অর্থহীন উচ্চকিত শব্দ চারপাশে ! আরও যদি এর বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিতে হয় তাহলে জন ককতো'র ভাষায় সেই কথাই বলতে হয়, '' The worst fate of a poet is to be admired without being understood.'' আর কিছু বলার আছে, সুধীজন !

আবু জাইদ: আমি আর কি বলবো সবি তো বলা হয়ে গেছে, আসল ব্যাপার টা হলো,

কবিতার স্বাদ আস্বাদন, এখন ধরা যাক, "যেভাবে আমি খুব ঝাল করে শুটকি ভর্তা পেলে পেট ভরে ভাত খাবো, ঠিক তেমনি অনেকে সেটার পাশ দিয়ে গেলেও হয়তো নাক চেপে যাবে" কারন ভাল খারাপ চিরন্তই আপেক্ষিক।

এবার আসি কবিতার প্রসঙ্গে, যে কবিতাটা আমার কাছে ভালো লাগলো সেটা যে আরেক জনের কাছে ভালো লাগল্বে তার কি গ্যারান্টি ? সে হয়তো আরেকটা ফ্লেভার পছন্দ করবে। এটাই নিয়ম, তাই বলে আমরা কি কবিতা ২ টো কে খারাপ বলতে পারি ? যেহেতু ২ জন ২ টা পছন্দ করেছে সেহেতু কবিতা ২ টাই ভালো, আর একেবারে যা কবিতাই না বাঁ নাম স্বর্বস্ব তা নিয়ে কথা না বললেই হয়

আসলে আজকের টপিক টাই এমন যে, এখন মনে হলো যা বললাম তা অনর্থক, কারন এটা সবাই এম্নিতেই জানে

মিলন চ্যাটার্জি: প্রথমেই বলি -- এই টপিকটাই বালখিল্য । এটা তো স্বাভাবিক যে একই কবিতা দুজনের ভালো নাই লাগতে পারে , তাতে কি এসে গেলো । আপেক্ষিক তো সমগ্র জগৎসংসার । আজ আমি যা ভালো ভাবছি সেটা অন্য খারাপ ভাবতেই পারেন । একদা রবীন্দ্রনাথের 'কড়ি ও কোমল' কাব্যগ্রন্থের 'স্তন' কবিতা অনেকের ভালো লাগেনি আবার কারো কারো ভালো লেগেছে । হাংরি আন্দোলনের ক্ষেত্রেও শক্তি চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন এরা সব নষ্ট প্রতিভা । তাতে তো আন্দোলনের গুরুত্ব কমে নি , সাহিত্যে তারও প্রয়োজন ছিল । একদল দামাল যুবক সমাজের ঘুণধরা অংশের প্রতি প্রবল যে বিক্ষোভ তাদের কবিতায় প্রকাশ করেছিলেন সেটাও প্রয়োজনীয় ছিল সেই প্রেক্ষিতে । কিন্তু কবিতা ভালো না মন্দ এর বিচার করে কাল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যে কবিতা প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখে তাই কবিতা হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে । গবেষক বা সাহিত্যের ছাত্র অবশ্য নিজের তাগিদেই সব কিছু নিয়ে চর্চা করেন যদিও আদত পাঠক সেটাই মনে রাখেন যেটা তার ভালো লাগে, আর এটাও ঠিক গরিষ্ঠ পাঠক সম্প্রদায় বিনা কারণে কবিতা মনে রাখেন না । তাই আজও প্রেমে পড়লে কোন যুবা অক্লেশে বলে - ' "প্রহর শেষে রাঙা আলোয়- সেদিন চৈত্র মাস, তোমার চোখে দেখেছিলাম- আমার সর্বনাশ !" তাই এই টপিকটাই আমার আজব লাগলো ( যদিও এটাও আপেক্ষিক )

জিল্লুর রহমান: হাংরি, শ্রুতি আরো যে-আন্দোলনের কথা আমরা জানি, তাদের সঙ্গে থেকে যারা নিজস্বতায় গিয়েছেন তারাই কেবল আজ কবি। কোনো নির্দিষ্ট তত্ত্বের অনুশীলন এবং কবিতার অনুশীলন এক কথা নহে। তবে, শক্তি' দা সুরিয়ালিজমের প্রতি তার দূর্বলতার কথা ব্যক্ত করেছিলেন। ইমেজিস্ট কবির আবেদনও তো কম না। কিংবা আধুনিক কবিতা সম্পর্কে বাতলে দেওয়া বুদ্ধদেবের বিকল্প ইশতিহার। মাঝে মাঝে ইজমের হাতে-পায়ে ধরাও মন্দ না, যদি তা কেবল কবিতার একান্ত প্রয়োজনে হয়। অন্যথায়, ইজমের পায়ের ধুলো নেওয়ার কোনো দরকার কবির আছে বলে মনে করি না। কবিতা সেটাই যেটা ভিন্ন ব্যঞ্জনায় ছত্রিশ ব্যঞ্জনে বেজে উঠে। ভালো-মন্দটা হয়তো আপেক্ষিক, কিন্তু মহার্ঘ কবিতা সবসময় সার্বিক, সার্বজনীন, মাথার ভেতরে বেজে উঠে।

অমিতাভ প্রহারাজ: আমাদের বৈখরী ভাষ্যের প্রথম সংখ্যায় একটা কথা লেখা ছিল "...লেখার তো ভালোমন্দ হয়না। লেখা হয় দু প্রকার, সৎ ও অসৎ..."... কলেজ পড়ুয়া সেই আমার হাতে কি করে এটা এসেছিল জানিনা... স্বীকার করতে লজ্জা নেই ১৩-১৪ বছর আগে সম্পাদকীয়তে হঠাত লিখে ফেলা এই লাইনের মর্ম বাস্তবিকে তখন কিছুই বুঝিনি... "লেখার তো ভালো-খারাপ হয়না" এই উক্তিটি যত নিরীহ, গোবেচারা, পাচুবাবু গোছের দেখতে, বাস্তবিকে ততটা নির্দোষ নন এই মহাশয়... তখন আড্ডায়, আসরে যেখানে সেখানে করা এই দর্পিত বুলি, লেখার ভালো-মন্দ হয়না, আসলে যত না ছিল অনুসন্ধানের তার থেকে বেশী ছিল প্রথা বিরোধিতা করবার একটা টুল এবং তার থেকেও বেশী ছিল একজন সৃষ্টিশীল মানুষের অবচেতনিস্টিক প্যাঁচ.....

কিঞ্চিৎ আদালত-বাজি করা যাক... চর্যা থেকে ১৯৪০ অব্দি লেখার ভালোখারাপ দাপটে শাসন করেছে, চর্যাতে কাহ্নর আলাদা সম্মান, আদি চণ্ডী আর বড়ু চণ্ডীর ফারাক, এমন কি তার সাথে জ্ঞানদাসের মার্কশীট, ভারতের বিদ্যাসুন্দর ও তার সাথে রামপ্রসাদী বিদ্যাসুন্দরের রেজাল্ট এবং একই সাথে ভারতের মঙ্গলের সাথে রামপ্রসাদের মঙ্গলের মার্কস... ভালোখারাপ, যার ভালোনাম শ্রী তুলনা মহারাজ, চুটিয়ে সংসার করছেন বাংলায়... এমনকি গদ্যভুবনের বৌনির সময় দেখতে পাই সুস্পষ্ট মার্কিং, তা না হলে আলাল-ঘ-দুলাল বা দুর্গেশনন্দিনী প্রথম চলিত গদ্য বা প্রথম উপন্যাসের র‍্যাঙ্কিং কি করে পায় যেখানে রয়েছে "হেমলতা-রতিকান্ত" (১৮৩৭) এবং "কামিনীকুমার" (১৮৪২)... সিংগিবাবুর হুতোম প্যাঁচার পাল্টা যখন ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের "আপনার মুখ আপুনি দেখ" শহরে নামলো তখন ভালোখারাপের বাটখারা নিজের জ্ঞাতিগুষ্ঠি সমেত ঘুরতো সমঝদারের মানস সরোবরে...বাংলা ১২৭০ এ "বাতছবির লজ্জতন্নেসা" সম্ভবতঃ প্রথম সার্টিফায়েড খারাপ বই... এর আখ্যাপত্র তুলে দেবার লোভ সামলাতে পারছিনা "লজ্জতন্নেচ্ছা এই কেতাবের নাম/রশিক লোকের এতে নেকলিবে কাম/রসের ভাণ্ডার এই কেতাব জানিবে/আসল করিলে নারি বসেতে রহিবে" ( রিক সৌরক এই বানান দেখে পুলকিত হতে পারে)... হেম, নবীন, বিহারীলালের সুস্পষ্ট টি আর পি রেটিং ছিল... কিন্তু তারপরেই যে ঠাকুর নামক অতিকায় ঘটনার তছনছ...

রেজওয়ান তানিম: ভাল কবিতা/ খারাপ কবিতা এই টপিকটাই খুব বেশি যুক্তিপূর্ণ নয়, এর চেয়ে বেশি যুক্তিযুক্ত- কবিতা কি করে কবিতা হয়ে ওঠে? কবিতা যদি সত্যিকারে কবিতা হয়ে ওঠে তাহলে কবিতা তার নিজের শক্তিতেই নিজেকে রিপ্রেজেন্ট করে, বহুদিন ব্যাপী। তাকে ভাল কবিতা বলে আলাদা করে বিশেষায়িত করবার কোন দরকার নেই।

ভাল খারাপ নিয়ে আলোচনার আগে দুটো প্রশ্নের সমাধান প্রয়োজন। এক কবিতার সমকালীন ও দীর্ঘকালীন আবেদন কতটুকু? আরেকটি প্রশ্নের মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন, তা হল একটি কবিতা প্রকৃত অর্থে কবিতা হয়ে ওঠে কখন? এ দুটি প্রশ্নের উত্তরেই লুকিয়ে আছে আজকের তাবৎ আলোচনার সারমর্ম। কেননা, কবিতা, যা সত্যিই কবিতা তা অবশ্যই ভাল; খারাপ কবিতা বলে কিছু নেই, থাকতে পারেনা। কবিতার কবিতা হয়ে ওঠার সাথে কাল, দেশ, জনরুচি, বিষয় ও আঙ্গিকগত ভাবনার পার্থক্যগুলো প্রাধান্য পায়। সমকালীন ও কালজয়ী লেখার প্রসঙ্গ আসে, এখানেই একটি কবিতার শক্তি চিনতে পারা যায়।

কবিতাকে সমকাল ও মহাকাল দুই কালের কাছেই গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য প্রথমেই দরকার কবিতার ভাষা, ভাব ও ছন্দের বিবর্তন সম্বন্ধে সংশ্লিষ্ট কবিতা রচয়িতার স্পষ্ট ধারনা। অনেক সময় সে ধারনা না থাকলেও কালজয়ী কবিতা রচিত হতে পারে, তবে তাকে ব্যতিক্রম হিসেবেই ধরা যেতে পারে। কবিতার ক্রমিক বিবর্তনে এখন এমন একটি অবস্থা এসে দাঁড়িয়েছে বাংলা সাহিত্যে যে আজ রাবীন্দ্রিক ধারায় কিংবা জসিমউদ্দীনীয় ধারায় কবিতা রচিত হলে তাকে কতটুকু কবিতা বলা যাবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ঠিক সে রকমই এক সময়ের যুগ বদলকারী, মন্ত্রমুগ্ধ করা বিদ্রোহী কবিতাও এখন প্রকাশিত হলে তত আলোচিত হত কিনা সন্দেহ। তবে এ কথাও সত্য এ সময়ের কবিতা চর্চার চলমান বড় ঢেউয়ের জোয়ারে ভাসলেই তা সমকাল কিংবা মহাকালকে স্পর্শ করে প্রকৃত কবিতা হয়ে উঠবে এ ধারনাটিও ঠিক নয়। কবিতাকে নিজের বৈশিষ্ট্য, বক্তব্য, চিত্র ও দৃশ্য নির্মাণের প্রতি সৎ রেখে কোন কবিতা বা লেখক যদি কবিতার দেশজ, বৈশ্বিক এবং সময়গত কাঠামো স্পর্শ করে যান, তবেই কবিতা প্রকৃত অর্থে কবিতা হয়ে ওঠে, কেননা তা কালের কথা বলে। এ কাল হতে পারে সমসাময়িক, ভূতপূর্ব সময়ের বয়ান কিংবা আগামী দিনের কথকতা। সমাজ, রাষ্ট্র, দর্শন, ধর্ম এবং সর্বোপরি মানুষ- কবিতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ কাঠামো, এগুলোর যথাযথ মেলবন্ধনই কবিতার জন্ম দেয়, হতে পারে তা আকস্মিক কিংবা দীর্ঘদিনের সুচিন্তিত প্রচেষ্টায় নির্মিত।

একটি কবিতা যদি সত্যিই কবিতা হয়ে ওঠে, তবে তা অবশ্যই ভাল কবিতা; যেহেতু কবিতাকে ভালো দিয়ে বিশেষায়িত করছি আমরা। তবে তা অবশ্যই সব শ্রেণীর মানুষের ভাল লাগবে বা তারা সকলে একে গ্রহণ করবে বিষয়টি এমন নয়। এ ক্ষেত্রে পাঠকের স্বাধীনতা ও অভিরুচি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু একটি কবিতার প্রকৃত অর্থে কবিতা হবার কোন যোগ্যতা নেই, কিন্তু তাকে পাঠক খুব গুরুত্বের সাথে নিলেই তাকে কবিতা হিসেবে মেনে নিতে হবে এমন ধারনা স্বাস্থ্যকর নয়। কেননা, প্রকাশমাত্র পাঠকের চাহিদাই কবিতাটি কবিতা হয়ে উঠেছে কিনা তা প্রমাণ করে না।

অমিতাভ প্রহারাজ: তখনই প্রথম লেখার ভালো-খারাপ নিয়ে ভ্রুকুঞ্চন ওঠে, অবশ্যই ঠাকুর দেবতা বাদ দিয়ে... কিন্তু তা ভ্রুকুঞ্চন মাত্র, ঠাকুরঘরের সার্টিফিকেট জ্বলজ্বলিয়ে বিরাজমান... হ্যাঁ বাংলা বাজার থেকে "খারাপ-লেখা" উবে গেল, কেননা গুরুদেব বঙ্গভঙ্গ টাইপের সার্জারী আর শেষ জীবনে নিজের শরীরে সার্জারী ছাড়া "খারাপ" বলে দেগে দিয়েছেন, এমন কাণ্ডকারখানাই বিরল... তবে ভালোর তারতম্য চালু হলো... এরপরে এই "ভালোর-তারতম্য" জাতীয় সার্টিফিকেটের রাজ চলেছে চুটিয়ে... কিন্তু কি এমন হলো যে লেখায় মার্কিং ব্যাপারটাই হয়ে গেল জামিন অযোগ্য যোগ্যতা... এখানেই আসে অবচেতনিস্টিক মারপ্যাঁচ... ঘটনা কয়েকটি... তার প্রথম হলো আমাদের দেশটির তিন-চারশো বছর ধরে ঘটা একটা paradigm shift... from "obedience" to "rebellion"... criminal থেকে hero হয়ে গেল rebel... স্রোতের বিপরীত, ঝাঁকের কই এর সাথে আড়ি, এগুলি সৃষ্টিশীলতার সাথে বাধ্যতামূলক ভাবে জুড়ে গেল... এবার যাকে দশজন বলবে খারাপ, আমি তাকে বলবো ভালো... যাকে কুড়িজন বলবে দূর হটো তাকে আমি বলবো "আয় ব্যাটা, বুকে আয়"... কারন তা না হলে আমার কণ্ঠস্বর যে হর্নের আওয়াজে, সভার মাইকে, চাপা পড়ে যাবে... এটি করার উপায় a) logically b) relatively... প্রথমটি বড় খাটুনির, দ্বিতীয়টাতে আরামসে পাশ করে যাবো... শিশু,পুত্র,কন্যা সমেত মার্ডার করো মানদণ্ড নামক জাতিটিকে... যার immediate অবৈধ সন্তান হলো antipoetry.... এবং দ্বিতীয় মাফিয়া পুত্র হলো deconsruction... কিন্তু আপামর বাংলা জুড়ে চালু হলো একটি অপূর্ব fallacy "লেখার তো ভাই ভালো-খারাপ হয়না"... যদি এতই বিশ্বাস হয়না, তবে বন্ধু বা বান্ধবীটির একটি কবিতা শুনে ঘাড় নাড়লে আর আরেকটি কবিতা শুনে মজনু-তস্য-মজনু হয়ে গেলে??!!! যদি এতই বিশ্বাস হয়না তবে মাইকে সমর্পন করবার কবিতা এত বাছাবাছি কেন?????? যদি এতই বিশ্বাস হয়না তবে প্রতিদিন পড়ে আকাশী দীর্ঘশ্বাস সহ "জয় এর লেখা শেষ হয়ে গেছে, আর নেই" এবং তৎসহ জুনিয়র কবিকে সস্নেহ উপদেশ "সত্তরের কবিতা পড়তে হলে মৃদুল পড়, রণজিৎ দাশ পড়, গীতা চট্টোপাধ্যায় পড়"???? কেন কফি হাউসে প্যান্ট শার্ট পরা সুপ্রীম কোর্ট "ঋক্ষ-মেষ-কথা ছাড়া সুবোধের কবিতা আছে নাকি? বা চল্লিশ-চাদের-আয়ু মল্লিকার আসল কবিতা"????????????????? কেন ?????????? এই প্রতিটি প্রশ্ন আমার নিজেকে ছিল, যে বিশ্বাস করে যে সে মনেপ্রানে বিশ্বাস করে লেখার ভালো-খারাপ হয়না!!!!!!!!!!! কেন?????????? উত্তরের কথায় পরে আসবো, এই প্রশ্নটাকে ছুড়লাম গ্রুপে...

অমিতাভ প্রহারাজ: এলান-এ-জঙ্গ। খারাপ topic বলে দেগে দিয়েছিলি না???

অমিতাভ রক্ষিত: খারাপ topic এই কথা বললাম... তাও অংশতঃ... উত্তরের পালা আসেনি এখনো... আপ্তবাক্য, যেখানে দেখিবে ছাই... মনে রাখিস...

অত্রি ভট্টাচার্য্য: আন্টিপোয়েট্রি আর ডিকনস্ট্রাকশন - এই দু'ই চেনা শব্দ চোখে পড়ল বলে বলছি যে - ইয়ে, এরা তো দুটি ভিন্ন মেরুর টেকনিক - তাই না বেবীদা? একটা তালা খোলার, একটা বন্ধ করার। যাই হোক - আমি অবিশ্যি "এই দশকের লেখা পড়তে হ'লে" অংশটি বাদ দিয়েই মৃদুল-গীতা-রণজিৎ দাশ সাজেস্ট করব, কারণ জানি, আমার দশকে এসে হিসেবটা আরো গুলিয়ে যাবে। আমি নিজেই কয়েকটা ভিন্ন ভিন্ন অভিমুখের স্রোতে ভেসে যাচ্ছি, যাদের একটা আরেকটাকে প্রায় ক্রস ক'রে। মানো-না-মানো, স্কুল গড়ে ওঠেই। তাদের গড়ে উঠতেই হয়। প্রশ্ন যে, তারা ইন্সটিটিউট হয়ে উঠবে কি উঠবে না ! তবু, তবুউউউউউ, জুনিয়র-সিনিয়ার - একেবারে নিরবিচ্ছিন্ন ক্যাটেগরী নয় তো এরা - একে অন্যের মধ্যেই কিছুকিছু কমন রেখে বাঁচছে, এই শেয়ার-ও বাড়ছে-কমছে - ভিন্ন ভিন্ন পয়েন্টে পাঠাভ্যাসে বা পাঠপরিধিতে আবার মেধায় বা ননমেধায় একে অপরকে হামেশাই আউটডান করছে। সময় (পড়ুন বয়স) জাস্ট একটা বাউণ্ডারী কণ্ডীশন - ইট অলওয়েজ ওয়াজ, আণ্ড ইট অলওয়েজ উইল ! সুতরাং "দেদার পড়" বা "যা খুশি তাই পড়"-কে যদি কেউ নির্ণয়বাদের প্রতিকূল কিছু ভেবে থাকেন, অথবা, মোর প্রিসাইজলি - নির্ণয়বাদ এই-ই বলে দেগে দ্যান - তবে তার দিকেও তিনটি আঙুল থাকে যে, এই প্রশ্ন উঠবে কেন আদৌ, যেখানে লেখার ভালো-খারাপ থাকা বা না থাকা চিরকাল-ই ব্যাক্তি থেকে শুরু ও ব্যাক্তিতে গিয়ে শেষ? যাই হোক, আমি কোন টপিক ভালো খারাপ বলে দেগে দিইনি। আমি বলেছি - এই টপিকের দু'টি অংশ এবং দুটির কোনটি নিয়েই তক্ক চলে না। কারণ - ওয়েল আইন্সটাইন জানেন।

অমিতাভ প্রহারাজ: antipoetry বা deconstruction নিয়ে ২০১৩ তে কথা বলা mac এ dos শেখার মতো... আসলে গত কিছু পোস্টে, বিভিন্ন জায়গায় antipoetry নিয়ে ধারনার বিভ্রম দেখে বলেছিলাম... আসলে কিছু না দুটো জিনিস, theoretically anti-poetry একটা well defined premise and practice যেটা ভাষা-বিবর্তন বা language evolution এ সক্রিয় ভূমিকা নেয়... আর শব্দ হিসেবে anti-poetry শব্দটা খুব লোভনীয় বলে প্রায়শঃই কবিতা সম্পর্কিত নিজস্ব ধারনার বাইরের কবিতা anti-poetry বলে ছাপ মেরে দেয়... এটা গত চল্লিশ বছর ধরে হয়ে আসছে... common mistake...

অমিতাভ রক্ষিত: anti-poetry এ্যাতোটাই clearly defined যে জুবিনের কাছে যা antipoetry অত্রির কাছে তা anti-poetry নয়, এমন ঘটনা না ঘটার সম্ভাবনাই সর্বাধিক...এবং এই একটা কারনেই anti-poetry খুব প্রাসঙ্গিক যে এটি আইনস্টাইনের ছড়ি সামান্য হলেও থামায়...

লোকে ভাবে কবিতার মিষ্টি মিষ্টি শব্দর বদলে ইট-কাঠ-পাথর-বোল্ডার ব্যবহার করলেই বুঝি anti-poetry হয়ে যায়!!!! মজার ব্যাপার বিশ্বের শ্রেষ্ঠ anti-poetry গুলি বেশীর ভাগ প্রেম বা প্রকৃতি নিয়েই লেখা...

অত্রি ভট্টাচার্য্য: পথে এসো ! আন্টিপোয়েট্রি বা ডিকনস্ট্রাকশন ম্যাক-এ ডস শেখার মত - তুমি এভাবে বললে। আমি বললেম যে, নতুন বোতলে পুরনো মদ। বা আরো সোজাসাপ্টা - ব্যাকডেটেড ! পিছনের সেস্নটি এক - এ কনসেপ্ট বা টুলগুলি পুরনো, কিন্তু অচল বা বাতিল তা বলা যাবে না। কথা হচ্ছে, একটি কবিতাকে আমি এক-ই রকম বিশেষণ দিয়ে দাগিয়ে দিতে পারব না কেন? এই কবিতাটি ডস-এর মত, আমার ডট নেট বা পিএইচপি মনে হয়নি - এইরকমভাবে? ভালো-খারাপ তো শব্দ মাত্র - আর তো কিস্যু না। তার পিছনেই তো সবকিছু ! তো, সামনেটি ভালো খারাপের বদলে যা-খুশী-তাই সম্বোধন করলেও আমার বা আমদের ধারণাই প্রকাশ পায় - নয় কি?

দুপুর মিত্র: খাইছে পুরাটাই দেখি আমারে নিয়া আলোচনা।

অমিতাভ রক্ষিত: কিন্তু এক পরিবারের হতে হবে মাপকাঠি সহ... একটা হাতি, একটা হাইতি দ্বীপপুঞ্জ আর আরেকটা হাতিয়ার হলে চলবে না...

আবু এম ইউসূফ: মেইন্সট্রিম কবিতা, এন্টি-পোয়েট্রি, ডিকন্সট্রাকশন অব পোয়েট্রী - এগুলো একই জামার কতগুলো ব্র্যান্ডনেম কি ?

অমিতাভ রক্ষিত: একটু পার্থক্য আছে ইউসুফ ভাই... যতক্ষন এই বেচারাগুলি থিওরাইজ হয়না ততক্ষন ব্র্যান্ড নেমের মতো গ্ল্যামারাস লাইফ কাটায়... যে মুহূর্তে থিওরাইজেশান হয়ে যায়, এরা নিপাট গৃহবধূ (no offence, feminism)। আর দুপুর, এটা মোটেই কাউকে নিয়ে নয়... এটা অত্যন্ত কমন মিসকনসেপশান... ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ছোঁয়াচে...

রেজওয়ান তানিম: কবিতার নতুন একটা ব্রান্ড নেম বানাইলে খারাপ হয়না, ওই যেমন কেউ কেউ বানাইছিল হাংরি কবিতা। ক্ষুধার ঠেলায় শরীরও খাইয়া ফেলার উপক্রম, বছর পাঁচ যাইতেই বস্তাবন্দী। আর এখন উহা কেবলি স্মৃতিকথনের উপাদেয় বস্তু

আবু এম ইউসূফ: সঙ্গীত জগতে যেমন কতগুলো জনার অথবা ঘরানা আছে ঠিক কবিতায় সেরকম কতগুলো ঘরানা থাকতে পারে। সেইভাবে একটি কবিতা কোন ঘরানার সেটা হয়তো নির্নয় করা যেতে পারে। কিন্তু মন্দ কবিতা কি? যেটা কি কোন ঘরানায় ফেলাও যাচ্ছে না আবার কবিতাও হয়ে উঠছে না, তাই না অন্য কিছু?

অত্রি ভট্টাচার্য্য: আমার প্রশ্ন - এই একের সাথে অপরের সামঞ্জস্য নিরূপন - এর জন্যেও তো মাপকাঠি লাগছে। এই মাপকাঠি তৈরি হচ্ছে কোত্থেকে? একটা কথা বলি। আমার প্রথম কমলকুমার পাঠ স্কুলে থাকতে - অনীলা স্মরণে। সেই বই অতিকষ্টে শেষ করেছি, প্রায় নিয়মরক্ষার মত ক'রে । পরে কমলকুমারকে নিয়ে চর্চা হয়েছে ক্রমশঃ, গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের সাথে। "সুহাসিনী তার আপেলত্বে ঠেস দিয়া বসিলেন" - লাইন দিয়ে আপেলত্ব শব্দটির হাজারো সুতো খুলে দিল গৌতমদা; আমি তখনো কিংকর্তব্যবিমূঢ় ! তারপর কবিতায় হাঁটতে হাঁটতে আজ যখন গদ্যেও হাঁটু ভেজাচ্ছি কিয়ৎ কিয়ৎ - তখন আবার কমলকুমারকেই খুঁজে পেলেম। বুঝলেম - ওটে আমার "লেভেল"-এর গদ্য ছিল না। আমার ভালো লাগেনি। প্রশ্ন হচ্ছে - এই ঘটনা পুরোপুরি ফলিত বিজ্ঞান থেকে দোসর উদাহরন পাবে হাজার হাজার, সত্যি সত্যি এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখা কি? মাপকাঠিগুলি শুধু বয়স নয়, শুধু পাঠ নয়, শুধু কল্পনা বা জ্ঞান নয় - সরাসরি তোমার মতামতের প্রভাব আমার মূল্যায়নে পড়তেই পারে। এই তোমার উল্লিখিত হাত ধরে কবিতা চেনানোর ব্যাপারটা আজকের নয়,বহুদিনের পুরনো ! তুমি তো আমাকে বাছাই করতে বারণ করছ - কিন্তু সে-ও তো তুমিই বলছ। কেন ভালো খারাপ বাছব - এ প্রশ্ন তুমি আমার মনে ঢোকাচ্ছ। অর্থাৎ - তোমার ভূমিকা আমার ভালোখারাপ নির্ধারণক্ষমতা(!) গঠনে অস্বীকার করবার কোন উপায় নাই !

অমিতাভ রক্ষিত: মন্দ কবিতার অস্তিত্ব থাকে/আছে শুধুমাত্র মন্দ-নয় কবিতাদের মধ্যে

অত্রি ভট্টাচার্য্য: আহা - এক্সেলেন্ট বললে !

আবু এম ইউসূফ: তাহলে কি কোন পত্রিকায় ছাপা হলেই সেই কবিতা ভালর দলে নাম লেখাবে ?

অত্রি ভট্টাচার্য্য: আজ গ্রুপে প্রাচীন ক্ষেপু শর্মিষ্ঠাদি এই কবিতাটি লিখেছেন -

কবিতার ভালো খারাপ / শর্মিষ্ঠা ঘোষ

এটি একধরণের ছেলেধরা যন্তরমন্তর বিশেষ

স্লিভলেস উৎসব ক্লিভেজ দেখানো আফিম নেশা

ছয় বাই সাত ফ্রেমে মেদ মাংসের অশ্লীল পিকনিক

কিউট লক্ষ্মী নেকী সেক্সি বিউটিফুল রসালো তরমুজ

এটি আরেকভাবে দেখলে মেয়েধরা উইন্ডোশপিং

মাচো মাচো লাইক রাগী কমেন্ট প্যাকেজ

সিক্স প্যাক অ্যাবস প্রোফাইল পিক হ্যাঙওভার

রোমান্স চুরুট খোর শীত পুকুর ভেলীগুড় চিতোই

এটিকে কেউ ভাবেন পথশিশু বেগার নেড়িকুকুর ছানা

ঘামবিজবিজ লোকাল ট্রেন দাদার কনুই বউদির স্লিপার

নিত্য পুরাণ জমি মাটি বিপ্লব নীল সাদা রূপটান ঝুপস

লাল বাগানে সবুজ বসন্ত ‘ সারে জাহাঁসে আচ্ছা ‘

কেউ এতে ভাত মেখে খান নিজের অন্যের মাথায় মাখেন

কখনো মেটে হাঁড়ি দেহাতী রমণী উদ্ধত যৌবন ভীমরুল চাক

কথকের ভাষ্যে ফাটা ঢাকে ওভার ল্যাপিং সরলে গরলে

সাদা কালো সুবোধ কবিতার টিকি টানে দুষ্টু বখাটে কবিতা ।

আবু এম ইউসুফ: আলোচনায় দারুণ একটা সংযোজন ...অত্রিকে ধন্যবাদ।

জিল্লুর রহমান: না, কবিতার আর কোনো বিশেষণ দরকার নেই। কবিতাকে কেবল কবিতার মধ্যে রাখা দরকার। সেটাই গুরুত্বপূর্ণ কথা, কবিতার বাটখারা কবিতা। কবিতার ভিন্ন ব্যঞ্জনার হাজার দরোজা রয়েছে। মাঝে মাঝে এসব দরোজা চিচিং ফাঁক বললেই খুলে যায়। কিন্তু ওই চিচিং ফাঁক পাঠককে বলতে তো জানতে হবে। আমি আপনার সাথে একমত উপরোক্ত আপনার কমেন্ট । ছাপা অক্ষর কবিতা না; না ছাপালেও কবি। জীবনানন্দ সবচে' বড়ো উদাহরণ এর।

প্রলয় মুখার্জি: ভাল অথবা মন্দ এই কথাটাই সরলীকরণ, আর মিলিত প্রসব আপেক্ষিকতা।

এত তপস্যার কথা কে সহজ ভাবে সরলীকরণ করে তার ভেতরে লুকানো যায়না। মন্দ আর ভালো কোথাও বিতর্কিত তখনই, কবিতা হয়ে ওঠার পরে। আবার মন্দ ভীষণ মন্দ যেখানে বিতর্কের প্রশ্নই ওঠেনা, তৃতীয় শ্রেণীর ওয়াক্তে।

জিল্লুর রহমান: এন্টিপোয়েট্রি ডসের মতো হলে একটু ঝামেলা আছে; কিংবা কোনো প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ হলেও আছে খুব ঝামেলা। প্রথমত, ডসের কমান্ড সবার জানা থাকবে না, তার মানে, পাঠক পাঠোদ্ধার করতে পারবে না। অন্যান্য ল্যাংগুয়েজ নিয়েও একই কথা।

সেটাতো আমি বলেছি শুরুতে। কবিতা হয় কবিতা হবে, নাহয় অকবিতা কিংবা আংশিক অর্থে অল্পকবিতা। ভালো-মন্দ এসব বিশেষণ কবিতার জন্য না, মনুষ্য প্রজাতির জন্য। তাহলে বিষয় দাঁড়ালো, ভালো-মন্দ শব্দকে খারিজ করে দিলে এটি আপেক্ষিক না পরম সেটা অবান্তর। কবিতা বীজগণিতের পরম মানের মতো; চিহ্নবিহীনে ধারণ করে সামগ্রিকতা। কবিতা নাহলে সেটা সরাসরি অকবিতা; তার উপর ভালো-মন্দ শব্দ আরোপ করার কোনো দরকার নেই। ভাস্কর চক্রবর্তী'র "আর আমি, আমি কেবল সারাদিন আমি থাকি" শুনিয়ে শেষ করলাম।

অমিতাভ রক্ষিত: নাঃ, বিদেশ থেকে এই আলোচনায় সক্রিয় ভাবে যোগদান করা অত্যন্ত দুরুহ ব্যাপার - সময়ের তফাতের কথা মনে রেখে। আজ সকাল সাতটায় বেরিয়ে এখন বাড়ি ঢুকলাম, আর ইতিমধ্যেই আপনাদের আলোচনা শেষ! কিন্তু আলোচনা অসম্ভব ভালো হয়েছে আজকের - চট করে যা পড়তে পারলাম। কবিতার তো নিশ্চয়-ই ভাল মন্দ আছে...যেহতু এটা আপেক্ষিক। তবে কবিতার উৎস যদি হয় মানুষের অনুভূতি, তবে সে অনভূতির তো আর কোন সমালোচনা হতে পারেনা - সেটা সূর্যের আলোর মতই একান্ত ভাবে স্বয়ংসম্পুর্ণ ও একি রকম পবিত্র। কিন্তু গঙ্গাকে কৈলাশ থেকে মর্তে আনার মত-ই সেই অনুভূতিকেও সর্বসমক্ষে উপস্থাপিত করতে হয় কোনভাবে - এবং সেটাই কবিতা। সে কাজটা কেউ কারুর মতে ভাল করে করেন, কেউ খারাপ করে করেন। এ পর্যন্ত তো সব-ই সর্বগ্রাহ্য। কিন্তু তার পরে??? আমার মনে হয়, যাঁর উপস্থাপিত কবিতাটা যত বেশী লোকে তাঁদের নিজেদের মতন ভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন, ততই তাঁদের রসাস্বাদন বেশী হবে এবং ততই কবিতাটা ভালো বলে অভিষিক্ত হবে। এমন কোন কবিতা লেখা হয়নি পৃথিবীর ইতিহাসে, যার রসাস্বাদন কবি ছাড়া আর বিশেষ কেউ করতে পারেন নি অথচ কবিতটা কালজয়ী হয়ে বেঁচে থেকেছে। তার মানে কি আমি বলছি যে কবিতার ভাল-মন্দ হওয়াটা কেবল আপেক্ষিক-ই, মৌলিক ভাবে কোন কবিতা ভাল-মন্দ হয়না? হ্যাঁ।।