আমার কাছে ভালো লাগাটা গুরুত্বপূর্ণ: ওয়াহিদ সুজনের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jul 11, 2012 4:54:50 AM

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

ওয়াহিদ সুজন: মুশকিলে ফেলে দিলেন। মহান কোন ব্যক্তি হলে কইতে পারতাম, আমরা কেন নিঃশ্বাস নিই? শুনছি, তাদের কাছে কবিতা বেঁচে থাকার কারবার।

প্রশ্নটা যেহেতু আমারে করছেন, তয় সোজা কইরা কইতে পারি এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নাই। আপনে চাইলে কইতে পারেন- যা জানেন না তা করেন ক্যান! এটা একটা প্রশ্ন বটে। জ্ঞানতত্ত্বের ভাষায় কইলে আমরা কিছু জিনিস স্থগিত রাইখা আগাইতে পারি। ভবিষ্যতে উত্তর মিলতে পারে।

তারপরও কিছু বাতচিত করা যায়। যদিও জানি না আপনে কবিতা বলতে কি বুঝাইতেছেন। যাক, প্যাচাল দিয়া লাভ নাই। আসলে এটা কেমনে কেমনে হইয়া (আইয়া) যায়। আমি নিজেরে কবি বলি না। কারণ, আমি বিশ্বাস করি কবিতা লেখার জন্য যে একাগ্রতা, সাধনা দরকার তা আমার নাই। কবিতার মধ্যে পরম ধরা দেয়। এতে আলাদা মনোযোগ, যত্ম-আত্তি তো আছে....। তারপরও যখন কয়টা লাইন মাথায় চলে আসে- না লিখে পারি না। কিছু একটা লিখে ফেলি। এই লেখালেখির মধ্যে বিস্তর বিস্ময় আছে। এটা আমি উপভোগ করি। কারণ, কখন কোন কথা মাথার মধ্যে কেমনে চলে আসবে, তার কোন ঠিক নাই। আবার ধরেন কিছু কথা ঘুরাঘুরি করতেছে, ধরতে পারি নাই। আহারে কি যে কষ্ট... এইসব আরকি।

দু: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

ও: প্রথমত: কইলে প্রস্তুতির দরকার আছে। কেন না, কবিতা তো এমন জিনিস- যা কবিরে বাইছা নিয়া একটা দায়িত্ব দিয়া দেয়। এইভাবে না বইলা এইভাবে বলো... এই রকম আর কি। যেমন- আমার এক বন্ধু কয়, সেদিন ভাব আসছিল, একটা কবিতা লিখে ফেলছি। তিনি নিশ্চয় ভাব-রে ভাব আকারে চিনতে প্রস্তুত থাকেন।

প্রস্তুতি মানে কি, যখন একজন কবিতা লিখবে সে এমনে এমনে তো লেখে না। সে একটা স্থান বা কালের মধ্যে দিনগুজরান করে। সে কোথায় কোন অবস্থায় আছে এটা তো জানা লাগে। আর কবিতা তো একই সাথে প্রাকটিসের বিষয়। আপনার সমসাময়িক ভাব ভাষা কেমন- তা জানা লাগে। এইসব জিনিস যেকোন মানুষ কবিতা লেখা ছাড়াও হয়তো জানতে পারে। কবিতারে যেহেতু আলাদা জায়গা দিছি তাই বলি- ভাবরে জায়গা করে দেয়ার জন্য ভাষার জগতটারে গভীরতরভাবে আত্মস্থ করতে হয় এবং সেটা অভিজ্ঞতার বাইরে না।

কবিতা পড়া লাগে। গদ্য-প্রবন্ধ পড়া লাগে। ছন্দ বা এই জাতীয় টেকনিক তো আছে। এইসব না করে যদি লেখা যায়- সমস্যা কি! আমি তো ঠিক করে দেয়ার কেউ না। আবার, কবিতা তো বানানোর জিনিস না। স্বতস্ফুর্ত বিষয়। তারে কবির মাঝে ধরা দিতে হয়। সেটা ধরার জন্যই প্রস্তুতির দরকার।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন? খারাপ লাগে এবং কেন?

ও: বন্ধুবান্ধবদের কবিতা পড়ি। মুগ্ধ হই। আর যারা বিখ্যাত কবি তাদেরগুলা পড়ি। পত্রিকা, লিটলম্যাগ, নেটে। ভালো লাগা- খারাপ লাগাকে বিবেচনায় রাখছি না। কবি কিছু একটা কইতে চান। সেটা যদি কিছুটা ধরতে পারি। আমি যা বুঝি তারে কবির মতো বলে চালাইয়া দিলে সমস্যা নাই। ভালো লাগে। আর অনেকের ভাষার বৈচিত্র্য বেশ টানে। খারাপ লাগার কথা নাই-ই বললাম। আমার কাছে ভালো লাগাটা গুরুত্বপূর্ণ।

দু: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

ও: ব্লগ সাহিত্যের কাছে বিশেষ কি প্রত্যাশা করতেছি- তেমন নমুনা পাইলে ভালো। ব্লগ থেকে লাভালাভির যে বিষয় ব্যক্তি নিজেকে প্রকাশ করার স্বাধীন প্লাটফর্ম পাইছে। সে এখন একটা কবিতা ছাপানোর জন্য কারো দ্বারে দ্বারে ঘুরতেছে না। ভালো-মন্দ বিচার না করে বলা যায়, ব্লগ আমাদের সময়ের চিন্তাভাবনারে বুঝার জন্য ভালো জায়গা। এমন অনেক বাহাস তুলছে, যা পত্রপত্রিকায় কইতে গেলে আপনারে হপ্তার পর হপ্তা অপেক্ষা করতে হবে।

দু: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

ও: ব্লগের গুরুত্ব তো আছে। এই যে বললাম, আপনে চাইলে তাৎক্ষনিক কবিতা দিতেছেন, আমরা পড়তেছি। আবার, বাহাস তুলতে পারেন। চাইলে আপনেরে গালিও দিতে পারি। এই ধরেন আপনে আমার সাথে কথা কইতেছেন। এটা তো ব্লগের কল্যাণ। আবার আমাদের পরিচয়ের জায়গাও ব্লগ। নানা ধরণের চিন্তা, পরীক্ষা-নিরিক্ষা সহজ হইছে। আমার মনে হয় প্রাণবন্ত ভাষার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্লগ আমাদের বেশ সাহায্য করেছে। এই যে, আমি যেভাবে কথা বলতেছি- তার জন্য ব্লগ সাহস যোগাইছে।

এই গুরুত্বের কথা কইয়া লিটলম্যাগ খারিজ করতেছিনা বা দাম কমাইতেছি না। বাড়ানো বা কমানোর কিছু নাই। লিটল ম্যাগের আলাদা একটা জায়গা আছে। কিন্তু কেউ যদি মনে করে লিটলম্যাগ সাহিত্যের শুদ্ধ (হর হামেশা যা শুনি) সেবার জায়গা, সেখানে ভুল আছে। দুনিয়ার কোন জিনিস যেমন একাট্টা শুদ্ধ না আবার অশুদ্ধ না। বাকি কথাগুলাতো আপনে জানেনই!!!

দু: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

ও: দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য মোটামুটি একটা গন্ডির মধ্যে দাড়াইয়া আছে। এইটা নিয়া বলার তেমন কিছু নাই।