পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য ইদানিং আর পড়ি না: সালাহ উদ্দিন শুভ্রের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jun 22, 2012 1:52:50 PM

দুপুর মিত্র: আপনি নিজেকে কেন লেখক বলে পরিচিত করাতে চান?

সালাহ উদ্দিন শুভ্র: আমি নিজেরে লেখক বইলা পরিচয় কইরাইতে চাই এইটার মধ্যে জোর-জবরদস্তি নাই। আমি লেখি, ফলে আমার একটা পরিচয় হয়তো খাড়া হইতেছে। আমার পরিচয় সমাজ মাইনা নিলে আমি লেখক। কেন লেখি সেইটা বরং কাজের প্রশ্ন হইতে পারে। এই যে তুমি আমারে লেখক মাইনা নিয়া প্রশ্ন করতেছ এর দায়টা কিন্তু তোমারও। কেউ আমারে লেখক কইলে সে নিশ্চয় দায়িত্ব নিয়াই বলে।

দু: কবিতার চেয়ে কথাসাহিত্যকে আপনি কেন বেছে নিলেন?

সা: আমি বাইছা নিছি বিষয়টা এমন মনে হয় নাই। নাজেল হইছে বলা যায় কি? এইটা আমার সক্রিয়তা। সেইটা কবিতায় হয় নাই কেন, ভাবি নাই। যদি কবিতা আইসা কোনোদিন আমারে বলে লেখ, দেখা গেল লেইখা ফেললাম। গল্প আইসা আমারে নিয়মিত বলে- লেখ, লেখ। ফলে আমি গল্প লেখি।

দু: বাংলাদেশের সমসাময়িক গল্পচর্চা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

সা: চলমান বাংলা গল্পে আমি প্রেম দেখি না। আমার মনে হয় যেহেতু সমাজে সেক্স করা নিয়া একটা সমস্যা আছে, জায়গার অভাব আছে, ফলে গল্পেও তার প্রভাব পড়ে। এক্সপ্রেশনের স্বাধীনতাটা লেখকরা কম পায়, ফলে গল্পেও এর ছাপ আছে। বেশিরভাগ লেখকরে আমার সিনিক মনে হয়। অনেকের লেখা পড়লে মনে হয় তারা যেন গন্ধমাদন মাথায় নিয়া লিখতে বসছিলেন।

দু: কথাসাহিত্যের কোন ধারাকে আপনি বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন এবং কেন?

সা: কথাসাহিত্য একটা আচানক বিষয়। পাঠকের জন্য প্রচুর স্পেস থাকে। ফিকশনে যেমন উপন্যাস, আবার কোনো জীবনী কি প্রবন্ধ এক্কেরে ভিতরটা নাড়ায়া দেয়। এইটা হলফ কইরা বলা যায় না।

দু: লেখার বিষয়ের ক্ষেত্রে আপনি কোন জায়গাকে বেশি গুরুত্ব দেন এবং কেন?

সা: তোমার এই কেন-কি নিয়া উত্তর দেয়ার কিছু মুশকিল আছে। মানে খোপে ঢুইকা যাওয়ার মতো। তাও বলি, সমসাময়িক বিষয়টা আমি আসলে প্রাক্সিস লেভেলে বুঝতে চাই। আমার সমসাময়িক যেমন নব্বই দশক। এনাদের মোকাবেলাটা কখনো-সখনো আমার সাহিত্যের ব্রত হয়া ওঠে। আমার সমসাময়িক সারামাগো, এলান বাদিয়্যু, পামুক। একই রকম আমি আমার সমসময়ে পরকিয়া করি হরপ্রসাদ শাস্রীর লগে, কোথাও সেটা জসিম উদদীন। ভাষার মামলা, রাজনীতি আমাদের আশে-পাশে বিরাজ করে। এরকম কোনো সময়ে আমি যখন লিখতে বসি তখন আসলে জায়গার সংকট আমার হয় না। আমি আমার শরীরটারে জায়গা হিসাবে ভাবি।

দু: লেখা নিয়ে আপনি কেমন আশা করেন? তার কতটুকু আপনি বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন এবং কেন?

সা: নিজের লেখা নিয়া আমার কোনো আশা নাই, হতাশাও নাই। লেখাই আমারে দিয়া লেখায়া নেয়। নিজের লেখা নিয়া নিজেরই বিস্তর প্রশ্ন আছে। তোমারে কি উত্তর দিমু। তবে যা চাই তা লিখতে পারি না অনেক সময়। এইটা আমার দোষ না ভাষার দোষ, না ভাবের দোষ তা-ও ঠাহর কইরা উঠতে পারি না।

দু: পশ্চিমবঙ্গের কথাসাহিত্য আর বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের ফারক কোথায়?

সা: পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য ইদানিং আর পড়ি না। দরকার হয় না। অনেক রকম লিগেসি তারা এখনও বহন কইরা চলে। স্বাধীনতা, রাজনীতি এসব বিষয়ে হাল আমলে আমাদের সাহিত্য নানা বোঝাপড়ার মধ্যে আছে। একটা চেঞ্জ এইখানকার লেখকরা চান। পশ্চিমবঙ্গের লেখায় এখন আর এসব দেখি না।