কলকাতা বইমেলায় আমার যে বইটি বেরোচ্ছে তার নাম 'ঠিক যতটা শর্টফিল্ম': পিয়ালী চক্রবর্তীর সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jan 4, 2014 5:44:00 PM

দুপুর মিত্র: আপনি কবে থেকে লেখালেখি শুরু করেছেন?

পিয়ালী চক্রবর্তী: ক্লাস টেনে পড়তে একটু আধটু কবিতা লেখার শুরু, কলেজ অব্দি শুধু কবিতাই লিখতাম। পরে গদ্য লেখা শুরু করি।

দুপুর মিত্র: আপনার সবচেয়ে সফল কাজ কোনটা?

পিয়ালী চক্রবর্তী: দেখুন আমার লেখা এখনো আমার বন্ধুদের বৃত্ত ছাড়িয়ে খুব বেশি মানুষের কাছে পৌঁছয়নি। তবে আমার নিজের ছোটবেলার ওপর একটি লেখা আমার সব বন্ধুদেরই খুব ভালো লেগেছে। তাই ওদের ভালোলাগা মানেই এটা আমার একটা সফল কাজ। সামনের কলকাতা বইমেলায় আমার যে বইটি বেরোচ্ছে 'ঠিক যতটা শর্টফিল্ম', তাতে গল্পটিআছে।

দুপুর মিত্র: উপন্যাস লেখায় আপনি সুনির্দিষ্টভাবে কোন সমস্যায় বেশি পড়েন? আমি এখনো অব্দি কোনো উপন্যাস লিখিনি লেখার সময় আপনি কি শিডিউল করেন?

পিয়ালী চক্রবর্তী: না একদমই না। যখন ইচ্ছা হয় আর সুযোগ থাকে, লিখতে বসে যাই।

দুপুর মিত্র: আপনি কি কম্পিউটারে লিখেন?

পিয়ালী চক্রবর্তী: বেশিটাই লিখি. তবে খাতা পেন নিয়ে লিখতে বসার একটা মজা আছে। তাই প্রথম পছন্দ ওটাই। তাই মাঝে মাঝে খাতা খুলে বসি।

দুপুর মিত্র: গল্প আর উপন্যাসের ভেতর আপনার পছন্দ কোনটাতে বেশি?

পিয়ালী চক্রবর্তী: যদি পড়ার কথা বলেন, উপন্যাস। আর লেখার জন্য এখনো অব্দি গল্প।

দুপুর মিত্র: উপন্যাস লেখার সাথে ধৈর্য্যের সম্পর্ক আছে কি?

পিয়ালী চক্রবর্তী: ভীষণ। হয়ত আপনি যেভাবে ভেবে রেখেছেন সেভাবে লিখতে গিয়ে দেখলেন আপনার মনোমত হচ্ছে না, তখন আবার সেটাকে ভেঙ্গে গড়ে লিখতে হবে। যথেষ্ট ধৈর্য্যের ব্যাপার আর অনেকটা সময়ানুবর্তিতারও।

দুপুর মিত্র: লেখার আগে কি আপনি আউটলাইন করেন?

পিয়ালী চক্রবর্তী: পুরোটা না, শুরুটা কিভাবে করব, মানে একটা প্লট এলে তিন চারদিন সেটাকে নিয়ে মাথার মধ্যে খেলা করি, তারপর লিখতে বসি। বাকিটা লেখার গতি থেকেই বেরিয়ে আসে বেশিরভাগ সময়।

দুপুর মিত্র: আপনার গদ্যশৈলী কি আলাদা?

পিয়ালী চক্রবর্তী: একদম না। যে ভাষায় আমরা ভাবি, স্মৃতি রোমন্থন করি, গল্প করি, মজা করি, ঠিক সেই ভাষাটাতেই লিখি মানে লেখার চেষ্টা করি।

দুপুর মিত্র: নিজের কোন কাজটির জন্য খুব তৃপ্ত বোধ করেন?

পিয়ালী চক্রবর্তী: লেখাটা চালিয়ে যাচ্ছি এতেই সবচেয়ে বড় তৃপ্তি। আমার বাবা বলেছিলেন লেখা না ছাড়তে। বাবার কথাটুকু রাখাটাই সবচেয়ে আনন্দের আমার কাছে।

দুপুর মিত্র: আপনি কি বিশেষ কোনও পাঠককে সামনে রেখে লিখেন না বিশেষ অডিয়েন্সকে?

পিয়ালী চক্রবর্তী: না সেভাবে কিছু নয়, শুধু এইটা ভেবে লিখি যে যারা পড়তে ভালবাসেন তাদের যেন লেখাটা পড়ে একটা ভালো লাগা কাজ করে।

দুপুর মিত্র: সাহিত্যের কি সামাজিক বাধ্যবাধকতা আছে?

পিয়ালী চক্রবর্তী: বাধ্যবাধকতা আমরা নিজেরা তৈরী করেছি যেটা হয়ত বা সাহিত্যে এসে যায় কখনো। সাহিত্য তো নিজে থেকে কোনো নিয়ম কানুন করে দেয়নি। তবে মানুষের সেনসিটিভিটি বলে একটা ব্যাপার আছে, তাই সেটা মাথায় রেখে লেখাটা দরকার।

দুপুর মিত্র: এ নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

পিয়ালী চক্রবর্তী: আমি যদি আমার পাঠক দের খুশি করতে চাই তাহলে আমাকে কিছুটা আমি আর কিছুটা পাঠক মিলিয়ে লিখতে হবে। তার জন্য একটু সচেতনতা দরকার বৈকি।

দুপুর মিত্র: আপনার লেখার কক্ষ নিয়ে কিছু বলুন?

পিয়ালী চক্রবর্তী: লেখার জন্য আমার আলাদা কোনো কক্ষ নেই। না আলাদা টেবিল। আমার একদিন দিনের বেলা কিছু একটা লিখতে ইছে করলো, রান্না করতে করতে তার ফাঁকে ফাঁকে এসে ডাইনিং টেবিলে বসে লিখে ফেললাম।

দুপুর মিত্র: আপনি কি বেশি পড়া পছন্দ করেন?

পিয়ালী চক্রবর্তী: একদম, কারণ অনেকসময় 'মাইন্ড ব্লক' হয়, প্রচুর পড়লে সেগুলো ছেড়ে যায়, আবার নতুন করে ভাবনাচিন্তা করার খোরাক পাওয়া যায়।

দুপুর মিত্র: আপনি কি গল্প খুব দ্রুত শেষ করতে পছন্দ করেন?

পিয়ালী চক্রবর্তী: হ্যাঁ। যদি ইন্টারেস্ট পেয়ে যাই, তো কি পড়া বা লেখা দুটি দ্রুত করতে ইচ্ছা করে। তবে দ্রুত লেখা শেষ করার কয়েকটা সমস্যাও আছে। তাই ওটা খুব দ্রুত না করাই ভালো।

দুপুর মিত্র: উপন্যাস লিখতে আপনি সাধারণত কতটুকু সময় নেন?

পিয়ালী চক্রবর্তী: এখনো লিখিনি তাই বলতে পারব না।

দুপুর মিত্র: আপনি সাধারণত কোনও গল্প বা উপন্যাসের কিভাবে শুরু করতে জোর দেন? চরিত্র না বাক্যকে? না কোনও ডায়ালগকে?

পিয়ালী চক্রবর্তী: আগেই বলেছি কোনো একটা প্লট মাথাতে আসে সেইমত চরিত্র সাজিয়ে নি। বাক্য তো একবার লিখতে বসলে নিজের থেকেই আসবে।

দুপুর মিত্র: লেখে ফেলার পর কি আপনার কখনও এমন হয়েছে যে পুরো লেখাই মানে গল্প বা উপন্যাসকে আপনাকে নতুন করে লিখতে হয়েছে?

পিয়ালী চক্রবর্তী: হ্যা হয়েছে এক-দুবার। নিজের পড়েই আর পছন্দ হয়নি।

দুপুর মিত্র: লেখার আগে আপনি কি সমাপ্তি ঠিক করে রাখেন? আপনি শেষ পৃষ্ঠা লেখার আগেই কিভাবে গল্প বা উপন্যাসের শেষটা ঠিক করেন?

পিয়ালী চক্রবর্তী: কিছু কিছু সময় মনে হয় এইভাবে শেষ করব ভেবে লিখতে শুরু করি। তবে সেটা মাঝখানে এসে অনেক সময়ই চেঞ্জ হয়ে যায়। আর গল্প লেখার ৮০% হয়ে গেলে শেষটা একটা আকার পেতে শুরু করে। তখন সেইভাবেই শেষটা করি।

দুপুর মিত্র: লেখালেখিকে কি সংগ্রাম মনে হয় আপনার?

পিয়ালী চক্রবর্তী: নিজের মত করে বাঁচাই একটা সংগ্রাম। তাই লেখালিখিটা হোক নির্মল আনন্দের। ওটাকে সংগ্রাম নামক কঠিন শব্দের মধ্যে রাখব না। তবে কিছু লেখা খুব কষ্ট, যন্ত্রণা, প্রতিবাদ থেকে আসে, তখন সেটা সংগ্রামের একটা অংশ হতে পারে নিশ্চই।

দুপুর মিত্র: লেখার পর আপনি সাধারণত কোন বন্ধুর সাথে শেয়ার করেন?

পিয়ালী চক্রবর্তী: আমি যে গদ্য লিখতে পারি, এই বোধটাই আমার মধ্যে এনেছেন কিছু মানুষ। তারা অনেকেই আমার থেকে বয়সে বড়, কেউ সমবয়সী, কেউ ছোট। এদের কাছে আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ। যখন অর্কুট ছিল, তখন 'কূট সাহিত্য' বলে একটা কমিউনিটির মেম্বার ছিলাম। বলতে পারেন আমার রেকগনিশন পাওয়ার শুরু ওখান থেকেই। ভুল ত্রুটি, ভালোমন্দ অনেকটাই ওদের থেকে শেখা। তাই ওদের সাথে গল্প না শেয়ার করলে ভালো লাগে না।