ব্লগ কেন সাহিত্যকে বিশেষ কিছু দিতে যাবে তা আমার মাথায় ঢোকে না: কবি বীরেন মুখার্জীর সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jul 7, 2012 8:36:14 AM

প্রকাশিত বই: প্রণয়ের চিহ্নপর্ব, প্লানচেট ভোর কিংবা মাতাল বাতাস, নৈঃশব্দ্যের ঘ্রাণ, কবির অন্তর্লোক ও অন্যান্য প্রবন্ধ।

সম্পাদিত ছোটকাগজ : দৃষ্টি

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

বীরেন মুখার্জী : কিছু বিষয় আমার বোধে গভীরভাবে অনুরণন সৃষ্টি করে যা প্রকাশ না করে স্বস্তি পাই না।

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরনের প্রস্তুতি দরকার?

বীরেন মুখার্জী : প্রস্তুতির বিষয়টি আসে কবিতা লিখতে গিয়ে। আর বোধকে শাণিত করতে হলে পর্যাপ্ত পঠন-পাঠন দরকার। এটাকে প্রস্তুতি বলা যেতে পারে।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

বীরেন মুখার্জী : ভাল লাগা কবিতার সংখ্যা খুব কম। প্রত্যেক লেখকই আমার কাছে সমসাময়িক। যে বিষয়টি আমার বোধে জমা আছে হয়তো তার সঙ্গে কোনো কবির ভাবনা একাত্ম হয়ে ওঠে।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

বীরেন মুখার্জী : এ প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই না।

দুপুর মিত্র: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

বীরেন মুখার্জী : দশক নিয়ে সাহিতাঙ্গনে যা ঘটে তা বেশ বাড়াবাড়িই মনে হয়। তবে আলোচনার সুবিধার্থে একটা সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে। আমার সময়পর্বের অনেক কবি তরুণ লেখক প্রকল্প-এ যোগ দিয়েছিলেন। আমি মনে করি এ সময়পর্বে অনেক ভালো কবিতা লেখা হয়েছে। ‘সহস্র সুন্দরের শিল্পরূপ’ই এ সময়ের কবিতা। এরপর যারা লিখছেন তারা নতুন কোনো ধারণা দিতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। তবে এখনও সময় আছে। ভাল কিছুর জন্য অপেক্ষা করা উচিৎ নয় কি?

দুপুর মিত্র: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

বীরেন মুখার্জী : গোটা বিশ্বের কবিতাই এক। শুধু উপস্থাপনগত কৌশল ভিন্ন ভিন্ন। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও তাই। তবে বাংলাদেশের কবিতার ভাষা পশ্চিমবঙ্গের কবিতার ভাষা থেকে স্বতন্ত্র। আমাদের ভাষাটা প্রোজ্জ্বল আর ওদেরটা নিচুস্বরের।

দুপুর মিত্র: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

বীরেন মুখার্জী : ব্লগকে বলা যায় আত্মপ্রচার মাধ্যম। যেখানে লেখার কোনো বাধাধরা নিয়ম নেই। সম্পাদনার বালাই নেই। ইচ্ছা করলেই লেখাটি তুলে নেয়া সম্ভব। ব্লগ কেন সাহিত্যকে বিশেষ কিছু দিতে যাবে তা আমার মাথায় ঢোকে না।

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

বীরেন মুখার্জী : আগেই উল্লেখ করেছি।

দুপুর মিত্র: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

বীরেন মুখার্জী : দৈনিকে আমিও লিখি। লিখতে হয়। পাঠকের জন্য, নিজের জন্য। সম্পাদকের অনুরোধেও লিখতে হয় কখনো সখনো। অস্বীকারের উপায় নেই, দৈনিকের সাময়িকী ঘিরে বেশ কিছু কাজই হচ্ছে। কোনো দৈনিক বিষয়ভিত্তিক কাজ করছে যা আশার সঞ্চার করে। দৈনিকের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেক সময় হয়তো ভাল লেখাটি তারা ছাপতে পারে না। অনুরোধের কথা বলা বাহুল্য। মালিকপক্ষ বরাবরই সাময়িকীকে অলাভজনক হিসেবেই দেখেন। কিছু ভাল লেখা যে, সাহিত্য পাতায় প্রকাশিত হয় না তা ঠিক নয়। দৈনিকের সার্কুলেশন কমা-বাড়ার ক্ষেত্রে সাহিত্য পাতা কোনো প্রভাব ফেলে কিনা আমার জানা নেই। তবে বর্তমানের সাহিত্য পাতায় চোখ রাখলে দেখা যায়, সংশ্লিষ্টরা ‘তেলা মাথায় তেল দিতে’ বেশি পছন্দ করেন। অনেক সম্পাদক নবীন-প্রতিভাবানদেরও জায়গা করে দিচ্ছেন তবে তার সংখ্যা বেশি নয়। দেখা যায়, একজন লেখক একই বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় লিখছেন। কোনো লেখক একটি লেখা একই সঙ্গে দু’তিনটি কাগজেও পাঠাচ্ছেন। তা আবার একই দিনে ছাপাও হচ্ছে। আহসান হাবীবের মতো সম্পাদক কি আর জন্মাবে বলুন? গূণগত মানের প্রশ্নে নয়, সাহিত্য পাতায় ‘বন্ধুকৃত্য’ বড় হয়ে উঠেছে। যা দেখে শুধু কষ্টই বাড়ে।