উল্লেখ সম্পাদক আমজাদ সুজনের সঙ্গে অনলাইন আলাপ

Post date: Apr 25, 2012 8:11:30 AM

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগ প্রকাশনা মাধ্যম হিসেবে ব্যর্থ হয়েছে। আপনি কি একমত?

আমজাদ সুজন: লিটলম্যাগ ব্যর্থতা সফলতার কাছে কখনও প্রতিযোগিতা করতে যায় না। তবে আমাদের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে মনে হতে পারে লিটলম্যাগ চর্চা ও প্রকাশে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। আগ্রহে ভাটা পড়েছে। এটা এসময়ের বাস্তবতা। অন্যরা নিশ্চয় জেগে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর এই প্রশ্নটি কবিদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে।

দু: ওয়েবম্যাগ, ব্লগ এসব কি লিটলম্যাগের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে? হলে কিভাবে; না হলে কেন?

আ: হয়ে উঠতে পারে অবশ্যই। আমার ধারণা হয়ে উঠেছেও। তবে ওয়েবম্যাগ, ব্লগ আমার মতে অনেক বেশি ইন্টারেকটিভ হওয়ায় তাতক্ষণিক মূল্যায়নের পর তার গুরুত্ব কমে যায়। খুব দ্রুত সবকিছু এখানে পুরুনো হয়ে যায়। প্রকাশ মাধ্যম নিয়ে আমার কখনোই মাথা ব্যথা ছিল না। ব্লগ-ওয়েবম্যাগ যুগের আগে লিটলম্যাগের যে ব্যাপকতা ছিল তখনও নানা দ্বন্দ্ব ছিল...

দু: হুম দ্বন্দ্বটা আগে ছিল গোষ্ঠী ভিত্তিক। এটা দুই প্রকাশ মাধ্যমের হয়ে গেছে। গোষ্ঠীবাদিতার প্রকোপ অনেক কমে গেছে। আপনার কি তাই মনে হয়?

আ: আমি অবশ্য ভিন্ন মত প্রকাশ করি লিটলম্যাগ আন্দোলন তো গোষ্ঠীকেন্দ্রিকই হওয়া উচিত। এক একটা গোষ্ঠীর এক এক রকম দার্শনিক আদর্শ থাকবে, একেক রকম দৃষ্টি ভঙ্গি থাকবে সময়, শিল্পসাহিত্য নিয়ে। কিন্তু আমাদের গোষ্ঠীগুলো জড়িয়ে যায় তর্কের জন্য তর্কে। প্রকাশ মাধ্যমটিই বড় হয়ে দাঁড়ায়। যখন সকলে নিয়মিত আড্ডা দেয় তখন গোষ্ঠীর বাস্তব চেহারা দেখা যায়। আমার মনে হয় এখন লিটলম্যাগ কেন্দ্রিক অধিকাংশ আড্ডা কমে যাওয়ার কারণে মনে হয় যে গোষ্ঠীবাদিতার প্রকোপ কমে গেছে। তবে এখন ভার্চ্যুয়াল এক গোষ্ঠীবাদিতা তৈরি হয়েছে। লিটলম্যাগ আন্দোলন এখন ব্লগে, ওয়েবম্যাগে লাইক দেওয়ার সংস্কৃতিতে পড়ে নির্জীব হয়ে পড়েছে। যে কবি প্রযুক্তি ব্যবহার করে না তার কবি লেখার যোগ্যতা নাই-এমনটা আমি ভাবি না।

দু: গোষ্ঠী হওয়ার মূল বিষয় থাকে একটা আদর্শকে ঘিরে বা বিশেষ কোনও এজেন্ডাকে ঘিরে। কিন্তু আমাদের এখানে যে গোষ্ঠীবাদিতার চর্চা, তাতে অনেকেই অভিযোগ করেন এতে কোনও আদর্শ বা এজেন্ডা নাই। বরং আছে সুবিধাবাদিতা । আপনার কি মনে হয়?

আ: হুম। আমি সে কথাটিই বলতে চাই। আমাদের গোষ্ঠীগুলোর সুবিধা নেওয়া ছাড়া এই গোষ্ঠীবাদিতার আর কোন বিশেষ আদর্শ আছে বলে মনে হয় না। লিটলম্যাগ গোষ্ঠীগুলোর তাও একটা সম্ভাবনা থাকে যে একসময় তারা কবিতার দর্শন-এর দিকে একটা মোড় নেবে, কিন্তু ব্লগ/ওয়েবম্যাগ-এ সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ব্লগে সে অর্থে কোন গোষ্ঠী কি দাঁড়িয়েছে!

দু: আমাদের এখানে ব্লগ বলুন আর লিটলম্যাগই বলুন, দুটোই অল্টারনেট মিডিয়া বা এন্টি মিডিয়া। মেইনস্ট্রিম মিডিয়াকে আঘাত করা এদের বড় একটা কাজ। কিন্তু সে অর্থে ব্লগ বা লিটলম্যাগের এমন কোনও ভূমিকা কি চোখে পড়ার মত? বা আপনার নজরে পড়েছে?

আ: মেইনস্ট্রিম মিডিয়াকে এড়িয়েও কিছু লিটলম্যাগ ভালো কাজ তো করেছেই। কিন্তু প্রকাশগত প্রচারণার কারণেই তা মেইনস্ট্রিম মিডিয়াকে টপকে যেতে পারে না। কিন্ত মেইনস্ট্রিম মিডিয়া যেমন দৈনন্দিন ওয়ানটাইম ব্যবহার হচ্ছে লিটমম্যাগ তার চেয়ে ভালো বিকল্প তৈরি করেছে। লিটলম্যাগ আন্দোলনের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে লিটলম্যাগকর্মীরাই। সবগুলো মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার সাহিত্য সাময়িকীতে স্থায়ী/অস্থায়ী ভাবে কাজই তো করছে লিটলম্যাগ কবি/লেখক আর বর্তমান-প্রাক্তন সম্পাদকেরা। এটা একটা দু:শাসন বৈকি। এতে লিটলম্যাগে ঢুকছে দৈনিক/দৈনিকে ঢুকছে লিটলম্যাগ। আলাদা কোন চরিত্র আর থাকছে না। লিটলম্যাগ-এর সুবিধাভোগী আদর্শের জন্যই ব্যবহৃত হচ্ছে। অবশ্য এসব বিষয় নিয়ে সকল বাক্যালাপই তিক্ত হয়ে গেছে।

দু: আপনার কি মনে হয় এসব সাহিত্যে একটা বড় ধরণের প্রভাব ফেলছে?

আ: চিন্তাগত আদর্শ তৈরির কোন সুযোগ নেই এরকম পরিস্থিতিতে। সব কিছু বিক্ষিপ্ত।

দু: এতে করে এক ধরণের নৈরাজ্যিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রিকতাও ভেঙ্গে যাচ্ছে। আগে কেন্দ্র যে সম্ভাবনা তৈরি করত, এখন কেন্দ্রিকতা ভাঙ্গার কারণে সম্ভাবনার জায়গাটাও বেড়েছে। এরকম করে কি ভাবা যায়?

আ: আমি বরাবরই কেন্দ্রবিরোধী। প্রকাশনার কেন্দ্র থাকতে পারে। কিন্তু লেখার/লেখকের কোন কেন্দ্র নাই। লেখক নিজেই তার কেন্দ্র। লিটল ম্যাগ সে কেন্দ্র ভেঙ্গে দেবার একটা সুযোগ করে দিয়েছিল কিন্তু আমরা তার সুষম ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছি। উল্টো অনেকে নিজেদেরই প্রান্তিক মনে করে বসেন এবং যে কোন মূল্যে কেন্দ্রে চলে আসেন। এটা একটা জাতীয় সমস্যা। আর কেন্দ্রে এসে দেখেন কোথাও কোন কেন্দ্র নাই।

দু: উল্লেখ এখন আর বের হচ্ছে না কেন? বা উল্লেখ কি আবার প্রকাশ করার চিন্তা আছে?

আ: উল্লেখ আবার বের হবে। কেন বের হচ্ছে না সেটার উত্তর আমি নিজেও খুঁজে বেড়াই। ব্যস্ততা কোন কারণ না। কিছু বিতৃষ্ণা তো আছেই। সেগুলো কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি। সম্পাদক হবার ইচ্ছা থেকে আমি উল্লেখ বের করিনি । আদর্শগত একটা জায়গা আমরা শুরুতে খুঁজে পেয়েছিলাম। মাঝে কিছু সময় নিরবতায় কেটে গেছে। আবার আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। দেখা যাক।

দু: ধন্যবাদ সুজন ভাই । সময় দেবার জন্য।

আ: ধন্যবাদ আপনাকেও।