উদয় শংকর দুর্জয় এর কবিতা

Post date: Apr 24, 2012 4:23:56 AM

একজন শান্ত সুবোধ সঙ্গী চাই

কান্তিতে হেলান দেবার জন্য

একজন শান্ত সুবোধ সঙ্গী চাই।

বুকের এই আকাশ শূন্যতা, অবিরাম বিরহী জলধারা

একটু ভাগাভাগি করার জন্য

একজন সঙ্গী চাই।

যে আমার সবক’টা ভুলকে শতদল ভেবে নেবে

শুধরে দেবে অক্ষর বর্ণমালা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা

আবার হাতে খড়ি দেবো, পরিশুদ্ধ হবো,

শেখাবে ধ্বনিপুঞ্জ অনন্ত সত্য আর মহাবাণী মহাকালের।

এমন একজন সঙ্গী চাই- যে আমার

অপরাধের বাড়ন্ত দিগন্তকে ছোট করে দেবে

দেখাবে ফুল ঝরা পথ, সোনা মাখা ছেলেবেলা।

আমি সব অপরাধের হিসাব ফেলে তুলে নেবো

ফুল পাতা অঞ্জলি আর স্বর্ণদ্বীপের আহ্বান।

এমন একজন সঙ্গী চাই

যে আমার যন্ত্রণার পাখিটিকে গুলিবিদ্ধ করে

প্রশান্তির একপশলা বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দেবে,

হাত ধরে নিয়ে যাবে কৃষ্ণচূড়ার কাছে-

কোন বকুল ঝরা পথে, কোন রূপোলী জ্যোৎস্নার কাছে।

কান্তিতে একটু হেলান দেবার জন্য একজন সঙ্গী প্রয়োজন

যে আমাকে দুঃস্বপ্নের প্রতিটি রাত থেকে বাঁচবে

অক্সিজেন দেবে বিনে পয়সায়।

লালন করবো নতুন কোন জন্ম

তোর জন্য খোলা রেখেছি সদর দরজা

সারাটা রাত অন্ধকার পাহারা দিয়েছি

মোমের আলো যখন শেষ? তখন চোখের আলো জ্বেলেছি

টেবিল চেয়ারে মন রেখেছি বেঁধে।

তুই আসবি বলে ঐন্দ্রিলাকে দিয়ে মালা গেঁথেছি,

বকুল তোর ভীষণ প্রিয়; জানি।

উত্তর পাশের কামবাটা তোর জন্য

ঝেড়ে মুছে সফেদ পরিষ্কার-

সাথে জানালার পর্দাগুলোতে নতুন রং

কিছু রজনীগন্ধা ফুলদানিতে, মা’র হাতে ফুল তোলা বিছনার চাদর,

নরম তোষক আর পাশের বালিস- যা একান্ত প্রিয়।

বিশ্বাস র্ক, কৃত্রিম কিছু রাখিনি।

তোর জন্য ঐন্দ্রিলাকে দিয়ে

কালি জিরার পায়েস আর দই পেতেছি

জলপাই আচার, আম সত্ত্ব

স্বাদটা- তুই আসলে একসাথে নেবো। তোর

প্রিয় পিঠাগুলোর কথা ঢের মনে আছে-

সব হবে।

তোর জন্য উপোষ রেখেছি

অপেক্ষার সাথে উপবাসের দারুণ মেল বন্ধন।

তোর জন্য উঠোনের উচুনীচু যা ছিল?

আমার বুকের মত সমতল রেখেছি।

রাস্তার দু’পাশে রক্ত গাঁদার সারি

ডালিয়া, সূর্যমুখি- রেখেছি উঠোনের এক পাশে।

সিঁড়িতে টাইম ফুলের লুকোচুরি

টবে ঝুলোনো তোর প্রিয় লজ্জাবতী

তোর স্পর্শে হবে আরক্ত।

তোর জন্য খোলা বিস্তীর্ণ সবুজে মোড়ানো মাঠ

যতদূর দৃষ্টি যায়। তুই দৌঁড়ে পালাবি?

আমি লাটাই-ঘুড়ি নিয়ে ছুটবো তোর পিছে,

এই পড়ন্ত বিকেল গুলো ধার নেবো প্রকৃতির কাছ থেকে

যা শুধুই তোর জন্য।

তোর জন্য বিশাল আকাশ-নত্রের বসবাস।

বসন্তের রেখে যাওয়া স্পর্শ, নতুন পাতা

সংগ্রহে রেখেছি- প্রিয় কবিতা কথামালা এই সব।

তুই আসলে আকাশ পানে চেয়ে থাকবো

খুঁজবো নতুন কোন আলো?

আমি অপোর সাথে- প্রতীক্ষা কেউ রেখেছি পাশেÑ

দরজায়- পাহারাদার যেমন তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে

ঘায়েল করে প্রতিটি অশুভ লগ্ন। ঠিক তেমনি

আমি দাঁড়িয়ে থাকবো অসীম সময় বুকে ধরে

লালন করবো নতুন কোন জন্ম।

পরাজিত হতে চেয়েছি

আমি তোমার প্রতিপক্ষ নই

বরং পাশে থাকার প্রত্যয়ে নীল আকাশটাকে

নীলে ভরিয়ে তোলা।

কিছু পাওয়ার জন্য নয় বরং দিতে এসেছি

এই মুঠো ভরা ফুল

স্নিগ্ধ ভোরের কিছু কথন।

দরজা খোলা রাখ- প্রিয়।

অশনি সংকেত নয় বরং

বিশ্ব সংসারের বুকে শ্রদ্ধায় অবনত

যত ভালোবাসা, জমা করবো তোমার নিপবনে।

মেঘবতী আকাশ অথবা

আরণ্যক কান্ত ছায়ায় দুশ্চিন্তা

দীর্ঘ করনা, চলো ভিজি-শ্রাবণে

হালকা করি জীবনের সরাইখানায় দু’টো কথা বলে।

আমি বিজয় ছিনিয়ে নিতে আসিনি

বরং পাশাপাশি থেকে, পরাজিত হতে চেয়েছি বারবার।

লেখার অনেক কিছু ছিল

উদয় শংকর দুর্জয়

কী লিখবো তোমায় এই শীতে

এই মেঘে- এই গাঢ় ঠাণ্ডায়?

লেখার তো অনেক কিছুই ছিল...।

এই যেমন- শাদা তুষারপাতে; রূপোলী বৃষ্টি কণায়

মনের কপাট খুলে বেরিয়ে আসে টি এস এলিয়ট, বেনজামিন

উচ্ছ্বসিত প্রাণ রাশি রাশি।

এই যেমন ভোরের আলো-অন্ধকারে, শিশির অন্তরালে

জীবনের প্রয়োজনে ছুটে চলে মাইলের ওপার

আমার আমাকে দেখি দূর্গম ব্যস্ততায়-

বিষণ্নতার পাশাপাশি।

এই যেমন কবিতার আড্ডায় আইডা স্টোর অথবা রুচীতে

মনি ভাইয়ের লেখায়, শাহিন ভাইয়ের কবিতায়

ওড়ে- পুরোনো স্মৃতির ধুলো, ছুঁয়ে যায় মন-

শান্ত জলরাশি।

লেখার তো অনেক কিছু ছিল

স্মৃতির ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ জমে এক পশলা বৃষ্টি

হবার কথা ছিল।

থাক না হয় আজকে- যা সব জমা থাক

অন্য কোন সন্ধ্যায় লেখা হবে...।

ছুঁয়ে দিলে নতুন স্পর্শ

যখন একাকীত্বের অবসর ঘরে তুমি আর শূন্যতা,

প্রণয় এসে ছোঁয় বিরহী মনের আলপনা, এই নিঃশব্দতা

জুড়ে শুধু খুঁজে চলা একমুঠো লাল রোদ্দুর

আবেগের খেলা ঘরে। তুমি ধরা দাও

আগুন পাখির ডানায় জমে থাকা সহস্রাব্দের হিংস্রতায়

নিরুপায়ী নারী তুমি। তোমার হৃদয় বিগলন

চন্দ্রিমা আশ্রিত সে চোখের পাতায় ভর করে যুবকÑ

ছড়িয়ে দেয় শাখা-প্রশাখা।

একদিন অপোর হ্রদ জেগে ওঠে, তুমি

অন্ধকার পিছনে ফেলে অঙ্গে ভরে নিলে

কৃষ্ণচূড়ার রং, হাত ধরে হেঁটে গেলে উপচে পড়া

আবেগী ঢেউয়ের কাছে, কথা বিনিময়

পরিচয়ের নতুন মাত্রা জুড়ে উঠে এলো- অন্য রকম অনুভূতি।

একটু সুখের কণা ধরতে, চোখের পাতায় প্রিয় তুষার সাজাতে

মনের গোধূলী চিলেকোঠায় দীপ জ্বালতে

ছুঁয়ে দিলে নতুন স্পর্শ। সে স্পর্শের গভীরে

মুঠো ভরা লাল রোদ্দুর আরো গাঢ় হলো।

তুমি বাঁধন হারা বেখেয়ালী

তবু তুমি অনুরোধের শতদল পায়ে পিষে

এগিয়ে গেলে, উদ্যানের স্বর্ণচাপা আর

চন্দ্রমলিকার আবেগাপুত চাহনী তোমাকে

একটিবারের জন্য থামাতে পারিনি!

শিউলী সবকটি বৃন্তচ্যুত হয়ে যাত্রা রুখে দিতে চেয়েছিল

বারবার। নয়ন তারা আর বেলী

প্রার্থনায় প্রণামে জপেছিল তোমার নামে, আর

যেয়ো নাকো ঐ পথে- যে পথ গোধূলী ছায়ায়

শরীরের গন্ধ নিয়ে খেলা করে। ভেসো না ঐ

নাগরিক আড্ডায় তোমার তনুতে ভর করে।

নিকোটিনের মাতাল আবেশ।

এই গোধূলী- এই জ্যোৎস্না ধারা- কতবার তোমাকে

বেঁধেছিলো আবেশে, তুমি বাঁধনহারা বেখেয়ালি,

তোমাতে নতুন পাখির পাখনা বিরাজিত।

তুমি আলোর শেষে খুঁজে চলেছো নতুন রং?

উদ্দাম ঝর্ণা গতি তোমার,

তোমাতে আছড়ে পড়ে লতা গুল্ম নরম হৃদয়

আবার কখনও তুমিই জড়িয়ে যাও।