কবিতার আইডেন্টিটি তৈরি হয়ে ওঠাকেই কবিতার হয়ে ওঠা বলে: অমলেন্দু চন্দের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Nov 27, 2013 7:16:18 PM

দুপুর মিত্র: আপনি কি মনে করেন কবিতা সমাজে একটি ভূমিকা রাখে? যদি রাখে সেটা কি ভাবে আর যদি না রাখে তাহলে কেন?

অমলেন্দু চন্দ: সমাজের একক মানুষ, শুধু সমষ্টির সমাজ এই ভাবনাকে আমি মিসনমার বলে মনে করি। এই একক তার আস্তিত্ত্বিক প্রয়োজনে উৎকর্ষ খোঁজে, ক্রিয়াশীল হতে চায় হয়ে উঠতে চায়। সেই হয়ে ওঠার অনেক প্রসেস থাকে, আর সেই প্রসেসের অনেক মাধ্যমের একটা অন্যতম মাধ্যম সাহিত্য। তার অন্যতম একটা স্ট্রিম কবিতায় ভাস্বর। সেই অর্থে কবিতার একটা সনাতন অস্তিত্ত্ব রয়েছে মানুষের কাছে। তার একটা স্বয়ংক্রিয়তা আছে। এই স্বয়ংক্রিয়তার একটা ডায়েনামিক্স আছে। এই ডায়েনামিক্স টা রহস্যময়, কবিতা এই রহস্য টা দেয় মানুষকে। এই রহস্যটা মানুষকে ভাবায়, হাসায়, কাঁদায়, দুঃখ দেয়, আনন্দ দেয়, তাকে উন্মাদ করে, আত্মস্থ করে – লক্ষণীয় বিষয় কবিতার ডায়েনামিস্ম মানুষকে এমোটিভ স্তরে জ্যান্ত করে তোলে, আর ওই জ্যান্ত করে তুলতে পারার মধ্যেই রয়েছে সেই ভুমিকার চাবিকাঠি। তখন কবিতা একটা প্রয়োজনবোধ, ওইখানেই কবিতার রেলিভ্যান্স, ওইখানেই সে দেয় – একক আর সেই সুত্রে সমষ্টিকে, যে সমষ্টি কবিতা কেন্দ্রিক – কবি বা পাঠক বা তাদের অঙ্গী হয়ে থাকা মানুষগুলো। তাদের মধ্যে চলতে থাকা ক্রিয়া বিক্রিয়া। একটা আবহ তৈরি হয়। সেই আবহের ব্যাপ্তি টা কবিতার ভুমিকা নির্ধারণ করে আবার অ্যাফেক্টেড হয় সেই ক্রিয়া বিক্রিয়ার সুত্রে। অনেকেই বলেন যে কবিতা কি দেয়? সেটা একপেশে প্রশ্ন কারণ কবিতা সমাজ থেকে তার ভেতরের মানুষ থেকে বেরিয়ে আসে, আর সেই কারনেই এটা খুব রেলিভ্যান্ট যে সেই সমাজটা কি দিতে পারছে বা পারছে না। সেই অবস্থা টাও কবিতার বিনিময়ের মুল্যমান আর ধরন ঠিক করে। কবিতা প্রভাবিত করে, সেটা তার অন্যতম ভুমিকা, আর এই ভুমিকায় কবিতা সার্থক কুশীলব।

দুপুর মিত্র: আপনি কোন কোন কবি দ্বারা বেশী প্রভাবিত?

অমলেন্দু চন্দ: সে ভাবে বলতে গেলে একক কবির থেকেও কবিতার আবহ আমাকে বেশী প্রভাবিত করেছে, যখন যে অবস্থায় সেই আবহের স্বাদ পেয়েছি। এটা একটা জগত যেখানে থাকলে সেই আবহের প্রভাব এসে পরেই। আমি কবিতায় থাকতে ভালবাসি – একটা সুর কাজ করে। একটা ঝোঁক তৈরি করে, সেই ঝোঁকে অবগাহনের মত একটা ব্যপার ঘটে যায়, সচেতনভাবে নয় আবার অচেতন ভাবেও নয়। কবিতার মনন জুড়ে যে ভাবনার ভাবের পরিসর থাকে তাই আমাকে প্রভাবিত করে। আমি সুর খুঁজি শব্দ খুঁজি সুন্দর খুঁজি সেইখানে। এ আবহ আমাকে বার বার দিয়েছে বাংলার কবিতা, - হ্যাঁ সচেতনভাবে আমি উপলব্ধিহীন অনুকরন এড়িয়ে যাই। কারুর নাম বলব না তবু একটি লাইনের উদ্ধৃতিতে বল্বার চেষ্টা করব কি ভাবে আবহ আচ্ছন্ন করে, এবং সেই উদাহরনারথের লাইনটি এরকম – একটা স্তব্ধতা চেয়েছিল আরেক নৈশব্দ কে ছুঁতে তারা বিপরীত দিকে চলে গেল এ জীবনে আর দেখাই হল না - বোধহয় বিষাদ বোধের এই আবহ টাই আমাকে সবচাইতে বেশী প্রভাবিত করে

দুপুর মিত্র: আপনার কাছে কবি হয়ে ওঠা বিষয়টা কি?

অমলেন্দু চন্দ: সে ভাবে আলাদা করে ভেবে দেখিনি কখনো। এটুকু মনে হয় যে এটা একটা কনসেপ্ট। ঠিক যেমন প্রত্যেকটা ইন্ডিভিজুয়ালের একটা আইডেন্টিটি থাকে, কবির একটা আইডেন্টিটি থাকে ঠিক তেমনি কবিতার আইডেন্টিটি তৈরি হয়ে ওঠাকেই কবিতার হয়ে ওঠা বলে। এ সংজ্ঞার গ্রাহ্যতা থাকে কিন্তু জেনার‍্যালিটি থাকে না। সে কোন দারুল আমানে দাঁড়ানো শালপ্রাংশু প্রমিথিউস নয় যার আগুনে সব কবি মশাল জ্বালিয়ে নেবে। সে এক ব্যাক্তিকেন্দ্রিক পরিচিতির পরিভাষা।

দুপুর মিত্র: কবিতা কি? সমসাময়িক বাংলা কবিতার প্রবণতাগুলো কি?

অমলেন্দু চন্দ: দ্বিতীয় ভাগটার প্রসঙ্গে আগে আসি। নামাঙ্কনের অভিধা বাদ দিয়েই বলি সমসাময়িক কবিতা বলে অভিহিত করলে কবিতাকে অনেকটা পরিসরের মধ্যে পাওয়া যায়। আমি এই সময়টাকে আশির দশক থেকে ধরছি। সে সময়ের নিরিখে গোত্রভুক্তির কোন সংবেদ বোধহয় কবিতায় কাজ করত না। যেটা পরে এসেছে। কবিতা আর পাঠকের মধ্যে দুরত্ব এসেছে, পাঠককে শিক্ষিত হতে হবে এই বোধের প্রগাঢ় প্রভাব আমরা পেয়েছি। যে অস্বীকারের প্রবনতার থেকে ষাঠের দশকে একটা তোলপাড় করা বাতাস উঠেছিল, তার মোহ কেটে গেছে কিন্তু সেই সময়ের অসংখ্য কবিতার সুন্দরস্তব এখনও সুলেল হয়ে বাজে অনেকের লেখায়। একটা ঘরানা উপমা বা দৃশ্যবিবৃতি থেকে আস্তে আস্তে সরে গেল উত-প্রেক্ষা দৃশ্যকল্পের দিকে, সে প্রবনতা আস্তে আস্তে একটা বৈশিষ্ট হয়ে উঠেছে। উৎপল বিনয় ভাস্কর শহীদ কাদরী রণজিৎ মাসুদ খান এরা কেউই সে অর্থে গোষ্ঠীভুক্ত কবি হয়ে যান নি, হয়ত সে কারনেই এদের লেখায় সেই দুরুহতা আসে নি ফলত এদের কবিতা পড়ার সাথে সাথে কবি কবিতা ও পাঠক এদের নিয়ে একটা ভীষণ চিন্তা ভাবনা করা ডিভাইড এর ব্যাখ্যা করতে হয় না। এই ডিভাইড সুত্রে যে মুল কথা এরা মানে যারা কবিতার ক্ষেত্রে একটি আন্দোলনের আশু প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন বা এখনও বলছেন তাদের কথায় অবশ্যই সৌন্দর্যের অ্যাবস্ট্রাক্সানের প্রসঙ্গ রয়েছে, সেই চিন্তার বা সেই প্রবনতার একটা আবশ্যিক মুল্য আছে কবিতার উপলব্ধির প্রয়োজনে। ভুল শুধু সম্ভবত সেইটুকু প্রবনতায় যেখানে ওইটাই প্রথম শেষ বা সেই অর্থে সিদ্ধ ব্যাতিক্রম বলে মনে করার ঝোঁকের মধ্যে রয়েছে। কবিতা শোনাতে চায় টা যেমন সত্যি তেমনি কবিতার কোন মানে হয় না এই চিন্তা টা ভীষণ লিমিটেড দৃষ্টিভঙ্গির ফসল বলে মনে হয়, তবে পাশাপাশি এটাও মনে হয় যে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার সুত্রে এই ভাবনা চিন্তাগুলো বোধহয় শিকড় পেয়েছে। সমান্তরাল কবিতাধারা বলে যদি এঁকে অভিহিত করা যায় তাহলে সেই ধারার নিজেকে একক বৈশিষ্ট পূর্ণ ধারার কবিতা হিসেবে সাব্যস্ত করতে চাওয়ার প্রবনতাও বোধহয় এর জন্য দায়ী। তার সাথে সম্ভবত আর একটা প্রবনতা যোগ দিয়েছে যেখানে ভাষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া র ঝোঁক তৈরি হয়েছে। এইখানে এটা বলা প্রয়োজন যে আমি বিবর্তনে বিশ্বাস করি যে বিবর্তনের নিজস্ব আবর্ত থাকে যার ফলে সেটা জান্তব সত্য হয়, অভিজ্ঞতা এবং ফলশ্রুতি দুটোরই নিরিখে, আর তাই পদ্ধতির সম্পর্কে মর‍্যালিস্টিক প্রতিক্রিয়া দেওয়ার থেকে একটু পিছিয়ে থাকি, ভালো খারাপ লাগে কিন্তু সেটাকে কবিতার বোধের বা তা নিয়ে চিন্তা ভাবনার পরিসরে দেয়াল তুলতে দিই না, হয়ত অনেকেই এটাকে কনভিক্সানের অভাব বলে ধরেন, জানি না।

কবিতা তো মুলে একটা বিষয়ভাবনা। প্রসঙ্গ সেই বিষয়ের রুপধর্ম নিয়ে। লেখার অব্যয়ী মুহূর্তে কবি কে যা ধারন করে থাকে – সে রূপের রস বর্ণ গন্ধের স্রোত তার তীব্রতা সব কিছু নিয়েই কবিতা। স্বাভাবিক কারনেই যেহেতু এতগুল গুণ মানের প্রসঙ্গ এসে পরেছে তাই তার কিছুমাত্র বা অনেকটা যেখানে দেখি সেটাকেই কবিতা বলে মনে হয়। আসলে আমি খুব পড়াশুনা করা কবিতা র চাষী নই। তবে এটুকু বুঝি যে কবিতা তাই যা কবিতা দেয়। আর সেই দেওয়ার স্বরুপ পাত্রাপাত্রে ভেদ করে অর্থাৎ কে কেমন ভাবে কবিতা পড়ে তার ওপর নির্ভর করে – এই ভেদ মানে ডীফারেন্সিয়েট করার প্রবনতার কারণ, যদি কবিতা জ্যান্ত হত তাহলে আমি বলতাম অ্যান আন-উইলিংনেস টু বি ডিফাইনড। যেন কবিতা চায় তার স্বরুপ উদ্ঘাটন হোক কিন্তু সেটাই যেন একমাত্র উন্মোচন না হয়। আর তাই সেই ব্যাখ্যার প্রসঙ্গে এসে পরে কবিতার ফর্ম কন্টেন্ট আর তার উপযোগিতার প্রসঙ্গ।আর এই উপযোগিতা বা পারপাসের ব্যাখ্যা যত আক্ষরিক অর্থ কে ছাপিয়ে যায় ততই কবিতা যেন কবিতা হয়ে যায়, তখন কবিতা একটা অনুভব, একটা উন্মোচনের মতই দীপন, একটা মনের চোখে সম্যক দর্শন। ওইটাই কবিতার প্রানভোমরা।

দুপুর মিত্র: সাহিত্য আন্দোলন কি কবিতাকে পরিবর্তন করে?

অমলেন্দু চন্দ: এভাবে সাহিত্য কে বাক্সবন্দী করা বেশ একটা অসৈরন তৈরি করে আমার মনে। তার পরে কবিতা কে আবার সেই বাক্সের বাইরের একটা ফর্ম ধরার প্রবনতা। বাংলা কবিতা কি বাংলা সাহিত্যের বাইরের কোন জগতে থাকে। শক্তি যখন উপন্যাস লিখেছিলেন তিনি কি শুধুই সাহিত্যিক ছিলেন। আধুনিকতার আন্দোলন বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন অভিধায় অভিহিত হয়েছে যেমন বাস্তবতাবাদ, পরাবাস্তববাদ, প্রতীকবাদ, বা ইন্দ্রজাল বাস্তববাদ এ সবকটাই কিন্তু কবিতাকে প্রভাবিত করেছে করে চলেছে। আন্দোলন আমার মনে হয় যখন স্কুল হয়ে উঠতে চায় তখন ম্যানিফেস্ত গোছের বস্তু এসে পড়ে, এবং সেখান থেকেই এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিকতা ঢুকে পড়ে, এটাই সম্ভবত পোয়েটিক জাস্টিস – ের বেশী কিছু বলতে চাই না। সদরথে আন্দোলন কবিতাকে প্রভাবিত করেই, করবেই কারণ কবিতাই সম্ভবত সমস্ত সাহিত্য শৈলীর মধ্যে সবচাইতে সেন্সিটিভ শৈলী, ফলত প্রভাবিত হওয়াটা তাঁর নেমেসিস। আন্দোলন তো রুপান্তর কে গ্রাহ্যতায় এনে তাকে গ্রহনযোগ্য করে তোলার পদ্ধতি। সময়ের জমিনে জীবনবোধ যেমন যেমন বদলায়, তেমন তেমন সে ওই বদলের বোধের প্রতিমা গড়তে চায়, এটা তো এক অর্থে সেই একটা প্রোজেক্টের মত যেখানে নিজের অবস্থানের সাযুজ্যে বিভিন্ন বিভাজক বা সংযোজক সম্পর্ক গুলোকে এক্সামিন করা হয়। সেখানে কাজ করে এলিমিনেসানের প্রসেস, সেটাও প্রভাব, আবার যখন সেই প্রসেস বড় নিবিড় ঘনসম্বদ্ধ কেন্দ্রাভিমুখি একটা বিবর্তনের আবর্তন সেখান থেকে আমরা জীবনানন্দ কে পাই। তাই টাকে বুঝতে অ্যাপ্রিসিয়েট করতে আমাদের অনেক সময় লেগেছে। পূর্ণেন্দু পত্রীর একটা কথা এখানে বলা বোধহয় খুব অবিবেচনার কাজ হবে না যে “ পৃথিবীর সব মহৎ কবিতাই জন্মে যায় আগাম, আর আপন অবিবেচনায় পৃথিবীরই দেরি হয় তাঁর কাছে পৌঁছতে”।

দুপুর মিত্র: আপনি কিভাবে কবিতা লিখেন?

অমলেন্দু চন্দ: জানি না, লিখি। সম্যক ভাবে সেইটাই সত্যি। যেহেতু লেখা কোন পদ্ধতি নয়, তাই এভাবে বলতে পারবো না। একটা কথা বলতে পারি চেষ্টা আর ইচ্ছে থাকে আজকাল অন্তত রোজ একটা কিছু লেখার। কেন লিখি এর হয়ত সাজিয়ে গুছিয়ে বেশ একটা উত্তর খাড়া করা যায়, আর সেই কেন’র গা বেয়েই হয়ত গাছের মতই একটা আশা বর্ধিষ্ণু হয়ে উঠতে চায়, বুদ্ধদেব কে ধার করেই বলছি, ওই সেই আশার বেড়ে ওঠাটাই বোধহয় “কিভাবে” – কখনো অরগ্যানিক, কখনো আয়েনার সামনে সাজিয়ে তোলা পরিপাটিত্ত্ব, আবার কখনো ফেসবুকের তাগিদ একটা কিছু নামাতে হবে, এই রকম আর কি। আসলে কিভাবে আর কেন কে বোধহয় আলাদা করা খুব মুস্কিল।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বিশ্ব কবিতা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

অমলেন্দু চন্দ: আগেই বলেছি আমার বিশেষ পড়াশুনো নেই, এবং যেহেতু আমাদের শিল্প ধারণার ব্যাপ্তি ও প্রসার ঘটতে পারে একমাত্র পরাশুনার সুবাদে তাই একেবারে বিশ্ব কবিতার সম্পর্কে ধারণার কথা বলতে বললে একটু কি ব্যাজ কি ব্যাজ মনে হবেই। আবার কবিতা লিখি অথচ বিশ্ব কবিতা সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই এটা বললে আলালের ঘরের দুলাল গোত্রাভিষিক্ত হয়ে যেতে হতে পারে এই ভয়ে একটু বলি। বাংলা কবিতা আমার ধারনায় খুব ইন্সুলেটেড – স্টিফেন স্পেন্ডারের নাম বাদ দিলে হাওয়ারড নেমেরভ বা লুই উন্টারমেয়ার এর নাম কজনে জানেন সন্দেহ আছে, প্রভাবের কথা বা প্রসঙ্গ নাই বা আনলাম। কিম্বা স্ট্যানলি কুনিতজ্, বা ফিলিপ লেভাইন - এরা এখনও লিখছেন, ইন্টারনেটের সুবাদে এবং বেটার কম্যুনিকেসান এর সুত্রে যেটুকু পড়েছি এদের – এটা মনে হয়েছে এরা আবার সেই প্লেন স্পোকেন লিরিসিজম এবং গ্রেট ন্যারেতিভ স্টাইলে তাদের কবিতার বোধের বিশ্বাস ন্যাস্ত করেছেন, সেখানে ইন্সুলেটেড থেকেও আমাদের ভাষায় এপার ওপার দুই পারেই বহু কবি একই চেতনায় কবিতার যাপনে মেতেছেন, মেতে আছেন, স্থান কাল এবং পাত্রের অবস্থান ভেদে শুধু ভাষার ব্যাঞ্জনা আলাদা আলাদা। আফ্রিক্যান আমেরিক্যান রিটা ডোভ বা মায়া অ্যাঞ্জেলু বা ওলে সোয়িঙ্কা – এরাও সেই একই ধারায় বিশ্বাসী, শুধু কবিতাকে সময়ের সাযুজ্যে বেধেছেন তাদের দেখার নিরিখে। আর সেইখানে রয়েছে তাদের ব্যাক্তিগত স্ট্যাম্প। শব্দের মাদকতায় এরা প্রত্যেকেই বিশ্বাসী, তাঁর ধ্বনিমাধুর্যে।

এদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা সম্ভবত টার্কিশ কবিতা, যেটুকু এদিক ওদিক পড়াশুনা করেছি, ভালো অনুবাদ চোখে পড়ে নি – ভালো অর্থে পড়ার পর আমার কাছে অর্থবহ হয়ে ওঠার কথা বলছি। এদের কবিতায় অ্যানিমিস্ম অর্থাৎ রেলিজন এর ভীষণ সরাসরি প্রভাব রয়েছে। সে অর্থে এরা ক্লাসিসিস্ম এর অনেক কাছাকাছি স্টাইল বা টেকনিক গত অর্থে নয়, বরঞ্চ বলা যায় এরা যেন ভীষণ অন্তরঙ্গতার সঙ্গে বুঝতে চান ব্যাক্তিমানুষের বোধ বিশ্বাসের দুনিয়াটাকে। এটা কবিতায় হিউম্যানিস্ম এর একটা রুপ। বা নব্য প্রকৃতিবাদ যা ইউরোপিয়ান রোম্যান্টিসিজম এর থেকে সম্যক আলাদা। বাংলা কবিতায় এর কাছাকাছি আপলিনেয়ারের কবিতার প্রভাব রয়েছে বলে আমার মনে হয়। যেহেতু আপলিনেয়ারের কবিতার লেখার বহু ভালো অনুবাদ রয়েছে তাই, একটা জীবন্ত আনকোরা বিস্ময়ের ছাপ দেখতে পাই অনেকের কবিতায়। অনেকের কথাই বলা যায়, কিন্তু নামকরনে আমার বরাবরের একটা অনাগ্রহ রয়েছে, কারণ ৪৭ এর বিভাজন আমাদের অনেকের মধ্যেই একটা অদ্ভুত অদৃশ্য বাফারের জন্ম দিয়েছে, সেই বাফারে ধাক্কা খাওয়ার ভয়টা আমার ভীষণ বেশী।

দুপুর মিত্র: আপনার লেখালেখির শুরু কবে থেকে?

অমলেন্দু চন্দ: সে ভাবে বলতে গেলে সব স্পোর‍্যাডিক। স্কুলে পড়তাম যখন আমরা সাত আটজন মিলে একটি পত্রিকা সাইক্লোস্টাইল করে বার করতাম, নাম ছিল কিশলয়। আমাদের মধ্যের একজনের মাসিমা’র নাম ছিল সিস্টার পুস্প, বোন বোনের ছেলেদের মানুষ করতে করতে কবে যেন সিস্টার পুস্প হয়ে গেছিলেন। আমারাও ডাকতাম তাকে সিস্টার পুস্প বলেই, তখন তাঁর বয়েস বোধহয় বছর পয়েতাল্লিস তো হবেই, তিনিও সাড়া দিতেন অম্লান বদনে, তাঁর দেওয়া উৎসাহ আর আমাদের কিছুটা এটা একটা বেশ ভালো দারুন ব্যাপার এরকম বোধ থেকে, তো তখন লিখতাম টিখতাম, তাঁর পর এসবের থেকে খেলা ধুলো বেশী প্রিয় হয়ে গেল, পাশ করলাম চাকরি করতে চলে গেলাম বিহারে। সেখানে প্রাথমিক ভাবে একটানা বহুদিন ছিলাম – প্রায় ন বছর, সেখানে আবার একটু করে শুরু হল, সেখান থেকে চলে গেলাম ভিন্ন রাজ্যে, তাঁর পর অনেকদিন বাদে বছর সাতেক আগে বলা যায় লেখা লেখির নতুন সুচনা, যে টুকু লিখছি যা লিখছি। প্রথম প্রথম আমার স্ত্রী বলতেন ঠিক আছে আজে বাজে কাজ করার থেকে এটা অন্তত ভালো, হা হা হা। অবশ্য এর মাঝে স্পোর‍্যাডিক্যালি অনেক সময়েই লিখবার চেষ্টা করতাম।

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লেখেন?

অমলেন্দু চন্দ: ওই সেই কবিতার রক পাখিটা ডানা মেলে ভেসে বেড়ায় আর আমি সেগুলোকে শব্দে আঁকবার চেষ্টা করি – তাই। লিখি লেখা এভাবে ধরা দেয় বলে। সেই ধরতে গিয়ে ভাব যখন মূর্তি খোঁজে রুপ নেবে বলে তখন শব্দ খোঁজা এক এক সময় ওই হেঁতালের জঙ্গলে গুড়ি মেরে বসে বসে অপেক্ষার মত বলে। উদ্ধত শোনাচ্ছে তো, আমার মত একজনের মুখ থেকে? কেন লিখি কি করে বলব, লিখতে পারাটাকে একটা জীবন্ত প্রসেস বলে মনে হয়, সেই প্রসেস টা আমাকে বেজায় সুখী করে বলে। আসলে এটা বোধহয় সেরকমের একটা প্রসেস যখন নিজের দিকে তাকাতে ভরসা হয় না এমন একটা বয়েসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে নিজেকে আবার আবার বার বার দেখতে ইচ্ছে করে – আমি কি আমি কতটা আমি কেন এইসব ভেতরের ল্যান্ডস্কেপের রুক্ষতায়, বর্ণময়তায় – আসলে খুব ভালো লাগে তাই।

দুপুর মিত্র: কবিতা লিখতে আপনার কতটুকু সময় লাগে?

অমলেন্দু চন্দ: কখনো দশ বিশ মিনিট কি এক আধ ঘণ্টা, আবার কখনো দু তিন দিন। আসলে সেভাবে চিহ্নিত করিনি কখনও। তবে এই যেমন ধরুন এই পর্যায়ের লেখা শুরু হওয়ার আগে সেই স্পোর‍্যাডিক লেখার পর্যায়ে একটা নাট্য কাব্য ধাঁচের লিখতে শুরু করেছিলাম, বেশ অনেকটা লিখেও ছিলাম, তারপর আর এগোয় নি, তো এই পর্যায়ে এসে সেটাকে খুলে বসলাম, কিন্তু দেখলাম আমার ভাষার গায়ের গন্ধ আমি নিজেই আর পছন্দ করতে পারছি না, তো এই রকম আর কি, অনেক কবিতাই শেষ হয় না আমার নিজের কাছেই একেবারে আক্ষরিক অর্থে, সে গুলোর সময়ের আর হিসেব থাকে না।

দুপুর মিত্র: আপনি সাধারণত কোথা থেকে কবিতা লেখার বিষয় খুঁজে নেন?

অমলেন্দু চন্দ: দেখুন সে অর্থে কবিতায় বিষয়ের কথা টা বোধহয় মিসনমার। কবিতা ভাবনার কথা যদি বলেন সেটা একটা বোধের আবহ যেটা থাকে – সঙ্গে, যখন লেখা হয় তখন তো বটেই যখন সেটা হয় না তখনও। এই আবহটাই চোখ চাওয়ায়, মনকে নাড়ায় – একটা কবিতা হয়ে যায়। সময় একই সঙ্গে আধার এবং আধেয় যেখানে, যে পরিসরে কবি বাঁচে, এই রিয়ালিটি কে অনুধাবনের সুত্রে কবিতার বিষয়ভাবনা তৈরি হতে থাকে, সেখানে কবির সংবেদনশীলতায় যে আঁচর গুলো পড়ে সে গুলোই হয়ত সেই অর্থে কবিতার বিষয় হয়ে যায়। অনেক কিছু বাইরে থেকে ওসকায় আবার অনেক কিছুই ভেতরে ভেতরে ভেঙে যায়, সেই সব মিলে মিশে বিষয়ভাবনা তৈরি করতে থাকে। দেখুন সত্তরের দশকের পর তো এমন কোন অর্থনৈতিক রাজনৈতিক বা সমাজমনস্কতার ক্ষেত্রে ঝাঁকিয়ে তোলা বা নাড়িয়ে দেওয়ার মত ভেতর থেকে ব্যাস্ত করে তোলার মত কিছু ঘটে নি এপার বাংলায়, ফলে সে অর্থে বিষয় বস্তু কেন্দ্রিক কবিতা ভাবনা আর তার জন্মের স্রোত অনেকটাই আত্মগত এবং ব্যাক্তিগত পরিসর থেকে উঠে আসা। এমনকি রাজনৈতিক পরিসরে পালাবদল এবং তাকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া অনেক কিছুই সে ভাবে তো যাকে বলা যায় উনিভারস্যাল অর্থে হিউম্যান ট্র্যাজেডি হয়ে ওঠে নি, ফলে বিষয় ভাবনা প্রভাবিত করার মত ব্যাপারগুলোও অনেকটাই আত্মগত, নিজের। সম্ভবত না সম্ভবত নয় এইখানেই এপার ওপারের লেখার জগতে ঘটমানতার প্রভাব বৈষম্য লক্ষণীয়।

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

অমলেন্দু চন্দ: লেখার জন্য প্রস্তুতি কথার মধ্যে বোধহয় এই প্রসঙ্গ টা ভাস্বর যে কবিতা একটা আর্ট ফর্ম এবং সেটা নিয়ে নাড়া চাড়া করতে গেলে শিক্ষার প্রয়োজন। লেখার জন্য নয়, আমি বলব লিখে চলার জন্য লেখার বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষার প্রয়োজন, এ শিক্ষার জন্য কোন প্রাতিষ্ঠানিক ছাপের প্রয়োজন নেই। যদি আমি কোন কিছু সম্বন্ধে সিরিয়াস থাকি তাহলে সেই কিছু কে আরও আরও জানতে চাওয়ার প্রবনতা টা নরম্যাল হিউম্যান রেস্পন্স। কবিতাকে এই জানার পদ্ধতির মধ্যেই রয়েছে কবি’র প্রস্তুতির ইতিহাস। কবিতাভাবনার ম্যাচিউরিটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রস্তুতির কথা, সে দশ বছর আগে যে ভাবে কবিতার কথা ভাবত আর দশ বছর পরে যে ভাবে কবিতার দিকে তাকায় তাঁর মধ্যে রয়েছে সেই প্রস্তুতির গল্প। এই দেখার বদলের সঙ্গে ওতপ্রোত শিক্ষার ইতিহাস, যেখানে সে নিজেকে প্রস্তুত করে চলেছে। কথা একটাই – প্রস্তুতির প্রয়োজন টা অনুভুত হওয়া। দেখুন প্রিয়তমার চলার ছন্দের বা গলার আওয়াজের সঙ্গে যেমন তাঁর ইমোটিভ ফ্রেমওয়ার্কের রুপ রেখা জড়িয়ে থাকে ার একটা সুষ্ঠু সম্পর্কের গড়ে তোলার দায়িত্ত্ব বলে যে এগুলোর রূপরেখা চেনা দরকার তেমনি কবিতার ফ্রেমওয়ার্কে জড়িয়ে থাকে সেই সব নিহিত উপাদান যা তাকে সুন্দর কুৎসিত বীভৎস ভয়ঙ্কর রসবতী কাদম্বরী করে তোলে। প্রিয়তমার সঙ্গে সম্পর্কের মিউচুয়াল রেস্পন্সিভনেসের প্রয়োজনে যেমন আমায় চিনতে হয় তাঁর সেইসব শব্দ ছন্দ তাঁর প্রকাশ তাঁর বিভাস তেমনি কবিতার ক্ষেত্রেও আমাকে চিনতে হবে জানতে হবে সেই সব ফ্রেমওয়ার্কের গঠন তবে তো কবিতা রেস্পন্সিভ হবে এবং তাই দেবে যার প্রত্যাশায় এত কিছু। জানার প্রয়জনীয়তা অসীম আর সেটার স্বীকৃতিই অর্ধেক প্রস্তুতি। কবি আর কবিতার সম্পর্কের ইতিহাস সেই প্রস্তুতি।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

অমলেন্দু চন্দ: যে নামটা প্রথমেই ভেতর থেকে উঠে আসে – ভাস্কর। যেটা আগেই বলেছি যে এপার বাংলায় ঘটমানতার আবহ অনেকটাই আত্মমগ্ন – কবির অন্দরের দুনিয়া, আর সেটা ভীষণ নাড়িয়ে দেওয়ার মত হয়ে আসে ভাস্করের কবিতায়। আমরা যাকে বলি নগর যন্ত্রনা বা আরবান অ্যংস্ট সেটার এমন অসম্ভব অথেন্টিক উচ্চারন বোধহয় অন্য কারুর কবিতায় আসেনি। এবং সেই উচ্চারন যন্ত্রনা ক্লিষ্ট কিন্তু কাতরতার ছবি নয়, সেখানে রয়েছে এক আত্মগত প্রতিবাদ ডি হিউম্যানাইজ হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে সরবতা। বিনয় মজুমদার – তাঁর কবিতায় একধরনের গীতলতা আছে খুব ক্ল্যাসিক্যাল মনে হয় তাঁর এই ধরন। শামসুল হক – তাঁর কবিতার গীতলতার সৌন্দর্য বড়ই এথনিক, বড়ই নন্দন। শামসুর রহমান, আসলে ভালো কবিতা পড়লেই ভালো লাগে, – এবং ভালো কবিতা অনেক, সেই একই কবিরা অনেক ভাট লিখেছেন, ফলে -

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

অমলেন্দু চন্দ: খারাপ লাগা কবি বা তাদের লেখা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না।

দুপুর মিত্র: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

অমলেন্দু চন্দ: আমার মনে হয় এই দশকওয়ারি চিহ্নিতকরনের প্রবনতা টা আমদানি করা। কোন একটা কালখন্ডে এভাবে বাধতে চাওয়ার প্রয়োজনবোধ নিয়ে বিস্তর কথা হতে পারে, কিন্তু এতাই বোধহয় সত্যি যে নয়া কবিতা বা নতুন-কবিতা যার অন্য নাম পোস্ট-মডারনিজম – একটা প্রবনতার নাম বাংলা কবিতায়, আর সেই প্রবনতার খাত দিয়ে বয়ে যাওয়া চর্চা কে এভাবেই দশকওয়ারি চিহ্ন দিয়ে দেখতে চাওয়া হচ্ছে। আসল কথাটা এই কালখন্ডে বেশ কিছু সিম্পটম রয়েছে, যে সিম্পটমের মুলে রয়েছে প্রযুক্তির আশীর্বাদ যেটা এক্সপোজার টু মেনি ইম্পালসেস এর সুত্র। বিনিময় অনেক সহজ হয়েছে – আমি ভাবের আদান প্রদানের কথা বলছি। আজকের কবিতায় লেখায় অনেকগুল জিনিষ খুব সহজেই চোখে পড়ে তাঁর মধ্যে অন্যতম বোধহয় যে এরা সে অর্থে কোন ম্যানিফেস্ত সম্বলিত ধ্যান ধারণার আবেশে ভিজে থাকছে না কিন্তু অনেক কিছুই যা মানিফেস্ত তাদের সুত্র গুলোকে ব্যাবহার করতে এদের দ্বিধা নেই, এটা একটা মুক্ত মনস্কতার পরিচয় দেয়। এরা পদ্ধতিগত অর্থে অনুভুতিময়তা ও মেধা কে কাছাকাছি আনবার চেষ্টা করে চলেছে, ফলে কবিতা শুধুই ইনস্টিঙ্কটিভ নয়, আরও অনেকটা প্রগাঢ় কিছু হয়ে উঠবার প্রবনতা দেখাচ্ছে। এটা আমার মনে হয় নব্বই ের দশক ছুঁয়ে শুন্ন্য তে বয়ে গিয়ে শুন্যোত্তর সময়েও ভীষণ প্রকট। ব্যাক্তিগত ভাবে এটা আমার ভালই লাগছে, কারণ এই সব লেখায় অনেক কিছুই যেন জ্যান্ত হয়ে ওঠে সেই জৈবনিক জায়মানতা একটা শক্তি একটা ক্ষমতা একটা প্রাবল্য – এটা বইতে জানে ার তাই আমার বিশ্বাস এটা হয়ত একদিন কবিতা বিশেষ করে বাংলা ভাষার কবিতার একটা নিজসে পরিভাসার পরিসর এনে দেবে নিজে জোরেই তাঁর জন্য বিদেশী স্বাক্ষর ের প্রয়োজন হবে না, বিনিময় বজায় রেখেও।

দুপুর মিত্র: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

অমলেন্দু চন্দ: প্রথমেই বলি আমার কবিতা পড়ার পরিসর খুবই লিমিটেড, ফলে এতটা বিশাল একটা প্রসঙ্গে কথা বলবার অধিকারী নিজেকে মনে করি না, কারণ ফারাক টা বর্ণনা করতে পারার জন্যে আগে চাই সেটাকে ভৌগোলিক পরিসরে তার চর্চা তাঁর চর্যা কে জানা। ফলে খুব লিমিটেড এবং বহুল পরিচিত কথা পুনরাবৃত্তি করা থেকে নিরত থাকছি। এই বঙ্গের দক্ষিন এবং উত্তর অবস্থানবিভাজন এর সুত্রেই যে কবিতা আজকাল উঠে আসছে সেই কবিতাকেই সেভাবে পড়া হয় নি, হয়ে ওঠে নি, তাই – তাঁর পড়ে তো ফারাক সংক্রান্ত কথা বলার শুরু হতে পারে।

দুপুর মিত্র: - ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

অমলেন্দু চন্দ: অনেক অনেক কিছু দিচ্ছে। দেখুন সাহিত্য একটা চর্চা আর তাঁর পরিসরের ব্যাপ্তির স্কেল টা যত বড় হয়ে বিস্তারিত আকারে আমাদের সামনে আসে ততই মঙ্গল, সেই চর্চার চর্যায় ব্যাপৃত সমস্ত জীবন সমস্ত মানুষ যে এই প্রযুক্তির ব্যাবহার করছে সে কিছু বলতে চাইছে, এই বিনিময় যত বেশী হয় ততই তো নতুন প্রাপ্তির আশা থাকে। ব্লগ তো একটা অনলাইন জারনাল, একটা পৌঁছতে চাওয়ার মাধ্যম, প্রিন্ট মিডিয়ামের উদ্দেস্যও কি তাই নয়, তাহলে এ প্রশ্ন টা কেন। হ্যাঁ এটা একটি শিশু মাধ্যম অন্তত এই গোলার্ধে, সুতরাং ফলপ্রশু কতটা এটা সময় বলবে, আমি আশাবাদী, হ্যাঁ এখনও প্রিন্ট মিদিয়ার কৌলিন্যের কোন বৈকল্প নেই। এবং সমস্ত স্বীকৃতি সেই সুত্রেই যেহেতু আসে বা সছে সুতরাং টাকে অবহেলা করবার কথা ভাবাতাও বালউত মুখ গুঁজে থাকার সমতুল, পাশাপাশি এটাও ভীষণ সত্যি যে এই ব্লগ এক ধরনে উন্নাসিক মনপলি কে ভাঙতে সক্ষম হয়েছে। ইন্টারনেট অনেক পারসেপ্সান কে বদলে দিচ্ছে।

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

অমলেন্দু চন্দ: না। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে লিটল ম্যাগ এর একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ আর ঐতিহাসিক অবস্থান রয়েছে, হয়ত কৌলিন্যের একটু ফারাক হয়েছে তো সেটার কারণ বাঙালী সংবেদনশীল সেন্টিমেন্ট প্রবন, কৃত্তিবাস হয়ত আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরেও এক রকমের মায়াময় ঐতিহাসিক ব্যাপার হিসেবে থেকে যাবে, যে ভাবে সিরাজ্জদ্দৌলা নামটার সঙ্গে আমাদের কোথাও একটা নাড়ীর সম্বন্ধ রয়ে গেছে নায়কোচিত ভাবের অনুভুতিময়তায়। সেটার দাম অসীম। ব্লগ একটা সম্পূর্ণ আলাদা পদ্ধতিতে আজকের গ্লোবাল বাঙালীর কাছে টেবিলে বসে কি বোর্ড টিপে পৌঁছে যাওয়ার ঠিকানা। তাই তাঁর প্রয়োজন আলাদা। আমি বলব এটা কম্পিটিটিভ অবস্থান নয়, বরঞ্চ পরিপুরক। আন্তর্জাতিক ভাবে ব্লগ সিরিয়াস লেখা লেখির ফোরাম হয়ে উঠেছে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে। সাহিত্য তো শুধু সাহিত্য সৃষ্টি নয় তাকে কেন্দ্র করে আলাপচারিতা সাহিত্যের বিকাশের একটা অন্যতম ভেহিকল, ব্লগ সেই ভেহিকল হয়ে উঠছে। এটা খুব স্বস্তিকর।

দুপুর মিত্র: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

অমলেন্দু চন্দ: বিশেষ কিছুই না। দুপুর মিত্র আমাকে প্রশ্নাবলি পাঠানোর সঙ্গে আমার তিনটি লেখা ওই বাংলার একটি দৈনিকে বেরনোর সঙ্গে কোন যোগ রাখে না এটা মনে করতে পারছি এমন বলতে পারি না। অর্থাৎ সজা ভাষায় এই সাহিত্য নজর কাড়ে অনুসন্ধিৎসু করে তোলে এটা অন্তত পরিষ্কার।