শ্যামল ভট্টাচার্য্য এর কয়েকটি কবিতা

Post date: Mar 8, 2011 12:37:02 PM

শ্যামল ভট্রাচার্য্য

বসবাস : ভারত

প্রকাশিত গ্রন্থ :

হে পথ হে পতঙ্গ (কাব্যগ্রন্থ/২০০৪)

প্রজাপতির দূর্গ (উপন্যাস/২০০৯)

আমি

(তৃতীয় আহুতি)

অদ্বয় আনন্দের প্রতিপাদক যে সুমঙ্গল বানী

স্বীয় হৃৎকমল হতে নির্গত হয়েছে

ও প্রাচীন আচার্যগনের সকাশে উপস্থিত হয়ে সহস্রধা বিভক্ত হয়েছে

সেই বানী জয় যুক্ত হোক

এই বানীই সর্বকর্মা, সর্বকাম, সর্বগন্ধ, সর্বরস

এই বানীই আভাসের দ্বারা বিদ্যা ও ঈশ্বর সৃজন করে

এবং স্বয়ং মায়া ও অবিদ্যা হয়ে থাকে

কোন শিশু যেমন জলের উপর দৃষ্ট নিজ প্রতিবিম্বের

ঋজুতা ও বক্রতারূপ পরিবর্তনাদিকে আপনার মনে করে ক্রীড়া করে

এই সুমঙ্গল বানীও সকল মনের উপর

যে সকল ক্রিয়া হয়

সেগুলি নিজের মনে করে ক্রিয়া করে

আর এই আশ্চর্য ক্রীড়াহেতুই অনুভূত হয়

আমাদের রক্তের সকল চলাচল পরিযায়ী পাখির মতো

ধাবিত হৃদয় হতে হৃদয়ান্তরে

যে চলাচল হংসের ন্যায় হর্ষ গদগদস্বরে গেয়ে যায় এই উদগীত--

আমাদের পালকে সকল মেঘ বিচরন করিতেছে

সমস্ত অঙ্গের সন্ধিদেশে নদীসকল প্রবাহিত হইতেছে

তবু এ জগতে গৃহে অন্ন থাকে বলিয়াই

আমরা গৃহস্থ হই

আবার গৃহস্থের নিকট হইতে অন্ন লাভ করা যায় বলিয়াই

আমরা ভিক্ষু হই--

আসলে এহেন বানীই সেই হৃদয় যা আমাদের ঈশ্বর বলে স্পন্দিত করে

ও উপলদ্ধ করে--

কাব্য যত নিঁখুত হয়ে উঠে ততটাই ভ্রান্ত হয়ে ওঠে আমাদের কবিসত্ত্বা

আর যেহেতু অশ্রুর স্পর্শটি ছাড়া কোন কিছু স্পষ্ট হয়না কখনো

আমাদের পান্ডুলিপিগুলি অশ্রুপ্রবাহের ভিতর গভীর সব বিসর্জনে যায়

ও খুলে যায় আশ্চর্য সব সর্জন যাহার ভিতরে

আমাদের প্রকৃত ভঙ্গিমাগুলি

লতাগুল্ম ও বৃক্ষস্থিত নদীমুদ্রার মতোই আকাশগামী হয়ে থাকে

আসলে,গন্তব্যই প্রমান

যা কিছু নদীর বক্রগতি তা মহাসমুদ্রের কাছে নিতান্তই সরল হয়ে থাকে

অশ্রুর এই সরলতার ভিতরে হে পাঠক, অনুভব করো

আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের ভ্রুযুগের মাঝখানে

বৃক্ষবৎ দন্ডায়মাণ

অতএব বৃক্ষমূলে স্থিত হও -- উপদেশ হৃদয়ে রক্ষা করার নাম ধ্যান

বৃক্ষই সংসার

যা আলোর অস্তিত্ত্বটুকু ছাড়া কিছু নয়

এই সংসারহেতু উপলদ্ধি করো

দীপ-বর্ত্তিকা নিম্নে টেনে তৈলে নিমজ্জিত করলে দীপ নিভে যায়

তবু প্রতিটি দীপ প্রজ্জ্বলন বহুজনের মঙ্গলার্থেই ঘটে থাকে

প্রতিটি প্রসববেদনা সকলের মঙ্গলার্থেই হয়ে থাকে

ইহাই আনন্দ

যাহার ভিতরে সকল সংজ্ঞার উপশম সুখময় হয়

আর উনুনের উপরিস্থিত গাঢ় পরমান্নের ন্যায়

অভ্যন্তর আলোড়নকারী তোমার সকল রাগসমূহ স্থির হয়ে আসে

অনুভব করো -- ইহাই নির্বান যার ভিতরে প্রবিষ্ট থাকে

পদ্ম ও রেনুময় ঔষধি, মহাসমুদ্র ও অন্নতৃপ্তি,

মনোময় মনি ও আকাশ, রক্তচন্দন ও নির্জন উপাসনা

আমাদের সকল ইতিহাস এই নির্বান বোধের সাথে জড়িয়ে থাকা গল্পমাত্র

আর ইহার ভিতরে সর্পবিষজাত যন্ত্রনার সতত আবৃত্তিই

আমাদের মহাভারত

আসলে, আমি যুদ্ধ করবোনা -- এই ক্ষুদ্র সংকল্পকে

আমি তোমারই নির্দেশ মেনে চলবো -- এই বিরাট সংকল্পে পরিবর্তিত করার

যেটুকু ছন্দব্যপ্তি

তাহাই সংগীত

সকল যুদ্ধই তাহাদের

তাহাদের জন্যে

এবং তাহাদের দ্বারাই অনুষ্ঠিত হয়

যাহারা জানেনা যে তাহারা যুদ্ধরত

যাহারা ইহা প্রকৃতই জানে সকল যুদ্ধ তাহাদের নিকট প্রশান্ত হয়

কামনাতুর নারীর সকল শীৎকারই

আমাদের সকল রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়

মাতৃময়ী নারীর সকল অপেক্ষাই

এ সকল যুদ্ধকে খন্ডিত ও সমাপ্ত করে থাকে

নারীর ক্রোড়স্থিত সমূহ নবজাতকের হাতের স্পর্শই

আমাদের পার করে আনে সকল মৃত্যু

নারীই প্রকৃতি যে এইভাবে খন্ডন-মন্ডন-সাক্ষ্য-অপেক্ষা নির্মান করে

আবার প্রকৃত পুরুষার্থে

খন্ডন-মন্ডন-সাক্ষ্য-অপেক্ষা বলে কিছু হয় না-- ইহাই প্রশান্তি

এই প্রশান্তিহেতুই

চাষী মাটিকে সংযত করে

আর মাটি সংযত করে কর্ষকের সকল প্রানশক্তি

ইহাই পুনরাবৃত্তি

জগতে সকলই সকলকে সংযমের দিকে নিয়ে যায় এইভাবে

আর স্বাদুতর হতে থাকে প্রতিটি রন্ধনকৌশল

এই পুনরাবৃত্তিহেতুই

বীজ থেকে অঙ্কুর,অঙ্কুর থেকে কাণ্ড,কাণ্ড থেকে নাল,

নাল থেকে গর্ভ,গর্ভ থেকে শূক,শূক থেকে ফুল আর ফুল থেকে ফল

তবু

বীজ কখনো এই চেতনা লাভ করেনা

আমি অঙ্কুর উৎপাদন করি

অথবা অঙ্কুর এই চেতনা লাভ করেনা

আমি বীজের দ্বারা উৎপন্ন

ইহাই প্রকৃতি যা সৎ হয়ে থাকে

মেঘ সৎ বলেই সে প্রতিক্ষনে ভিন্ন ভিন্ন

নদী সৎ বলেই তাতে ক্ষনে ক্ষনে পরিবর্তন দেখা যায়

যে অর্থক্রিয়া করে সে-ই সৎ

অর্থাৎ প্রত্যেকেই আমরা আমাদের অর্থক্রিয়াকারী রূপের দ্বারাই সৎ

মিথ্যা সর্পহেতু সন্ত্রস্ত হলে মিথ্যা দংশনের ভয়ে মৃত্যুও ঘটে থাকে

মিথ্যা সর্পও অর্থক্রিয়াকারী অর্থাৎ সৎ হয়ে থাকে

সকলেরই স্বভাব সত্য হওয়া, মিথ্যারও

সকলই কর্তব্যময়--ভ্রান্তিরও নিজস্ব কর্তব্য আছে

আর এই কর্তব্যহেতুই সমস্ত সংসারী জীব সুখের অভিপ্রায় করে

ও প্রবাহিত হয়ে থাকে ভেদবাসনা

যেভাবে মালার সব ফুলে অনুগত একটি সুতোই মালার প্রমান

প্রবাহ থাকলেও তদতিরিক্ত কিছু একটা থাকেই যা প্রবাহের প্রমান

সঙ্গমই এই প্রমান যা ত্যাগ ও ভোগের মিলনমাত্র

এই সঙ্গমহেতুই উপলব্ধ হয়

বালুকারাশির মধ্যে যেমন আকাশ আছে

প্রতিটি বালুকার মধ্যেও আকাশ আছে

বৃক্ষরাশির মধ্যে যে এক একটি বৃক্ষ স্বতন্ত্ররূপে দৃষ্ট হয়

তার কারন আকাশই

প্রতিটি বস্তু এইরূপ সঙ্গমের অধিকারী বলেই

বস্তুসমুহ যুগপৎ অনন্ত ও ভঙ্গুর হয়ে থাকে

যেহেতু কোন একাকী প্রতিজ্ঞা প্রতিজ্ঞাত অর্থকে সিদ্ধ করতে পারেনা

সে-ই হেতু রচিত হয় এমতো সমবেত মন্ত্র

হে অমৃতের পুত্র

এমন অবস্থা সততই বিদ্যমান

যেখানে চন্দ্র ও সূর্য উদ্ভাসিত হয়না

যেখানে মাটি-জল-অগ্নি-বায়ু-আকাশ ও বিজ্ঞান নাই

যেখানে গমনাগমন স্থিতি উৎপত্তি হয়না

অর্থাৎ একাকীত্ব সম্ভব হয়না কখনো

ইহাই দুঃখের অন্ত, অর্থেরও

অর্থাৎ সেখানে আনন্দ আছে আনন্দের ভোক্তা নেই

নির্বান আছে কিন্তু নির্বানপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি নেই

পথ আছে কিন্তু পথিক নেই

আসলে যা কিছু আমি নই তা আমি ভাবাই অবিদ্যা

আর যা কিছু আমি নই তার সাথে পৃথকীকরনই--মুক্তি

পূর্ণজ্ঞান সেইহেতু সকল জ্ঞানের সমাহার হয়না কখনো

যখন আত্ম-উল্লেখ থাকেনা,আত্মার বোধও হারায়

তখনই প্রকৃত ধ্যান উদ্ভাসে জাগে

যাহার ভিতরে সকল স্বপ্ন দ্বৈততা হারায়

মন্ত্রের পুনরাবৃত্তি আর কিছু নয় -- আত্ম ভাবনার প্রবাহটি স্তব্ধ করা ছাড়া

অর্থাৎ শরীর সংযমের নামই ধ্যান

মনসংযোগ -- শারীরিক মুদ্রারই অনুবাদমাত্র

শরীরই বুদ্ধি

শরীরকে প্রত্যাখ্যান করলে প্রত্যাখ্যাত হয় যুক্তির সকল বোধ

যা সকল গুনের আধার হয়না তা শরীর হয়না কখনো

স্বর্গ, মর্ত্য ও সকল আয়তন শরীরেরই পরিমাপ মাত্র

ধেনুর সমগ্র অস্তিত্বই দুগ্ধ নিঃসরনের হেতু হলেও

তাহা যেমন ধেনুর স্তনবৃন্ত হতেই বিনির্গত হয়

সমগ্র জগৎ প্রেম নিঃসরনের হেতু হলেও

তাহা কেবল শরীর হতেই প্রকট হয়

অর্থাৎ শরীরই প্রেমাঙ্কুর

আত্মরতিই পরিণত হয় প্রেমে আর প্রেম স্নেহে

স্নেহ মানে আর মান প্রনয়ে

প্রনয় পরিনত হয় রাগে আর রাগ আনুরাগে

এই অনুরাগই হয়ে উঠে মহাভাব আর গীত হয়--

পায়ের গোড়ালি থেকে হাঁটু পর্যন্ত আমি মৃত্তিকা

হাঁটু থেকে নাভি পর্যন্ত আমি জল

নাভি থেকে ঘাড় পর্যন্ত আমি আগুন

ঘাড় থেকে কেশরাশির সীমা পর্যন্ত আমি বায়ু

কেশরাশির সীমা থেকে ব্রহ্মতালু পর্যন্ত আমি মহাকাশ

এই শরীরহেতুই আমার গোপন নাম আহার

অর্থাৎ আমার বক্ষস্থলই যজ্ঞাধার

বক্ষস্থলের লোমসকলই কুশ

হৃদয়ই গার্হপত্য অগ্নি

মন অন্বাহার্যপচন অগ্নি ও আমার মুখই আহবনীয় অগ্নি

আমার প্রাণবায়ুই এ সকল আগুনের উৎসারক

অর্থাৎ শ্বাস ও প্রশ্বাসই কম্পন

যা কিছু কম্পিত হয় সকলই প্রান

সকল গতি ও স্থিতির প্রানই খাদক

এই প্রানের কারনেই কোথাও কোন সঞ্চয় নেই

শুধু পুনরাবৃত্তি আছে

অর্থাৎ মুক্তি প্রানের ভিতরেই থাকে

শারীরিক সুস্থিরতাগুলি উন্মুক্ত করে এই মুক্তিকে

জ্ঞানও একটি শারীরিক ক্রিয়া ছাড়া কিছু নয়

শরীরই পরমতত্ত্ব

আর সেইহেতু আমাদের মস্তিস্কের স্বরূপটি

সহস্র পাপড়ির মতো আশ্চর্য হয়ে থাকে

প্রতিটি ধ্যানের মুদ্রা -- পদ্মবৎই হয়ে থাকে

যার প্রতি রেনু

শিবের কপালে স্থিত চন্দ্রের ন্যায় জ্যোতিস্মান ও মধু নিঃসারী

শরীরের সকল বীজকে এই মহামধু অনুসারী করাই সাধনা

আসলে বন্ধনই পাশ

বন্ধনের ভিতরে ছোট হয়ে থাকাই পশু

এই কুন্ডলীকৃত বন্ধনকে বিস্তৃত করাই তন্ত্র

আমাদের সকল শিকড় যখন পূর্ণ জ্যোৎস্নার অনুসারী হয়

তখন আনন্দ -- উহাই মদ্য

ইন্দ্রিয়ের সংযমই -- মৎস

যখন ভক্ষ্য ও ভক্ষক একাকারে হারায় উহাই মাংস ও তাহার আস্বাদন

আহারের আগে পরমান্নের যে অপেক্ষারত ভঙ্গীটি -- উহাই মুদ্রা

যখন অপেক্ষার কাছে খুলে যায় শতসহস্র মুক্তির পথ -- উহাই মৈথুন

আমাদের সকল ক্ষুধাই সর্পবৎ

উহাকে আহার দিও

নামিয়ে রেখ উহার বিষ

ইহাই আচার যা একটি সাক্ষাৎকারের অনুভবই হয়ে থাকে

আর যেহেতু কোন অনুভবই কল্পনা করা যায় না

এই অনুভবটি শূন্যতাই হয়ে থাকে

আমাদের বোধ

এই অনুভবকুন্ডলীর সংকোচন ও প্রসারনের দ্বৈততামাত্র

আমাদের বোধ

এই ক্ষুধা ও তৃপ্তির দ্বৈততা ছাড়া কিছু নয়

অ-উ-ম এই প্রনবধ্বনি সত্ত্ব-রজ-তম এই ত্রিগুন সমাবেশমাত্র

এই প্রনবতনুময় উপলদ্ধিই আমাদের আত্মোপলদ্ধি ও মুক্তি হয়ে থাকে

আর সেইহেতু আমাদের প্রতিটি মন্ত্রেই শরীর উল্লেখ প্রাচুর্যময় হয়

ও উহারা পিঁপড়ের ন্যায় একে অপরকে অনুসরন করে থাকে

ইহাই গ্রন্থ যা স্পন্দিত চলাচলমাত্র

চিৎশক্তি, আনন্দশক্তি, ইচ্ছাশক্তি, জ্ঞানশক্তি ও ক্রিয়াশক্তিই এই চলাচল

অর্থাৎ যে কোন গ্রন্থপঠনই পাঁচটি চলাচল

স্থূল, সূক্ষ, কারনগত, মহাজাগতিক এবং সাক্ষীগত

গ্রন্থপাঠ অতএব সাক্ষী হয়ে ওঠা ছাড়া কিছু নয়

আর প্রতিটি দেখে নেওয়া আর কিছু নয়--

নিজের হারিয়ে যাওয়া পরিচয়টি

খুঁজে পাওয়া ছাড়া

অর্থাৎ সাক্ষী হয়ে ওঠাই স্মৃতি যা সমূহ প্রায়শ্চিত্তের দিকে

অর্থাৎ মন্ত্রের দিকে আমাদের নিয়ে যায়

মন্ত্রই হয়ে ওঠে ঈশ্বর আর মন্ত্র এই গ্রন্থ আবৃত্তিমাত্র

সমূহ ঈশ্বর তবে আর কিছু নয় -- মন্ত্রতনুময় আত্মনির্মানমাত্র

আর এইহেতু তীর্থ শব্দের অর্থ গ্রন্থ

তীর্থকর শব্দের অর্থ শাস্ত্রকার

আর যিনি গ্রন্থ অধ্যাপনা করেন

তিনিই আনন্দতীর্থ

যে আনন্দময় হয়ে থাকেন এহেন সংখ্যাতীত প্রার্থনার দ্বারা --

সকল ধর্ম

ও তাহাদের আচরনবিধি ত্যাগ করে

তুমি তোমার প্রকৃত অনুভবের কাছে এসো

দূঃখ করোনা

ঐ অনুভবই তোমার আশ্রয় হবে

ও তোমাকে সকল পাপ হতে পরিত্রান করবে

জেন, এ জগতের সকলই সকলের আলিঙ্গনে থাকে বলে

গতিবিধি সম্ভব

পর্বতসমূহ নদীবাহু প্রসারিত করেই সমুদ্রকে

ও সমুদ্রসমূহ মেঘবায়ু প্রসারিত করে পর্বতকে আলিঙ্গন করে থাকে

এই আলিঙ্গনগুলিই জন্ম-মৃত্যু-পুনর্জন্ম চক্র হয়ে থাকে

অর্থাৎ আলিঙ্গনই শাস্ত্রবিধ একমাত্র কর্ম

যিনি শতবৎসর বেঁচে থাকতে ইচ্ছুক

তিনি এমতো আলিঙ্গনের ভিতরেই বেঁচে থাকতে আকাঙ্খা করেন

আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি মহান

আমাদের মন উহাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ

ও আমাদের উপলদ্ধি মনের থেকে মহানতর হলেও

আমাদের অনুভবটিই শ্রেষ্ঠ হয়ে থাকে চিরকাল

স্বধর্ম আর কিছু নয় এই অনুভবের আলিঙ্গনটি ছাড়া

এই স্বধর্মহেতুই কর্মে অকর্ম ও অকর্মে কর্ম দর্শন সম্ভব

ইহাই বিজ্ঞান যা জ্ঞানমাত্র নয়

ইহাই বিজ্ঞান যা কেবল হয়ে জানা

অনুভবই বিম্ব ও আমাদের উপলদ্ধি

মন ও ইন্দ্রিয়গুলি তাহার প্রতিবিম্বমাত্র

যার নিজের অনুভূতিই নিজের কাছে প্রত্যক্ষ নয়

তার এমতো দর্শন সিদ্ধ হয়না

যাহারা অনুভূতির উপর সংযম অভ্যাস করেন

তাহারাই এমতো দর্শনের অধিকারী হয়

যে কোন অনুভবই অজ্ঞতার মহাশত্রু

কেননা এই অনুভবহেতুই উপলদ্ধি হয়

যে কোন আশঙ্কার সীমা আঘাত পর্যন্ত

আর তাহার পর আমরা সকলেই মৃত্যুঞ্জয়

ক্ষনিক ও অনন্ত

যেভাবে সলতেটি কেটে দিলে দীপশিখা আরো উজ্জ্বল হয়

অনুভূতির সকল সংযম

আমাদের সমূহ অন্ধকারের মধ্যে ভিতর দীপ্যমান করে

তবু যেভাবে আগুন যতই উজ্জ্বল ও তিমিরনাশী হোক

সে যেমন নিজেকেই দহন করে

ও অতিক্রম করে যায় সকল বিভা

অনুভব তা যতই অজ্ঞতানাশী হোক

সে আসলে নিজেকেই নিঃশেষ করে

ও অতিক্রম করে যায় নিজেকেই

অর্থাৎ আমাদের প্রতিটি অনুভবই বিবর্তিত হয়

ও হয়ে উঠে প্রজ্ঞাশক্তি

যেভাবে সমুদ্রে গমন করে করপুটে জল গ্রহন করে বলা কঠিন

ইহা গঙ্গার জল

ইহা যমুনার জল

ইহা নর্মদার জল

ইহা গোদাবরীর জল

তার চেয়েও বেশি কঠিন এ জগৎ অবলম্বন করে বিশ্লেষন করা

ইহা স্পর্শ

ইহা বেদনা

ইহা সংজ্ঞা

ইহা চেতনা

আমাদের অনুভবগুলির ভিতরেই ইহারা বিশ্লিষ্ট ও উপলদ্ধ হয় --

কোন বিকল্পই কোন কিছুকে নস্যাৎ করেনা

বরং তাকে বিস্তৃতই করে

যেহেতু আমাদের কোন অভিজ্ঞতাই

এই অনুভবগুলি ব্যাখ্যা করার মতো যথেষ্ট হয়না

এই অনুভবগুলিই আমাদের অভিজ্ঞতাগুলির উপাস্য হয়ে থাকে

এই উপাসনাই মধ্যপন্থা

যা সততই সকল বচন ও ধারনার অতীত হয়ে থাকে

অর্থাৎ মধ্যপন্থার ভিতরেই প্রকৃত দৃশ্যমান

ও উপলদ্ধ হয়ে থাকে সকল পথ

অর্থাৎ আমাদের প্রকৃত ঐক্যের মতো প্রকৃত পার্থক্যগুলিও

বুদ্ধির অতীত হয়ে থাকে

আমি আর আমার শরীর যেমন এক নই

পৃথকও নই

সকল ঐক্য ও পার্থক্য এরকমই রহস্য হয়ে রয়ে যায়

অর্থাৎ একের শূন্যতা -- সকলেরই শূন্যতা হয়ে রয়ে যায়

রূপ শূন্য ও শূন্যতাই রূপ -- হয়ে থাকে

গতি ও স্থিতি বলে কিছু থাকেনা কখনো

যা অতিক্রম করে এসেছি আর যা অতিক্রম করা হবে

এই দুই পারস্পারিক সাপেক্ষতা ছাড়া

তৃতীয় কোন -- অতিক্রম করা হচ্ছে -- এমতো গতি অবস্থা থাকে না

আমরা প্রকৃত অর্থে কোন কিছুই অতিক্রম করে আসি না

এবং অতিক্রম্য সেইহেতু কিছুই থাকে না

আর যেহেতু গতি অবস্থা থাকে না

তার সাপেক্ষে স্থিতিও থাকেনা কখনো

গতি ও স্থিতির এহেন দৃষ্টিশূন্যতাই হয়ে ওঠে-- প্রজ্ঞা

যাহার ভিতরে টের পেয়ে যাই

দর্শনহীনতাই আমাদের প্রকৃত দর্শন

যা কিছু গতির অতীত

তাহাই অনুসরনযোগ্য ও আমাদের প্রকৃত গন্তব্য

আমাদের প্রকৃত পুষ্টি আসে

যা কিছু আহার্য হয়না কখনো -- তা থেকে

এই প্রজ্ঞাই প্রেম

এইহেতু যাহারা প্রেমিক তাহারাই গৃহহীন হয়ে থাকে

কেননা উহারা গৃহের অধিক হয়ে থাকে চিরকাল

আসলে গৃহ -- হিংসার ভিতরেই সংগৃহীত হয়ে থাকে

খাদ্য-বস্ত্র-পানীয়-তৈজস হিংসার ভিতরেই সংগৃহীত হয়

হিংসাই সংসার

আর প্রেমের ভিতরেই এহেন উপলদ্ধি ঘটে থাকে

এইসব হিংসা-ঘৃনা-ক্রোধ-ভ্রম সংযত করা যায়না কখনো

কেননা উহাদের অস্তিত্বই নেই

প্রেমের অনুভবটিও

জলের উপর ভাসমান চাঁদের মতো হয়ে থাকে

উহা আছে অথচ নেই

উহাকে স্পর্শ করার যে কোন প্রচেষ্টাই তবু

শতসহস্র তরঙ্গে উজ্জ্বল করে তোলে সে জ্যোৎস্নাকে

এই প্রেম হেতুই

আমাদের শতসহস্র জন্ম

শতসহস্র মুদ্রা

শতসহস্র মৃত্যু

হতে পারে

যা আছে অথচ নেই

আর এইহেতু জন্ম-মৃত্যু-মুদ্রা নিয়ে আমাদের কোন প্রশ্নই

জন্ম-মৃত্যু-মুদ্রা নিয়ে হয়না কখনো

লতা উর্দ্ধে যায়

কিন্তু অবলম্বন না পেয়ে ফিরে এলে যেমন নিজেকেই জড়ায়

আমাদের সকল বচনগুলি

এমতো উপলদ্ধির দিকে যায়

এবং জটিলতর হতে থাকে সেইভাবেই

যিনি শূন্যতাকে জেনেছেন

তাহার নিকট এ সকল ধারনা ও বানীর

ততটুকুই প্রয়োজন

মহাপ্লাবনের সময় ক্ষুদ্র জলাশয়ের প্রয়োজন যতটুকুমাত্র থাকে

চোখ,কান,নাক,জিহ্বা,ত্বক -- আমাদের একইরকম জ্ঞান দেয় না

আমাদের প্রত্যক্ষগুলি,যুক্তি ও শব্দ -- একই রকম প্রমানের কাছে

পৌছায় না

আসলে প্রবৃত্তিগত কর্মগুলি ধর্ম হয়না কখনো

কেননা অপূর্বতাই ধর্মের লক্ষন

যা আগে দৃষ্ট হয়নি

বলা হয়নি

প্রবৃত্তিগতভাবে অনুভূত হয়নি

তাহাই দেখা,বলা ও অনুভব করাই -- ধর্ম

আর এইহেতু বন্ধনের দিকে নয়

ধর্ম আমাদের বিভিন্ন রকম মুক্তির দিকে নিয়ে যায় চিরকাল

অর্থাৎ মন্দিরের ভিতরে আমাদের জন্ম প্রার্থিত হলেও

মন্দিরের ভিতরেই আমাদের মৃত্যু

প্রকৃত ধর্মে প্রার্থিত হয়না কখনো

তাহাই শূন্যতা ধর্ম ও শূন্যতা আলাদা কিছু নয়

যেখানে দ্রষ্টব্য,শ্রতব্য এবং জ্ঞাতব্য কিছুই থাকেনা

যেখানে দ্রষ্টব্য,শ্রতব্য এবং জ্ঞাতব্য থাকে--তাহা ভ্রম

তাহা সসীম

ও অল্প হয়ে থাকে চিরকাল

শূন্যতাই অমৃত, অল্পই মৃত্যু

জগৎ শূন্য

কেননা জগতে কোন কিছুরই নিরপেক্ষ

ও স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই

সব কিছুই জগতে একে অপরকে পেয়ে উৎপন্ন

অদ্বয়কে এইহেতু দ্বৈততার সাহায্য ছাড়া বোঝা যায় না

আমাদের একটি বৃত্ত আঁকতেই হয় শূন্যতা বোঝানোর জন্যে

আছে এবং নেই -- এই অবস্থা উপলদ্ধিই সত্য

যা প্রশান্তি অতএব শূন্যতা হয়ে থাকে

যদিও দহনশক্তিকে আগুনের স্বভাব বলা হয়

তবু এই দহন অনুভবের জন্যে

অপর দাহ্য শরীর আবশ্যিক শর্ত হয়ে থাকে চিরকাল

আর ইহা অনুসরন হেতু উপলদ্ধ হয়

জগতে সকল বস্তুর কেবল পরভাব রয়েছে

ইহাই শূন্যতা ও তার প্রথম তাৎপর্য

সাপকে যেভাবে সঠিক অংশে শক্ত করে ধরতে না পারলে

কোন ব্যক্তি দংশিত ও মৃত হয়

নতুবা সে শ্রেষ্ঠ সাথী হয়ে ওঠে সমূহ খেলার

এহেন শূন্যতাকেও

সঠিক তাৎপর্যে উপলদ্ধি করতে পারলে বলা যায়

সুখ ও দূঃখ উভয়েই নিঃস্বভাব

তাই উহাদের নিরোধ সম্ভব

সকলই শূন্য -- এই কথাটি মাটি, জল, আগুন, বায়ু

অথবা কন্ঠে, ওষ্ঠে, জিহ্বাতে, দন্তমূলে, নাসিকাতে

অথবা কি হেতু, কি প্রত্যয় সমাহার অতিরিক্ত অন্যকিছু --

কোথাও স্বভাবত বিদ্যমান নয়

আর সেই হেতু এই শূন্যভাবকে

অগ্নি দগ্ধ করতে পারে না

অস্ত্র ছেদন করতে পারে না

বায়ু শূস্ক করতে পারে না

জল দ্রবন দ্বারা কর্দমাক্ত করতে পারে না

ইহাই শূন্যতা

যা কোনপ্রকার খন্ডন ও মন্ডনের অভিলাষী নয়

দেহচক্ষু-দেবচক্ষু-জ্ঞানচক্ষু-ধর্মচক্ষু

যখন শূন্যতার মধ্যে বিলীন হয়

তখনই প্রজ্ঞাচক্ষু উদ্ভাসিত হয় ও উপলদ্ধি হয়

একে অপরের সাপেক্ষে

জগতে সকল কিছুরই নিজের পথটি আছে

অসীম স্বাধীনতার ভিতরে মুক্ত হবার

সকল কিছুরই নিজের নৈঃশব্দটি আছে অনন্তের মহাকাব্যটি রচনা করবার

প্রকৃত অর্থে কোথাও কোন বন্ধন নেই

মুক্তিও নেই সেইহেতু

তবু কর্ম ছাড়া এহেন উপলদ্ধি সম্ভব হয় না

অর্থাৎ আমাদের প্রতিটি ক্রিয়াই সর্বক্রিয়া

আর সেইহেতু কোন ক্রিয়াই ব্যক্তিগত হয় না

কোন ক্রিয়া ব্যক্তিগত বলার অর্থ দুঃখে পরিপুর্ন হওয়া

প্রতিটি কর্মই জ্ঞানের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ

শ্রবন-মনন-নিদিধ্যাসনের সমাবেশই জিজ্ঞাসা

জ্ঞান আর কিছু নয় এই জিজ্ঞাসামাত্র

একটি জিজ্ঞাসা থেকে অপর একটি জিজ্ঞাসার কাছে পৌঁছানোই

জ্ঞানের প্রকৃত পথ

জ্ঞান সেইহেতু অনন্ত ছাড়া কিছু নয়

জ্ঞানই কর্ম ও ভক্তি

কেননা কর্ম আসলে জিজ্ঞাসারই অনিবার্য পরিনাম

আর ভক্তি জিজ্ঞাসার প্রতি উৎসর্গিত হয়ে যাওয়া মাত্র

জিজ্ঞাসাই সেইহেতু একমাত্র তপস্যা

জিজ্ঞাসাই পরম সংযম যাকে বৈরাগ্যও বলা যায়

জীব নিত্যমুক্ত আর সেইহেতু জিজ্ঞাসার অধিকারী

যে কোন জিজ্ঞাসারই ষোলটি মুদ্রা থাকে

জলের বুকে যে ঢেউ জাগে,স্থিত হয়, ভাঙ্গে

তাহাও কম্পিত হয় ষোলটি মুদ্রায়

যদিও বর্ন থেকে অক্ষরে,

অক্ষর থেকে শব্দে

শব্দ থেকে বাক্যে

প্রভূত গতিবিধির শর্ত ছাড়া কোন গ্রন্থ সম্ভব হয়না কখনো

তবু একটী গ্রন্থকে আমরা স্থিরই বলে থাকি

পৃথিবীর সকলই এইভাবে স্থির মনে হলেও

ঐ গ্রন্থের মতো -- সকলই প্রবাহশীল

মন্দিরের প্রদীপশিখাটি অচঞ্চল মনে হলেও

প্রকৃত ধর্মে, উহা প্রতিক্ষনেই প্রবাহমান

প্রতিটি ক্ষনেই উহা আসলে ষোল কলার ধারাবাহিকতা ও বিচ্ছেদ

যা রূপ বলে চিহ্নিত হয়ে থাকে

এই রূপগুলি কর্মচঞ্চলতা ও তাহাদের সমন্বয়মাত্র

যা ছন্দ বলে খ্যাত হয়ে থাকে

এই ছন্দের কারনেই

প্রতি সমন্বয় প্রতি সমন্বেরই অনুসারী হয় চিরকাল

অর্থাৎ এই সমন্বয়গুলি সমন্বয়ের জন্যেই ঘটে থাকে

এই সমন্বয়গুলির অতীত কোন আকাঙ্খা থাকে না

মুক্তি এইভাবে মুক্তির জন্যেই ঘটে থাকে

মুক্তির জন্যে কোন আকাঙ্খা, প্রকৃত প্রস্তাবে, থাকে না

জন্মক্ষন ও মৃত্যুক্ষনগুলির কোন দর্শন থাকে না

কেননা উহাদের নিরপেক্ষ তৃতীয় কোন দর্শক থাকে না কখনো

আমাদের সকল রচনাই

বিভ্রম থেকে দর্শনহীনতার দিকে চলে যায় চিরকাল

এইসব দর্শনহীনতার ভিতরে তবু

একটি ক্ষনের ভিতরে অপর ক্ষনের অনুভব রয়ে যায়

ইহাই জীবন ও তাহার সকল যাপন

একটি মুহুর্তের ভিতর

আর একটি মুহুর্তের অনুভব রয়ে যায় চিরকাল

ক্ষনই অনন্ত

একটি ক্ষনের দৃষ্টিপাত

তোমাকে চিনিয়ে দিতে পারে তোমার দেশ

ও তাহার সকল ভূমি

ইহাই অনন্ত ও শূন্যতা

আকাশ যে ভাবে বাধার অনুপস্থিতিমাত্র নয়

আকাশ ধারক

সেইহেতু

সকল মৃত্তিকা আকাশেই স্থিত হয়

বায়ু আকাশেই স্থিত হয়

সকল অর্থ আকাশেই স্থিত হয়

এই আকাশই স্মৃতি যা সংহিতা ও বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে

অঙ্কুর প্রকট হলে -- বীজ ধংস হলেও

এই আকাশের কারনেই রয়ে যায়

আসলে যা তত্ত্ব

তা অনপেক্ষভাবে সৎ নয়

অসৎ নয়

সৎ ও অসৎ নয়

সৎ অথবা অসৎ-ও নয়

তা আত্ম

অনাত্ম

আত্ম ও অনাত্ম,

আত্ম অথবা অনাত্মও নয়

প্রকৃত তত্ত্ব এ সকলের অতিবর্তী বলেই

তাহা অদ্বৈত

ও তাহা উপলদ্ধিই শূন্যতা উপলদ্ধি হয়ে থাকে

চরম প্রশ্নগুলির উত্তর সেইহেতু নৈঃশব্দই

কেননা নৈঃশব্দই সাক্ষী

সত্য এইভাবে কোন চরম কোটির বিষয় হয় না কখনো

কবিতাই প্রসঙ্গ হয়

উপায় হয় একমাত্র

এহেন উপলদ্ধির

কবিতাই সেই দ্বন্দ্বিক পদ্ধতি যা এই শূন্যতা প্রতিপাদন করে

আর অদ্বয় পরমার্থের উপলদ্ধি

সম্ভব হয়

এই কবিতা হেতুই উন্মোচিত হয়

আমাদের সকল বিচার

প্রমান ও অপ্রমান

এক স্ব-আরোপিত সংবৃতিমাত্র

যেখানে আমাদের যুক্তিই বিচারক ও অপরাধী -- দু-ই হয়ে থাকে

অর্থাৎ বিচারক-অপরাধী

অস্তি-নাস্তি

নিত্য-অনিত্য -- এ সকল শব্দের

সফল ব্যবহার জগতে হয়না

কেননা একে অপরের সাপেক্ষেই উহারা অর্থপূর্ন হয়

কিন্তু পরম তত্ত্ব এভাবে নির্ধারিত হয়না

জগতের সকলই এইভাবে দুটি চরম অন্তে বিভক্ত হয়না কখনো

সকলই আলো ও অন্ধকারমাত্র নয়

সকলই শব্দ ও নৈঃশব্দমাত্র নয়

ইহাই শূন্যতা

যা সাক্ষাৎ ধ্যানের বিষয়ই হয় থাকে

আমাদের ধ্যান সমস্তই সম্যকরূপে উপলদ্ধি করতে পারে

কিন্তু নিজেকে পারেনা -- ইহাই শূন্যতা

যেমন অসিধারা সকল বস্তুই ছেদন করতে পারে

শুধু নিজেকে পারে না

তবু ঘট চিন্তা করলে যেভাবে মৃত্তিকাও চিন্তিত হয়ে থাকে

মন চিন্তা করলে সকলই চিন্তিত হয়ে থাকে

অসিধারা চিন্তা করলে -- করুনাও

এভাবেই অগ্নিতে মনি ও মনিতে অগ্নি চিন্তিত হয়ে থাকে

আর এই মননের ভিতরে

তাহারাই হয়ে ওঠে প্রকৃত অতিমানব

ক্ষীপ্র বাঘিনী যেভাবে তুলে নেয় শাবক তার দাঁতে

যা কঠোর হয়না কখনো ক্ষতচিহ্নের মতো

আলগাও হয়না কখনো সে দন্তবেষ্টনী

শাবকটির ভূপতনের মতো

যাহারা তুলে নেয়

সমূহ দর্শনগুলিকে ও প্রতিপালন করে সেইভাবে

অর্থাৎ প্রতিটি ভেদ ও অভেদ সর্প ও তাহার কুন্ডলীর ন্যায়

অশ্ব যেমন লোম সকল কম্পিত করে শ্রমাদি দূর করে

স্বরচিত সকল আন্দোলন ও জটিলতা

সকল বিভ্রম মুক্ত করে

সকল মহাভয় হতে পরিত্রান করে আমাদের

জ্ঞানের ভিতরে থাকে

একটি জেগে থাকা

একটি স্বপ্ন

একটি স্বপ্নহীন সুপ্তি

আর একটি চতুর্থ অবস্থা যাকে তূরীয় বলা যেতে পারে

প্রতিটি জাগ্রত অবস্থাই প্রতিষ্ঠিত হতে চায়

কোন না কোন স্বপ্নের কাছে

যার ভিতরে মুছে যায় তাহার শরীর

শুধু চৈতন্য থাকে

প্রতিটি স্বপ্নই আবার পৌঁছাতে চায়

একটি গভীর সুপ্তির ভিতরে

যাহার ভিতরে স্বপ্ন আর স্বপ্ন থাকে না

সকল শরীর আর চৈতন্যের বোধও -- থাকে না

সকল দুঃখ ও বেদনাগুলি

থাকে না সেখানে

যখন ফিরে আসি পুনরায়

জাগ্রত অবস্থার কাছে

বলি -- কিছুই জানি না

শুধু জানি এ ঘুম আনন্দময়

এ শূন্যতা

যাহার ভিতরে

ইন্দ্রিয় থাকে না

মন থাকে না

বুদ্ধি থাকে না

অনুভব থাকে না

জন্ম থাকে না

মৃত্যু থাকে না

আত্মা থাকে না

অনাত্মাও -- থাকে না

ইহাদের অতীত কোন তূরীয় অবস্থা শুধু, আনন্দময়, থাকে

আনন্দময়, সেইহেতু, হয়ে থাকি সকলেই

এই আনন্দের কারনেই কোন অন্ন আমাদের কাছে অনন্ন হয় না

এই আনন্দহেতুই একটি আকাশ বহন করে সমূহ ঘাসেদের

একটি ঘাসের কোমল অগ্রভাগেও বাহিত হয় সমুদয় আকাশ

এই আনন্দহেতুই উহারা কেউ একে অপরের চেয়ে অধিক পূর্ণ নয়

সকলই আনন্দময় -- পৌরুষ,নারীত্ব,শৈশব,বার্দ্ধক্য -- সকলই আনন্দময়

আনন্দ -- শ্রমিকের নির্মানে,ভবঘুরের পদচারনায়,অরন্যের নৈঃশব্দেও

আনন্দ -- মাটির গন্ধে,মোটর বাহনে,অগ্ন্যুৎপাদনে,অগ্নিনির্বানেও

আনন্দ -- সন্তান উৎপাদনে,পশুবলিতেও,বিদেশ পরিভ্রমনে,স্বদেশ প্রত্যাবর্তনেও

আনন্দ -- পাখির ডাকে,কলের গানেও,শল্যচিকিৎসা যন্ত্রে,হারপুনেও

আনন্দ -- মুক্ত সমুদ্র ভ্রমনে,উপনিবেশ স্থাপনে,বিমান উড়ানে,ক্ষেপনাস্ত্র উড়ানেও

আনন্দ -- শত্রুর মৃতদেহ গননে,আত্মহননেও,উনুনে অগ্নিসংযোগে,চিতাতেও

আনন্দ -- রক্তপাতে,পুন্যস্নানেও,বস্তুবাদে,আধ্যাত্মিকতাতেও

আনন্দ -- ঐক্যে,প্রতিবাদে,কাব্যমন্ডনে,কাব্যখন্ডনেও

এই আনন্দই পূর্নত্ব

অর্থাৎ এই জগতের সকলই পূর্ন

এই পূর্নের পূর্নত্ব গ্রহন করলে পূর্নমাত্রই অবশিষ্ট থাকে

এই পূর্নতাহেতু সকল প্রচেষ্টাই পরম বিভ্রম

যা তবু আনন্দময় হয়ে থাকে আমাদের কাছে

ইহাই শূন্যতা

অর্থাৎ সূর্য অস্ত গেছে -- একথা বললে

যেমন ব্যভিচারীর মনে হয় অভিসারের সময় হয়েছে

বেদজ্ঞের মনে হয় সদাচরনের সময় হয়েছে

এবং চোরের মনে হয় পরস্ব হরনের সময় হয়েছে

নারীর একই মৃতদেহে যেমন

কামুক পরিব্রাজক ও কুকুরের তিনভাবে বিকল্প বুদ্ধি জন্মায়

যে কোন মন্ত্র

যে কোন সূত্র

যে কোন বর্ননা সেভাবে

তিনটি বিকল্পই হয়ে থাকে

অতএব মধ্যপন্থাও অবলম্বন করা যায়

মধ্যপন্থাই চিরন্তন

উহা আমাদের বোধগম্যতার পরিসর কোথায় থেমে আছে

তা দেখিয়ে দেয়

মধ্যপন্থাই সর্বোচ্চ সত্য

মধ্যপন্থা যে জানে

সে-ই পৌঁছায় একদিন

কোন তীরে না ঠেকে

প্রকৃত মোহনায়

এই মধ্যপন্থাহেতুই সিদ্ধ হয়

যা কিছু বিশুদ্ধ তা নির্দিষ্ট হয়না কখনো

আর এইহেতু

আমি ভাবি সেই দিনটির কথা -- বাক্যটি উচ্চারনে টের পেয়ে যাই

এখানে সেই -- শব্দটি

শূন্যবীজমাত্র

ইহাই জ্ঞান

অজ্ঞান জ্ঞান থেকে পৃথক কিছু নয়

উহা জ্ঞানেরই শরীরমাত্র

আসলে সামগ্রিক দর্শন ব্যতিরেকে কোথাও কোন অরন্য থাকেনা

অর্থাৎ প্রকৃত প্রস্তাবে যদিও ক্ষুদ্রত্ব কোথাও নেই

ক্ষুদ্রত্বের ধারনা তবু সকল ধ্যানের প্রারম্ভে প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে

খড়কুটোর আবর্তনই আকাশের ধারনা নির্মান করে থাকে

সকল চিন্তার মুদ্রাই নির্দেশ করে তাহাদের অতীত প্রজ্ঞাকে

প্রজ্ঞা

যাহা সকল ধারনা শূন্য

তাহাই একমাত্র দূর করে থাকে অবিদ্যাকে

আর এই প্রজ্ঞা

শুধুমাত্র নৈঃশব্দের ভাষাতেই প্রকাশ্য ও স্বাধীনতার ভিতরে অনুভূত

স্বাধীনতা আর কিছু নয় বেদনা থেকে মুক্তি ছাড়া

যদিও প্রতিটি অসুস্থতারই এক নিজস্ব সৌন্দর্য আছে

প্রতিটি মৃতদেহই

ধীরে ধীরে নিজেকে খোলে প্রস্ফুটিত ফুলের বিপরীত মুদ্রায়

আর অন্যতর রহস্য খোলে ঈশ্বরের বাগানের

আসলে প্রকৃতির অনুসারী হলে ত্যাগ, ভোগ এবং মুক্তি­ -- সকলই ঘটে

আসলে যথেষ্ট মুক্ত হতে না পারলে ভোগ সম্ভব হয়না কখনো

বরং ভোগ্য হতে হয় ভোগেরই

বিষ যা সততই হননশীল, প্রকৃত ব্যবহারে, জীবনদায়ীও হয়

শরীরের প্রকৃত ব্যবহারে শরীরই হয়ে ওঠে এমতো মন্ত্র--

আমি শিব

আমার শরীরই সতী

আমি শব

আমার শরীরই মহাকালীর উল্লাস

ফলতঃ আমি নাদ

আমিই বিন্দু

আমিই সে

অর্থাৎ আমি অহংকার হই না কখনো

আসলে একটি প্রকৃত আলিঙ্গনই সহস্র পাপড়ি বিশিষ্ট আগুন

ও তার সকল মধু হয়ে থাকে

যার সাথে প্রকৃত খেলায় আমাদের বাঁধনগুলি থাকে না কখনো

পুড়ে যায়

শরীরই সংসার ও নির্বান

এমন কোন শরীর নেই যা আনন্দের ধারক নয়

এমন কোন আনন্দ নেই যা শরীরময় নয়

দেখো,শরীরই বিনত হয়, পরিনত মৃতদেহ হয়

কুকুরেরা আসে

উহা ভক্ষনের তরে সমূহ লড়াই চলে একে অপরের সাথে

আর মৃতদেহ উঠে আসে আরবার

শিশুর করতালি ও হাস্যে চেয়ে দেখে সমুদয় কুকুরের খেলা

যেভাবে শরীরেই স্থিত হয় যা কিছু অতীত শরীরের

মাটিতেই স্থিত হয় সমূহ আকাশ

ভূমিস্পর্শ মুদ্রায় স্পর্শ করা যেতে পারে ধর্মমেঘ

যার দিকে প্রথম পদক্ষেপটি প্রমুদিত, দ্বিতীয়টি বিমলা,

তৃতীয়টি প্রভাকরি, চতুর্থটি অগ্নিময়, পঞ্চমটি বাসনাবিজয়ী

ষষ্ঠটি অভিমুখী, সপ্তমটি অতিবিস্তৃত

অষ্টমটি অচল, নবমটি সাধুমতি হয়ে থাকে

অর্থাৎ ধর্মমেঘ এইভাবে দশম ভূমিস্পর্শমুদ্রাটি ছাড়া কিছু নয়

যা শূন্য-অতিশূন্য-মহাশূন্য ও সর্বশূন্য অর্থাৎ

যা আনন্দ-পরমানন্দ-বিরামানন্দ ও সহজানন্দ

চাঁদের ষোলটি মুদ্রার ভিতরে

প্রথম পাঁচটি আনন্দ

পরের পাঁচটি পরমানন্দ

পনেরোতম মুদ্রাটি পর্যন্ত বিরামানন্দ তারপর

এবং ষোলতম মুদ্রাটি সহজানন্দ অর্থাৎ

মহাসুখ হয়ে থাকে

এই মহাসুখের ভিতরে

আমার হৃদয়ই উহার গুহা

ও আমার মেরুদন্ডই তাহার সুমেরু পর্বত বলে

অনুভূত হয়ে থাকে

প্রতিটি অনুভবই আমার ছায়া

প্রতিটি অনুভবই আমার প্রকৃত স্মৃতি

যোগীর কাছে অনুভবই যোগিনী

সন্ন্যাসীর কাছে সন্ন্যাসিনী

কবির কাছে তার কাব্য

যেভাবে বিষের দ্বারা বিষ যন্ত্রনার উপসম ঘটে

কাঁটার সাহায্যেই কাঁটা তোলা যায়

মন্ত্রের সাহায্যেই মন্ত্রকে অতিক্রম করা যায়

আবেগের ভিতর দিয়েই আবেগকে

অনুভবের ভিতর দিয়েই অনুভবকে

ও এই জগৎকে আরো বেশি জাগতিক করে তোলার ভিতর দিয়েই

অতিক্রম করা যায়

সমস্ত অস্তিত্ত্ব -- অতিক্রম করা যায়

রূপ? ইহা দর্শনের দ্বারাই বিকৃত হয়

রস? ইহা রসনার দ্বারাই বিকৃত হয়

স্পর্শ? ইহা ত্বকের দ্বারাই বিকৃত হয়

গন্ধ? ইহা ঘ্রানের দ্বারাই বিকৃত হয়

আত্মা? আত্মার ধারনার দ্বারাই বিকৃত হয়

আমি? ইহা জ্ঞানের দ্বারাই বিকৃত হয়

মন্ত্রের প্রকৃত কোন অর্থ থাকে না কখনো

প্রকৃত মন্ত্র সেইহেতু মুখে উচ্চারিত ও কর্ণে শ্রুত হয় না

মনের দ্বারাই এই মন্ত্র উচ্চারিত হয়

হৃদয়ের দ্বারাই উহা শ্রুত হয়

মন্ত্রের এহেন অর্থহীনতার সতত শ্রবনই

আমাদের মুক্ত করে আমাদের বাসনাগুলি থেকে

প্রস্তুত করে তোলে আমাদের

মহাসুখের জন্যে

এই শ্রবনের ভিতরেই সব চিরপ্রস্ফুটিত

শ্রবন হতেই পৃথিবী ও আকাশ

শ্রবনই দূঃখের নিরোধ

শ্রবনই অন্ধের পথ

শ্রবনের ভিতরেই অসীম সমুদ্রেরা সব হয়ে ওঠে দুহাতের অঞ্জলি

এই শ্রবনই সন্তানহীনা নারীর সন্তান, পঙ্গুর হস্তপদ

পুস্পপত্রহীন বৃক্ষের শোভা, জলহীন পুস্করিনীর পূর্ণতা

রূপহীন নারীর রূপ, বীর্যহীনের সৃষ্টিশীলতা

বিগ্রহহীন মন্দিরের পবিত্রতা, মন্দিরহীন ঈশ্বরের শ্রদ্ধা

ডানাহীন মৌমাছির উড়ান, মৃতবীজের ডানা

প্রদীপহীন শিখা ও শিখাহীন আরতিপ্রদীপ

এই শ্রবনই প্রজ্ঞা

যা আমাদের মাতা

কেননা ইহাই বিশ্বপ্রসবিনী

যা আমাদের ভগীনি

কেননা ইহাই পরম ও আপাত আনন্দের সীমারেখা হয়ে থাকে

যা আমাদের ধোপানী

কেননা ইহাই পরম আনন্দের ভিতর আমাদের ধৌত-শুদ্ধ করে থাকে

যা আমাদের নর্তকী

কেননা ইহাকে বর্ননার কোন ভাষাই যথেষ্ট সুস্থির হয়না কখনো

যা আমাদের ডোম্বি

কেননা ইহা আমাদের বোধ ও অভিজ্ঞতার বাইরে রয়ে যায় চিরকাল

অতএব স্থির হও,দেখো --

একটি শূন্য বিন্দুর ভিতরে সমবেত সকল ঈশ্বর

এহেন স্থিরতা পরিনত হলে ঐ বিন্দু বিস্ফারিত হয়

ও ঈশ্বরমন্ডলী ধাবিত হয় সকল জীবের দিকে

সকল জীব এভাবেই প্রাপ্ত হয় সকল ঈশ্বর

প্রতি দেহ প্রতি দেবতা

এহেন স্থিরতার ভিতরে দৃশ্য প্রসারিত করো আরো

দেখো, দেবতারা ফিরে আসেন

ঐ বিন্দুতে আবার

দেবতামন্ডল এভাবেই কেন্দ্রীভূত ও বিস্ফারিত হন বারবার

অনুভব করো

এই দৃশ্য উপভোগই ধ্যান

তাহার সকল আচরন

ও সকল অন্তর্দৃষ্টির উন্মুক্তি হয়ে থাকে

অনুভব করো

আমরা সকলেই বুদ্ধ

সকলেই ভিক্ষু

মাতৃগর্ভের দশমাসই আমাদের দশভূমির সাধনা ও অতিক্রমন

ক্ষুধার ধ্বনিই আমাদের বীজমন্ত্র

যা আমাদের সকল নির্বানের উৎসারক হয়ে থাকে

অতএব

মুক্ত হও যে কোন প্রচেষ্টা হতে

উহা উপমার ব্যবহারের মতো হয়ে থাকে চিরকাল

যতটুকু সত্য উহা প্রকাশিত করে

আবরিত করে তার বহুগুন

দেখো, এ জগতের সকলই আত্ম-পূর্ণ

অতএব দৃষ্টিশূন্য হও

পূর্ণতার যে কোন সাধনাই এই দৃষ্টিশূন্যতার অনুসারী হয়ে থাকে

কোথাও কোন মল নেই, মুত্র নেই, শত্রু নেই, মিত্র নেই

সুস্থতা নেই, অসুস্থাও নেই, মোহ নেই, মোহমুক্তিও নেই সেইহেতু

ইহাই আধ্যাত্মিক,আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক শান্তি

যা অদ্বয় অর্থাৎ শূন্য হয়ে থাকে

এই শান্তির ভিতরে অনুভব করো

আমাদের প্রতিটি ভাবনা ভাবনাহীনতারই হয়ে থাকে

আসলে কোন কিছু জেনে ফেলাই

তা নিয়ে ভাবনার পরিসমাপ্তি

কাউকে জেনে ফেলাই তাকে নিয়ে ভাবনার পরিসমাপ্তি

আগুনকে জেনে গেলে আগুন নিয়ে ভাবনা থাকেনা কোথাও

তখন সকলই অগ্নিময় হয় -- ইহাই শূন্যতা

আকাঙ্খাকে জেনে গেলে আকাঙ্খা নিয়ে ভাবনা থাকেনা কোথাও

তখন সকলই আকাঙ্খাময় হয় -- ইহাই শূন্যতা

জয়ীকে জেনে গেলে জয় নিয়ে ভাবনা থাকে না কোথাও

তখন সকলই জয় হয় -- ইহাই শূন্যতা

আকাশকে জেনে গেলে আকাশ থাকে না কোথাও

তখন সকলই আকাশ হয় -- ইহাই শূন্যতা

এই শূন্যতার ভিতরেই উদিত হয়

এইসব আকাশ-জয়-আকাঙ্খা-আগুন

কেননা উহারা তোমাকে এমতো কবিতার কাছে নিয়ে যাবে--

আমরা যেন একে অপরকে বিদ্বেষ না করি

আসলে তোমার নিজস্ব দর্শনটি তৈরি করাই কবিতার কাজ

কেননা উহাই তোমাকে এই শূন্যতার দিকে নিয়ে যাবে

যেভাবে আমরা আলো জ্বালাই -- আলোকে খোঁজবার জন্যে নয়

কবিতাও প্রজ্জ্বলিত হয় সেইভাবে

এই শূন্যতাকে উদযাপন করবার জন্যেই

অতএব স্থিত হও

আকাশের কাছে

দেখো

কেমন ঘটে যাচ্ছে সূর্যদয়,সূর্যাস্তও

তোমার কোনরকম কর্মচঞ্চলতা ছাড়াই

ভাবো

পৃথিবীর আবর্তনের সাপেক্ষেই এইসব উদয়-অস্ত অস্তিত্বশীল

এইসব আবর্তনের ভিতরে আবর্তনশীল তুমিও

অথচ এইসব আবর্তনের অতীত সব আকাঙ্খা

আশ্চর্য সব ডানার জন্ম দেয় তোমার ভিতরে

আশ্চর্য সব তীর্থযাত্রার

নৈঃশব্দের ভিতরে,প্রকৃত স্থিরতার ভিতরে

বোঝা যায়

আমাদের ভিতর হতে উড়ে যাচ্ছে অসংখ্য আশ্চর্য হাঁসেরা সব

অনুভব করো

তোমার শ্বাস প্রশ্বাসের ধ্বনি এইসব হাঁসেদের ডানার চঞ্চলতামাত্র

শরীরের মুদ্রা এইসব হাঁসেদের উড়ে যাবার ভঙ্গীমা ছাড়া কিছু নয়

অনুভব করো

এইসব হাঁসেদের পালকগুলি মায়াময় তুলে

গাছেদের পাতাগুলি আন্দোলিত করে

কে অন্বেষনরত থাকে?

তোমারই প্রানবায়ু

তুমি পূর্ণ

সেইহেতু তোমার যাবতীয় সুস্থিরতা

ও অস্থিরতা যথাযথভাবে আছে

তোমার যাবতীয় পাপ ও পূন্য

শোন,তৃপ্ত হয়ে উঠছে পাখিদের গান

উহারা ধীরে ধীরে তুলে নিচ্ছে তোমার সকল নিঃসঙ্গতা

আহার্য হয়ে উঠছে তোমার সকল ক্লান্তি সে গানের কাছে

এই ব্যপ্ত তৃপ্তির ভিতরে

ধীরে অতিধীরে বুঝে নাও

ভাবো, এইসব রহস্যকথা

আসলে যা কিছু ভাবা যায়, যা কিছু করা যায়

তাহা ভাবা ও করাই -- কর্তব্য

যা কিছু ভাবা যায়না,করা যায় না

তাহা না ভাবা ও না করাই -- কর্তব্য

প্রকৃত অর্থে আমরা কেউ জ্ঞানী ও মূর্খ

পবিত্র ও অপবিত্র হই না

যে যার কর্তব্যটুকু সম্পাদন করি মাত্র

আসলে যখন অজ্ঞানতা থাকে না, জ্ঞানও থাকে না

আর কর্তব্য

এই জ্ঞান ও অজ্ঞানকে অতিক্রম করা মাত্র

আমাদের কোন শরীর নেই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছাড়া

যা কিনা আমাদেরই শরীর

আমাদের কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেই শরীর ছাড়া

যা কিনা আমাদেরই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ

অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছাড়া শরীর হয়না

শরীর ছাড়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গও হয়না কখনো

তবু আমার শরীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গমাত্র -- বলি না

ইহা যেন অন্য কিছু -- তা-ও বলি না কখনো

অনুভব,আবেগ,মন,দর্শন -- এসব শরীরের অর্থাৎ শূন্যতারই মতো

তুমি চাঁদের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করো

তোমার দর্শন অন্ধই হয়ে থাকে যতক্ষন না চাঁদ ওঠে

চাঁদ ডুবে গেলে আবার তোমার অঙ্গুলি নির্দেশ অন্ধই থেকে যায়

আসলে আমাদের প্রকৃত দর্শনটি এই --

কোথাও কোন চাঁদ নেই,আঙ্গুলও

দর্শনের মুক্তিই আকাশ

সকল আড়ালের অনুপস্থিতিই ইহাকে বর্ননা করে

আড়ালের অনুপস্থিতিই আকাশ নয়

আড়াল আকাশ নয়

আড়ালের বর্ননা আকাশ নয়

আড়ালের অনুপস্থিতির বর্ননাও আকাশ নয়

আবার আড়াল, আড়ালের বর্ননা, আড়ালের অনুপস্থিতির বর্ননা ছাড়াও

আকাশের বর্ননা সম্ভব হয়না কখনো

যেহেতু সকলেই এইভাবে একে অপরকে পেয়ে উৎপন্ন হয়

আমি আছি কি নেই দেখতে গিয়ে আমরা নিজেকে দেখতে ব্যর্থ হই বারবার

আসলে আমাদের আত্মপরিচয় থাকেনা

পরিচয়হীনতাও

আসলে আত্মার ধারনা আমাদের মুক্তি দেয় না কখনো

তা শুধু আমাদের বদ্ধতার পরিসরকেই ব্যপ্ত করে

পরমাত্মার ধারনা

একটি ছোট স্বার্থপরতাকে একটু বড় করে মাত্র

শূন্যতাই সেই প্রকৃত মুক্তি যাহার ভিতরে

সকলেই ধ্বংসের অতীত হয়ে থাকি

জন্মের অতীত, মৃত্যুর অতীত

অর্থাৎ অনন্ত হয়ে থাকি

শূন্যতার ভিতরে দন্দ্ব -- দন্দ্ব হয়না

শূন্যতার ভিতরে প্রতিবাদ -- প্রতিবাদ হয়না কখনো

শূন্যতায় বিশ্বাস -- বিশ্বাস হয়না কখনো

তবু শূন্যতায় বিশ্বাস --অর্থাৎ শূন্যতা আছে

কোন কিছু আছে -- অর্থাৎ শূন্যতা আছে

কোন কিছু নেই -- ঘটে না কখনো অর্থাৎ শূন্যতাহীনতা ঘটে না কখনো

একে অপরের সাপেক্ষে মায়া হয়ে রয়ে যাই আমরা সকলেই

আর এই মায়াহেতু একে অপরের কাছে এই মন্ত্র উচ্চারন -- রয়ে যায়

অহম অন্নম অহম অন্নম অহম অন্নম

আমি শূন্য আমি শূন্য আমি শূন্য

অহম অন্নম আমি শূন্য অহম অন্নম আমি শূন্য অহম.........

মেঘের অন্ধকার আছে।বৃষ্টিও।

বসে আছ।একা।একবুক অন্ধকার।

কাঁদবে না ?

বৃষ্টি পড়লেই মনে হয়

চলে যেতে হবে...

মাটি হয়ে ধুয়ে ধুয়ে

আমাকেও চলে যেতে হবে কোথাও...

যে শিশুটি এইমাত্র জন্ম নিলো সে জানে না

এই আকাশের সাথে মাটির সাথে ওর পার্থক্য কি

তোমার শরীরের সথে ওর শরীরের

ওকে খুশি করার জন্যে এই যে তোমরা গান বাঁধছ

প্রার্থনা করছ ওর ভাল থাকা লক্ষ্য করে

ও জানে না -- বোঝেনি এখনো

ওর জন্মের আয়োজনে নেচেছিল ভাষা

উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল মানুষের মুখ

শিশুটি জিভে তুলে নিয়েছ একটিমাত্র ধ্বনি

শিশুটি মুখে তুলে নিয়েছে মাটি ছাই জল

ও স্পর্শ করছে তোমাদের শরীর

আর বলে চলেছে -- মা , মা...

ওর এই উচ্চারনের কাছে সব কিছু কেমন নির্বাক

তোমরাও নতুন হয়ে উঠছ

খুশী হয়ে উঠছ এই পরিচয়ের কাছে

এত যে খেলা ছড়িয়ে যাচ্ছে তোমার সমস্ত ঘর জুড়ে

তা তোমার কতটুকু

অথচ সাজিয়েছিলে কত খেলার উপকরণ

সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে খেলতে চেয়েছ ওর সাথে

পারনি। অবাক হয়েছি।জানতে চেয়েছ

কী অত খেলা ওর

বোঝনি কখনো

তোমার কল্পনার চেয়েও দূরাগত নক্ষত্রের নীল

খেলে বেড়ায় ওর সাথে

তোমার সন্তান হেঁটে যাচ্ছে রান্নাঘরের দিকে

তোমার সন্তান হেঁটে যাচ্ছে ঠাকুরঘরের দিকে

স্নানঘরের দিকে হেঁটে যাচ্ছে ও

ঘরগুলির ব্যবহারের কাছে ওর বিস্ময়

ঘরগুলির ব্যবহারের কাছে ওর সরলতা রেখে

ও ফিরে আসছে

ঘুরে ঘুরে আসছে ও শুধু তোমারই কাছে

আনমনে খেলছে ও

কী এক অনুপম সুরে তন্ময়

গান গাইছে -- তালে তালে দুলে উঠছে ও

এইসুর আর তালের কাছে

পরম শব্দের মত ঘন হয়ে এসেছে আকাশ

তুমি দেখছো আর প্রার্থনা করছো -- আমাকেও সঙ্গী কর

হে আকাশ হে পরম হে আমার সন্তান

কখনো তোমাকে প্রমান করতে পারিনি

তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে যারা বলেছিলো আমরা তোমারই সন্তান

তারা আজ মৃত।

শুধু বিশ্বাস থেকেই একটি সফল আলিঙ্গন সম্ভব বলে

আজও দুহাত বাড়িয়ে রয়েছি।

সমস্ত হারিয়ে ফেলবার মধ্যে এক পাওয়া আছে

সব ফেলে আসবার মধ্যে কিছু নিয়ে আসা আছে

ঠিক বোঝানো যায় না

এই যে সারা আকাশময় ছড়িয়ে আছে তোমার চোখের জল

আর আমরা বাড়িয়ে দিচ্ছি আমাদের হাত

এক প্রাপ্তি ঘটে যাচ্ছে কোথাও

ঠিক বোঝানো যাচ্ছে না

১০

একটি পতঙ্গ কেঁপে উঠছে শিখার কাছে

একটি পাখী কেঁপে উঠছে সুরের কাছে

তুমি দেখছো।লক্ষ্য করছো সব

আর হেঁটে যাচ্ছ।

তোমার পথের দিকে চেয়ে আমরা প্রার্থনা করছি

আমাদের প্রার্থনার ভিতরে কেঁপে উঠছে একটি পতঙ্গ একটি পাখী