ফায়দার কথা চিন্তা করলে তোমার উচিত, বুদ্ধিবৃত্তি ছাইড়া ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টার, রবীন্দ্র সরোবর আর ছায়ানটে গান শুইনা বেড়ানো: মাহবুব মোর্শেদের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: May 14, 2012 10:30:50 AM

প্রকাশিত উপন্যাস: ফেস বাই ফেস, প্রকাশিত গল্পের বই: ব্যক্তিগত বসন্তদিনে, দেহ

দুপুর মিত্র: আপনাকে জনপ্রিয় ধারার লেখক বললে আপনি ক্ষেপেন কেন?

মাহবুব মোর্শেদ: আমি তো কোয়ান্টাম মেথডের লোক। কোয়ান্টাম মেথডের লোকেরা ক্ষেপে না। তুমি কই আমারে ক্ষেপতে দেখলা? জনপ্রিয় ধারার লেখক হইতে পারা তো ভাল। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।

দু: জনপ্রিয় ধারার সাহিত্যের ক্ষতি কোথায়?

মা: জনপ্রিয় ধারার সাহিত্যে কোনো ক্ষতির ব্যাপার আমি দেখি না।

দু: বাংলাদেশে উপন্যাস চর্চার পজিটিভ ও নেগেটিভ দিক কোনগুলো?

মা: উপন্যাস চর্চার পজিটিভ দিক হইলো এইদেশে সংখ্যায় মেলা উপন্যাস প্রকাশিত হয়। আর নেগেটিভ দিক হইলো, পড়তে গেলে দেখা যায় অধিকাংশ উপন্যাসই অজনপ্রিয় মানে অপাঠ্য।

দু: বাংলাদেশে উপন্যাস চর্চার কোন ধারাটাকে আপনি ফলো করার চেষ্ট করেন বা কাউকে কোন ধারার উপন্যাস লিখতে সাজেশন দেন এবং কেন?

মা: আমি মূলত বিদেশি উপন্যাস ফলো করে লিখি। লোকজনরে সাজেশন দিতে পারি না।

দু: আপনার সমসাময়িক কাদের উপন্যাসকে আপনি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন এবং কেন?

মা: আমার সমসাময়িকদের মধ্যে তলস্তয়, দস্তয়েভস্কি, বালজাক, মার্কেস, কুন্ডেরা, স্তাঁদাল, কার্পেন্তিয়ার, বঙ্কিম, কমলকুমার, অমিয়ভূষণ, দেবেশের লেখা আমার ভাল লাগে।

দু: পশ্চিমবাংলার উপন্যাস এবং বাংলাদেশের উপন্যাসের ফারাকটা কোথায় বা আদৌ ফারাক আছে কিনা ? এই জায়গা থেকে বাংলাদেশের উপন্যাস চর্চা কোন জায়গা থেকে পজিটিভ বা নেগেটিভ?

মা: বাংলাভাষার উপন্যাসগুলা মূলত কলকাতায় বইসা লেখা হইছে। সেই তুলনায় ঢাকায় উপন্যাস তেমন লেখা হয় নাই। ১৯৫০ সালের পর ঢাকায় উপন্যাস লেখা শুরু হইছে। তা সত্ত্বেও, এইখানে উপন্যাস লেখার উপায় নাই। উপন্যাস বলতে যে ব্যাপ্তি বুঝায় সেইটা লেখার বাতাবরণ কলকাতায় আছে, ঢাকায় এখনও নাই। আমি সাময়িক পত্রিকার অনুপস্থিতির কথা বলতেছি। বাংলাদেশের উপন্যাসের সঙ্গে কলকাতার উপন্যাসের পার্থক্য করার সময় এখনও আসে নাই।

দু: আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে কি আপনার বড় কোনও ঔপন্যাসিক মনে হয়? হলে কেন? না হলে কেন নয়?

মা: ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। ঔপন্যাসিকের চেয়ে উপন্যাস বড়। খোয়াবনামা ও চিলেকোঠার সেপাই অবশ্যই বড় কাজ। তবে, দুইটাই মার্কসীয় থিওরি তাড়িত, পলিটিক্যালি কারেক্ট। মার্কসবাদী থিওরিতে লুম্পেন প্রোলেতারিয়েতের যে ভূমিকা অথবা জোতদারদের যে ভূমিকা ইলিয়াস সেইভাবেই লিখছেন। সমস্ত মুগ্ধতা সত্ত্বেও পাঠক হিসাবে আমি অতিসম্প্রতি ইলিয়াসের উপর কিছুটা নাখোশ।

দু: উপন্যাস চর্চায় এখানে বিকল্প কোনও ধারা গড়ে উঠেছে কিনা, হলে সেটা কেমন, না হলে কেন নয়?

মা: বিকল্প জিনিশটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধাপ্পাবাজি। অনেক সময়, মেধাহীন লোকেরা কল্কে না পেয়ে বিকল্প সেজে বসে।

দু: বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় উপন্যাস বিশেষ কোনও ভূমিকা রাখতে পারছে বলে মনে করেন কি? ফরহাদ মজহারের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা আর সলিমুল্লাহ খানের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ফারাকটা কোন জায়গায়? এদেরকে কেন সবসময় আওয়ামীলীগের কাউন্টার বুদ্ধিহিসেবে গণ্য করা হয়? এতে এর ফায়দাটা কে নেয়?

মা: বুদ্ধিবৃত্তি চর্চায় উপন্যাসের ভূমিকা রাখা উচিত না।

ফরহাদ ভাই রেফারেন্স কম দেয়, সলিম ভাই বেশি দেয়।

গড়পড়তা মধ্যবিত্ত, সেকুলার, সুবিধাবাদী, সংস্কৃতিমনা, আপোষকামী চিন্তার প্রতিনিধি হিসাবে আওয়ামী লীগ এই দেশে একটা সংগঠিত শক্তি। এদেশের আর্ট-কালচার এদেরই দখলে। ফলে, বিদ্যমান আর্ট-কালচারের বিরুদ্ধে কথা না বললে এইখানে বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা শুরু করাই মুশকিল। ফলে, ফরহাদ ভাই সলিম ভাই কেন প্রফেসর রাজ্জাক থেকে আহমদ ছফা, আহমদ ছফা থেকে আজকের নিম বুদ্ধিজীবীটি পর্যন্ত আওয়ামী বিরোধিতা দিয়া শুরু করে। এইটা ভাল। ফায়দার কথা চিন্তা করলে তোমার উচিত, বুদ্ধিবৃত্তি ছাইড়া ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টার, রবীন্দ্র সরোবর আর ছায়ানটে গান শুইনা বেড়ানো।

দু: আপনি নিজিকে কি মার্কসবাদী বলে দাবি করেন? করলে কেন , না করলে কেন নয়?

মা: আমি মূলত চীনপন্থী। চীন এখন পুঁজিবাদের পথে, আমিও পুঁজিবাদের পথে।

দু: একজন তরুণ লেখকের উপন্যাস হিসেবে ফেস বাই ফেস অনেক জনপ্রিয় উপন্যাস হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

জনপ্রিয়তা সম্বন্ধে তোমার কোনো আইডিয়া নাই। ফেস বাই ফেস বিক্রি হইছে মোট ৬০০ কপি। এই দেশে ১২ কপি বিক্রি না হইলে জনপ্রিয় বলা হয় না। অতএব কীভাবে দেখার কিছু নাই।

দু: আমি উপন্যাস লিখতে চাইলে আমাকে কোন বিষয়ের প্রতি মনযোগী হতে বলবেন?

মা: পরামর্শ নিতে চাইলে কিছু খরচাপাতি আছে।