বইবাজারের প্রচলিত মলিন,দীনহীন চিত্রটার একধরনের বাহ্যিক পরিবর্তন ঘটছে : আহমেদুর রশীদ চৌধুরীর সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jun 19, 2014 5:49:09 PM

আহমেদুর রশীদ চৌধুরী, প্রকাশক,শুদ্ধস্বর।   

দুপুর মিত্র: প্রকাশক হিসেবে বাংলাদেশে কোন ধরনের বই ছাপায় আপনি বেশি গুরুত্ব দিতে চান?

আহমেদুর রশীদ চৌধুরী: প্রকাশক হিসাবে আমি রাজনীতি, অর্থনীতি এবং চিন্তার মিথস্ক্রিয়া সংক্রান্ত বই প্রকাশে (ছাপায় নয়) আগ্রহ বোধ করি এবং গুরুত্ব দিতে চাই। যদিও আমার এই আগ্রহ ও গুরুত্বের বাস্তবায়ন কমই ঘটে থাকে। কারণ একটাই পাণ্ডুলিপির অভাব।

দুপুর মিত্র: প্রতি বছর আপনি কতগুলো বই প্রকাশ করেন?

আহমেদুর রশীদ চৌধুরী: বছরওয়ারি বই প্রকাশের সংখ্যা নির্দিষ্ট নয় বা ছিলোনা এতদিন। তবে আগামীতে এটি একটি নির্দিষ্ট ছোট পরিমাণের কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি।

দুপুর মিত্র: আপনার মতে বাংলাদেশের বইয়ের বাজারের চিত্রটা কি? এটা কি পরিবর্তিত হচ্ছে? কিভাবে হচ্ছে?

আহমেদুর রশীদ চৌধুরী: বাংলাদেশে বইয়ের বাজার একাধারে সম্ভাবনাময় এবং নাজুক। আমরা যে ধরনের বই প্রকাশ করে থাকি, সে ধরনের বইয়ের একটা বাজার লুকানো আছে বলে আমার ধারনা। কিন্তু বিদ্যমান সংকুচিত বাজার আর বাজারজাতকরণের নতুন নতুন উপকরণ ব্যবহারের খরচ বইয়ের মূল্যের সাথে সংযোজিত করতে না পারার কারণে এই লুকিয়ে থাকার বাজার উন্মোচিত করা সম্ভব হচ্ছেনা। অন্যদিকে, জাকির নায়েকের নামে যে কোনো কিছু একটা নাকি লাখ কপির নিচে বেরই হয় না। বইয়ের বাজারের এটা হলো বাস্তব চিত্র।   

কিছু এক্সক্লুসিভ বইবিক্রয় কেন্দ্র চালুর মাধ্যমে বইবাজারের প্রচলিত মলিন,দীনহীন চিত্রটার একধরনের বাহ্যিক পরিবর্তন ঘটছে। এটি দেশের বড় বড় শহরগুলোতে বিস্তৃত হলে সৃজনশীল-মননশীল বই বিক্রি তথা পাঠক বাড়াতে সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করবে।

দুপুর মিত্র: বাংলাদেশে লাইব্রেরিগুলো থেকে বই কেনার হার কেমন? কেমন ধরনের বই তারা বেশি ক্রয় করেন?

আহমেদুর রশীদ চৌধুরী: সরকারি এবং বেসরকারি দুইধরনের লাইব্রেরি সাধারণত বই কিনে থাকে। এই কেনার হারে কখনোই ন্যজ্যতা থাকে না। এইসব কেনাকাটা খুব স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয় বলে মনে হয়না। আর তাদের কেনার জন্য নির্ধারিত বইয়ের ধরন সম্পর্কে আমি আসলেই এখন পর্যন্ত কোনো ধারনা অর্জন করতে পারিনি। অনেকদিন থেকেই শুনে আসছি, ‘জাতীয় গ্রন্থনীতি’ হচ্ছে।কিন্তু এটির ব্যাপারে কাউকে আমার সিরিয়াস মনে হয়না।

দুপুর মিত্র: বাইরের দেশের বই, বই প্রকাশের সংস্কৃতির সাথে বাংলাদেশের বই আর বই প্রকাশের সংস্কৃতিকে আপনি কিভাবে দেখেন?

আহমেদুর রশীদ চৌধুরী: বাইরের বই আর বইপ্রকাশের সংস্কৃতি সম্পর্কে আমি কতটুকুই বা জানি। তবে আমাদের দেশের বইপ্রকাশের সংস্কৃতি সবমিলিয়ে খুব একটা সংস্কৃতিবান নয়। বিশেষ করে একুশে বইমেলায় নির্বিচারে বই প্রকাশের হিড়িক কোনোভাবেই সুস্থ সংস্কৃতির লক্ষণ হতে পারেনা।

দুপুর মিত্র: সম্প্রতি প্রযুক্তি উন্নয়নের সাথে সাথে ইবুক রিডার বেড়ে যাচ্ছে। অনেক সাইট এখন ফ্রি ইবুক দিচ্ছে। ফ্রি ইবুকটাই এখন প্রধান সংস্কৃতি বাংলাদেশে। আপনি এটাকে কিভাবে দেখেন? বাইরে ইবুক প্রকাশনাতেও প্রকাশনি সংস্থাগুলো ইনভেস্ট করছে। এবং প্রচুর পরিমাণে ইবুক বিক্রি হচ্ছে। আপনি ও আপনার প্রকাশনা ইবুক নিয়ে কি ভাবছেন?

আহমেদুর রশীদ চৌধুরী: ইবুক প্রযুক্তি সময়ের প্রয়োজনে সামনে আসা প্রযুক্তি। ইপ্রযুক্তির বহুমাত্রিক সার্বজনিন ব্যবহারই বলে দেয়, পাঠের জন্য মানুষ সামনের দিনগুলোতে ইমাধ্যমকেই বেছে নিবে। আমি নিজেও এই মাধ্যমটির একজন ব্যবহারকারি এবং আগ্রহি। আমিও চাই, আমার প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত সব বইয়ের ইভার্সন থাকবে। কিন্তু অনলাইন পেমেন্টের সীমাবদ্ধতার কারণে আমার প্রতিষ্ঠান ইবুক বিক্রয় কার্যক্রম শুরু করতে পারছেনা। 

ফ্রি ইবুকের ব্যাপারে আমার মতামত হলো, যতক্ষণ একটি বইয়ের হার্ডভার্সন বাজারে থাকবে, ততক্ষণ এটির ইবুক ভার্সন ফ্রি বিলি করা উচিত নয়। আর ইবুক তৈরি, সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য যদি কোনো অর্থলগ্নি না হয় বা কোনো ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতার প্রয়োজন না থাকে তবে যে কোনো লেখক তাঁর বই ফ্রি বিলি করতেই পারেন।