মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় না থাকলে এসব নিয়ে সেন্সরে 'দলীয়-কসাইরা' দাও তুলে কাটতে চাইতেই পারে: আনোয়ার শাহাদাতের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jul 16, 2012 12:36:29 PM

প্রকাশিত বই: হেলে-চাষার জোয়াল বৃত্তান্ত, ক্যানভেসার গল্পকার

দুপুর মিত্র: গল্প লিখেন কেন?

আনোয়ার শাহাদাত: প্রশ্নটা গল্পকারকে গল্প বলবার সুযোগ করে দেয়। কেনোনা এই প্রশ্ন সেই অর্থে তেমন কোনও প্রশ্ন নয় যার যথাযথ কোনও উত্তর থাকতে পারে। আবার প্রশ্নও এই কারণে- হালকা করে গভীরতায় ফেলে দেয়া। গল্প লিখি কেন, আমি এর উত্তর এ ভাবে দেইঃ এক ধরনের অসুস্থতা এর পেছনের প্রধান কারণ। ভাঙিয়ে বলি। একজন ভুরুংগমারী, ভেদরগঞ্জ বা বরিশাল বা ভোলা সমিতি করছেন, সেই নিয়ে সবই করছেন, মারামারি, কান্নাকাটি, গলা-ধরাধরি, শত্রুতা-মিত্রতা; বক্তৃতা হচ্ছে, তালি হচ্ছে। আবার পেছনে যারা তালি দিল তারা বলছেন, কোনও বক্তৃতাই হয় নাই। ইত্যাদি।

একদল জেকের করছে, কী নানাবিধ লম্ফ-জম্ফ করেছেন, আর এক দল এ সবকে বলেছেন 'পাগলামি', ‘অসুস্থতা’। এরা আবার ভরত নট্যম দেখে ‘পাগলামি’ বলছেন; সেটা তাদের চোখে । একদল গল্প লিখছেন, দলের অন্যরা তা পড়ছেন, ভাল বলছেন, মন্দ বলছেন। কবিতার ক্ষেত্রেতো এই চেহার ভয়াভহ! উপরোক্ত দলগুলোর কাছে এসব পাগলামি। আমিও তা মনে করি কী না? করি। এ সব’এ এক ধরনের মানসিক পরিবর্তন হয় যেটাকে মনোবিজ্ঞানে অসুস্থতার পর্যায়ে ব্যাখ্যা দেয়া যায়। গভীরভাবে অনুসরণ করলে ঘটনা সত্য। এই যে আপনার আমার যোগাযোগ এটাও ওই ভাণ্ডারী-জেকের বা আঞ্চলিক সমিতি নিয়মেই হলও কিন্তু।

এই প্রশ্নের উত্তরে অনেক প্রথাগত 'ভারী-বুদ্ধিজীবী-মূলক' কিছু হতে পারত, সে আপনিও জানেন আমিও জানি। আবার আমরা এও জানি যে তার কোনও অর্থ হয় না। সে সব হোতো কেবলই আবেগই কথাবার্তা।

আসলে একজন কেন গল্প লেখে এর কোন উত্তর নেই। একজন কেন গল্প পড়ে বা জানতে ও শুনতে চায় সে রকমই এই বিষয়টা। তার কোনও সুনির্দষ্ট উত্তর নেই, থাকা উচিৎ নয়। তবে আমি জানি অনেকেই এসব করে থাকেন অন্য উদ্দেশ্যে! তাহলে আমি কি আলাদা? আমি করি কেন? সে প্রশ্ন আসতেই পারে। আমি কি গল্প খ্যাতির উদ্দেশ্যে লিখি না? উত্তর হবে- অবশ্যই। আবার, অবশ্যই না। আমার খ্যাতি হলে লাভ কী। লাভ হলও আমি খ্যাতি থেকে দূরে থাকতে পারবো। খ্যাতি থেকে দূরে? তাহলে আবার কেন? সেখানেই প্রশ্ন থেকে যায় আমি গল্প লিখি কেন? এইভাবে বলে আমি বিষয়টাকে অর্থহীন করে ফেলেছি। তার কারণ এই প্রশ্নের উত্তর নেই। থাকবার কথা নয়।

জানিনা, হচ্ছে এর আর একটি উত্তর!

দুপুর মিত্র: গল্প লিখতে আপনি কাদেরকে বেশি অনুসরণ করেন এবং কেন?

আনোয়ার শাহাদাত : এই যে, এই প্রশ্নের ভেতরেই একটা মর্ম থাকে যা খুবই অর্থপূর্ণ। কেউ গল্প লিখতে কাউকে অনুসরণ করেন! তবেই তো...। সে আর কী হতে পারে? অন্তত গল্প নয়। অনুকরণ। এটা নানা ভাবে বলা যায়। এ ভাবে বলি। আমি যখন সোনা দাদু'র সঙ্গে খালে ভাটার সময় মাছ ধরতে যেতাম তখন তার ধরা পদ্ধতিকে অনুসরণ করতাম, তার মত করে বেশী মাছ ধরবো বলে। তাতে আমি তেমন মাছ ধরতে পারতাম না। তিনি বলতেন। সোনা দাদু'র মতন না, তোমার মত করে ধরো, তাহলেই পারবা। যে কোনও শিল্প কর্মও তাই। স্বতন্ত্র হতে হয়। 'অনুসরণ' হলও অন্যের জ্ঞান ও অন্যের অভিজ্ঞতা। তা শেখার হতে পারে। নেওয়ার নয়। কতজনকে কতজন আমাদের চার পাশেই অনুসরণ করলো। তাতে কী হলও? গল্প-তো হয়নি। হয়তো উত্তম কিছু অনুকরণীয়' হয়েছে। সেটাই হয় অনুসরণ করলে। মৌলিক গল্প হবার কথা নয়।

সুতারং আমি কাউকেই অনুসরণ করিনা। কেন করিনা তার হয়তো আর উত্তর দেয়ার দরকার নেই।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের গল্প আপনার বাজে মনে হয় এবং কেন?

আনোয়ার শাহাদাত : এই প্রশ্ন অন্যের শিল্পকর্মকে ছোটো করে দেখে পরিকল্পিত ভাবে। অর্থাৎ প্রশ্নটি 'উস্কানীমুলক'। এক দল লোক থাকে যারা নিজের হওয়া না হওয়া'র চাইতে কার হলও না সে নিয়ে বেশী উদগ্রীব থাকে। আমি সেই ঘরের লোক নই। বরং আমি বলব সকলেরই হয়, তার তার মতন করে। আমি বিচারক নই। পাঠক, পাঠক বিচারক, তার লিখিত রায় দেয়ার অধিকার থাকলেও না দেয়ার যে অধিকার সেটা চর্চা করতেই আনন্দ পাই। কিন্তু আবার এও সত্য যে 'বাজে' গল্প হয়। কেন হয়। তা আমরা সবাই জানি। কেনোনা শিল্প কর্ম হিসাবে এর পেছনে যে মেধাটি দরকার সেটার অনুপস্থিতিই বাজে গল্প তৈরি হওয়ার প্রধান কারণ। আবার এইসব বাজে গল্প যদি না থাকতো তবে যা বাজে নয় তার বিভাজন কী ভাবে হোতো? তাই, বাজে গল্পের দরকার আছে! না হলে ভাল গল্প আলাদা করা যেতো কী ভাবে?

দুপুর মিত্র: আমরা প্রচুর পরিমাণ রাশিয়ার ফিকশন পড়ার পরও যাদু বাস্তবতার পৃথিবীতে গল্পকে নিয়ে গিয়েছি। এটা কেন?

আনোয়ার শাহাদাত : এই প্রশ্নের অনেক কিছুই আমার জানা নাই হয়তো। আমার নিজের পড়াশুনা এই প্রশ্নে যেভাবে চিহ্ন্যায়ন হয়েছে তার আওতাভুক্ত নয়। আমি তাহলে জানিনা যে আমাদের গল্প 'যাদু বাস্তবতার পৃথিবীতে' অধিক গিয়েছে। যদি তা হয় তবে দোষের করে আমি দেখতে রাজী নই। 'যাদু-বাস্তবতা, গল্প বয়ানের একটা কৌশল (ক্র্যাফট) মাত্র। লেখক মেধাবী ও দক্ষ না হলে এই পথ অবলম্বন আত্মঘাতীও। রাশান, ল্যাটিন কী ইওরোপীয়ান সে যে মাত্রারই হোক, শিল্প তো শিল্প’ই তার ঘরানা এখানে মুখ্য নয়। শিল্প মানই প্রধান।

আমি কিন্তু শহীদুল জহিরের ছাড়া কারও কিছু পড়ি নাই বা শুনিও নাই যে ওই ফরম্যাটে কেউ লিখেছেন। শহীদুল ঝহিরও ওই ফরম্যাটের মোক্ষম ব্যবাহার করতে পেরেছেন আমার তা মনে হয়নি। ওন্য ভাষায় গল্প বলার ও লেখকের বোধের ক্ষমতা থাকলে কোন ফরম্যাট তা কখনও বিষয় নয়। শহীদুরের ক্ষেত্রে সেটাই হয়। তার লেখার ক্ষমতা অনেক। যেমন আমার কাছে মনে হয়ছে তার সর্বশেষ উপন্যাস ‘মুখের পানে দেখি’তে আগের গ্রন্থ গুলোর চাইতে যাদু বাস্তবাতা’র মাত্রা বাড়ানো হয়েছে, দক্ষতাও বেশি। কিন্তু সেই কথা, লেখার ক্ষমতা থাকলে আরব্য রজনীয় ফরম্যাট কী গ্রীক বা মহাভারত ফরম্যাটেও ক্ষতি নেই। লেখার ক্ষমতা, গল্প বলাবার ক্ষমতাই সার।

দুপুর মিত্র: আমি গল্প লিখতে চাইলে আপনি কি করার পরামর্শ দিবেন এবং কেন?

আনোয়ার শাহাদাত : এই প্রশ্নটিও আমার জন্য নয় ধরে নিচ্ছি। এটা যারা মুরুব্বী ও ওই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বলে দাবী করে থাকেন তাদের জন্য। আমার সে রকম দাবী কক্ষনো নেই।

পরামর্শ হিসাবে নয়, আমি বলি, কী ভাবে আমি একজন গল্পকারকে দেখি। যতক্ষণে না একজন গল্পকার তার বর্ণিত গল্পের চরিত্রের জীবনের অংশ না হতে পারেন ততক্ষণে সেটা আর গল্প নয়। সেটা বাইরে থেকে দেখা একজনের বিলাসিতা। কৃত্রিম আরোপণ। এর সঙ্গে মেধা ও ক্ষমতা বিষয়টি নিশ্চিত ধরে নেয়া হবে, সেটি অনেকের থাকেনা। একেবারে স্পষ্ট করে বলা যায় আমাদের সাহিত্যের প্রধান দুর্বলতা এইখানে। গল্পকার/উপন্যাসিক যতনা জীবনের অংশ তার লেখায় তার চেয়ে একজন পর্যটক। পর্যটক কক্ষনো গল্প বা কাহিনী বলতে পারেন না, কেবল গল্প ও কাহিনী সম্পর্কে বলতে পারেন। এই ব্যাখ্যা অনেক দীর্ঘ হতে পারে। কিন্তু এটাই মূল কথা। বহিরাগত কক্ষনো ভেতরের জীবনের কথা বলতে পারেন না। আপনি বা আমি যাত্রা দেখলাম। এর পর যাত্রার লোকজনের জীবনের উপর একটা গল্প লিখে ফেললাম। এটা আমরা যেমন করে যাত্রা দেখালাম তেমনি আমাদের গল্পে তাদের জীবন দেখলাম। ওটা কৃত্রিম, আরোপিত, কেনা প্লট বা দখল করা ভূমি!

যদি কখনো কোনও লেখক অনুভব করে থাকেন যে তাকে দিয়ে হচ্ছেনা তবে তার ক্ষান্ত দেয়া উচিৎ। যে কোনও লেখকই সেটা সবার আগে বোঝেন। কিন্তু না বোঝার একটা ভান করে ক্রমাগত নিজেকে ও একদল ভ্রান্ত পাঠককুলকে ধোঁকা দিতে থাকেন। এই ভাবে যে কোনও 'সাহিত্য-চক্রে' একটি ধোঁকা দেওয়া ভ্রান্ত দল তৈরি হয় যারা নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। যদিও সেটার আয়ু-কাল খুব বেশি দিন হয় না। এক ধরনের পোকামাকড়ের জীবনের মতন, বিশেষ প্রয়োজনে জন্ম আবার চলে যাওয়া। এরাও ওই রকম যে ক'দিন 'খেটে-খেতে' পারেন সে'কদিনই! কালের পুকুরে সাঁতার তাদের আর হয়না। ফলে ওই গোষ্ঠীর কাজ হয়ে ওঠে 'আমি কবি বা গল্পকার' বলে স্টেজে ওঠা কী 'বয়স'এর আবালত্বের একটা মুরুব্বীপনা করা। এসব ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীল সময়ুত্তীর্ন কাজে তাদের 'অণ্ড-দন্ড'ই সার থেকে যায়।

দুপুর মিত্র: কলকাতা ও ঢাকার কথাসাহিত্যের ফারাকটা কোথায়?

আনোয়ার শাহাদাত: ফারাক হলও দুই জন গোষ্ঠীর জীবন ও সংস্কৃতির যে ফারাক, সেটাই। এতে হয়তো উত্তরটা পরিষ্কার হোলও না। তিন ধাপে এর আলাদাকরন চিহ্নিত করা যেতে পারে; প্রথম বংগ-ভঙ্গ পর্ব, দ্বিতীয় পূর্ব-পাকিস্তান ভিত্তিক ফারাক, তৃতীয়: স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রিক। 'সাহিত্যের-কালের-ঘরে' এই সময় খুব একটা দীর্ঘ নয়। রাজনৈতিক যে কারণে বঙ্গ-ভঙ্গ হয়েছিল তার একটা ছাপ দুই অংশে পড়ে। অর্থাৎ কোলকাতা কেন্দ্রিক বাংলা সাহিত্য কোনও ব্যত্যয় ছাড়াই অগ্রসর হতে থাকে তার আদি ধারাবাহিকতায়। রাজনৈতিক যে কারণে বিভাজন সাহিত্যে সেই বিভাজন অপ্রয়োজনীয়। ফলে পূর্ব এক ধরনের ধারাবাহিকহীন হয়ে পড়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনে। এই ফলাফলে স্বাভাবিক ভাবেই পূর্ব অসহায় হয়ে পড়বার কথা। হয়েছেও। এই হলও প্রথম ফারাক। পাকিস্তান হওয়ার ফলে ধর্মভিত্তিকতা এর উপর প্রায় জোর করে চেপে বসে। সাহিত্যে কোনও রাজনৈতিক ভাবধারা চেপে বসলে তার কোনও সুফল কোথাও হয়েছে তার কোনও নিদর্শন নেই। স্বাধীনতাত্তোর আর এক দফা পরিবর্তনের ভেতরে আবার রাজনীতি-করন থেকে যায়। হাজার বছরের বাঙ্গালীত্ব রাতারাতি পাউডার মেক-আপ পেলে একটা পরিবর্তিত অবয়বতো ফুটবেই। সেটা ফুটেছেও। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি কোলকাতা কেন্দ্রিক সাহিত্যে ঐতিহাসিক কারণেই অধিক 'ঘনত্ব'এর দাবীদার। যদিও ব্যক্তিগত আমি এই সত্যের সঙ্গের ঘনিষ্ঠ নই। অর্থাৎ আমি ধরে নিয়েছি এতে আমার কিছু নেই। আমি বাইরের কিছু পাঠ প্রশ্নে, 'বাইর'এর পড়ি, কোলকাতার নয়।

দুপুর মিত্র : সাহিত্যের আড়ালে সত্য কি ঢাকা পড়ে?

আনোয়ার শাহাদাত: সাহিত্যের আড়ালে সত্য, কী সত্যের আড়ালে সাহিত্য, এটা একটা 'কাল'ইক বিষয়। আর প্রকৃত অর্থে এটা সাহিত্য ঘরানার বিভাজন প্রসঙ্গ। কোনও কিছু কোনও কিছুর আড়াল হলে সাহিত্যের লাভ-ক্ষতি নেই। সাহিত্য সম্পূর্ণই একটি অনুভূতি নির্ভর শিল্প, কাল'কে জয় করে তার নিজস্ব সত্য নির্মাণ করে। সেই সত্যই সাহিত্য সত্য হিসাবে থাকে।

দুপুর মিত্র: আপনার কি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গল্প লিখার পর বা বই ক্যানভেসার গল্পকার' বেরোনোর পর কোনও ধরণের বৈরিতার শিকার হয়েছেন। হলে সেটা কিরকম? কেন ?

আনোয়ার শাহাদাত: না। সেরকম কিছু নয়। কিন্তু এর অন্য পার্শ প্রতিক্রিয়া আছে। সেটা বলি, সে গুলোয় অসুবিধার পর্যায়েই পরবে।

আমার প্রায় সব গল্পেই নানা ভাবে দূর থেকে হলেও মুক্তিযুদ্ধ থাকে। এছাড়া আমার একাধিক মুক্তিযুদ্ধের উপর ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা আছে যার একটি আমি করেছি (কারিগর, The Circumciser) । এটা আমার মুক্তিযুদ্ধ বিষয় থাকা 'ওস্তাগারের তালিকা' গল্পের উপর লেখা চিত্রনাট্য থেকে নির্মিত। আমার উপন্যাস 'সাঁজোয়া তলে মুরগা' যারা পড়েছেন (খুব খুব সামান্য কেউ পড়েছেন)। এদের মধ্যে একজন হলেন আমার প্রিয় আব্দুল আলী ভাই। তিনি ওই উপন্যাস নিয়ে প্রখম আলোতে উপ-সম্পাদকীয় লিখেছিলেন তার প্রশংসা করে। গেলবারে বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সামরিক বাহিনী নিয়ে লিখতে গিয়ে আবার আমার বইটার রেফারেন্স দিয়ে সমকালে লিখলেন। আমি কেন যেকোন লেখকই কিন্তু এতে খুশী হবার কথা। আমিও হলাম, কিন্তু আবার ভীত হলাম কেনোনা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছবি বানাব। এতে যদি দেশে সামরিক সরকার থাকে তখন আমার ছবি সেন্সর'এ আটকাবে। ফলে আমি আলী ভাইকে অনুরোধ করালাম তিনি যেন একটু রইয়ে-সইয়ে লেখেন না হলে আমার ছবি নির্মাণে বাধা আসতে পারে। এই ভাবে আমার জন্য অসুবিধাটা আসে। ধরুন এই যে ছবিটা মুক্তি পেল, এটা সম্পূর্ণ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছবি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় না থাকলে এসব নিয়ে সেন্সরে 'দলীয়-কসাইরা' দাও তুলে কাটতে চাইতেই পারে। আমার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতেও এমন বৈরিতার সম্ভাবনা নাকচ করা যায় না।

দুপুর মিত্র: কথা সাহিত্য ঢাকার রাজনীতিটা কেমন ?

আনোয়ার শাহাদাত: ঢাকায় কী কথা সাহিত্যে রাজনীতি আছে নাকি? জানি না তো! আর একটু বাড়িয়ে বলি। সাহিত্য বা প্রায় যে কোন শিল্প জগতের নিষ্ঠুর সত্য হলও শিল্পীর সৃষ্ট কর্ম ওই 'রাজনীতিবিদ'দের নির্মম ভাবে নিখোঁজ অধ্যায়ে'র অন্তর্ভুক্ত করে। জীবনানন্দ বা ইলিয়াসের সময়ও এ সব কী হয়নি? সে সব রাজনীতি বা রাজনিতিকরা কোথায় বা তাদের শিল্প কর্ম কোথায়? শিল্প সৃস্টিতে যে ঝামেলা ও ব্যর্থতা আছে এই সত্যটা কিন্তু সবার আগে জানেন লেখক নিজে। এটা জানবার পরেই তারা লেখালেখিকে রাজনীতিতে ঢুকান একধরনের ওই সময়ে অন্তত কিছু একটা করে থাকা তত্বে। রাজনীতি না করলে কিছু হবেনা এমন ধারণা প্রকৃত লেখকদের জন্মালে তারা আর লিখতেন না, রাজনীতি করতেন। জীবনানন্দ লেখা বন্ধ করে দিতেন। তিনি রাজনীতি করতে পারতেন না। আমার লেখার মধ্যে যত 'রাজনীতি' করা সম্ভব তা করে রেখেছি। আমাকে কথিত রাজনীতিটা লেখায় করতে হয়েছে (আসলে আমি সৃস্টিশীল বিষয়টিকেই ঈঙ্গিত করছি) 'খেটে-খাওয়া' আপনার উল্লেখিত কথা সাহিত্যের রাজনীতিকে পরাভূত করতে! দেখবেন একদিন আমার লেখাগুলোই আমার হয়ে কেমন রাজনীতি করে সব হটিয়ে দেয়!

ধন্যবাদ।