প্রগতিশীল কিংবা উগ্র আচরণ পোশাক পড়ার মতো আপেক্ষিক: দ্রোহ সম্পাদক ফয়সল অভির সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: May 3, 2012 10:14:05 AM

ফয়সল অভি, সম্পাদক, দ্রোহ।

ফয়সল অভি'র বই:

১. ঈশ্বর হয়ে ওঠা (কাব্যগ্রন্থ)

২.কবি'র কোন চরিত্র নেই (কাব্যগ্রন্থ)

৩. একটি আত্মঘাতি বোমা হামলার কারণ (কাব্যগ্রন্থ)

৪.আমার প্রেমিকাই শ্রেষ্ঠ সুন্দরী (দীর্ঘ কবিতা)

৫. এপিটাপ (ফয়সল অভি'র আত্মজীবনি)

দুপুর মিত্র: আপনি তো দীর্ঘদিন ধরে দ্রোহ নামের একটি ম্যাগ সম্পাদনা করছেন। এর অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বলুন। মানে প্রিন্ট আর ওয়েব এই দুই জায়গায় আপনার অভিজ্ঞতাটা কেমন?

ফয়সল অভি: দ্রোহ ছোট কাগজ বিষয়ে বলতে গেলে এর শুরুটা সম্পর্কে একটু বলতে হয় । প্রথম দিকে দ্রোহ আন্তর্জাল দিয়ে শুরু করেছিলাম। শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি কেন্দ্র করে দ্রোহ যাত্রা পথ শুরুর প্রায় বছর খানেক পর ২০১১ সালের বই মেলায় দ্রোহ এর প্রথম কাগজের ইস্যু প্রকাশিত হয়। তাই দুটো ভিন্ন মাধ্যমে কাজ করার অভিজ্ঞতা আলাদা আলাদা বলতে গেলে । প্রথমেই কাগজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করি, আমাদের সব সময় কাগজের প্রতি গুরুত্ব ছিল । একটা পূর্ণাঙ্গ ভাবনার ইশতেহার স্থায়ী রূপে লিপিবদ্ধ থাকে কাগজ । আমাদের চিন্তা দৃষ্টি কোণ গুলো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দিয়ে প্রকাশিত হয়ে যায়। কাগজ করার ক্ষেত্রে প্রচলিত বাঁধা বিপত্তি তো ছিল তবে প্রতিবন্ধকতার চেয়ে উজ্জ্বল সাহস এবং সহযোগিতাগুলো খুব বেশি মনে থাকে। চট্টগ্রামে আমাদের কবি বন্ধুরা, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থী বন্ধুরা এবং সমমনা রাজনৈতিক সংগঠনগুলো অকৃত্রিম সহযোগিতায় কাগজ প্রকাশ এবং প্রচার খুব একটা কষ্টসাধ্য মনে হয়নি। যদিও বানিজ্যিক বিজ্ঞাপনবিহীন দ্রোহ এর প্রথম সংখ্যা সম্পূর্ণ ব্যয় তুলে আনা সম্ভব হয়নি; তবুও বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রোহ পাঠের পর যে রূপ সাড়া এবং চেতনার আদান প্রদান হয়েছে, তা কখনও পরিমাপ করা যাবে না। আর দ্রোহের আন্তর্জাল মাধ্যমের কথা বলতে গেলে বলব, সভ্যতার বিকাশে সাথে সাথে প্রকাশের মাধ্যমের আধুনিকতাকে আমরা প্রথম থেকে স্বীকার করেছি, এখনও করছি। আন্তর্জালে দেশ ছাড়াও সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষি মানুষের সাথে প্রতিনিয়ত চিন্তার যোগাযোগ আমাদেরকে খুব বেশি উৎসাহিত করে। আমি ব্যাক্তিগতভাবে বলব দ্রোহ ছোট কাগজের আন্তর্জাল মাধ্যমের মধ্য দিয়ে অগ্রজ ছাড়াও নব প্রজন্মের সাথে এবং নব প্রজন্মের নিজেদের ভেতরও এক ধরনে চেতনার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে আমরা যেটাকে নিজেদের ভাষায় ভাই বেরাদার সমাজ বলি ।

দু: আপনি তো মূলত একজন কবি। রাজনীতির বিভিন্ন ইস্যু নিয়েও আপনাকে প্রায়ই বেশ সজাগ দেখি, এ বিষয়ে কিছু বলুন।

ফ: কবি যদিও কোন সীমা দ্বারা আবদ্ধ নয় । কবির দৃষ্টিভঙ্গি সভ্যতার প্রতি ভাঁজের ভেতর অঙ্কুরিত প্রাণের মতো। মানব জীবনের জন্য যা কিছু শান্তির সেই সব কর্ম ও পথকে আমি সব সময় নিদের্শ এবং সমর্থন করি। মনুষ্য শান্তির পথগুলো রাজনীতি ব্যাতীত অন্য কোন কিছু নয়, তাই এই পথে এগিয়ে যাওয়া মানুষদের উপর নিপীড়িন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে কবি'র দৃষ্টি ভঙ্গি এবং কণ্ঠস্বর সরব রাখি। আমি অস্বীকার করতে রাজি নই অতিক্রমে বিশ্বাস রাখি। তাই হয়ত রাজনৈতিক ইস্যুগুলো আমিসহ আমাদের দ্রোহ পরিবার সব সময় সরব।

দু: এদিক দিয়ে আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় আধুনিক কবিতার দিকপাল এলিয়টকে আপনি বেশি সমর্থন করেন না নেরুদাকে যিনি রাতভর শ্রমিকদের কবিতা শোনাতেন।

ফ: কবিদের আমি জাগতিক এবং মহাজাগতিক অস্তিত্বে পরম সম্মানিত এক একটি মানচিত্র মনে করি ...আমি দাঁড়িয়ে থাকি শ্রদ্ধায় । উনাদের কবিতা কম্পাস, যা আমাকে রাস্তা চিনতে সহায়তা করে। উনাদের আবিষ্কৃত রাস্তা যেখানে সমাপ্তি তার পরবর্তী যতটুকু আমার চলন সেটাকে আমার সর্বশেষ মনে করি। তাই আমি সমর্থনকে এড়িয়ে যাই, বলি অসংখ্য মৌলিক উপাদান জেনে নিয়ে আরেকটি শক্তির রূপান্তর করে নেওয়া শূন্য গর্ভে হারিয়ে যাওয়া আমাদের গন্তব্য। তবুও সিবিলের সেই উত্তর, ‘আমি মরতে চাই'...আমাকে খুব করে টানে ।

দু: বাংলাদেশের রাজনৈতিক কবিতা চর্চার ব্যাপারে কিছু বলবেন।

ফ: বাংলাদেশে কবিতায় রাজনৈতিক চিন্তা প্রকাশ করা আমি বলব অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি। পুরো বিশ্ব রাজনীতির প্রবাহমান প্রভাব এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিভিন্ন ফলাফলকে নিদের্শ করে কিংবা উত্তরণ উপলদ্ধি আমার অনেক অগ্রজ কবি'রা দেখিয়ে গিয়েছে সেটা নিয়ে বৃহৎ ভাবে বলার কিছু নেই। বাংলাদেশে বাস করে একজন কবি মানব প্রজাতির মুক্তির জন্য তার কবিতায় রাজনৈতিক চিন্তা প্রকাশ করবে না এমনটা হয় না। তাই আমার অগ্রজ কিংবা আমার কবি বন্ধুদের কবিতায় রাজনীতি বেশ উল্লেখযোগ্যভাবে দৃশ্যমান। তবে ডব্লিউ. এইচ. অড্যান কিংবা শহীদ সাবের এর মতো রাজনৈতিক কবিতার চর্চা বর্তমানে আমার খুব একটা চোখে পড়েনি। এটা আমার ব্যর্থতা আমি সেই সব কবিদের নাগাল পাইনি ।

দু: সমসাময়িক কবিদের কোন বিষয়গুলোকে আপনি মেনে নিতে পারেন না।

ফ: "মেনে নিতে পারেন না" আমার কাছে অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়। আমি সব সময় কবি'দের সচল মুদ্রা মনে করি যার উভয় পিঠ দৃশ্যমান। যাকে দিয়ে বিনিময় আমার রসদ। চলতি পথে সমস্ত বিরক্তির গর্ত কিংবা ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন ইটের টুকরোকে বাতিল করে যাই। আমি পতনে...বিশ্বাসী একটি স্তর থেকে আরেকটি স্তরে। যেখানে জমির অল্প পানি নিয়ে জাদুকরের আয়না দেখায় সেটাকে প্রাকৃতিক কর্ম সাধনে ব্যবহার করাকে উত্তম মনে করি। মৃত্যুর মতো যাপন খুব প্রিয়, যা আমি গ্রহণ করে থাকি। সেটা কারো কাছে সত্য, কেউ বলে নির্দ্বিধায় মিথ্যা একরাশ বিষ বলেও সংজ্ঞায়িত করে সভ্যতা। গ্রহণ এবং বর্জনে অতিক্রম করে যাই।

দু: সমসাময়িক কবিদের গোষ্ঠীভিত্তিক আদর্শহীন রাজনীতিটা অনেক প্রবল। এর কারণগুলো আপনার মতে কোনগুলো?

ফ: আদর্শহীন হলে কবি এবং রাজনীতি শব্দগুলো যোগ করাকে চিন্তার ত্রুটি হিসেবে বিবেচনা করি এবং সরাসরি খারিজ করে দিতে চাই। বাতিলযোগ্য উপাদানকে ব্যক্তি পর্যায়ে, সামাজিকভাবে এবং রাষ্ট্রীয় ব্যাসার্ধে উৎপাত সৃষ্টিকারি হিসেবে বিবেচনা করি। যদিও কারণ খোঁজার মতো সময় নষ্ট করতে রাজি নই তবে বলতেই হয়, অবগতহীন প্রবৃত্তির গোলামি এর কারণ ।

দু: নিজেকে প্রগতিশীল দাবি করে কবিতা লেখাটাকে কতটুকু যৌক্তিক মনে করেন?

ফ: আমি শুরুতেই বলেছি, কবি সম্মানিত এবং পুঁজো দেওয়ার, যাঁর সামনে সব সময় দাঁড়িয়ে জুতা খুলে কথা বলতে হয়। আর কবিতা সাধনার প্রাপ্ত ফলাফল শিরোধার্য শূণ্য বিলীনে এক একটি সিঁড়ি। কবি তার দর্শনে একনিষ্ঠ আপাতত দৃষ্টিতে কট্টরও বলা যেতে পারে। সেই ভিত্তিতে লেখা তো প্রাকৃতিক কর্মের মতো সকাল বিকাল কাগজে ভরিয়ে তোলা যায়, এর জন্য প্রগতিশীল কিংবা উগ্র আচরণ পোশাক পড়ার মতো আপেক্ষিক; যে যত বেশি সামাজিক হতে চায়, গণনা দ্বারা নির্ধারিত প্রথার ভেতর বাঁচতে চায়, তার জন্য পোশাক প্রয়োজন। আমি বলি কবি ও কবিতা সব কিছুই মগজে আর মগজের কোন পোশাক প্রয়োজন হয় না ।

দু: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমাকে অনেক সময় দেবার জন্য।