popularity-র বাইরে থেকে কাজ করা ওয়েবম্যাগের একটা চরিত্র: কবি অনুপম মুখোপাধ্যায়ের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: May 8, 2012 9:38:16 AM

কবি অনুপম মুখোপাধ্যায়

প্রকাশিত কবিতার বই:

রোদ ওঠার আগে(২০০৭), যার নাম অপরাজিতা সেও কিন্তু হেরে যায়(২০০৮), রুবেরু, হাইওয়ে, মেরিগোল্ড কানেকটেড।

পুরস্কার: কবিতা পাক্ষিক থেকে শিখা মিত্র স্মারক সম্মান(২০০৭)।

অনুবাদ: বব ডিলান ও জন লেলনের গান, উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়ামের কবিতা ও ফ্রান্স কাফকা।

দুপুর মিত্র: পশ্চিবঙ্গের তরুণদের বাংলা কবিতা চর্চা আর বাংলাদেশি তরুণদের বাংলা কবিতা চর্চার ফারাক আছে কি ? থাকলে কেমন?

অনুপম মুখোপাধ্যায়: পার্থক্য তো আছেই। এখানে কবিতা চর্চা অনেক গন্তব্যনির্ভর। ওখানে মনে হয় লেখার আনন্দে লেখার মানুষ বেশি। এখানে ভাষা অনেক শব্দনির্ভর। ওখানে যুক্তিকে বেশি স্থান দেওয়া হয় ।

দু: এর ফলে দুই জায়গাতেই কবিতার পরিণতি কি হতে পারে বলে আপনার মনে হয়?

অ: বাংলাদেশের কবিতার একটা নিজের space আছে , time আছে । আমাদের এখানকার কবিতার সঙ্গে তার ফারাক আমি ভালোই বুঝতে পারি । একটা আলাদা জলবায়ুর স্বাদ নিয়ে আসে । আলাদা মনন । ওখানে কবিতা লেখার আনন্দটা কমেনি । এখানে কমে গেছে । কিন্তু সার্বিকভাবে কবিতা নিয়ে এখানে গবেষনামূলক প্রয়াস অনেক বেশি । বলতে পারি পশ্চিমবঙ্গে কবিতার মেধামূল্য বেশি । বাংলাদেশে প্রাক্ষোভিক মূল্য অনেক বেশি এবং স্বাভাবিক ।

দু: আপনি বেশ অনেকদিন হয়ে গেল বাক্ নামের একটা ব্লগজিন সম্পাদনা করছেন। আমাদের এখানে ব্লগ এবং ওয়েবম্যাগের ধারণা আছে। এবং এ নিয়ে বেশ কাজ হচ্ছে। ব্লগজিনের বিষয়ে কিছু বলবেন?

অ: ব্লগজিন একটা দারুন ব্যাপার। বাক হয়তো বাংলা ভাষায় প্রথম কবিতা-ব্লগজিন। মানে একটা পত্রিকা হিসেবে যা চলেছে। ব্লগকে সকলেই একটা ব্যক্তিগত জিনিস ভাবতেন। কবিতার ব্লগ বাকের আগে অনেক হয়েছে। কিন্তু সে যে একটা পত্রিকা হতে পারে ... আমি খুব ভেবে কাজটা করিনি। খুব চট করেই করে ফেলেছিলাম। কিন্তু আজ ব্লগজিনের সংখ্যা আরো বেড়ে চলেছে। বাক আজ আর একা নয়। তবে সে তার পথটা আজো একই ভাবে উপভোগ করছে। আন্তর্জাল ছাড়া বাংলা কবিতা তার গন্ডীগুলো ভেঙ্গে বেরোতে পারবে না। ব্লগজিন ... টাকা লাগে না । শুধু ভালোবাসা আর ভালো লাগা ... কবিতার প্রতি প্রেম থেকে তার domain নির্ধারিত হয়।

ওয়েবজিন ... তার পাশে এভাবে যদি ব্লগজিনের দুনিয়ে গড়ে ওঠে ... বাংলা কবিতা পৃথিবী জিতে নেবে ।

দু: আমাদের দেশে আন্তর্জাল একটা প্রভাব তৈরি করেছে লিটলম্যাগের ওপর। আপনাদের ওখানেও কি তাই। থাকলে সেটা কেমন?

অ: আমার মনে হয় কবিতাকেন্দ্রিক যেকোনো ওয়েবম্যাগ একটা লিটলম্যাগ হয়ে শুরু করে । আন্তর্জালের প্রভাব লিটল ম্যাগে আমি সেই অর্থে দেখতে পাইনা । কিন্তু লিটল ম্যাগের ধারনার সঙ্গে ওয়েবম্যাগ সুন্দর মানিয়ে নেয় নিজেকে । লিটলম্যাগের একটা ভূমিকা হল culture-এর উপর চোরা আক্রমন । সেটা ওয়েবম্যাগের চেয়ে ভালো কী করতে পারে ? popularity-র বাইরে থেকে কাজ করা ওয়েব ম্যাগের একটা চরিত্র। ঠিক লিটলম্যাগের ধাঁচে ।

লিটল ম্যাগ এটা বেছে নেয় । ওয়েবম্যাগে এটা সহজাত ।

দু: উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়াম নিয়ে আপনার একটা কাজ আছে। উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়ামের স্প্রিং এন্ড অল আর টিএস এলিয়টের ওয়েস্টল্যান্ড প্রায় একই সময়ে প্রকাশিত। দুইটাই ক্ল্যাসিক। কিন্তু এলিয়ট মডার্নিজমের ধারক হয়ে ওঠেন, কার্লোসকে তেম কাউকে স্মরণ করতে দেখিনা। এবিষয়গুলো নিয়ে কিছু বলবেন?

অ: দেখুন এই উত্তর আসলে আধুনিকতার মর্মমূলে রয়েছে । আধুনিকতা একটা নয় , ওনেকগুলো । প্রতিটি কালখন্ড তার একটা আধুনিকতা যাপন করে । একজন কবি তাঁর সময়ে আধুনিক হয়ে পরে বাতিল হয়ে যেতে পারেন । যেমন আমাদের এখানে আজ আর বুদ্ধদেব বসুকে নিয়ে কথা বলার মানে হয় না । আবার সমকালে অনাধুনিক একজন মানুষ পরের সময়ে উত্তরোত্তর আধুনিক হয়ে ওঠেন । ২০ শতকের আধুনিকতায় এলিয়ট অনেক প্রাসঙ্গিক ও মানানসই ছিলেন। উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়াম ছিলেন না । তাঁর নিজের একটা অনুবিশ্ব ছিল । আজ সেই অনুবিশ্ব হয়ত এলিয়টের মহাপৃথিবীর চেয়ে কাম্য মনে হচ্ছে এই গুটিয়ে আসা পৃথিবীতে ।

একটা ছোট্ট জগতে বাঁচতে শেখা এবং আনন্দে বাঁচতে শেখা খুব জরুরি আজকের আধুনিকতায় । এখন আদিম এবং আধুনিক ঘনঘন মুখ বদলে নিচ্ছে । ফলে ... মুখোশ আলাদা করে পরে নিতেই হচ্ছে না ।

বৃষ্টিতে ধুয়ে গিয়ে ঝকঝক করতে থাকা একটা হাতগাড়ি ... এই দৃশ্যের একটা নিজের ভুবন আছে । তা পোড়ো জমির বাইরে ।

দু: এখন কবিতা বা গল্প বা উপন্যাস যাই চর্চা করি না কেন, www বা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব মানে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। এই ক্ষেত্রে সাহিত্য চর্চায় স্থানিকতার প্রশ্ন কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

অ: স্থান আর সময়কে নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে না । এর ফলেই তো অনিশ্চয় তার খেলায় মেতেছে । শেষ কথা বলার কিছু থাকছে না ... কেউ থাকছে না । আগে ফোনে বলতাম ঃ আপনি কেমন আছেন ? এটাই হত প্রথম সংলাপ । আজ বলি ঃ আপনি কোথায় আছেন ? হা হা হা ...

দু: হা হা হা ভাল বলেছেন ? সম্প্রতি ইন্টারেনটকে ঘিরে কবিতার এক ধরণের পরিবর্তন বা বলা যায় আন্দোলনই শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এটাকে বলা হচ্ছে Flarf poetry। বাংলা কবিতায় এরকম কোনও পরিবর্তন কি আপনি দেখতে পাচ্ছেন ?

অ: না, তবে প্রসার বেড়েছে।

দু: আপনি কবিতায় কি কোনও পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন?

অ: বাঙ্গালি কবিরা তো খুব বেশিদিন নেট সচেতন হননি। খুব জোর এক দশক। তার আগে তো সেই অর্থে কিছুই ছিল না। আজও সাইবার কাফেতে unicode পড়া যায় না ।

আমি নিজের কবিতা খুব স্বাভাবিকভাবে নিই । জোর করে কিছু করতে পারি না । যেটা হয় নিজের থেকেই হয় ।

দু: অনেক ধন্যবাদ দাদা আপনাকে সময় দেবার জন্য।

অ: আপনাকেও । খুব হাল লাগল ।