মানস কবি হয়ে উঠলে প্রস্তুতির তেমন প্রয়োজন নেই: উম্মে মুসলিমার সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jul 2, 2012 8:15:59 AM

প্রকাশিত বই: নারী বলে আত্মশ্লাঘা বোধ করি, হাজার কালার মেয়ে মানুষেরা, আলো আছে আলো নেই

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

উম্মে মুসলিমা: মাঝে মাঝে এমনি এমনিই ভাব ওঠে। মাঝে মাঝে দগ্ধ হই নানা অসংগতিতে। অন্ত্যমিল আসে অনায়াসে। মিলহীন খুব জমে না। না লিখলে ভারমুক্ত হই না। কখনও কখনও লিখে ফেলেও জ্বালা যায় না। ভাবনা ভাগ করার জন্য কাগজে নিজের কবিতা দেখার লোভ সামলাতে পারি না বলে।

দু: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

উ: মানস কবি হয়ে উঠলে প্রস্তুতির তেমন প্রয়োজন নেই। তবে কবিতার উত্তরণের জন্য প্রচুর কবিতা পড়তে হবে। কিছু পড়তে গিয়ে, কিছু দেখে ফেলে বা কোন চিত্র/শব্দ হঠাৎ আঘাত করলে কবিতার থিম মুঠোফোন বা টুকরো কাগজে টুকে রাখা ভালো। থিম হারিয়ে গেলে মানসিক অশান্তিতে জগৎসংসার ‘বিলা’ লাগে। ভাঙচুর, কাটাকুটি, ওলোট-পালোট করার জন্য সময় দিতে হবে। আমার মতো অলস কবির জন্য যা দুরূহ।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

উ: কামাল চৌধুরী, আসাদ মান্নান, টোকন ঠাকুর, মাসুদ খান, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, কামরুল হাসান, ব্রাত্য রাইসু, তসলিমা নাসরিন, শেলী নাজ, জাহানারা পারভিন, কচি রেজা, সাখাওয়াত টিপু, আলফ্রেড খোকন, রহমান হেনরী আরো অনেকের কবিতা ভালো লাগে। কারো অসাধারণ ছন্দের হাত, কারো অনবদ্য চিত্রকল্প, কারো উপমা, কারো ব্যঙ্গ, কারো নারীর প্রতি সহমর্মিতা, কারো অনন্য ভঙ্গির জন্য।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

উ: মানসম্পন্ন পত্রিকা পড়ার চেষ্টা করি। এগুলোতে কারোর কবিতাই খারাপ লাগে না।

দু: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

উ: পুরুনো অনেক কবির হাতে কবিতার ভাঙচুর হচ্ছে। নতুন কবিরা নতুন অঙ্গীকার নিয়ে আসছেন। ভালোই তো।

দু: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

উ: বেশ আগে বেশ খানিকটা ফারাক ছিল ছন্দ, বিষয়বৈচিত্র আর ভাষাভঙ্গিমায়। এখন কোন কোন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কবিতা অধিক সুখপাঠ্য, সুগভীর এবং ব্যঞ্জনাময়।

দু: ব্লগ সাহিত্য কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

উ: যারা ব্যক্তিগত যোগাযোগ ব্যতীত দৈনিকের সাহিত্য বা ম্যাগাজিনে নিজের লেখা দেখতে পান না, তাদের জন্য ব্লগ আশীর্বাদতুল্য। ব্লগ সাহসী। দৈনিকের সাহিত্যে যেসব সীমাবদ্ধতা থাকে ব্লগে তা থাকে না বলে সাহিত্যিক পুরোপুরি স্বাধীন। ব্লগসাহিত্য আকাশের মতো অসীম। ব্লগপাঠকরা এ উদার সান্নিধ্যে নিজেদেরও শানিয়ে নিতে পারছেন।

দু: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

উ: এখনও কাগজের পাতা উল্টিয়ে পড়া আমাদের অনেকের জন্য অনেক বেশি অভ্যাসপ্রবণ। লিটলম্যাগ হাতে পেলে পড়ে ফেলে কোথায় রাখি তার হদিস থাকে না। অন্যদিকে ব্লগে পুরোনো সব ধরা থাকে। যখন ইচ্ছে কিক করা যায়। বই নিয়ে গেলে কেউ ফেরত দেয়ার তাড়া অনুভব করে না। ব্লগের লেখা যেমন নিজের তেমনি সকলের। তবে কাগজের পাতায় নিজের নাম, নিজের লেখা, প্রিয়কবির কবিতার যে গন্ধ পাওয়া যায় ব্লগে তা পাওয়া যায় না। এমন দিন হয়তো আসবে যারা ব্লগ দেখে বড় হচ্ছেন তারা কাগুজে ম্যাগাজিনে আনন্দ না-ও পেতে পারেন। মানুষের ব্যস্ততা, স্থান সংকুলান, সহজলভ্যতা, পরিবেশবোধকে প্রযুক্তি যখন সমন্বয় করার চেষ্টা করবে তখন ব্লগ ছাড়া গতি থাকবে বলে মনে হয় না।

দু: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

উ: দৈনিকের সাহিত্য আমার খুব প্রিয়, আমার ভালোলাগার জায়গা। এ-ও হয়তো দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততার দাসত্ব। ব্লগ সাহিত্য পড়ে দৈনিকের সাহিত্য ইদানিং আশ মেটাতে অসমর্থ বলে মনে হচ্ছে। মানসম্পন্ন দৈনিকের সাহিত্য একটা অবস্থান লালন করে বলে তার প্রায় সবগুলোই যেমন পাঠোত্তীর্ণ হয় তেমনি সব ব্লগের সব লেখা সমান মান ধরে রাখতে পারে না, তা যেমন ভাষা ও বানানে তেমনি বিষয়েও। তবে একথা অস্বীকার করা যাবে না ব্লগের অপ্রতিরোধ্যতার কাছে দৈনিকের সাম্প্রতিক সাহিত্যের সীমাবদ্ধতা যেন অজনপ্রিয়তার ঘূর্ণিজলে আটকা পড়ে যাচ্ছে।