শূন্য দশক ততটা বৈচিত্র্য-অভিমুখী না হয়ে চেষ্টা করছে সরল বিস্তারের দিকে যেতে: শাহানা আকতার মহুয়ার সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Sep 21, 2012 9:22:47 AM

ধ্রুপদ সন্ন্যাসে(কাব্যগ্রন্থ), কাঁচের কোকিল(কাব্যগ্রন্থ), প্রত্নপিপাসার জল(কাব্যগ্রন্থ), আর্মেনিয়ার গল্প(অনুবাদ), জেনানা জোবান(অনুবাদ গল্প),মনঘর(কাব্যগ্রন্থ)।

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

শাহানা আকতার মহুয়া: অন্তরগত এক তাড়না থেকে কবিতা লিখি। নিজের যাতনা, আবেগ-অনুভূতি, চেতনা প্রকাশ পায় কবিতায়। কোনো এক গভীর বোধ কবিতা লিখিয়ে নেয় যেন! কখনো কখনো হয়তো কবিতা খুব ব্যক্তিগত হয়ে ওঠে অবচেতনেই।একজন নারী হিসেবে যে কথা বলা যায় না, কবির কবিতায় অনেক সময় তা ব্যঞ্জনাময় হয়ে ওঠে।

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

শাহানা আকতার মহুয়া: অন্যেরা কিভাবে দেখেন জানিনা, কিন্তু আমার কাছে মনে হয় কবিতা লেখা ঠিক উপাসনা করার মতোই। উপাসনার জন্য যেমন একাগ্রতা বা সমর্পণের প্রয়োজন, তেমনি একান্তভাবে একাত্ম হতে না পারলে কবিতা লেখা যায় না। অনেক সময় কবিতাকে অগ্রাহ্য করলে কবিতা হারিয়ে যায়। মনের ভেতরে হয়তো ঘুরছে কোনো শব্দ, পংক্তি, বিন্যাস... কিন্তু সেটা লিখে ফেলতে না পারলে চুপিচুপি হারিয়ে যায়, ঠিক সেভাবে আর লেখাটা হয়ে ওঠেনা। মাঝখানে অনেকদিন লেখালেখি হয়নি আমার। ব্যস্ততার অজুহাতে কবিতাকে পাশ কাটাতে গিয়ে হারিয়ে গেছে অনেক কবিতা।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

শাহানা আকতার মহুয়া: ভাল লাগে অনেকের কবিতাই। অনেকে আছেন কবি হিসেবে যারা নিজেদের সেভাবে জাহির করেন না, মিডিয়ার কৃপা পাবার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেন না, কিংবা লাইম লাইটে আসার জন্য নানা কসরতে ব্যস্ত নন... কিন্তু কবিতাকে ভালবেসে লিখছেন-এমন অনেকের কবিতাও ভাল লাগে।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

শাহানা আকতার মহুয়া: এটা খুবই নেতিবাচক একটা প্রশ্ন। অনেক খ্যাতিমান কবির কোনো কোনো কবিতাও তো খারাপ লাগতে পারে। তারমানে তো এই নয় যে ওই কবির কবিতা ভাল লাগে না। অনেক কবি আছেন যারা তাদের কবিত্বশক্তি প্রকাশ করার চেয়ে প্রচার-কৌশলের দিকে বেশি মনযোগী- তাদের কবিতা পড়তে ভাল লাগে না।

দুপুর মিত্র: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

শাহানা আকতার মহুয়া: সাহিত্যের দশক বিভাজনে আমি বিশ্বাসী নই। নব্বইয়ে একরকমের অস্থিরতা ছিল, ছিল নানা নিরীক্ষাপ্রবণতা আর নতুনভাবে কিছু সৃষ্টির অভিপ্রায়, যার চূড়ান্তটা হয়তো শেষপর্যন্ত আকাশ ছোঁয়নি। অন্যদিকে শূন্য দশক ততটা বৈচিত্র্য-অভিমুখী না হয়ে চেষ্টা করছে সরল বিস্তারের দিকে যেতে।

দুপুর মিত্র: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

শাহানা আকতার মহুয়া: একই ভাষা হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে যেমন পার্থক্য আছে, তেমনি খুব সুক্ষ্ম একটা পার্থক্য আছে কবিতাতেও। আমরা চাই বা না চাই শুধু কবিতা কেন, সাহিত্য অনেকটাই নির্ভর করে পারিপার্শ্বিকতা, পরিবেশ, জীবনবোধ, বাস্তবতা বা সমাজদর্শনের ওপর। পশ্চিমবঙ্গের কবিতা হচ্ছে অনেকটাই নাগরিক কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতা এখনো অনেক বেশি প্রাণছোঁয়া, গীতল এবং কাব্যময় মনে হয়।

দুপুর মিত্র: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

শাহানা আকতার মহুয়া: ব্লগ সাহিত্যে এখনো হয়তো বিশেষ কিছু দিচ্ছেনা, কিন্তু ধীরে ধীরে এর একটা শক্তিশালী প্লাটফরম গড়ে উঠছে বিশ্বজুড়ে। প্রবীণ-নবীন সাহিত্যপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর ব্লগসাইটগুলো।ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ছে বলেই লিটল ম্যাগাজিনের চাইতে ব্লগের দিকেই বেশি ঝুঁকছে লেখক-পাঠক।

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

শাহানা আকতার মহুয়া: আমার কাছে একটিকে অন্যটির পরিপূরক বলে মনে হয় না। লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ কি না সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে ব্লগের প্রতি লেখক-পাঠকের আগ্রহ আস্তে আস্তে বাড়ছে। এটা আমার কাছে খুব ইতিবাচক একটা দিক বলেই মনে হয়। ব্লগ হচ্ছে উন্মুক্ত একটা ক্ষেত্র, যেহেতু লেখা বাছাইয়ের কোনো ব্যাপার নেই তাই ইচ্ছে করলে যে কেউ এখানে লিখতে পারেন, মন্তব্য করতে পারেন কিনতু লিটলম্যাগে লেখা বাছাই থেকে শুরু করে প্রকাশনাসহ সব জায়গায় সম্পাদক বা সম্পাদনা পরিষদের একটা ভূমিকা থাকে।

দুপুর মিত্র: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

শাহানা আকতার মহুয়া: দৈনিক সম্পর্কে আমার কখনো তেমন আগ্রহ ছিল না। লিখেছি মূলত ছোটকাগজেই। দৈনিকে লিখলে সাধারণের মাঝে লেখকের পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। এই গ্রহণযোগ্যতা তৈরির ব্যাপারে দৈনিকগুলো যে সবসময় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়- তাও নয়। এখানে মুখচেনা বা পরিচিতির একটা ব্যাপার থাকে। অনেক সময় মেধাবী এবং যোগ্য অনেক লেখা দৈনিকের সাহিত্যপাতায় আসে না, যে লেখাগুলো আসে তা সাহিত্যের বিচারে কতটা উত্তীর্ণ তা সেই সাহিত্যপাতার সম্পাদকও জানেন। সেটা প্রকারান্তরে আমাদের নিম্নস্তরের মেধারই প্রদর্শনমাত্র।

দুপুর মিত্র: নিজেকে অন্যদের থেকে কিভাবে পৃথক ভাবেন?

শাহানা আকতার মহুয়া: অন্যদের থেকে পৃথক বলতে কি বোঝাতে চেয়েছেন? অন্য কবিদের চাইতে নিজেকে পৃথক ভাবি কি না নাকি কবি হিসেবে অন্য মানুষদের সাথে তফাৎ কতটুকু- সেটা জানতে চাইছেন? প্রতিটি মানুষই ভিন্ন, স্বতন্ত্র, প্রতিটি মানুষই আসলে তার নিজের মতো... তাই কারো সাথে নিজেকে তুলনা করি না তবে কবি হিসেবে আমার একটা স্বতন্ত্র স্বর থাকবে- এটাই স্বাভাবিক।