ওয়েব ম্যাগে মুক্তি নিয়ে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে: মেসবা আলম অর্ঘ্যের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Dec 21, 2014 4:58:22 PM

 

প্রকাশিত বই: তোমার বন্ধুরা বনে চলে গেছে, মেওয়াবনে গাণিতিক গাধা,  আমি কাল রাতে কোথাও যাই নাই

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের সাথে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার সম্পর্ক থাকতেই হয় বলে মনে করেন কি? প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার জায়গা থেকে লোককে কিভাবে দেখবেন?

মেসবা আলম অর্ঘ্য:  হ্যাঁ, থাকতে হয় বলে মনে করি। লিটলম্যাগ তো পেশাদারী না। পেশাদারী হলে রিস্ক নিতো না। লিটলম্যাগ হিসাব কম করে, রিস্ক নেয় - নতুন লেখকের যেটা দরকার। 'লোক' সম্বন্ধে আমার কোনো ধারণা নাই। সে লিটলম্যাগ হলে রিস্ক বেশি নেবে।  

দুপুর মিত্র: ওয়েব ম্যাগ, ব্লগ ইত্যাদির মাধ্যমে একটা পাল্টা মিডিয়ার গঠন প্রক্রিয়া চলছে বলে আপনি মনে করেন কি?এখানে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার বিষয়গুলোকে কিভাবে দেখবেন। বা লিটলম্যাগের প্রতিস্থাপন হিসেবে ভাবা যায় কিনা?

মেসবা আলম অর্ঘ্য:  লিটলম্যাগ আমার কাছে একই সাথে কবিতার বড় ধারা, এবং কাউন্টারকালচার। মুক্তি জিনিসটাকে নিয়ে কী কী করা যাইতে পারে তা খতিয়ে দেখার জায়গা। ওয়েব ম্যাগে এই মুক্তি নিয়ে কাজ করার তো যথেষ্ট সুযোগ আছে। হচ্ছেও। ভবিষ্যতে আরো হবে।

দুপুর মিত্র: আপনার কাছে কবি হয়ে ওঠা বিষয়টা কি?

মেসবা আলম অর্ঘ্য:  কবি হয়ে ওঠা মানে শারীরিক ভাবে থাকা, তারপর সেই থাকাটাকে কবিতায় লিখতে পারা।   

দুপুর মিত্র: কবিতা কী?

মেসবা আলম অর্ঘ্য:  আমি ও আপনি।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বাংলা কবিতার প্রবণতাগুলো কি?

মেসবা আলম অর্ঘ্য: বেশি যা যা চোখে পড়ে - ছড়া চর্চা, জীবনানন্দ চর্চা, বিনয় চর্চা, নেচার পোয়েট্রি, বিনির্মান, পুনঃনির্মান, পশ্চিমবঙ্গের শব্দার্থহীনতার চর্চা, ইত্যাদি।

দুপুর মিত্র: সাহিত্য আন্দোলন কি কবিতাকে পরিবর্তন করে?

মেসবা আলম অর্ঘ্য:  না। কবিতা পরিবর্তিত হয়ে গেলে সাহিত্য আন্দোলন সেটাকে জানান দেয়, অনেক ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডিং করে। মূল বিষয়টা হচ্ছে কবিতা, মানে লেখকের একক আন্দোলন।

দুপুর মিত্র: আপনি কিভাবে কবিতা লিখেন?

মেসবা আলম অর্ঘ্য:  আগে কাগজ-কলমে লিখতাম। মধ্যে কম্পিউটারে লিখেছি। ইদানিং প্রায় প্রায় আবার কাগজ-কলমে লিখি। কাগজ-কলম সব জায়গায় পাওয়া যায়।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বিশ্ব কবিতা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

মেসবা আলম অর্ঘ্য:  বিশ্ব কবিতা তো বিরাট ব্যাপার। এত মানুষ, এত ভাষা, আবেগ, ইতিহাস, ভবিষ্যৎ। এর মধ্যে আমি একটু একটু জানি কেবল বাংলা এবং ইংরেজি। এই ক্ষুদ্র ধারণায় মনে হয়, প্রচুর ভাল কবিতা লেখা হচ্ছে। কবিতা একটা মূল ব্যাপার। গল্প, উপন্যাস, গানের কথা, ফিল্ম ইত্যাদিতে যেখানে আমার যা ভাল লাগে, কবিতার উপস্থিতির কারণে ভাল লাগে। যেন কবিতা থেকে নিয়ে নিয়ে এসব মাধ্যমগুলি নিজেদের উন্নত করেছে। এখন ঘটছে উল্টা ব্যাপারটা - অর্থাৎ, কবিতা এদের কাছ থেকে ফেরত নিচ্ছে। নতুন জোয়ার আসন্ন। আমার মতে পৃথিবীতে তেলের মজুত এবং কবিতার জোয়ার ব্যাস্তানুপাতিক। পিছুটানগুলি কাটিয়ে উঠতে হবে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। খারাপ পরিস্থিতিতে ভাল কবিতা লেখা হবে। 

দুপুর মিত্র: আপনার লেখালেখির শুরু কবে থেকে?

মেসবা আলম অর্ঘ্য:  খুব সম্ভব পঞ্চম (১৯৯১) বা ষষ্ঠ শ্রেনি থেকে - যেদিন বাংলা টেক্সট বইয়ে "আবার আসিবো ফিরে" প্রথম পড়েছিলাম।

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

মেসবা আলম অর্ঘ্য: কবিতা ভালবাসি, তাই। আরো কিছু গৌণ কারণ আছে - যেমন, কবিতা লিখলে যাঁরা আমাকে ভালবাসে, তাঁরা গালিগালাজ কম করে, ইত্যাদি।

দুপুর মিত্র: আপনি সাধারণত কোথা থেকে কবিতা লেখার বিষয় খুঁজে নেন? 

মেসবা আলম অর্ঘ্য: পরিস্থিতি থেকে।

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার বলে মনে করেন?

মেসবা আলম অর্ঘ্য:  যার যার প্রস্তুতি তার তার। আমি বাজারে গিয়ে প্রায় ইরেজার কিনে আনি। যা পড়ি ইরেজার দিয়ে মুছে মুছে দেয়ার চেষ্টা করি। তা না হলে সমস্যা হয়। আমার মনে হয়, বড় আবেগকে ধরতে হবে বেঁচে থাকার ভিতর, সরাসরি। বড় আবেগ একটা বাইম মাছ। আপনি কীভাবে আপনার ছাই তৈরি করবেন কেউ দেখিয়ে দিতে পারবে না।