লিখে ফেলে দিই পথের ধুলায়: শামীম সিদ্দিকীর সাথে অনলাইন আলাপ
Post date: Jun 9, 2014 1:33:37 PM
জন্ম ১ ডিসেম্বর ১৯৭২। কিশোরগঞ্জ শহরের অদূরবর্তী কড়িয়াইল গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স মাস্টার্স। আনন্দমোহন কলেজ ময়মনসিংহ-এ বাংলা বিষয়ে অধ্যাপনায় রত।
প্রকাশিত বই: ভূগোলের সবুজ বাকল, ১৯৯৭, বাংলা একাডেমি, অচেনা ফুলের লোভে, ২০০৯, ম্যাজিক লণ্ঠন
দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের সাথে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার সম্পর্ক থাকতেই হয় বলে মনে করেন কি? হলে কেন?
শামীম সিদ্দিকী: বিরোধের সূত্রটা মূলত সৃজনশীলতার।জীবনের উপলব্ধিকে কবি যেভাবে প্রকাশ করতে চান, প্রতিষ্ঠান মাত্রেরই তার সাথে সংঘাত অনিবার্য। প্রাচীন কাল থেকেই সম্রাট বা প্রমুখ জনদের সাথে কবিদের অযাচিত সংঘাতের ইতিহাস আছে। প্রতিষ্ঠানের একটি চরিত্র হলো এর স্থাবরতা। প্রতিষ্ঠান তার গর্বকে উপভোগ করতে চায়, সম্ভাব্য সকলভাবে। এই ডগম্যাটিজম-এর সাথে সৃষ্টিশীলতার বৈপরীত্য তত্ত্বীয়ভাবে অবশ্যম্ভাবী। একটা নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে লিটলম্যাগ আন্দোলনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার ব্যাপারটা মূলত এ কারণেই ঘটেছে।
দুপুর মিত্র: আপনার কাছে কবি হয়ে ওঠা বিষয়টা কি?
শামীম সিদ্দিকী: নানাভাবে মানুষ জীবনকেই প্রকাশ করে। কবিতা একটি উপায়।জীবন-সন্ধানী মানুষ প্রকাশের ভাষারূপে কবিতাকে যদি বেছে নেয়, তো কবিতার গতি-প্রকৃতির সঙ্গেগভীরভাবে মানিয়ে নেয়ার একটা বিষয়। তার চেয়ে বড় কথা, কবির মনের গতি-প্রকৃতি যখন কবিতার ধরণ এবং ধারণাকেও বিস্ময়কর নতুন নতুন মাত্রা দিতে থাকে। যে কারোক্ষেত্রে বিষয়টা এ রকমই হওয়ার কথা।
দুপুর মিত্র: কবিতা কি?
শামীম সিদ্দিকী: জীবনের এক অর্থপূর্ণ দলীল, মানবিক শ্রেষ্ঠত্বেরই প্রতিরূপ।
দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বাংলা কবিতার প্রবণতাগুলো কি?
শামীম সিদ্দিকী: জনপ্রিয় বই-আলোচক, নিবন্ধক, স্তাবক বা বিষোদগারক ব্যাপারটা ভালো বলতে পারবেন। আমি মনে করি না যে, সমসাময়িক কবিতা আমি যথেষ্ঠ পরিমান পড়ে থাকি। প্রজ্ঞা ও গভীর অন্তর্দৃষ্টির দুস্তর ঘাটতি আপনি লক্ষ করবেন হয়তো। বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কাব্য-ভাষার সন্ধান পওয়াও খানিকটা মুসকিল হতে পারে।
দুপুর মিত্র: সাহিত্য আন্দোলন কি কবিতাকে পরিবর্তন করে?
শামীম সিদ্দিকী: সাহিত্য-আন্দোলন সাহিত্য-আন্দোলন খেলা তেমন কিছু ঘটাতে পারে না বটে, কিন্তু কোন যুগে আন্দোলন সফলতা পেলে, এর যুগান্তকারী প্রভাব কবিতার ধরণ-ধারণ আমূল পাল্টে দিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে তিরিশের কবিতার সম্প্রসারিত প্রভাব। আবার বুদ্ধদেব বসুর করা বোঁদলেয়ারের একটি অনুবাদ ষাট দশকের কবিতাকে দারুণ পল্টেদিয়েছিলো।
দুপুর মিত্র: আপনি কিভাবে কবিতা লিখেন?
শামীম সিদ্দিকী: কাগজ-কলমেও লিখি, আবার কি-বোর্ডেও লিখি।
দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বিশ্ব কবিতা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
শামীম সিদ্দিকী: যান্ত্রিক সমাজে কবিতা নিষ্প্রাণ। ইংল্যান্ডের চেয়ে আয়ারল্যান্ডের কবিতা ভালো। এরকম আরও উদাহরণ দেয়া যায়। সমাজ জীবনে উত্তোরণের গতি-বৈচিত্র্য আরবহুমাত্রিকতা কবিতার জন্যে ভালো।
দুপুর মিত্র: আপনার লেখালেখির শুরু কবে থেকে?
শামীম সিদ্দিকী: যতোদূর মনে পড়ে স্কুলে, ১৯৮৩ সালে। ১৯৯৪-৯৫’র আগে লেখা কবিতার খাতাগুলো গ্রামের বাড়িতে উঁইপোকা খেয়ে নিয়েছে। আপনি কেন কবিতা লিখেন? ইচ্ছে হয় বলেই লিখি, মানবজন্ম যখন নিয়েই ফেলেছি। কেউ বলে আত্মরতি। লিখে ফেলে দিই পথের ধুলায়। আপনি মারিয়ে যাবেন, তাই তো স্বাভাবিক। ছন্নছাড়া কেউ যদি মমতা বা ভ্রান্তিবসে তুলে নেয় দুটি চরণ—মন্দ লাগে না।
দুপুর মিত্র: কবিতা লিখতে আপনার কতটুকু সময় লাগে?
শামীম সিদ্দিকী: কাগজে লেখার তো বিশেষ সময় লাগে না। কিন্তু কবিতা আমাকে খুঁজতে হয়, আবিস্কার করতে হয়। এ প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ, মোটামুটি সার্বক্ষণিক।
দুপুর মিত্র: আপনি সাধারণত কোথা থেকে কবিতা লেখার বিষয় খুঁজে নেন?
শামীম সিদ্দিকী: প্রকৃতি ও সমাজ থেকে।
দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার বলে মনে করেন?
শামীম সিদ্দিকী: প্রস্তুত মানুষরা কবিতা লিখবে-- কেন!? আমি তো মনে করি জীবনের নানান চিত্রে ভীষণভাবে অপ্রস্তুত হওয়া মানুষেরাই যুগে যুগে কবিতা লেখে। যা ইচ্ছা তাইলিখুন আপনি। সন্ধিজনিত বিপত্তি, মানে ‘যাচ্ছেতাই’ না হলেই চালিয়ে যান। গ্রামের লোকেরা বলে, ধরে-বেঁধে পিরিত আর ঘসে-মেজে রূপ আসলে হয় না। নগরে কিন্তু বিউটি পার্লার ব্যবসা ভীষণ জমজমাট!
শামীম সিদ্দিকীর কিছু কবিতা
মগ্ন তীরের গান
এখানে যে মগ্ন নৃত্য মাটির কণার সাথে মাটির কণার
অঘোর ঘোরের জন্মোৎসব তার তীর জেগে ওঠে ঘোর ঘন
অমাবস্যা রাতে। স্বেদ জমে জমে উত্তাপও জমে ওঠে ধীরে
রতিকৃত জলের আগুন। ধুয়ে নিয়ে গেছে স্বেদ -স্নিগ্ধতায়
স্বপ্নের আষাঢ়-আমি এই ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বাঁক থেকে বাঁকে
শাদা শাদা সকালের ঝাপটায় তীরে তীরে আটকা পড়ে গেছি
কেন এই লাবণ্যের রোদ নুয়ে পড়ে তীরে মগড়া স্রোতস্বিনী
কী যে ফর্সা রমণী তুমি! ও, আমি এই হতভাগ্যজন্মা এই
কলহাস্য দেখি। ঋতুকালে আষাঢ়ের ভেক, রক্ত স্নায়ুময়
পাহাড়ি উজান থেকে নেমে আসা পূর্বসূরি আগুনের ঢল
মুহূর্তে ভাসতে শেখে সীমাহীন মৃত্যু অপচয়ে-তীরে তীরে
দীর্ঘ দীর্ঘ পথে জমে থাকা প্রাণস্পন্দ ফসিলের কালো মণি
জমা মোহন্ত আগুন কী ফর্সা রমণী-মগড়া স্রোতস্বিনী-
আগুন জ্বালিয়ে ঘরে সব তাপ ফোঁটা ফোঁটা করে সব ত্বকে
ঠোঁটে-ঘ্রাণে, কোথায় কোথায় ধারণ করতে চাই! হে বিধাতা
আমাকে বিচ্ছিন্ন সবুজ পৃথিবী দাও আর এটুকু সাধ্যের
ছিটেফুঁটো- আমি তার লাবণ্যের বিচ্ছুরিত ক্ষীণ কণাটিও
ঘোর-স্বপ্ন অদেখা আড়ালে মুহূর্তেও হারাতে চাই না আর
চলা
অনেকটা পথ পায়ে পায়ে যাব বলে
অনেকটা চড়াই-উৎরাই...
মানুষের ভাল থাকার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে
শ্মশানের দুর্মর আসক্তিতে সে কি শুধু ছোটে
বাতাসের আশীর্বাদে জাগে না রাত্রি
সুপ্ত প্রতিশ্রুতি কিছু ভোরে-সূর্যোদয়ে
তোমাকে যে না চাইতেই মন দিয়ে বসে আছি
তোমার ছায়ার সাথে মিশে গেছে আত্মার সুঘ্রাণ
তোমাকে যা দগ্ধ করে
সেই অগ্নি
পোড়ে আমাকেও
ছায়া
এতই সামান্য আমি, না থাকলেও চলে
দণি ও পুব থেকে বাতাস এসে খেলে
পৃথিবীর খবরগুলো ধুলোবালি
পাতা ঝরে মানুষের আয়ু
যতই বিলুপ্ত হোক গাছপালা
সকলেই ছায়া উপাচারি
পারস্পরিক হত্যাগ্রহ ছাড়া
পথের কিনারে থাকে
অচেনা জলপাই
ঘরে তুলে নিয়ে যাই টুকরো টুকরো ছায়া
উপদ্রুত ছায়া অন্ধকার
তাদের আমি পাশে পাশে পাই
সামুদ্রিক
আমি সমুদ্রের কোলের উপর মুখ রেখেছিলাম
এ ছাড়া আমার কোন উপায় ছিলো না
সত্তার নাড়ীর মধ্যে জাগরিত অন্তহীন তরঙ্গ দুর্বার
পৃথিবীর সব জল এসে মিলে মিশে নুন হয়ে পড়ে
সব স্মৃতি-সুখ-দুরন্ত কামনা
সমুদ্রের ফেনার সাথে লেগে থাকে তার হাসি
জোয়ারের অগ্রভাগে জেগে থাকে তার চোখ
আমি সমুদ্রের কাছে যেতে চাই
আমি তার কাছে যেতে চাই
সমুদ্রের চোখের সাথে চোখ
অন্তহীন ফেনার সাথে তরঙ্গ উল্লাস
তার বাহু ও কোলের ভঙ্গি
সমুদ্রের শান্ত কথকতা-বিস্তৃত, বিপুল
এবং তা ঘোর বর্ষায় রাত্রিকালে ফুঁসে উঠতে পারে
আমি তার উত্তুঙ্গ ঊর্মিদোলায়
অভীপ্সার ডিঙ্গি ভাসাতে চাই
সমুদ্রের বুকের উপর অনর্গল আছড়ে পড়তে থেকে
আমি লোনা হতে চাই
পৃথিবীর সব জল সমুদ্রের দিকে আসে
আমি তার কাছে যেতে চাই
নীলার জন্যে কবিতা
নীলা
ঝরে পড়া তারারা হারায়, বনস্পতি পাতাদের ছায়া
যতোবার আমি তোমার বা নদীদের কাছ থেকে
(তোমার তো নদী উপমেয়, জল কালো রাতেরা, নদীরা)
চলে এসেছিলাম, ঠিক ততোবার করে মৃত্যুর মুখ দেখি, ছায়া
কী আছে এমন জানি সবুজের জলদ প্রবল! না-কি
ভুল দেখা রঙ, মাকড়সা কুয়াশা ভেতরে
ফুটিয়েছি ফোটানো মনন, মেঘ থেকে কুয়াশা তোমারও
অথবা ছিলো না কিছু; দেহ ঘড়ি মিলাবে বাতাসে
রঙ দিয়ে তুলি দিয়ে মন বানিয়েছে তোমাকে স্মরণ
তারপর রঙ সরে গেল, উবে গেলো কুয়াশা রোদের
তুমিও হারালে নীলা পাতাদের সবুজে প্রবাল
শুকনো পাতার বহু কাজ রয়ে গেছে শুকানো নগরে
জানি বলে হারানো মেনেছি। তাই হোক খেলা হোক ছায়া
ভালোবাসা জুয়াচুরি হোক, রাজনীতি রতি হোক প্রেম
আমি আর হারাবো কী ঠাঁই, পড়ে থাক খালি দেশলাই
পথে পথে। দুঃখকে পাঠিয়েছি দূরে, চীনদেশে, জমানো বাগানে
মেঘের তরুণ কোন উইপিং গাছ-জল ফেলে, ফোঁটা ফোঁটা জল
ভাটির প্রবাহ
সবুজ একটি ভোরের জন্যে
তমাল গাছের ছায়ার জন্যে
একটি মাত্র জন্ম আমার
ভেসে যায়
ভাটির প্রবাহে
কর্ণফুলী
তোমার কথার সঙ্গে সোমেশ্বরী
ভাটির স্রোতের টান
তোমার চোখের সঙ্গে
কর্ণফুলী
সমুদ্র সাম্পান
তোমাক মেলে না
কত কিছুর কথা বলো
সাজ করো
ডট কম ম্যাসেজ পাঠাও
কত কিছুই তৈরি মেলে
একজন তোমাকে মেলে না
দুঃখবীথি
সে আমার সারি-সারি সুগম্ভীর দুঃখবীথিমালা
সন্নিবদ্ধ অমাবস্যার গর্জনময় সমুদ্র প্রবাহ
বর্ষাকালীন গ্রামবাংলার বিষণ্ন বিকেল, ভেজারাত
চিনচিনে ব্যথা, সে আমার বাম পাঁজরের হাড়
দুর্নিরী স্বপ্ন প্রতিক্রিয়া
একচ্ছত্র সে এমনই
অনর্গল সে আমাকে দুঃখ দিতে পারে
নিঃশ্বাস
কালো কিংবা পীত-রঙের পুরো কিছু পর্দা দিয়ে
মুড়ে রেখো জানালাগুলো
ফুটন্ত হৃদয় থেকে যে কোন নিঃশ্বাস
সুন্দর এবং পবিত্র নিটোল
তোমার এই ঘুম ভেঙে দিতে পারে
হল্কা যে হৃদয়
আন্দোলিত পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে
অশ্রু
পৃথিবীতে চৌর্যবৃত্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে
বেশ্যাবৃত্তিও
হৃদয়বৃত্তি নয়
হায় হায় প্রেমিক সুজন
তোমার প্রতিটি অশ্রুর নিকেতনে
গজিয়েছে অনন্ত ক্যাকটাস
শীতপংক্তি
সুগভীর নিশ্ছিদ্র কুয়াশা
গুঞ্জরণের কম্পিত দুঃসংবাদ
হৃদহননের প্রকৃষ্ট প্রকৃতি
তোমার নীল অপরাজিতা যৌবন-শীত
শীত মানে যুদ্ধাবস্থা
সীমাহীন অশনি সঙ্কেত
ক্রমান্বয়ে জেঁকে আসা শীত
তোমার পালিয়ে যাবার মত নৃশংস
সঙ্গীত ও নৃত্যকলা
শীত মানে
স্বস্তিহীন আকাক্সাহীন প্রাণধারণের
তীব্রতাময় ক্রোধ
তোমার
অগ্নিশ্বাস বিচিত্রগমন
নিরাসক্ত নির্দয় ব্যভিচার
বিষণ্ণতা
একটা ফড়িং,
ফিকে নিশ্চুপ আর্দ্র জলাশয়
পাটপচা নর্দমাময় দুপুর
তপ্ত মাটি খসখসে গাছের বাকল
নদীতীর বরাবর বিপন্ন রেললাইন
মাকড়সার পুরোনো জাল
দেখা বা না দেখা
তোমাকে সামনে রেখে
তন্দ্রা ও দিবাস্বপ্ন
বহুদূর উড়তে থাকা ধুলোবালি মাখা ঝরা শিমুল
বৈশাখী মেলার মধ্যে দমকা হাওয়ায় আসা
আকস্মিক এক স্মৃতির সসার
জুতো
জুতোগুলো পড়ে আছে ধুলোর ভেতর
পা দুটিও পৃথিবীর পথে-প্রান্তে ধুলো-বালি
লতা-পাতা ঝরা দেখে খুব একটা আর বেরুতে পারে না
স্নায়বিক শক্তির মন্ত্র দিয়ে তুমি
নীলঅপরাজিতা দৃষ্টি আকাশ
নিরলস বন্ধ করে দাও
বহুদিন মনের মধ্যে শিশির ঝরা গুঞ্জন ভরে নিয়ে
আমি যেন বুঝি মহাকাল প্রদণি করে করে
তোমার অনির্দেশ্য দরোজার কাছাকাছি হেঁটে গেছি
ফাল্গুনের চাঁদের দিকে দৃষ্টি দিলে
সেও ঠিক তোমার মতোই
ঘাড় ঘুরিয়ে চুল আঁচড়াবে কি-না
খুব দেখার ইচ্ছে
কী কহিবো
কালিদাসের যপ্রিয়া আকাশবর্তিনী
আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে
নির্বাসন তো দুপক্ষেরই এ সময়ে
কর্মযজ্ঞেÑপুরগিরি চতুর্দেয়ালিকা
সারামাস বর্ষা দেখেছিনু
পোহাইলো দিবস রজনী, শ্রাবণেরও বিংশ সমাগত
দিনে বর্ষা, রাতে বর্ষা, উপকূলে সমুদ্র উত্তাল
ঝাপতাল কলতানে তটিনী প্লাবন, ভেকস্বর
উল্টোখটকা মীনদেশে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রলুব্ধ উজান
কী কহিবো আমি তারে!
তারে আমি দিবস রজনী
শাদা-বৃষ্টি জামরুল মেঘাচ্ছন্ন অভীপ্সা বিথারে মনোবনে ল বনস্পতি
তনুমন তমাল তরুর স্বরে বাহুপাশে বাঁধিবারে চাই!
আহা, সে তো কোন যপ্রিয়া নহে
এ কালের এক শল্য চিকিৎসিকা
নক্শী কাঁথার স্থলে প্রত্যহ সে শেলাই করে গর্ভ
ওগো মেঘ, দয়া করে তার মোবাইলে এক সুনিপুণ ম্যাসেজ পাঠাও
হ্যালো, এ কণ্ঠ বিরহকাতর এক বর্ষাহত সুতীব্র যুবার-হ্যালো-
শুনছি, বলুন
কী কহিবো আমি তারে!
বিরহ অঞ্চল
ঢাকা টু ময়মনসিংহ
অনিচ্ছুক নীলার থেকে মর্মান্তিক উল্টোদিকে ফেরা
বাসযাত্রার দুইপাশে নিবিড় সবুজ বনভূমি
মৃদু মেঘাচ্ছন্ন ফ্যাকাসে আকাশ
কার্তিকের অসময়ে
সদ্য বৃষ্টিভেজা
পুষ্প ফলহীন সারি সারি নিথর সবুজ
কী অসামান্য প্রগাঢ় বিরহ!
টুই টুই জলে ভারি পাতা
নীলার কথার মত তীব্র-তীক্ষ্ণ
আরণ্যক ও ইন্দ্রিয় জাগরুক
আমি এই বনভূমির নাম দিচ্ছি নীলা-বিরহ অঞ্চল
যদি সপ্ততলার ভিতে ত্রিভঙ্গসম্ভব স্বর্গের কামধেনু এই নীলা
পুষ্পবাণ উল্টোরথে ছুঁড়ে দিচ্ছে রুদ্ধশ্বাস প্রত্যাখ্যানের মেঘ