অনেককে ভালো লাগাতে হবে বা এরা আমার লেখা পড়বে, এমন ভেবে বোধহয় কেউ লেখেন না: সাবেরা তাবাসসুমের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Sep 23, 2014 3:51:07 AM

প্রকাশিত বই: কোলাহল নেই সেই পাখি,মা এখন বাক্সবন্দি

 

দুপুর মিত্র: আপনি কি বিশেষ কোনও পাঠককে সামনে রেখে লিখেন না বিশেষ অডিয়েন্সকে?

সাবেরা তাবাসসুম: লিখি বা লেখার চেষ্টা করি Ñ মূলত নিজের আনন্দ বা তাড়না থেকেই।  কবিতা তো সকলের অনুভবের বা ভালোলাগার বিষয় নয়। কোনো একজন পাঠক যদি আমার লেখা পড়েন সেটা আমার জন্যে অনেক বড় ব্যাপার। অনেককে ভালো লাগাতে হবে বা এরা আমার লেখা পড়বে Ñ এমন ভেবে বোধহয় কেউ লেখেন না।  

দুপুর মিত্র: সাহিত্যের কি সামাজিক বাধ্যবাধকতা আছে? এ নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

সাবেরা তাবাসসুম: সামাজিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টা অনেক ব্যাপক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপেক্ষিকও বটে। তবে কিছু বাধ্যবাধকতা তো থাকবেই।

দুপুর মিত্র: আপনার কাছে কবি হয়ে ওঠা বিষয়টা কী?

সাবেরা তাবাসসুম: আমার মতো অলস মানুষের কাছে কোনো কিছুই হয়ে ওঠার মতো হয় নি। আমার সমস্তটাই পাওয়া। তবে আমার সামান্য অভিজ্ঞতা বল, হয়ে ওঠার ব্যাপারটা সৃজনের মতই Ñ স্বতঃস্ফূর্ততা আর নির্মাণ। কবি মানে তো পাগল, ভর করা মানুষ, অসুখে ভোগা মানুষ। একটা কিছু আসর না করলে কেউ কবি হয় না। আর নির্মাণটা হচ্ছে চর্চা। কবিতার সাথে থাকতে হয় Ñ সে লেখা হোক বা না হোক। জগতে এই একটা বিষয়েই আমার বিশ্বাস।   

দুপুর মিত্র: কবিতা কী?

সাবেরা তাবাসসুম: জানি না দুপুর। আমার জানাশোনা খুব কম। একটা ঘটনার কথা বলি। আমার বাবার সাথে গাড়িতে করে ফিরছি Ñ সখীপুর থেকে টাঙ্গাইল শহরের দিকে। সম্ভবত ২০০০ সাল। পথে কোথাও একটা নামকরা দীঘি আছে। নামটা মনে নেই (আমার স্মৃতিশক্তি যাচ্ছে তাই রকমের)। রাত ১০ র কাছাকাছি। আমি বায়না করলাম দীঘিটা দেখব। আব্বা কেয়ারটেকারকে ডেকে গেট খোলালেন। চাঁদনী রাত। দীঘির পাড়ে একটা নৌকা বাঁধা। আব্বা বললেন, নৌকায় চড়বে? আমি লাফিয়ে উঠলাম। আমি আর আমার আব্বা নৌকায়। আব্বা দাঁড় বাইছেন। মাথার ওপর চাঁদ। আব্বা বললেন, তোমার মনে কি কোনো কবিতা আসছে? একটা গান ধরো তো মা। আমি ভাঙাচোরা গলায় সেলিম আল দীন স্যারের গান ধরলাম Ñ চাঁদের দিকে চেয়ে চেয়ে কে প্রথম বলেছিল চাঁদ...। ঐ মুহূর্তগুলোই আমার কাছে কবিতা। 

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বাংলা কবিতার প্রবণতা কী?

সাবেরা তাবাসসুম: এটা তো ব্যাপক বিষয়। দু এক কথায় কী বলব। প্রেম ছাড়া কবিতার কথা তো ভাবা যায় না। প্রেম তো আছেই। তবে যৌনতা আর অবদমন কারো কারো কবিতায় নতুন ভাষা নতুন মাত্রা পেয়েছে। দর্শন বা অস্তিত্বের সংকটও আমরা কবিতায় পাই।

দুপুর মিত্র: সাহিত্য আন্দোলন কি কবিতাকে পরিবর্তন করে?

সাবেরা তাবাসসুম: কখনো কখনো তো বটেই। এটা নির্ভর করে আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ততার ওপর। আর এই ব্যাপারটাতো দিন সাতেকের ভেতর পালটে যাওয়ার মতো না। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে থাকে। কবিতাও।

দুপুর মিত্র: আপনি কীভাবে কবিতা লেখেন?

সাবেরা তাবাসসুম: এটা বয়ান করা মুশকিল। কোনো কোনো সময় বিশেষ কিছু ঘোর তৈরি হয়, কখনও বিশেষ কিছু বিষয় মাথায় খেলা করে। কী করে বলি কখন কোনটা লিখি। আর কবিতা লিখতে তো পারি না। কোনো রকম চেষ্টাটা হয়তো হয।

দুপুর মিত্র: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের ফারাকটা কোথায়?

সাবেরা তাবাসসুম: এই ক্যানভাসটা বিশাল, দুপুর। এটা নিয়ে বলা কঠিন। ফারাক থাকাটা তো স্বাভাবিক। ওদের রাজনীতি অর্থনীতি ইতিহাস প্রতিরোধ সবকিছু মিলিয়ে ওরিয়েন্টেশেনটা আলাদা। স্বভাবতই ওদের বিষয় উপস্থাপন আলাদা হবে। যদিও শাসকের রক্তচক্ষু আর ক্ষুধার বিবর্ণ হাত সবখানে এক।

দুপুর মিত্র: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

সাবেরা তাবাসসুম: মাধ্যম পালটাচ্ছে। চিন্তার প্যাটার্ন পালটাচ্ছে। ব্লগ নির্দিষ্ট কিছু পাঠকের জন্য। এটা সকলের আওতার জিনিস এখনও হয়ে ওঠে নি। ব্লগ তার নির্দিষ্ট পাঠকের সাহিত্যের ভাবনায় কোনো না কোনো ভূমিকা নিশ্চয়ই রাখছে।

দুপুর মিত্র: লিটল ম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? না হলে কেন নয়?

সাবেরা তাবাসসুম: দুটো জিনিস তার তার জায়গায় তাদের মতো করে গুরুত্বপূর্ণ। এই তুলনাটা বোধহয় একটু অসমও। 

দুপুর মিত্র: ওয়েব ম্যাগ, ব্লগ ইত্যাদির মাধ্যমে একটা পালটা মিডিয়ার গঠন প্রক্রিয়া চলছে বলে আপনি মনে করেন কি?

এখানে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার বিষয়গুলোকে আপনি কীভাবে দেখবেন বা লিটল ম্যাগের প্রতিস্থাপন হিসাবে ভাবা যায় কি?

কোনো কিছুর প্রকাশ উদ্দেশ্য ছাড়া তো না। প্রতিষ্ঠানবিরোধীতার বিষয় থাকতেই পারে। তবে কোনো কিছুর প্রতিস্থাপন হয় বলে আমার মনে হয় না। 

দুপুর মিত্র: লিটল ম্যাগের সাথে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার সম্পর্ক থাকতেই হয় বলে মনে করেন কি? হলে কেন?

সাবেরা তাবাসসুম: যত দূর আমি জানি, লিটল ম্যাগাজিনের জন্ম হয়েছে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার জন্যেই। কেবলই পণ্য হয়ে ওঠা সাহিত্যের বিপরীতে সৃজনশীল নিরীক্ষাধর্মী সাহিত্য আর লেখক গড়ার তাড়না দাঁড় করিয়েছে লিটল ম্যাগাজিনকে। আর স্বল্প পুঁজির ব্যাপার তো ছিলই। কোনো কোনো লিটল ম্যাগাজিন যদি সেই চরিত্রগুলো হারাতে থাকে কিংবা নিজেই প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যগুলো ধারণ করে তো তার বিপরীতে আবার নতুন কিছু দাঁড়াবে। প্রতিষ্ঠান আর প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা  Ñ থাকবেই। 

দুপুর মিত্র: দৈনিক সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

সাবেরা তাবাসসুম: আমি যে খুব নিয়মিত পাঠক তা না দুপুর। এখন আমাদের জীবন অনেকাংশেই বিজ্ঞাপন আর বিশেষ দিবস নির্ভর হয়ে গ্যাছে। আমাদের দৈনিকগুলোর সাহিত্য পাতা এর খুব একটা বাইরে গিয়ে কিছু উপস্থাপন করে বলে আমার মনে হয় না। তবু যা পাচ্ছি তাকে অস্বীকার করা যায় না।