দৈনিক বা লিটলম্যাগের চরিত্রের খুব বেশি পার্থক্য নেই: কবি জাহিদ সোহাগের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jun 14, 2012 6:34:03 AM

প্রকাশিত বই: অসুখের শিরোনাম

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতাতে এলেন?

জাহিদ সোহাগ: কবিতা কেন লিখতে এলাম এর পেছনে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। তবে অনেকগুলো সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে। যেমন: প্রি-স্কুল বয়সের নিঃসঙ্গতা এবং মানসিক পীড়ন থেকে ভেতরে ভেতরে একটি জগৎ নির্মাণ করি- এখন মনে হয় ওই বয়সের অনেক ঘটনাই হেলুসিনেশন অথবা বাস্তব ও কল্পনার মিশ্রণে গড়ে উঠেছিল। এছাড়া ওই সময়ে প্রকৃতির রহস্য খুব সহজে উন্মোচন হয়ে যায় এবং চারপাশের জগৎ থেকে নিজেকে একেবারে খাপছাড়া মনে হত। যদিও এখনও ভেতরে ভেতরে আমি উদ্বাস্তু, আমার দেশ নেই, পরিবার নেই, সম্পর্ক নেই। এসব কারণে জীবন আমার কাছে ল্যাবরেটরির টেবিল ছাড়া কিছু নয়, যেখানে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করে চলছি। এ কারণে নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া প্রকাশে কবিতা লিখতে শুরু করি। অবশ্য ওই সময় আমি ছবি আঁকার চেষ্টাও করেছিলাম। কিন্তু কবিতা লেখার অনুকূল পরিবেশ ও উপাদানের সহজলভ্যতা এখানে আমাকে থিতু করে। তবে কবিতায় কি আমার চিরকালের বাস? না, এমন কখনো মনে হয় না। অন্য মাধ্যমেও আমার আগ্রহের শেষ নেই। এক কথায় বলা যায় আমি কবিতা নয়, শিল্পের কাছে সমর্পিত। যা জীবনের মধু ও বিষ দুটোই পানের পেয়ালা।

দু: ত্রিপুরার কবিদের সাথে আপনার বিশেষ সম্পর্ক আছে। সেখানকার কবিদের সম্পর্কে আপনি কিছু বলবেন? বাংলাদেশের কবিতা আর ত্রিপুরার কবিতার একটা তুলনা দেখাতে পারবেন?

জা: শুধু ত্রিপুরা নয়, পশ্চিমবঙ্গের কবিদের সঙ্গেও আমার বন্ধুত্ব আছে। ত্রিপুরার কবিতা সম্পর্কে বলতে গেলে বলা যায়, সেখানকার কবিতা বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ থেকে পৃথক। অনেকেই নতুন কবিতা লেখার চেষ্টা করছেন। তাদের চেষ্টায় মিলিত প্রবাহ আছে। তুলনামূলক আলোচনা না করে বরং ‘তিন বাঙলার শূন্যের কবিতা’ থেকে শূন্য দশকের একটি মোটামুটি ধারণা পাওয়া যাবে। নব্বই দশকের কবিরা বাংলাদেশে অনালোচিতও নন।

দু: আপনার সমসাময়িক কবিতা নিয়ে আপনি কিছু বলতে চান?

জা: আমাদের সময়ে কবিতায় নতুন নিরীক্ষা তৈরি হয়েছে। এ সময়ের কবিতা বক্তব্যধর্মিতা পরিহার করে বহুমুখী চেতনার চর্চা শুরু করে। কাঠামোগত পরিবর্তনও এনেছে।

দু: বাংলা কবিতা নিয়ে আপনার পর্যবেণ বলবেন?

জা: ‘বাংলা কবিতা’ অনেক দীর্ঘ প্রসঙ্গ। আমি বলতে চাই তিরিশোত্তর বাংলা কবিতা নিয়ে। তিরিশের বাংলা কবিতায় যে আধুনিকতাবোধ বিশেষত জীবনানন্দের যে প্রকৌশল- সেখান থেকে আমরা কিছুই শিখতে পারিনি। নইলে পরবর্তীতে বাংলা কবিতায় এক অপচয় হত না।

দু: আমাদের দেশে অনেক কবিই এখন দৈনিকের দিকে ঝুঁকছেন। এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

জা: দৈনিকে ঝুঁকলেই কি আর না ঝুঁকলেই কি- তা আমি এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। দৈনিক বা লিটলম্যাগের চরিত্রের খুব বেশি পার্থক্য নেই। আসল কথাটা হচ্ছে সে কি লিখছে। তা দিয়েই তাকে বিচার করা হবে।

দু: লিটলম্যাগে কবিতা চর্চা বলে কিছু কি হয়? হলে সেটা কেমন? না হলে কেন?

জা: কবিতা চর্চা ব্যক্তিগত ব্যাপার। লিটলম্যাগ বা যে কোনো প্রকাশনা তাকে প্রকাশ করে। কিন্তু তার দায়িত্ব একজন লেখকের মেজাজ ও ক্ষমতা বুঝে তার কাছ থেকে নানা রকম লেখা আদায় করে নেওয়া। এ জন্য সম্পাদকের যোগ্যতা থাকা চাই। আমাদের সম্পাদকেরা তো তালপাতার সেপাই। বন্ধু ও দাস সংগ্রহ করাই তার কাজ।

দু: আপনি কাদের কবিতাকে মূলত অনুসরণ করেন বা করতে চান?

জা: আমি ভালো কবিতার থেকে নতুন কবিতার অনুসরণ করি। কেউ সারা জীবনেরও নতুন কবিতা নাও লিখতে পারেন। কোনো তরুণ দু’একটা নতুন কবিতা লিখে ফুরিয়েও যেতে পারেন। শিল্প আমার কাছে নিরন্তর নিরীক্ষার বিষয়। ‘পেয়েছি’ বলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে লিখলাম তা নয়।

দু: এখানকার কবিদের গোষ্ঠীচর্চা বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

জা: নিজের কব্জিতে জোর না থাকলে তো গোষ্ঠী নিয়েই লড়তে হয়। এতে বড়জোর একজন বানরকে মিডিয়ায় হনুমানের খ্যাতি দেওয়া।

দু: প্রথম আলো বাংলা কবিতা বা বাংলা কবিতার চর্চার ধারাকে বিশেষভাবে তি করছে। আপনার কি এ রকম মনে হয়? হলে কেন? না হলে কেন?

জা: সাহিত্য কোনো সম্পত্তি বা সুনাম নয় যে তার ক্ষতি করা সম্ভব। প্রথম আলো তার প্রোপাগান্ডা নিয়ে চলবে, অন্যেরা চলছে, আমরাও চলছি। আমরা সবাই নিজেদের আদর্শের বাস্তবায়ন চাই। তা ভালো না খারাপ তা ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। প্রথম আলো যদি কাউকে কবি বানায় তাহলে কি তিনি কবি হয়ে যাবেন? আবার কারো লেখা কখনোই ছাপলো না তার কি পাঠক থাকবে না? আমি এসব ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করি না। নিরন্তর লিখে যাওয়াই কবির কাজ। কেউ ছাপলে ভালো, না ছাপলেও ভাই। এই যুগে প্রকাশের মাধ্যমের অভাব নেই।