গুরুজনদের ‘শোনা যায়, বলা হয়’ মার্কা ইতিহাসে লাথি মেরে নিজেদের মেধা-মনন ও বিচার-বিবেচনা খাটিয়ে তারা সিদ্ধান্তে আসতে পারছে: অমি রহমান পিয়ালের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Aug 31, 2012 8:43:51 AM

দুপুর মিত্র: ব্লগিংকে রাজনৈতিকভাবে নেওয়ার বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?

অমি রহমান পিয়াল: এক কথায় বললে ইতিবাচক মনোভাবেই। কারণ শেষমেষ এর প্রভাবটা আমার নিয়তি নির্ধারণ করে দিয়েছে, আমূল বদলে দিয়েছে আমার জীবনটাকে। ভেঙ্গেই বলি। বাংলা কমিউনিটি ব্লগিং যেদিন থেকে শুরু হলো, সেদিন থেকেই ব্লগিংয়ের রাজনীতিকরণ শুরু। তখনও ছাপা শুরু না হওয়া এক পত্রিকায় দীর্ঘ অলস যাপন, বন্ধু ও সহকর্মী ব্রাত্য রাইসু ঠিকানা দিলো ব্লগের। পেশা তখন ক্রীড়া সাংবাদিকতা, ভাবলাম একটা প্র্যাকটিসের মধ্যে থাকা যাবে, চলমান ম্যাচগুলোর রিপোর্ট ব্লগে পোস্ট করবো। তাছাড়া কবিতা লেখারও একটা বাতিক ছিলো, ছাপার তাগিদ হয়নি, সেগুলোও ওখানে তুলে দিবো। প্রথম দুতিনটা পোস্ট আমার ঠিক তাই ছিলো। অল্প ক'জন মাত্র ব্লগার তখন, সবার পোস্টই তাই পড়া হয়। তখনই চোখে পড়লো অত্যন্ত আপত্তিকর ভাষায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করা হচ্ছে, অপমান করা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের, মুক্তিযুদ্ধের রূপকার শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের। এবং সবই করা হচ্ছিলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে। স্পষ্ট করে বললে জামাতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির ও ইসলামী ছাত্রী সংস্থার ছেলে-মেয়েরা (যাদের অনেকেই জামাতের শীর্ষ নেতাদের সন্তান-পরিজন) খোলাখুলি এই কাজটা শুরু করলো। তারা ভারত বিরোধিতার নামে পাকিস্তান প্রীতিতে কোনো লুকোছাপা রাখলো না, ভারতের দালাল আওয়ামী লীগ পাকিস্তানকে ভেঙ্গে বাংলাদেশ করে ভারতের স্বার্থ রক্ষা করেছে, এখনও করে যাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।অবাক ব্যাপার হচ্ছে এসবই হচ্ছিলো কর্তৃপক্ষের উন্মুক্ত প্লাটফর্ম নীতির সুবিধা নিয়ে এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতায়ও। শুরুতে সপ্তাহের সেরা ব্লগার বলে একটা স্বীকৃতি ছিলো, ব্লগারের নাম ছবিসহ স্টিকি করা হতো প্রথম পৃষ্টায়। দেখা গেলো সৃজনশীল লেখার জন্য যে ব্লগারটি এই স্বীকৃতি পেলেন, তার সঙ্গে জোড়া মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী পক্ষের প্রতিনিধি ওই ব্লগারদের কাউকে না কাউকে সেখানে রাখা হচ্ছে। তাদের লেখনির সারবেত্তা তো বললামই আগে।

       

তো শিকেয় উঠলো ম্যাচ রিপোর্ট, কবিতা। আমি জবাব দিতে শুরু করলাম, তাদের মিথ্যেগুলো একে একে ধরিয়ে দিতে শুরু করলাম। এজন্য আমাকে পড়াশোনা ধরতে হলো, কারণ ওরা কোনো প্রমাণ ছাড়াই যা তা লিখলেও আমি সেগুলো একদম তথ্য-উপাত্ত সহকারে মিথ্যা প্রমাণের রাস্তা নিলাম। পরিণামে ব্যাপারটা দাড়ালো আমি আওয়ামী লীগের চামচা এবং ভারতের দালাল হিসেবে পরিচিতি পেলাম। তবে শুধু ওদের কাছেই। আম পাঠকরা এবং স্বাধীনতার পক্ষের ব্লগাররা ঠিকই জানলো আমার তৎপরতার নেপথ্যে ঠিক কি কাজ করেছে। লড়াই এখন ব্লগ থেকে ছড়িয়েছে ফেসবুকে। আমি এখন বাকিসব বাদ দিয়ে ওই কাজটাই করে যাচ্ছি। তাদের অপপ্রচারের জবাব দেওয়া এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বস্তুনিষ্ট উপস্থাপনা। কোনো সংবাদমাধ্যমে হয়তো আমি নিউজ এডিটর হয়ে স্বচ্ছল একটা জীবন বেছে নিতে পারতাম, কিংবা সত্যি সত্যিই আওয়ামী লীগের সঙ্গে লাইন ঘাট করে একটা ধান্দা বাগিয়ে নিতে পারতাম। আই ডিডনট, আমার কাজটাই ঠিকমতো করে যাচ্ছি এবং যাতে করে যেতে পারি তার পেছনেই আমার যাবতীয় শ্রম।

দু: বাংলাদেশে সাইবার জগতকে কি আপনি এখন অনেক স্বাধীন বলে মনে করেন?

অ: সাইবার জগত বলতে তো অনেক কিছুই এসে পড়ে। হ্যা স্বাধীন বলে মনে করি। কারণ এখানে যে কেউ যে কোন নাম নিয়ে একটা ওয়েবসাইট খুলে ফেলতে পারে এবং সেটা দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক তৎপরতা চালাতে পারে, সামাজিক অনাচার কিংবা মূল্যবোধবিরোধী চর্চায় লিপ্ত থাকতে পারে। বাংলায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর ওয়েবসাইট আছে যেখানে বন্দুক চালানো থেকে শুরু করে বোমা বানানোর দীক্ষা মেলে। এসকর্ট সার্ভিসের জন্যও রয়েছে ওয়েবসাইট। এর বাইরে ব্লগ কিংবা ফেসবুকে একাধিক পরিচয়ে একাধিক কার্যক্রম চালানো যায়। নিজেকে বাহবা দিয়ে আকাশে তোলা যায়, প্রতিপক্ষকে গালি দিয়ে মিথ্যা গল্পে কলঙ্কিত করা যায়। দেশের প্রধানমন্ত্রীর নারীত্ব নিয়ে তামাশা করা যায়। সবই সম্ভব। ব্লগগুলোতে মডারেশন রয়েছে, তাই ওখানে এখন ইচ্ছা করলেই যা তা করা যায় না।এর বাইরে সাইবার জগত স্বাধীন। মাঝে কিছু কর্পোরেট দালাল ব্লগে সাইবার আইন চালু করার জন্য বেশ তৎপর হয়েছিলো। এরা সফল হলে আমার লেখালেখি বন্ধ হয়ে যেতো। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে লেখাটা হতো ব্যক্তি অবমাননা, সে কারণে নিষিদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখলে সেটা হতো বন্ধু রাষ্ট্রের প্রতি উস্কানিমূলক অবমাননা।

দু: ব্লগিং জগতে কোন কোন ধরনের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে আপনি মোটাদাগে চিহ্নিত করতে পেরেছেন? এইসব রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার পজিটিভ ও নেগেটিভ দিকগুলো কি কি ?

অ: এ প্রশ্নের উত্তরটা শুরুতেই দিয়ে দিয়েছি। আর প্রিসাইসলি বললে এখানে পক্ষ-বিপক্ষ নির্ধারণ করে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এবং বিপক্ষের শক্তি। পাশাপাশি সরকারের, সরকারী দলের, সরকারি অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের নিয়ে সমালোচনামূলক লেখালেখি-যার বেশিরভাগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এগুলোরও জবাবও আসে, সেটাও রাজনৈতিক রংয়েচংয়ে মুখ রাঙিয়ে। পজিটিভ দিক হচ্ছে সমাজ সচেতনতা, ইতিহাস শুদ্ধভাবে জানার চেষ্টা, জাতীয়তাবাদ ও সংস্কৃতিকে ধারণ করার তাগিদ জন্ম নেওয়া। নেগেটিভ দিক হচ্ছে যুক্তির বদলে মারকুটে লেখা চালাচালি। অবশ্য সীমাহীন অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যুক্তি চলে না, যেখানে যুক্তি এবং প্রমাণ দিলেও সেটা তারা বাতিল করে তালগাছটা নিজের মালিকানায় রেখে দেয়।

দু: সাইবার জগত উন্মুক্ত হওয়ার কারণে অনেকগুলো গ্রুপকেই এখন বেশ সক্রিয় দেখা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের এবং বিপক্ষের এই দুইভাবে যদি আমরা দেখতে চাই, তাহলে এইসব অবস্থান ও কর্মকাণ্ডকে আপনি কিভাবে বিবেচনা করবেন?

অ: মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে যতগুলো গ্রুপ সক্রিয় তার একশভাগের পাঁচ ভাগও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নেই। এর কারণ এরা সিস্টেমিটেকালি অপপ্রচার চালায়। আপনি ফেসবুকের শীর্ষ দশটা ছাগুপেইজকে যদি ফলো করেন, তাহলে দেখবেন এরা বাই রোটেশন কিছু প্রোপোগান্ডা চালাচ্ছে, এগেইন অ্যান্ড এগেইন। ঘুরে ফিরে দেখা গেলো দুই মাস পর একই পোস্ট আবার পড়েছে। বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একদমই হাতে গোনা। এসবে সক্রিয়দের বেশীরভাগেরই আবেগটাই সম্বল, ইতিহাসের পাঠ নেই। তো তারা পিছিয়ে আছে।সবাই্ নয়, কারো কারো সেই তাগিদটা জন্ম নিয়েছে। তাই অনেক নতুন ব্লগার উঠে আসছে যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চমৎকার সব পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন। যেমন এই মুহূর্তে প্রীতম দাস, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চমৎকার কাজ করছে।

দু: আপনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক কাজ করছেন। একটি প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধকে দেখেন নি, তাদের ব্যাপারে আপনার কি মনে হয়? মানে তারা মুক্তিযুদ্ধ, দুই দলের ঝগড়া-ঝাটি, এনজিওকরণ এইসব বিষয়কে কিভাবে দেখতে চাচ্ছে?

অ: দীর্ঘ অনেকদিন পরপর কয়েক প্রজন্মই স্বাধীনতার বিভ্রান্তিকর ইতিহাস জেনেই বড় হয়েছে। তাই মুক্তিযুদ্ধ তাদের অনেকের কাছে বিব্রতকর একটা ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছিলো। কিন্তু আমাদের দীর্ঘ লড়াইয়ে ছাগুদের অনেক ছেদো মিথই আমরা সফলভাবে ভেঙ্গে দিয়েছে। ছেলেপুলে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করছে, তাদের পূর্বপুরুষের জন্য গর্বিত হচ্ছে,যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে মাঠে নেমেছে, কোনটা ছাগু কোনটা স্বাধীনতাবিরোধী অপপ্রচার বুঝতে শিখেছে, আর এসবই ঘটে গেছে গত চার-পাঁচ বছরে। অনলাইনের সুবাদেই। তাদের মনোভাব বদলেছে এবং বদলাচ্ছে। মোটের উপর গুরুজনদের ‘শোনা যায়, বলা হয়’ মার্কা ইতিহাসে লাথি মেরে নিজেদের মেধা-মনন ও বিচার-বিবেচনা খাটিয়ে তারা সিদ্ধান্তে আসতে পারছে।

দু: অনেকেই বলে থাকেন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা সাইবার জগতে অনেক শক্তিশালী। এটা কোন অর্থে? যদি তারা শক্তিশালী হয়ে থাকেন তবে তারা কিভাবে এত শক্তিশালী হয়ে ওঠলেন? এর পেছনে আওয়ামীলীগ বা বামপন্থি গোষ্ঠীর ব্যর্থতাগুলো কি?

অ: কারণ হচ্ছে জামাতে ইসলামী শুরু থেকেই সাইবার জগতের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। দেশের শীর্ষ প্রোগ্রামারদের বেশীরভাগই জামাতি ছিলো, শীর্ষ ব্লগের মালিকানায়ও রয়েছে তাদের অংশীদারিত্ব, তারা এ ব্যাপারে একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং বাজেট নিয়েই মাঠে নেমেছিলো।বিশাল সংখ্যক কর্মীদের নেট ব্যবহার, ব্লগিংয়ের হাতেখড়ি দিয়ে তারা দিন-রাতে বাই রোটেশন ব্যবহার করছে। এ জন্য তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। বিপরীতে আওয়ামী লীগের দলগতভাবে অনলাইন তৎপরতা শূন্যের একটু ওপরে। আমরা যারা একটিভ তাদের জামাত-শিবির আওয়ামী লীগ বলে আর আওয়ামী লীগও ভাবে আসলেই হয়তো আমরা তাদের রিপ্রেজেন্ট করছি। এই হলো অবস্থা। বামপন্থী দলগুলোরও একই অবস্থা। তবে সেই বাম বলতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বাম বোঝাচ্ছি। চীনা পন্থী বা বদরুদ্দিন উমরপন্থীরা জামাত শিবিরের মতোই লেখালেখি করে। তাদের মিথ্যা আরো পরিশীলিত মিথ্যাচার। বেশ জ্ঞানী বয়ানে বিভ্রান্তি ছড়ায় তারা। এবং ইদানিং জামাত শিবিরের হোমওয়ার্কটাও তারা করে দিচ্ছে। আমাদের জবাবে জামাতিরা এখন ফাকফোকড় আবিষ্কার করতে পারছে এদের সহযোগিতায়।

দু: অনেকেই বলে থাকেন বুদ্ধিজীবী বা তরুণ বুদ্ধিজীবীদের অধিকাংশই আওয়ামীবিরোধি বা প্রোবিএনপি। আপনিও কি তাই মনে করেন? এটা হলে কারণটা কি? তরুণদের ভেতর আওয়ামীলীগের বা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দলগুলো কেন পজিটিভ হয়ে ওঠেনি বা ওঠতে পারছে না?

অ: বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞাটা আমার কাছে আসলে ক্লিয়ার না।মানে প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধিজীবীদের আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবেই দেখে আসছি। সেই বিচারে আমার কাছে (উদাহরণ হিসেবে) শামসুর রাহমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক আর আল মাহমুদ জামাতিদের দালাল। আর এখানে যদি আওয়ামী লীগকে টেনে আনা হয়, বাংলাদেশের শিক্ষিত প্রজন্মের ৭৫ ভাগই আওয়ামী বিরোধী কারণ তারা স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রপোগান্ডাগুলোর মধ্য দিয়েই তাদের শিক্ষাকাল অতিবাহিত করেছে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে সমর্থন হয়তো পাচ্ছে না, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ইস্যুতে তাদের কিন্তু ব্যাপক সমর্থন মিলেছে যার প্রতিফলন গত নির্বাচনে দেখা গেছে। তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছে। আওয়ামী লীগ সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েই তাদের ভোট পেয়েছে। এরা প্রো বিএনপি না একারণেই যে খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের আগলাতে যেসব বিবৃতি দিয়েছেন তার প্রতি তাদের বিবেক কখনও নৈতিক সমর্থন দিবে না। তারা আওয়ামী লীগকে অপছন্দ করতে পারে, তীব্র সমালোচনা করতে পারে। কিন্তু ওই যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতেই, বিচারটা সুষ্ট অনুষ্ঠানের স্বার্থেই তারা বিএনপি-জামাত জোটের বিরোধিতা করবে। এদের অনেকেই সমাজতান্ত্রিক আদর্শের কথা বলে বটে, তবে ধারণ করে না।

দু: বিএনপির একটা বড় অংশ ছিল এক সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেরই শক্তি। কেবল তারা আওয়ামীকরণকে মেনে নিতে চান নি বলে নতুন কোনও দলের মাধ্যমে কাজ করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বর্তমানে বিএনপির বড় অংশই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি হয়ে ওঠছে। বা আওয়ামীলীগ-বিএনপি কেউই মুক্তিযুদ্ধকে এখনও পর্যন্ত ধারণ করতে পারে নি। আপনার কি এরকম মনে হয়? হলে কেন না হলে কেন নয়? এক্ষেত্রে ব্লগিং কি ধরণের কাজ করতে পারে?

অ: বিএনপির একটা বড় অংশই একসময় ছিলো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। এক মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার সাইনবোর্ড দেখিয়ে রাজাকার আবদুর রহমান বিশ্বাসকে প্রেসিডেন্ট, শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানানো হয়েছে। এবং বিএনপির কার্যকলাপ যেমন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পুনর্বাসন ও রাজনৈতিক সহযোগিতা,পৃষ্টপোষকতা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, আত্মসমর্পনের জায়গায় শিশুপার্ক বানানো, বধ্যভূমিতে ফান রিসোর্ট বানানো এসব বরাবরই আমাদের মূল চেতনার বিপক্ষে গেছে। জিয়াকে জোর করে স্বাধীনতার ঘোষক বানানোর হাস্যকর চেষ্টা তো ছিলোই। জামাত জামাতের জায়গায় গেছে, কিন্তু বিএনপি তৈরি হয়েছিলো মুসলিম লীগ, পিডিপি, ন্যাপ ভাসানীর কিছু চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীকে নিয়ে। আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে বিএনপি হয়নি। স্বাধীনতার পর নিষিদ্ধ দলগুলোর নেতা কর্মী সমর্থকদের নিয়েই চলছে বিএনপি। যারা জামাত থেকে নিজেদের একটু আলাদা মনে করে, কিন্তু মনোভাব একই। অন্যদিকে ৭৫এর ১৫ আগস্টের পর ব্যাপক বিরূপ অপপ্রচার, প্রায় ১৫ বছরের সেনাশাসনে দমন পীড়নের শিকার এবং ব্যাপক ভাংচুরের মধ্য দিয়েও আওয়ামী লীগ ঠিকই টিকে আছে। ক্রমাগত ষড়যন্ত্র, শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার প্রচেষ্টা, দলে ভাঙন, স্যাবোটাজের পর ফিনিক্স পাখীর মতোই তারা ফের নবজন্মে।এই টিকে থাকার লড়াইটাকে আমলে নিলেই কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রতি একটা যৌক্তিক সফটকর্ণার আসা উচিত। একমাত্র আওয়ামী লীগই মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে আর এ কারণেই চল্লিশ বছর পর হলেও আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখতে পাচ্ছি এই বাংলার মাটিতে। হয়তো তারা সফল হবে না। হয়তো সত্যিই একটা সফল সেনা অভ্যুত্থান হয়ে যাবে, হয়তো জঙ্গী হামলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব, হয়তো আমেরিকা-সৌদি আরব-চীনের ত্রিমুখী চাপে আগামী নির্বাচনে কোনো এক ভানুমতির খেলে আবার বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় আসবে। গোলাম আযম হাসতে হাসতে জেল থেকে বের হবে, নিজামী-মুজাহিদের গাড়িতে আবারও উঠবে জাতীয় পতাকা। কিন্তু আওয়ামী লীগ বলতে পারবে, আমরা চেষ্টা করেছিলাম। আমরা প্রতিশ্রুতি রেখেছিলাম। আমি অন্তত এভাবেই দেখি।

        এক্ষেত্রে ব্লগিং যেটা করতে পারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুটাকে জিইয়ে রাখতে পারে। আওয়ামী লীগ কিন্তু বিচার করছে না। সরকার বাদী হয়ে মামলা করার শর্তটা পূরণ করেছে মাত্র। যেটুকু দীর্ঘসূত্রিতা তা প্রয়োজনেই, আটঘাট শক্ত করতেই। বিচার পুরোপুরি এখন বিশেষ ট্রাইবুনালের এখতিয়ারে। এই ট্রাইবুনালকে সর্বশক্তিতে সমর্থন দেওয়ার কাজটি করতে পারে ব্লগ সেরকম যৌক্তিক লেখনি দিয়ে মানুষকে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করে। যাতে কোনো দূর্ঘটনায় সরকার বদলে গেলেও স্পেশাল ট্রাইবুনালে কেউ বাদ সাধতে না পারে। বিচার যেন শেষ হয়। তাতে অমি রহমান পিয়ালও শান্তিতে মরতে পারবে।