আজাদুর রহমানের স্মৃতিকথা পুরনো ছবি/ফ্ল্যাশব্যাক

Post date: Nov 14, 2014 5:06:29 PM

(আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যের ফর্ম বাংলা ভাষায় তেমন চর্চিত নয়। আবার এখানে কিছু কুসংস্কারও রয়েছে। যেমন মনেই করা হয় কেবল বুড়োদের স্মৃতি থাকে। তরুণদের নয়। মানে বুড়ো লেখকরাই আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথা লিখবে। তরুণরা এটা লিখবে না। কিন্তু এটা তো জাস্ট একটা সাহিত্যের ফর্ম। যে কোন সময় যে কোন বয়সে যে কেউ- এই স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনী লিখতে পারে।

এবার আমার টার্গেট এই স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনী লেখার প্রচলিত বা প্রথাগত ফর্মটাকে ভেঙে দেওয়া। এখন থেকে অলস দুপুর ওয়েব ম্যাগাজিনে যে কোনও বয়সের যে কোনও লেখকের স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনী ছাপা হবে। অলস দুপুর ওয়েবম্যাগে সকলের স্মৃতিকথা লেখার আহ্বান জানাচ্ছি। স্মৃতিকথা লেখার ভেতর দিয়ে মিথ্যা বা ভুয়ো আত্মজীবনী লেখার জায়গাটাও কমে আসবে।

আসুন আমরা স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনী লেখার প্রচলিত বা প্রথাগত ফর্মটাকে ভেঙে দেই।-দুপুর মিত্র)

স্মৃতিকথার বিসমিল্লাতে জন্মবাস্তুযোগে যেমন একটা গোঁড়াপত্তনি করতে হয়, কিংবা ঢেউয়ে ঢেউয়ে উঠে গিয়ে মহাজীবনের শাখায়-পাতায় নেমে নেমে লাগাতার বর্নণা করা লাগে, আমার তেমন হয় না। ফাসব্যাকে চোখ রাখলেই শুধু আকাশের পরে আকাশ, ছড়িয়ে আছে ছেঁড়া ছেঁড়া ছায়াছবি। দৃশ্যের পর অন্য দৃশ্যজোড় জমতে শুরু করে। কাউকে আর অপছন্দ করার জো থাকে না, অতীতের টাণেলে আটকা পরা প্রতিটা অভিজ্ঞতাই তখন সমান সমাদরের সৌখিন মাছ। সেকারণেই আমি গুছিয়ে আমার জীবনকথা বলতে পারিনি কখনও। ... কোন কিছু ভাবার আগেই ফালতু অথবা এক অসংলগ্ন স্মৃতি আনমনেই ছবি হতে শুরু করে মাথার ভিতর। এই যেমন এখন, পঁচিশ বছর আগের এক সিনেমার ফিতে ঘুরতে আরম্ভ করেছে। ছবির নাম-ওমর শরীফ। জসিম-ওয়াসিম অভিনীত ওটাই ছিল আমার দেখা প্রথম ছবি। মফস্বলকে হুলুস্থুল করে দিয়ে সবে একটা সিনেমা হল বসেছে মাত্র। অলোচনার সাবজেক্ট একটাই- জসিম-ওয়াসিম। রাজপুত্রদ্বয় মর্তের নাকি তেপান্তরের কোন স্বপ্নদ্বীপের! আর জাম্বু ! সে কী কামরুপ কামাক্ষ্যা থেকে উড়ে আসা মানুষরুপী এক দৈত্য! হয়ত হতেও পারে! কিন্তু সে যে একজন হারামিলোক তা নিশ্চিত। বিশ্বাস করতাম, বলেই কী বছর কয়েক পরে স্বপ্নে দেখেছিলাম জাম্বুকে, ভয়ংকর দাঁতাল হাসি দিয়ে শয়তানটা হো হো করে হত্যার জন্য তেড়ে আসছিল আমার দিকে।

২... সিনেমা হলে সবচেয়ে চাঙ্গা মুহুর্তটা দেখছিলাম ঈদের দিন। মনে আছে, একবার এক কুরবানি ঈদে গুনাইবিবি লেগেছিল। রেওয়াজ মত নামাজ শেষ করেই হলের দিকে ছুটে গিয়েছিলাম। যে ভাবেই হোক ফাস্ট শো-টা ধরতে হবে। ঈদের দিনে নির্ঘাত ব্ল্যাক হবে। ব্ল্যাকে টিকিট কাটার মধ্যে একটা অন্যরকম বাহাদুরি ছিল। আমি অবশ্য তখনও ঠিক শেয়ানিগিরি দেখানোর মত বড় হয়ে উঠিনি। ছিল মামাদের যুগ। যা কিছু মাস্তানি-তাঁরাই করতেন। এ ব্যাপারে সিদ্ধ হস্ত ছিলেন মেজো মামা। তিন চার জনের একটা গ্রুপ সাথে তিনি হঠাৎতই হুড়মুড় করে ভিড়ের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করতেন। তারপর বাইম মাছের মত কেচকি তুলে ঠিক কাউন্টারে চলে যেতেন। বিনা যুদ্ধে তো রোমাঞ্চ নাই! বেশিরভাগ সময়ই মারামারি বেঁধে যেত। নাক ফাটাফাটি হত। লোকাল হিরোদের কাছে ওসব ছিল মামুলি ব্যাপার। একবার তো মামা কোনভাবেই কাউন্টারে হাত ঢোকাতে পারছিলেন না। উঠতি পোলাপানের ভাবগতি দেখে তিনি মুহুর্তে কায়দাটা পাল্টে ফেললেন! গুলের কৌটো কোমরে নিয়ে ভিড়ের মুখে অনেকটা ক্ষ্যাপাটে ষাড়ের মত মাথা গলিয়ে দিলেন লম্বা এক গুঁতো। এক গুঁতোতেই কাউন্টার। গুলভর্তি পুরো কৌটো আলগোছে হাতের তালুতে উপুড় করে দিয়ে সজোরে এক ফু..। তারপর আর যায় কোথায়! মুহুর্তে হাচি কাশি শুরু হয়ে গেল। সেকেন্ডে জায়গা ফাঁকা।

৩. ..আরেকবার মেজো মামার সাথে পাশের থানায় সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানেও ওই কারবার। ব্ল্যাকে টিকিট। মামা তো বেশি দামে টিকিট কাটার পাত্র নন। প্রেস্টিস বলে কথা। কাঁটা কথার এক ধাপে নেমে মামা লোকাল পোলাপানের চোখে মুখে সমানে ঘুষি বসাতে লাগলেন। একজন তো তলপেটে হাত চেপে কচাৎ করে জায়গায় পড়ে গেল। আর যায় কোথায়! দৃশ্যটা জমায়েতের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে না পড়তেই জনা দশেক মারকুটে মামাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল । আর রক্ষে নেই! কিল ঘুষি একটাও মাটিতে পড়বে না। মুহুর্ত নষ্ট করার মানেই হয় না! মামা এবার গায়ের জোরে মাঝ বরাবর একটা ঘুষি বসিয়ে দিতেই একটা ফাঁক পেয়ে গেলেন। আর পায় কোথায়! এক ভো দৌঁড়ে স্টেশন। সেদিন প্রাণ হাতে করে আমরা চলন্ত ট্রেনটা ধরতে পেরেছিলাম -এই বাপের ভাগ্য। চাকু-ছুরির কারবার অবশ্য ছিল না। বড় জোর হাতলাঠি। চোখে দেখিনি, শুনতে পেতাম ধারালো অস্ত্র কেবল ডাকুদের কাছেই থাকে। অনেক পরে কলেজে ভর্তি হয়ে প্রথমবারের মত আমি চাইনিজ কুড়াল দেখেছিলাম। বামপন্থী এক ছাত্রনেতা লুঙ্গির গিটে রাখা চকচকে এক ফুট বাটের এক কুঁড়াল আমাদের দেখিয়েছিল। বিরাট ব্যাপার! কী যে আতংক আর আগ্রহ নিয়ে সেটা দেখেছিলাম আমরা ! চাইনিজ কুঁড়াল চেইন, কাচু-ইত্যাদি পরে ঠিক ফালতু হয়ে গিয়েছিল।

৪...যা হোক, ঢাকার বলাকা সিনেমা হলে একবার একা একা মহাবিপদে পড়েছিলাম। বগুড়া থেকে ঢাকা। এখনকার দিনে টোটকা ব্যাপার মনে হলেও তখনকার দিনে মোটেও সেরকম ছিল না। থানা শহর থেকে জেলা শহরে। তারপর ঢাকার কোচ। যমুনাসেতু হবে-এমন কথা তখন আমরা শুনতেও পাইনি। আরিচা-নগরবাড়ী ফেরি পার হয়ে তারপর টাঙ্গাইল-মানিকগঞ্জ-সাভারের বিস্তারিত পথাদি পার হয়ে অনেক অনেক লক্কর ঝক্করের পর গাবতলি। হ্যা..নব্বই -বিরানব্বই সালের কথা বলছি। স্বপ্নের(ঢাকা) বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি! যুবক কোথায় রাখবে তুমি তোমার এত আনন্দ! আকাশ বাতাস মুহুর্তে যেন ক‘দিনের জন্য গোলাপি হয়ে গিয়েছিল। সমবয়সি এক মামা দোস্তের মত ছিল। তামাক-বিড়ি থেকে শুরু করে, হেন কাজ নেই যা আমরা একসাথে করতাম না। ওকে নিয়েই বগুড়া থেকে রওনা দিলাম। নগরবাড়ি ছুঁতে না ছুঁতেই বেলা মরে গেল। মাইল দুয়েক দুরে ফেরিঘাট। ঘন্টা খাণেক পরে সিরিয়াল পাওয়া গেল। ঘাটের চৌকাঠ পেতে যাচ্ছি-ঠিক তখনই দুঃসংবাদটা জানা গেল-প্রবল কুয়াশার কারণে সকালের আগে আর কোন ফেরী চলবে না। মানে রাতটা নগরবাড়িতেই কাটাতে হবে। অগত্যা বাস ফেলে এলোমেলো ঘুরতে লাগলাম। বেশি দেরি করল না, দলা দলা কুয়াশা মুখে গুড়ো গুঁড়ো অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ল সবখানে। ঘাটপাড়ের সেসব জ্বলন্ত দোকানগুলো ছাড়া সমস্ত দুনিয়াই সে রাতে কম্বল জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। আমাদের শরীরে ওম ছিল না, ঘুমুবার জন্য সামান্য সদগতিও ছিল না। নিরুপায়ে মধ্যরাতে হেটে হেঁটে কোন এক ঝুলন্তহোটেলে ইলিশের ডিম ভাজা দিয়ে ভাত খেয়ে নিয়েছিলাম দুজনে। তেল চুপচুপো দো-ফালা ডিমের সাথে ফ্রীতে পাওয়া পাতলা অথচ সুকনো মরিচ ডোবানো ডাল-আহ্ কীযে তৃপ্তি! হঠাৎ জীহ্বাময় ছড়িয়ে পড়া নড়বড়ে অমৃত! অথচ কোথাও টয়লেট নাই। আছে ইলিশের পেটের মত বিশাল চর। মন চাইলেই জমিনে দ্বাঁড়িয়ে বা বসে পড়া যায়। কনকনে শীত, তবু কী অফুরন্ত সাদা জোসনা! বড় অদ্ভুত আর অপূর্ব ছিল সে রাত! আমি অত বড় কথাশিল্পী নই! নইলে, বাইশ বছর আগের নগরবাড়ির সেই রাতটাকে ঠিকঠিক ছবি করে আনতে পারতাম।

৫.... ঢাকা পৌঁছুলাম পরদিন বিকেলবেলা । ফজলুল হক হলে এলাকার এক বড় ভাইয়ের রুমে উঠলাম। ভাইভা হতে তিন-চার বাকী আছে। এ কোন সমস্যা নয়। ভর্তি হলে আট-দশ বছর তো থাকতেই হবে! কিন্তু একদিন পরেই মামা মুশকিলে ফেলে দিল। অস্থির হয়ে উঠল সে। ঢাকায় নাকি কাঁক ছাড়া আর কিছু নেই! লোকজন যদিও বা আছে, তারা কেউ কারো সাথে কথা বলে না। মুখে মুখে ঝুলে আছে বড় বড় তালা, প্রয়োজনেই কেবল মুখের তালা খোলেন তাঁরা। ছোট মামা চার হাত পায়ে ছটফট করতে লাগল। ভাইভার ঠিক আগের দিন আমাকে প্রচন্ড বিষন্ন করে দিয়ে সে ঠিক বাস ধরল। আমি এবার পুরোদমে একা একা ঘুরতে লাগলাম। আসলে ভিতরে ভিতরে আমারও ফাপোর ধরে গিয়েছিল খুব। সেজন্যই কী, ভাইভার দিন সকালে মাথায় উটকো এক ভুত চেপে বসল। হাঁটতে হাঁটতে টিএসসি হয়ে নীলক্ষেত চলে গেলাম। বলাকা সিনেমা হলের পোস্টারে চোখ আটকে গেল। নাঈম-সাবনাজের ছবি লেগেছে। ছবির নাম-দিল। লোকে বলাবলি করছে-দারুন রোম্যান্টিক ছবি। পোষ্টারে চোখ রেখেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেল্লাম-বারোটার শো দেখব। সাথে সাথেই ভাইভার কথাটা দুর্গতির মত করে অকস্মাৎ মনে পড়ে গেল। আরে যা! ভাইভা তো চারটায়, তাহলে সমস্যা কী! লাগাও ঝান্ডিমুন্ডি। সিনেমা দেখেও পাকা এক ঘন্টা সময় হাতে থাকবে। রয়ে সয়ে বোর্ডে যাওয়া যাবে। টিকিট কেটে হলে ঢুকে গেলাম। দারুন রোম্যান্টিক ছবিটা দেখতে দেখতে হয়ত ওদের (সাবনাজদের) কাঁচা প্রেমে আমি নিজেও খাণিক লেপ্টে গিয়েছিলাম। হয়ত সময়শূণ্য মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল।.. সিনেমা খতম করে ঘোরের মধ্যে হলের অন্ধগলির নিশানা ধরে বের হতে গিয়েই সব ওলোটপালট হয়ে গেল। দরজা পর্যন্ত পৌঁছুতেই বুঝতে পারলাম-প্রচন্ড বৃষ্টির সাথে পর পর বিশাল শব্দে বোম বাস্ট হচ্ছে। চোখের সামনের ফিরতি দর্শকেরা সমানে ছিটিয়ে পালাচ্ছে। দরজার মুখে এসে দৃশ্যটা আরও ভযংকর হয়ে গেল- শুধু বোম নয়, সাথে লম্বা লম্বা কিরিচ আর তলোয়ার হাতে কারা যেন বৃষ্টির ভিতর সমানে কুপিয়ে চলেছে। ভাল করে দেখবার সুযোগ হল না। প্রাণ হাতে করে পশ্চিমের সড়কের দিকে দৌঁড়াতে লাগলাম। এখনকার মত এরকম আলাদা বাউন্ডারি ছিল না। রেলিং ছিল। হাঁটু সমান রঙ-চটা সাদা দেয়াল তুলে তার উপরে চোখা চোখা লোহার বল্লম মত বসানো ছিল। আমার বুঝি হিসেব করার মত মন ছিল না! কীভাবে পার হয়েছিলাম, আজও মনে পড়ে না। নিউমার্কেটের বিপরীতের পীচ রাস্তা বরাবর দৌঁড়ুতে গিয়ে খাণিক দুর চলেও গিয়েছিলাম। কিন্তু বাঁ কব্জির তলায় হালকা কামড়ানি বোধ করতে লাগলাম। কব্জি উল্টিয়ে দেখি দরদর করে রক্ত ঝরছে। গভীর হয়ে ইঞ্চি দেরেক চামরা কেটে হাড়ে ঠেকেছে। আতংকে বুক শুকিয়ে গেল। দিকবিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে দোকানের মধ্যে দৌঁড় দিতে চাইলাম। কাছে গিয়েও ঢুকতে পারলাম না। দুড়দাড় করে ঝাঁপ নামিয়ে নিচ্ছে সকলে। যে তিনটে দোকানে কোনমতে ঢোকার চান্স পেয়েছিলাম, তারাও দু’ হাতে ঠেলে বের করে দিয়েছিল। সেদিন মাথা উঁচু করে ওদের মুখগুলো দেখতে পেরেছিলাম। কত ছাপোষা, মুমুর্ষু আর নির্মম হয় মানুষের মুখ! তাই বা বলি কী করে! রক্তাক্ত হাত দেখে ওরা হয়ত আমাকেই সন্ত্রাসী-ই জ্ঞান করেছিল! অগত্যা সন্ত্রাসীর মত জোর করেই ঝাঁপ ঠেলে এক দোকানে ঢুকে গিয়েছিলাম। আর অমনি সমবেত সমস্ত চোখসমূহ ঠিকরে পড়েছিল আমার চোখে-মুখে-কব্জিতে; কব্জির চামড়া কাটাতে আমি যত না বিভ্রান্ত হয়েছি, তারও চেয়ে উদ্ভ্রান্ত হয়েছি ওদের ঝুলন্ত মুখসমষ্টি দেখে। আর কী এক আতংক! কী এক অবারিত তাচ্ছিল্য যেন ঝরে পড়েছিল ওদের মুখমন্ডল থেকে। কিন্তু সব মুখ, সব চোখ-এক নয়! এক হতে পারে না! আমার বিশ্বাসকে বাজি রেখে ঠিক পর মুহুর্তেই চোখের সামনে নেমে এসেছিল বিশ টাকার একটা নোট। করুণা নয় বরং সেদিন তুমুল বৃষ্টি-ত্রাসের ভিতর দেখেছিলাম এক ফেরেশতার হাত, যিনি অতগুলো চোখকে মামুলি করে দিয়ে বলেছিলেন-‘বুঝতে পারছি আপনার অবস্থা, টাকাটা রাখেন, ঝড় কমলে ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সিতে চলে যাবেন। সব ঠিক হয়ে যাবে’! উত্তরে-আমি ঠিক কী বলেছিলাম, জানি না। তার কথা মনে পড়লেই, আমি বরং একটা নীল ছাপা তোলা চকচকে বিশ টাকার টাটকা ছবি দেখতে পাই, আমার কানের কাছে বেজে ওঠে- ‘যাবার আগে অবশ্যই পাশের ফার্মেসিগুলোর যে কোন একটা থেকে স্যাভলন এবং তুলো চেয়ে নিয়ে লাগিয়ে দেবেন’..। তিনি হয়ত মানুষের প্রতি আস্থাবান ছিলেন। কিন্তু পলাশিমুখি নীলক্ষেতের রাস্তা বরাবর আমি অন্তত পাঁচটা ফার্মেসিতে করুণ চোখে কাতর করে ব্যান্ডেজ আর স্যাভলন চেয়েছিলাম। কেউ আমাকে দেয়নি। কিন্তু অত বৃষ্টির মধ্যে একটা রিকসাওয়ালা আমাকে ঠিক তুলে নিয়ে সোজা ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। আজও বাম কব্জি ওল্টালে সেলাইগুলোর খাঁদ দেখতে পাই। ঠিক খাদ নয়-খাঁজে খাঁজে বসে আছেন-সেদিনের সেই দুই দেবদুত.. ।