আমি দেখি, কোন জায়গায় কলম বা কি বোর্ড আমাকে নিয়ে যায়: রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য (ঘনাদা)র সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: May 23, 2014 10:42:35 AM

দুপুর মিত্র: আপনি কবে থেকে লেখালেখি শুরু করেছেন?

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য (ঘনাদা): সেটা বলা মুশকিল ।  কারণ, আমি এখনও মনে করি, আমি লিখতে পারি না । চেষ্টা করি, এই মাত্র । প্রথাগত লেখার কথা যদি বলেন, তবে বলবো আমি মালদায়কর্মরত থাকা কালীন (১৯৮০-১৯৯৬) ওখান থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ সাপ্তাহিকে, সংবাদ ভিত্তিক প্রতিবেদন এবং রাজনীতি নিয়ে লিখতাম ।

দুপুর মিত্র: আপনি কি বিশেষ কোনও পাঠককে সামনে রেখে লিখেন না বিশেষ অডিয়েন্সকে?

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য (ঘনাদা): আমার সেভাবে কোনো পাঠক বা অডিয়েন্স থাকে না । আমি যা লিখি বা লেখার চেষ্টা করি, সেটা পড়ে যাতে সবাই উপভোগ করেন, সেটাই চাই ।

দুপুর মিত্র: সাহিত্যের কি সামাজিক বাধ্যবাধকতা আছে? এ নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য (ঘনাদা): সাহিত্য তো সমাজেরই প্রতিফলন । বাধ্যবাধকতা আছে বলে আমি মনে করি না । আমি মনে করি ( অবশ্যই আমার ব্যক্তিগত মত ) সমাজের সব বঞ্চনা, সুখ, দুঃখ, প্রেম, ঘৃণা, রাজনীতি- এসবের প্রতিফলন থাকা উচিত ।

ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায়, এরকম লেখা বর্জন করা উচিত লেখক এবং পাঠক- উভয়ের ।

দুপুর মিত্র: ওয়েব ম্যাগ, ব্লগ ইত্যাদির মাধ্যমে একটা পাল্টা মিডিয়ার গঠন প্রক্রিয়া চলছে বলে আপনি মনে করেন কি? এখানে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার বিষয়গুলোকে কিভাবে দেখবেন। বালিটলম্যাগের প্রতিস্থাপন হিসেবে ভাবা যায় কিনা?

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য (ঘনাদা): আন্তর্জাল আসাতে অনেক সুবিধে হয়েছে । সাহিত্যের “ দলবাজী” থেকে বেরিয়ে এসে  অনেক শক্তিশালী লেখক/ লেখিকা, নিজেদের লেখাকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতেপারছেন ।

প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা এসেছেই দলবাজী রুখতে । নাম করবো না, এপারে অনেকেই এই দলবাজীর সঙ্গে যুক্ত।

কেউ কেউ প্রয়াত, কিন্তু সেই ট্র্যাডিশন চলছেই ।

আমি মনে করি লিটল ম্যাগ আর ওয়েব ম্যাগ, ব্লগ পাশাপাশি হাত ধরে চলছে ।

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের সাথে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার সম্পর্ক থাকতেই হয় বলে মনে করেন কি? হলে কেন?

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য (ঘনাদা): লিটলম্যাগের সাথে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার সম্পর্ক গড়েই উঠেছে ঐ দলবাজী থেকে । উন্নাসিকতা যদি না থাকতো, তা হলে হয়তো, এই লিটলম্যাগের সাথেপ্রতিষ্ঠানবিরোধিতার সম্পর্ক থাকতো না, তবে মানুষ মাত্রই বিরোধিতা করবে, কারণ এটা তার স্বভাবজাত । এখান থেকেই দলবাজীর শুরু ।

দুপুর মিত্র: আপনি কি গল্প খুব দ্রুত শেষ করতে পছন্দ করেন?

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য (ঘনাদা): এটা নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর । তাছাড়া, পাঠক দীর্ঘ লেখা পছন্দ করে বলে আমি মনে করি না । একটু “না পাওয়া” গল্প বা যে কোনো লেখাকেই পূর্ণ করে বলেআমার বিশ্বাস ।

পাঠক নিজে একটু ভাবুন না, কি বলতে চাইছে লেখক/ লেখিকা !!! পাঠকরা অনেক অনেক বুদ্ধিমান ।

দুপুর মিত্র: আপনি সাধারণত কোনও গল্প বা উপন্যাসের কিভাবে শুরু করতে জোর দেন? চরিত্র না বাক্যকে? না কোনও ডায়ালগকে?

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য (ঘনাদা): হা হা হা !!!! এই ব্যাপারে আমি প্রয়াত শিবরাম দা আর মুজতবা সাহেবকে “ হনুকরণ” করার চেষ্টা করি । বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অসফল হই, তবে ঐ পাঠকের কাঁধে হাতরেখে আড্ডা মারাটা  আমার বেশ পছন্দের ।

পাঠক আর লেখক যেন বন্ধু হয় । তাই নির্বাচনের কোনো প্রয়োজন পড়ে না ।

দুপুর মিত্র: লেখে ফেলার পর কি আপনার কখনও এমন হয়েছে যে পুরো লেখাই মানে গল্প বা উপন্যাসকে আপনাকে নতুন করে লিখতে হয়েছে?

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য (ঘনাদা): উপন্যাস এখনও লিখি নি, বা লিখবো না, তার প্রধান কারণ অত ঘোরপ্যাঁচ করার আমার কম্মো নয় ।

আর একবার লিখে ফেলার পর আজ পর্যন্ত কোনো গল্পই আমি ফের নতুন করে লিখি নি ।

সন্তান যদি বিকলাঙ্গ হয়, সমাজ তাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে, আমি পিতা হয়ে তাকে ফেলে দিতে পারি না।

দুপুর মিত্র: লেখার আগে আপনি কি সমাপ্তি ঠিক করে রাখেন?

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য (ঘনাদা): মোটেই না !!! আমি ভেবে চিন্তে লিখি না !!!!  আমি দেখি, কোন জায়গায় কলম বা কি বোর্ড আমাকে নিয়ে যায় ।

দুপুর মিত্র: আপনি শেষ পৃষ্ঠা লেখার আগেই কিভাবে গল্প বা উপন্যাসের শেষটা ঠিক করেন? লেখালেখিকে কি সংগ্রাম মনে হয় আপনার?

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য (ঘনাদা): আগের প্রশ্নেই এটার উত্তর দিয়েছি । আমার লেখালেখি, সময় কাটানোর জন্য । যশ, খ্যাতি আমার দরকার নেই এই বয়সে এসে। তবে প্রশংসা করলে ভাল আর নিন্দেকরলেও আমি লিখবো আপন খেয়ালে ।

তাই সংগ্রাম বলে আমি মনেই করি না । সংগ্রাম করতে হয় জীবনে বেঁচে থাকার জন্য । আর বেঁচে থাকলে, অনেক কিছুই সহজ হয়ে আসে ।

দুপুর মিত্র:  লেখার পর আপনি সাধারণত কোন বন্ধুর সাথে শেয়ার করেন?

রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য (ঘনাদা): খুব একটা করি না, যদিও যাদের মতামত আমি দরকার মনে করি, তাদের শেয়ার করি ।