কবিতায় সুফি ভাবধারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অনেকের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে: সৈয়দ তারিকের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Sep 30, 2013 8:21:01 AM

প্রকাশিত বই: ছুরি হাতে অশ্ব ছুটে যায়- প্রকাশক নিত্য উপহার (১৪০২/১৯৯৬)।

মগ্ন তখন মোরাকাবায়- প্রথম প্রকাশক মাওলা ব্রাদার্স (২০০৯) দ্বিতীয় সংস্করণ (২০১২) সুফিবাদ প্রকাশনালয়।

আমার ফকিরি (২০১১) প্রকাশক সুফিবাদ প্রকাশনালয়।

নাচে দরবেশ মাস্ত হালে (২০১১) -এর প্রকাশক সাঁকোবাড়ি প্রকাশন।

দুপুর মিত্র: আপনি লম্বা একটা সময় প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার মত কিছু বিষয়ের সাথে যুক্ত রাখতেন। এখনো কি তাই রাখেন?

সৈয়দ তারিক: প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা একটি সূক্ষ্ম ও ব্যাপক বিষয়। যেমন, সুফিবাদ একটি প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভাবধারা। অনেক সুফি-সাধককে কাফের ফতোয়া পেতে হয়েছে, নিগৃহীত হতে হয়েছে, এমনকি মৃত্যুবরণও করতে হয়েছে কায়েমি ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ ও মতাদর্শেরকাছ থেকে। রক্ষণশীলতার কাছে সুফিবাদ বর্জনীয়।

তবে, আপনার প্রশ্নের নিহিত লক্ষ্য, অনুমান করি, 'ছোটকাগজ' বা 'লিটল ম্যাগাজিন'। হ্যাঁ, একটা সময়ে আমার লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রকে কেবল দুই-একটি ছোটকাগজে সীমিত করে রেখেছিলাম। কিন্তু, তাহলেও যে আমার লেখাকে লিটল-ম্যাগ-সুলভ বলে বিবেচনা করা হতোতা কিন্তু নয়। মনে পড়ে, অপর এক লিটল ম্যাগাজিনের লেখায় একটি ট্যাক্সোনমি দেওয়া হয়েছিল, যা-তে আমাকে চিহ্নিত করা হয়েছিল 'মিডি ম্যাগাজিন'-এর লেখক হিশেবে। আবার কবি ও সম্পাদক ফরিদ কবির এক সাক্ষাৎকারে রায় দিয়েছিলেন যে সৈয়দ তারিক বড়কাগজে লেখে না শুধু এই সুবাদে তার লেখা ছোটকাগজে ছাপা হয়; কিন্তু, তার লেখা প্রচলিত ধারার। — অর্থাৎ, বনেদী 'লিটল ম্যাগাজিন'-কুলে আমি ছিলাম হংস মাঝে বক যথা।

এদিকে, ঘটনাধারার নির্বন্ধে, ১৯৯৭-এর শুরুর দিক থেকে ২০০৪ এর প্রথম দিক — এই সাত বছর আমি কোনো কবিতা লিখি নি। আর কখনো লিখবো না, এমনও ভাবতাম; কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতাম লেখালেখি ছেড়ে দিয়েছি। এই সময়ে কিছুকাল অবশ্য আমার কিছুকবিতা — এই সময়ের আগে লেখা — 'গাণ্ডীব', 'অনিন্দ্য', 'দুয়েন্দে'-তে ছাপা হয়েছে।

২০০৪ সালে সুফি ঘরানার ধ্যানসাধনার কালে আমার মধ্যে কিছু ভাব ও ভাবনা স্পন্দিত হয়। সেগুলো তখন লিখে রাখি। মোরাকাবা শেষে শহরে ফেরার পর সেগুলো প্রকাশের জন্য — স্বাভাবিক ভাবেই — আমার মাননীয় সম্পাদকদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি।

প্রথমেই 'অনিন্দ্য'-সম্পাদক হাবিব ওয়াহিদকে, আজিজ মার্কেটের চায়ের দোকানে বসে, সবগুলো লেখা পড়ে শোনাই এবং ছাপলে সবগুলো এক সংখ্যায় ছাপতে অনুরোধ করি। ফর্মা তিনেক স্থান নেবে হয়তো। বার্ষিক লিটল ম্যাগাজিনগুলোর ঢাউস সংখ্যা প্রকাশের ঐতিহ্যরয়েছে এবং ক্রোড়পত্র করে লেখককে দীর্ঘতর স্থান দেবার দৃষ্টান্তও আছে। ফটোকপি করে লেখাগুলো নিয়ে গেলেন হাবিব ওয়াহিদ। অনেক-অনেকদিন পর জানালেন, লেখাগুলো হারিয়ে গেছে। আমার কাছে আবার লেখা চাইলেন, কিন্তু আগেরগুলো নয়, ভিন্ন কিছু।বুঝলাম, ওগুলো ছাপতে চাইছেন না।

'গাণ্ডীব' সম্পাদক তপন বড়ুয়া লেখাগুলোর কথা শুনে জানতে চাইলেন, " এগুলো কি ধর্মীয় রচনা?" আমি সবিনয়ে বললাম," যে অর্থে চর্যাপদ, বৈষ্ণব পদাবলি, গীতাঞ্জলি বা মসনবি ধর্মীয় রচনা, সেই অর্থে এগুলোও তাই — মানের দিক দিয়ে যা-ই হোক।" কিন্তু, আমারসম্পাক রায় দিলেন, "আমরা কবি সৈয়দ তারিককে চিনি, ধর্মতাত্ত্বিক সৈয়দ তারিককে চিনি না।" বুঝে ফেললাম, আজ দুজনার দুটি পথ....। আমি যে ধর্মতত্ত্বের মূলো খেয়ে ফেলেছি! আমার নিঃশ্বাসে তার গন্ধ থাকাই স্বাভাবিক।

এদিকে শুভানুধ্যায়ী সাইমন জাকারিয়া আমার কাছ থেকে পাণ্ডুলিপি নিয়ে বাংলাবাজার থেকে প্রকাশের উদ্যোগ নিলেন। ব্রাত্য রাইসু তখন বিডি নিউজে। তিনি লেখা চাইলেন এবং অন লাইনে আমার কবিতা — উত্তরপর্বে লেখা — প্রথম প্রকাশ পেল। অতঃপর, আমারলেখা প্রকাশের সীমিত পরিসরটি আর থাকলো না।

দুপুর মিত্র:: আগের চিন্তা ধারার সাথে কিছুটা হলেও আপনার পরিবর্তন এসেছে। সেটা কি?

সৈয়দ তারিক: ক্লাস টেনে পড়বার সময়ে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ পড়ে ঈশ্বরে বিশ্বাস হারিয়েছিলাম। অন্তরে রক্তক্ষরণের সে এক নিদারুণ অভিজ্ঞতা। কঠোরভাবে নাস্তিক্যবাদী হলাম — আমার বন্ধুরা তা জানেন। তারপর এলো অধুনাবাদের সিন্ড্রোম : নেতিবাদী ভাবনা-অনুভব-যাপন, স্বেচ্ছাচার, ভবঘুরেমি, মাদকানুরাগ, অপ্রেম, উন্মূল কাব্যাদর্শ, থ্যানাটোস, অসহ্য আবেগ... সব মিলিয়ে এক সময় এমন এক পরিস্থিতি এলো যে আমি নেহাত জড়বস্তুর মতই বিদ্যমান হয়ে পড়লাম। সে সময়ে, নিজের অস্তিত্বের তাৎপর্য ও গতি আবিষ্কারেরগরজে, আমি দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, সাধনমার্গ ইত্যাদি ঘাঁটাঘাঁটি করতে শুরু করি। এসব থেকে এই উপসংহারে আসতে পারি যে সকল আত্মমুখী দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে জীবন ও জগতের স্বরূপ উপলব্ধি করতে হলে আত্মস্বরূপকে অনুভব করতে হবে এবংতার পদ্ধতি হলো ধ্যানমূলক যোগাচার তথা সালাত। আত্মজ্ঞান ও আত্মস্থিতিই জরুরি বিষয়।

এরপর আমি প্রায়োগিক ভাবে সুফিবাদে দীক্ষা নিই ও এর ধারায় অন্তর্ভুক্ত হই এবং মোরাকাবার স্বাদ গ্রহণ করি।

তবে, আমার পুরনো লেখা ঘেঁটে আমার মনে হলো, আমার কবিতার ভাববস্তুর মধ্যে শুদ্ধতা ও পরমের জন্য আকুতি একেবারে শুরু থেকেই ছিলো, হয়তো এ আমার সত্তার মৌলিক আকুতি।

দুপুর মিত্র:: মগ্ন তখন মোরাকাবায়, আপনার বই। আপনি অনেক দিন হল বাংলা কবিতায় সুফি ধারার সাথে সম্পর্ক নিয়ে কাজ করে চলেছেন। আপনার কেমন মনে হচ্ছে?

সৈয়দ তারিক: আমি লিখছি আমার ভাব ও ভাবনার প্রেরণায়। সুফিবাদ মানবের চিরকালের একটি এষণার প্রায়োগিক ধারা : নিজের সীমাকে পেরিয়ে যাওয়া। যাওয়া গেল কি না, তার চাইতে জরুরি হলো যাবার ইচ্ছা, চেষ্টা ও অভিজ্ঞতাটি। সুফিবাদ একটি উদার, প্রসারমাণ, গ্রাহক ও নিবেদক ভাবধারা। পূর্বকালের ও সমকালের সকল আত্মোপলব্ধিমূলক সাধনমার্গকে যেমন সে গ্রহণ করতে পারে তেমনি তার প্রেমময় ভাবানুষঙ্গ সবাইকে আহ্বানও করে। বর্তমানে একদিকে বিধানসর্বস্ব উপাসনামূলক ধার্মিকতা, অন্যদিকেসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় রাজনীতি, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ এবং তার সঙ্গে ইদানিং প্রকট হয়ে ওঠা নাস্তিক্যবাদ — যা যুক্তির চাইতে বিদ্বেষ ও অরুচিকর মন্তব্য প্রকাশে অধিক উৎসাহী — এইসব ত্রিমুখী সংকটের সাথে সাথে সুফিবাদের ছদ্মবেশে বিস্তর অপতৎপরতার কালেসুফিবাদের মূল প্রেরণা : আত্মজ্ঞান-আত্মশুদ্ধি-আত্মসিদ্ধি, মানববাদ, পরিমিত জীবনাচার হয়তো আমাদের বর্তমান দুর্নীতিগ্রস্ত, অমিতাচারী, দিগদর্শনহীন জীবনপ্রবাহে গ্রহণীয় ভাবাদর্শ হয়ে উঠতে পারে।

কবিতায় এই ভাবধারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অনেকের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে এবং তা আরও বেগবান হয়ে উঠবে বলে আমার ধারণা। কারণ, এ মৃত্তিকার জনচিত্তে এ ভাবধারা নিবিড় স্রোতে বহমান।

দুপুর মিত্র: কবিতায় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আপনার ফলাফল কি?

সৈয়দ তারিক: এ সওয়ালের জবাব পাঠক-সমালোচকের মুখাপেক্ষী। আমার ব্যক্তিগত অর্জন পাঠকের ভালোবাসা।

এই অঞ্চলে প্রথম সুফিরাই আসে। অনেকে বলেন যে সুফিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই এখানকার মানুষ মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করে। প্রাতিষ্ঠানিক বা শরিয়তি ইসলাম অনেক পরে এসেছে। তো এই অঞ্চলের সংস্কৃতির সাথে সুফির বেশ জোর একটা বন্ধন থাকার কথা। এবং সেটাকবিতাতেও। আপনার কেমন মনে হচ্ছে?

ব্রিটিশ আমলে একদিকে ওহাবি আন্দোলন, অন্যদিকে আলীগড় আন্দোলন মুসলিম সমাজে বড় ভূমিকা রাখে। তাছাড়া নানা ভাবে সুফিবাদী ধারার মধ্যেও অনেক রকম দুর্বলতার সংক্রমণ সম্ভব হয়েছিল। তবুুদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর সাথে সুফি ভাবধারার যোগ এখনোআছে। সমকালের সাথে সাযুজ্যময় সুফি ভাবধারার চর্চা ও বিকাশের সম্ভাবনা বিপুল।

দুপুর মিত্র: আপনি কি মনে করেন কবিতা সমাজে একটি ভূমিকা রাখে? যদি রাখে সেটা কিভাবে যদি না রাখে সেটা কেন?

সৈয়দ তারিক: খুব পুরনো একটি জিজ্ঞাসা আবার উপস্থিত হলো। সেই প্লেটো-জেনোফেনিসের কাল থেকে চলছে এই তর্ক-বিতর্ক-প্রতর্ক। কবিতা ভাষায় রচিত একটি কাঠামো, ভাষা একটি সামাজিক প্রপঞ্চ এবং কবিতা সমাজে উপস্থাপিত হয়। সুতরাং, সিদ্ধান্ত অনিবার্য : কবিতা সমাজকে প্রভাবিত করে — সৌন্দর্য দিয়ে, আবেগ দিয়ে, বিষয়ের ভাব দিয়ে — ইতিবাচক ভাবে/নেতিবাচক ভাবে, সরল ভাবে/জটিলভাবে, প্রত্যক্ষ ভাবে/পরোক্ষ ভাবে....ইত্যাদি। উপরন্তু, নানা নিরীক্ষাময় প্রয়োগের ফলে ভাষার বিকাশেও ভূমিকা রাখে কবিতা।

দুপুর মিত্র: আপনি কোন কোন কবি দ্বারা বেশি প্রভাবিত?

সৈয়দ তারিক: আমার ঠাকুরদা, কুলগুরু, রবীন্দ্রনাথের নাম জপলেই আমার সকল প্রভাবকের নাম নেওয়া হয়ে যায় বলে মনে হয়।

দুপুর মিত্র: আপনার কাছে কবি হয়ে ওঠা বিষয়টা কি?

সৈয়দ তারিক: ভাব ও ভাষার দ্বৈরথে নিরন্তর রক্তাক্ত হতে হতে তারই মাঝে আকস্মিক বিশ্বরূপের ক্ষণিক উদ্ভাসনে বিমোহিত হয়ে ওঠা।

দুপুর মিত্র: কবিতা কি?

সৈয়দ তারিক: খয়রাত করে বলতে ইচ্ছা হয় : কবি যা রচনা করেন সেটাই কবিতা।

কবিতা এক অধরা যোগিনী — দ্বিচারিণী সে — তান্ত্রিক বিহার তার যুগপৎ কবি ও পাঠকের সাথে।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বাংলা কবিতার প্রবণতাগুলো কি?

সৈয়দ তারিক: বলতে পারলাম না।

দুপুর মিত্র: সাহিত্য আন্দোলন কি কবিতাকে পরিবর্তন করে?

সৈয়দ তারিক: করতেই পারে, তাৎক্ষণিক ভাবে কিংবা সুদূরপ্রসারী ভাবে। বিষয় বা প্রকরণ বা উভয় দিক দিয়েই কবিতায় অনেক পরিবর্তন আনতে পারে সাহিত্য আন্দোলন।

দুপুর মিত্র: আপনি কিভাবে কবিতা লিখেন?

সৈয়দ তারিক: সব সময় একই নিয়ম হয়তো খাটে না, তবু হঠাৎ কোনো একটি ভাবানুষঙ্গ — সাধারণত একটি পংক্তি বা শব্দগুচ্ছের আকারে — মনের ভতরে জাগে, তারপর সেটিকে লালন-পালন করতে করতেই লেখা হয়ে ওঠে একটি কবিতা। অনেক সময় একটু-আধটুপরিমার্জনা করতে হয় পরবর্তীকালে। দু-চারটে কবিতা অবশ্য একটানা — যেন বা এক নিঃশ্বাসে — লেখা হয়ে যায়।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বিশ্ব কবিতা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

সৈয়দ তারিক: আমার কোনো ধারণাই নাই।

দুপুর মিত্র: আপনার লেখালেখির শুরু কবে থেকে?

সৈয়দ তারিক: ছেলেবেলা থেকে। লেখা শুরুর ঢের আগেই অবশ্য কবিসুলভ ভাবগ্রস্ততা পেয়ে গিয়েছিলাম। শব্দের জাদু স্নায়ুকে আচ্ছন্ন করেছিলো যখন মাত্র পড়তে শিখেছি : ঝড় বয় ডর হয়; ছন্দের বিভায় চমকে উঠেছি আনন্দে যখন পড়ছি : শালিক বলে, চড়াই,/তীরটাদেখে ডরাই; আরও একটু পরে শ্রেণিপাঠ্য কবিতাবলি ভীষণভাবে আকুল করে তুলছিলো ভাবাবেশে। কবি হবার বাসনা জাগে যখন তখনও রবীন্দ্রনাথের নামের সাথে পরিচয় হয় নি। ঠাকুরের জন্মদিবসে আম্মা খবরের কাগজ পড়তে পড়তে বললেন, "আজ রবীন্দ্রনাথেরজন্মদিন।" "রবীন্দ্রনাথ কে?" "কবি।" "কবি কী?" " এই যারা কবিতা, ছড়া এইসব লেখে; ঝোলা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, প্রকৃতির দৃশ্যে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে, নদীর তীরে বসে থাকে...।" কবির এই বর্ণনা আমার মন কেড়েছিলো। আমিও একটা ঝোলা নিয়ে, তাতে খাতা-কলম আর বই (যেহেতু বানান করে পড়তে শেখার পর থেকেই বই আমার প্রায় অবিচ্ছেদ্য সাথী) নিয়ে বিচরণ করতাম। নদীর অভাবে বাসাবো ঝিলের সবুজবাগের কিনারায় বসে থাকতাম কবিতার অন্বেষায়। আমার নানা ছিলেন কবি। জসীম উদ্দীন, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ওগোলাম মোস্তফার শৈলীর মিশেলে তিনি পদ্য লিখতেন। (আসরারে খুদী'র অনুবাদক কবি সৈয়দ আবদুল মান্নান তার বন্ধু ছিলেন। তিনিই আমার দেখা প্রথম কবি, নানাকে বাদ দিলে)। প্রথম প্রথম নানার লেখা নিজের নামে চালাতাম পরিচিত মহলে। নিজের লেখা শুরুযখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন থেকে।

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

সৈয়দ তারিক: কবিতা লিখি কারণ লিখে উঠে স্বস্তি পাই। আর এর মাধ্যমেই আমার অন্তর্লোক ও বহির্লোকের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়ায় সৃজনবীজের উদ্গম ঘটে, অপরেও তার শরিক হয়, এক আনন্দধারায় যৌথ অবগাহন সম্ভবপর হয়ে ওঠে।

দুপুর মিত্র: কবিতা লিখতে আপনার কতটুকু সময় লাগে?

সৈয়দ তারিক: আমার কবিতা আকারে ছোট, সাধারণত দু-এক ঘণ্টায় লেখা হয়ে যায়। কোনোটা আবার আংশিক লেখার পর বাকিটা পরবর্তীতে সমাপ্ত হয়।

দুপুর মিত্র: আপনি সাধারণত কোথা থেকে কবিতা লেখার বিষয় খুঁজে নেন?

সৈয়দ তারিক: আমার কবিতাই বোধ হয় সে কথা জানিয়ে দেয়।