অদিতি ফাল্গুনী ও উম্মে মুসলিমার কবিতা
Post date: Jul 14, 2012 11:01:14 AM
অদিতি ফাল্গুনীর কবিতা
সংখ্যার মানুষ
তুমি কেউ নও। তুমি সংখ্যার মানুষ।’
‘কিকরে? আমি বুঝি সত্যিই কেউ নই? আমার চুল-হাত-পা-নখ-নাক-চোখ সহ আস্ত মানুষটা আমি কেউ নই? বললেই হলো?’
‘তোমার মোবাইল নম্বর হ্যাক হলে পাগল হয়ে যাও না? এটিএম কার্ড হারালেই বা কি করো? ক্রেডিট কার্ড? ফেসবুক আর ইমেইল? তাই ত’ বলি তুমি কেউ নও! তুমি কেউ নও! তুমি আজ আর সত্যিই কেউ নও। যে নামই হোক তোমার। অমল, আডর্ণো বা আব্দুল...অমৃতা, এডিথ বা আমিনা...তুমি আজ আর মানুষ বা মানুষী নও। তুমি শুধু ০১৮১৯- ৭৩০০৭২, ০১৩১৯-০০৮৪৫৩১ অথবা তুমি শুধুই সংখ্যা।’
নিলামের আমি
নিলামের আমি, নিলামের তুমি
নিলামে হাঁকছে দর...
কত? কত দর? ওঠাও পাল্লা!
ছুঁড়ে দাও সিভি, যত বায়োডাটা...
আমরা আছি ত’
ম্যানেজমেন্টের শিম্পাঞ্জি যত
গরিলা আর ওরাং ওটাং
(হলদে সবুজ ওরাং ওটাং
ইট খসলে চিৎ পটাং
মুস্কিল আসান উড়ে মালী,
ধর্মতলা কর্মখালি)
কত দর তোর? ও ছেলে ও মেয়ে?
এমবিএ আছে? বিবিএ করা কি?
তাতেও হবে না...
সইতে পারা চাই সব লাথি ঝাঁটা
পিঠ পেতে দিয়ে কিল-গুঁতো খা
দু’বেলা ভর পেট খেতে ত’ দিচ্ছিই
বুঝিস না বেশি, বোবা হয়ে থাক...
লেখা আর বলায় না হস দড়...
মেয়ে হলে তবে আর একটু জেনে রাখ্
খুলতে হবে আঁচলের ভাঁজ
যখন-তখন চাইলেই বস...
প্রমোশনের মই বাগাতে
বসের হারেমে এনরল্ড হ!
সেই সাথে সাথে
অন্য কলিগের পিঠে ছুরি মার...
না পারলে তা’ নিজে ছুরি খা
আর পচে-গলে মর!
রাজি? রাজি না হলে এক্ষুণি ভাগ!
কি হবে তোর ভাল বাংলায়? কি লাভ ঐ নিতান্ত কম
তবু ইংরেজি আর ফরাসী জ্ঞানে? কুকুরের মতো খেটেই কি লাভ?
নিলাম হচ্ছে! দাসের নিলাম আর দাসীর নিলাম!
কত দর তোর? এন্ট্রি লেভেলে কুড়ি-পঁচিশ
মিড লেভেলে ফিফটি-সিক্সটি...
সত্তর-আশি দিই যদি তোকে?
তবু ম্যাসাজ করবি না পা আমার?
খুলবি না তোর বুকের আঁচল?
আঁচল খুলবি না লক্ষ মুদ্রায়?
যা কুত্তি তবে! এক্ষুণি বেরো!
দেখে নেব তোর সাহসের বাড়!
ফের সিভি হাতে রাস্তায় ঘোর
দেখি তোর কোন্ প্রেমিক বাঁচায়...
কত টাকা সে দিতে পারে তোকে...
শুরু কর ফের এন্ট্রি লেভেলে...
পঁচিশ-ত্রিশ আর তার বেশি নয়!
কক্ষণো নয়! সে-ও জুটবে না!
বলে রাখলাম!
পঁচিশ-ত্রিশ! এই ফিফটি-সিক্সটি!
সত্তর-আশি আর উর্দ্ধে লক্ষ...সোয়া লাখ! সোয়া লাখ!
এভরিবডি গেট কুল...দ্য বিডিং বিগিনস্
অকশন- অকশন-
নিলামের আমি নিলামের তুমি
নিলামে হাঁকছে দর...
১০ জুলাই ২০১২।
উম্মে মুসলিমার কবিতা
দ্রৌপদী
মেয়েরে তুই প্রস্তুতি নে মহাভারত আসে
তোর দুয়ারে পাঁচ পা-ব খলখলিয়ে হাসে।
তোকেই একা বইতে হবে পাঁচ পুরুষের ভার
মহাভারত অশুদ্ধ? কয় সাধ্য কার বাবার।
তোর জন্ম ভ্রুণেই বিনাশ ছেলে যত্নে বাড়ে
তুই বাড়তি, অপাঙতেয় নরতন্ত্রের ঘাড়ে।
তোর আগমন অনিবার্য নিছক দুর্ঘটনা
দিনে দিনে তোর অনুপাত পাঁচজনে একজনা।
পাঁচ পাঁচটা মরদ তোকে সমানভাবে চাবে
এইবেলা তুই শক্তি অসীম সঞ্চয়ে মন দে।
সেই সাথে নে খুন্তি-কড়াই রান্না পটিয়সী
সঙ্গ-সেবা-নিবেদনে বিনীত চৌকসী
গৃহকর্ত্রী সচিব সখি গুণবতী তবে
যদ্যপি না পুত্রবতী মুল্যহীনা ভবে।
নেপোলিয়ান মায়ের সংজ্ঞা শিতি না হলে
কে বানাবে ধীমান নেতা রাষ্ট্রনায়ক ছেলে?
তার উপরে আটপৌরে হওয়ার উপায় নাই
যৌবনে আর লাবণ্যে ঠিক বহাল থাকা চাই।
তুই কেবলি আজ্ঞাবহ শূন্য অনুরাগ
এক দেহে তোর পঞ্চুধা হৃদয় কি পাঁচভাগ?
হৃদয় নিয়ে শিল্পকলার দিন ফুরিয়ে এলো
কলির মেয়ে ধন্যি বটে পুরান ফিরে পেলো।
নারীর প্রতীক পাঞ্চালী তুই দৃষ্টান্তের ছবি
সব অপবাদ তোর তবু তুই নিশ্চল মানবী।
পুরুষ করে কুরুক্ষেত্র তোর তাতে কী ক্ষতি?
তুই অফুরান বসনবন্দী অধুনা দ্রৌপদী।