কবিতার ম্যানিফেস্টো হয় বলে আমার জানা নেই: রমিত দের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Jun 18, 2012 8:42:06 AM

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লেখেন?

রমিত দে: বিনয় মজুমদার একবার বলেছেন-“কবির চরম উদ্দেশ্য পাঠককে ভালো লাগানো, বোঝানো নয়।” পাঠক নামক বস্তুটিকে যেমন অমান্য করা যায় না তেমনি কবিতা লেখার সময় পাঠক আমার কাছে এক খন্ডিত স্বত্ত্বা ছাড়া , নিয়ন্ত্রিত নির্বস্তুক ছাড়া আর কিছুই নয়। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি , স্বীকৃতির তাড়নার থেকেও কবি বোধহয় কোথাও আত্মপ্রবর্তক, দূরারোগ্য নির্লিপ্ততায় ঘোষিত। একটা তৃতীয় জীবনের দিকে অদৃশ্য মুক্ততার অভীপ্সা নিয়েই কবিতার দাগ ধরে হাঁটা। ডানাওয়ালা নার্সিসিস্টের মত মাঝে মাঝে ঘুম আসতে চায় না, মুদ্রাদোষের মত উঠে পড়ি। দেখি স্থিরতা কিছু নেই । এক একরকম ভোর, এক একরকম আলো, বেগুনী রঙের ফুল তো সন্ন্যাসী রঙের শেকড়, অনেক রকমের ঘুম তো অনেক রকমের জেগে ওঠা। অনেক গড়নের বিশ্রাম, অনেক গড়নের ফিরে যাওয়া, আমি মৃত্যুকে খুঁজিনা নশ্বরতাকে খুঁজি। জীবন ছাড়িয়ে এসে একটা আকল্পন এক্সপেরিয়েন্সের দিকে, অনভাবিত উন্মেষের দিকে, একটা স্ট্রাটেজিক আনকনসাসনেশের দিকেই কবিতা আমাকে নিয়ে চলে তার রীতির রহস্যে। পরিচিত অর্ধপরিচিত অনুভবের থেকে একটি ফুল তুলে আনি আর তাকে সাজিয়ে রাখি অনির্দেশ চেতনার কম্যুনিকেশনে। ‘poetry is not a turning loose of emotion, but an escape from emotion’। মৃত্যু- ক্ষুধা- তৃষ্ণা এই স্বভাবজ পার্থিব অভিকর্ষতাতেই কবিতার বীজ অথচ তার জাগরুকতা যেন ইন্দ্রিয়কে ভেদ করে এক অনন্য ইন্দ্রিয়জতার দিকেই ফরমান জারি করে। মূর্ততার ভেতরই অমূর্ততার জলভার, এক অকম্পিত দ্বন্ধতা, কবিতার নির্জন কন্ট্যুরে কবির নিজেকে ক্ষয় করে দেখারই যেন এক অলস প্যারাসাইকোলজি। লিখতে গিয়ে কোথাও মনে হয়েছে দশক ভাগ, মর্ডান –মর্ডানিস্ট- মর্ডানিজম - পোস্টমর্ডান এসব কোথাও শুধুমাত্র ভাবকল্পবাদ, শব্দের হিজিবিজিতে ক্রমাগত ছাঁদ পালটে ফেলার আপাততা আর এই সমস্ত বিন্যাসের বাইরেই কবিতা , কবিতার দীর্ঘসূত্রী নিউরাল। যেন কোনো মিথটিক বিভাজন থেকেই কবিতা ধরতে চাইছে চারফর্মার ফোনেটিকাল সাসপেন্স , হরেকরকমের ভেতর সে নিজেকেই অন্বিত করছে বারবার, রুপোর কুরুশ নিয়ে ইমেনসাইট কাঁটাতারের ভেতরই খুঁজছে এটারনাল থ্রাস্ট, ছুটে যাচ্ছে নদীর দিকে, অর্নিদেশের দিকে আর কবিতা হারিয়ে যাচ্ছে আরও এক বীজের উন্মেষ নিয়ে, চেতনার সহোদরা নিয়ে। আসলে কবিতা মনে হয় কেবলমাত্র শেকড়ে ফিরে যাওয়া কিম্বা বড় রাস্তা দিয়ে এইমাত্র সকল সংস্কারনির্মিত কাঁচামাল লুটে এক অসম্পূর্ন দ্যোতনার দিকে কবি চলে গেল তার মিল নিয়ে মিশ্রকলা নিয়ে এলিমেনেশন নিয়ে অথবা পুরোদস্তুর কবিটাকে নিয়ে। তবু যেন কবিতা অভিজ্ঞত নয়, অলিখিত স্মৃতিবীজের ভেতর কেবল বহিরঙ্গের খোলসটুকু ছেড়েই তার আরও একটা হলোগ্রাফিক অন্বেষন। জ্যোর্তিলোক বা মহাস্মৃতি বলে কিছু আছে বলি জানিনা, কেবল পথ বলে কোন এক সাক্ষ্য বা শূন্যস্থানের ধারনা আছে আর এই উন্মুখ পথের প্রাননা থেকেই কবিতাযাপন, পান্না আর রুবির অন্ধকার এই শৈত্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই এক অরুপিত সংস্থান নিয়ে পথিকের টহল।

দু: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরনের প্রস্তুতি দরকার?

র: কবিতার ম্যানিফেস্টো হয় বলে আমার জানা নেই। চেতনার, বোধের রসমার্ধুয্যের কোনো স্ট্যাটিক শিব সুন্দর সত্য হয় বলেও মানিনা। ঠিক যেমন মাস্টারপিস বা ক্লাসিক শব্দদুটোই আমার কাছে মনে হয় বড় বেশী চাপানো বড় বেশি সমবায়িক বিশ্বাসের ভিত্তি থেকে ধারিত, যেখানে অপশনাল ফরম্যান্টের চোরাস্রোত বেশ কম। বিবর্তনের সাথে সাথে গড়ে ওঠে মানুষের জীবনচর্চা আর সাথে সাথে লঘুমস্তিষ্ক থেকে গুরুমস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্লেষন ক্ষমতা, তাই প্রাথমিকভাবে দেখতে গেলে ইমেজ বা বিম্বের থেকেই জন্ম নেয় ইম্যাজিনারি ডায়ালজিকের , প্রাকৃতিক অস্তিত্বের দ্বারাই জায়িত হয় মেধার ফসলগুলি। ঠিক তাই কবিও প্রাথমিক ভাবে তার ব্যাক্তিগত বা পারপার্শ্বিক পারফিউমেই খুঁজে ফেরে তার নকল মুখোশ কিন্তু এই যাতায়াত এই রক্তচাপ এই দাঁতব্যথা আর ফুলছাপ কাঁটাচামচের থেকেই কবির একটা মানসভ্রমন থাকা জরুরী বলে আমার মনে হয়। সমস্ত জোড়াতালি থেকে বিবমিষা থেকে সে খুঁজবে আরও এক জন্মমুখী ঘ্রান। দার্শনিকতা থেকে পেরিয়ে পৌঁছে যাবে আরও কিছুটা সিপিয়া রঙের দিকেই। কবির নিজের কাছেই আসলে লুকিয়ে থাকে কবির অচেনা একটা ভাষা, শরীর-মনের এক বাইনারী বৈপরীত্য। আর এই অলিখিত ভাষা খুঁজে ফেরাটাই কবিতার প্রস্তুতি বলা যেতে পারে। কেবলমাত্র ইমিটেশন বা অলংকার নয় কিমবা ইমোটিভ ইন্টারটেক্সটের ভেতর বিশুদ্ধ শিল্প খোঁজা নয়। কবি তো চিত্রীও বটে, সূত্রধরও বটে, কবিতা যতটা না ফর্ম, সাজানোর পদ্ধতি তার চেয়েও বেশী অনুচ্চারিতের দিকে জারিত করার খেলা আর এই খেলার সবচেয়ে মজাটা হল তা চোখে দেখা যায় না কানে শোনা যায় না কেবল ফুট কাটে কিছু অস্ফুট বুদবুদে। দুটো দিক আছে, একটা ইন্দ্রিয়গত জ্ঞার্নাজন আর একটা ইন্দ্রিয়াতীত অনুভূতি আর ঠিক এই দুইয়ের থেকেই কবি তার কবিতাকে নিয়ে রেট্রোস্পেট করে কোনো এক অনুচ্চারিত ইকোজিমে। শব্দের ভেতর একটা কোলাহল থাকে একটা অলক্ষ্যে জাগ্রত অ্যাবসার্ডিটি। শব্দের , বোধের ভেতর থেকে যায় কুক্ষিগত একটা মিথ , একটা আফিমজোন, আর বস্তু জগত থেকে যাত্রার অভিজ্ঞতা থেকেই ক্রমাগত বেড়ে যায় কবির এই সংক্রমন কবির এই শূন্যতা। আসলে সম্পূর্ন তো নয় কিছুই, সামগ্রিক তো নয় কিছুই , একটা স্ট্রাকচার থেকে লক্ষন থেকে কবির মনোজিনে ক্রমাগত এক অজ্ঞেয়বাদী আবিস্কার। যার ভেতর তার নিজস্ব ভাষা নিজস্ব ভাষিক কারুকাজ বারবার তাকে টুকরো করতে থাকে মূলের দিকে রিলিফের দিকে,একটা অকথিত নিঃস্বতা উদযাপনের দিকে। শ্রেষ্ঠ কবিতাটা বোধ হয় তাই কোনো জনপ্রিয়তা দাবী করে না , বিষয়-অবিষয় দাবী করে না, নিটোল সম্পূর্নতাকে অস্বীকার করতে করতে সে কেবল হয়ে যায় আর ভাষাগর্ভের আড়াল থেকে তাকে কেবল ঈর্ষাই করা যায়।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতা আপনার ভালোলাগে এবং কেন?

র: কবিতার ভালোলাগা খারাপ লাগা এত স্থুল সিদ্ধান্ত কবিতার ইনডিটারমেন্সিকে ছুঁতে পারে বলে আমার মনে হয় না। তবে হ্যাঁ সম্পূর্ন কবিতার থেকেও আমি দেখেছি মাঝে মাঝেই কিছু পংক্তি বা কিছু শব্দের কাটাকুটি আমাকে টানে বেশী, আমি প্রভাবিতও হই। দশকভাগ বস্তুটাকেই আমার কোথাও একটা বায়োগ্রাফিকাল কাঠামো নির্মান ছাড়া বিশেষ কিছু মনে হয় না। কোথাও যেন পুঁথিগত বহুতলিক ভাষাযাপনের ছবি। সেখানে ভাষাপাঠ করা সম্ভব কবিতাভাষার বিবর্তন জানা সম্ভব কিন্তু কবিতার অ্যালকেমি তো প্রায় সব যুগের কবিতাতেই পাওয়া যেতে পারে কেবল সমসাময়িক কেন? আমার বেশির ভাগ কবিতা আমি শূন্যে লিখেছি অথচ পঞ্চাশের কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় যখন লেখেন- “একটি বিড়াল একা বাহান্নটি থাবা গুনে/ উঠে গেলো সিঁড়ির উপরে/ লোহার ঘোরানো সিঁড়ি, সিঁড়ির উপরে/ সবার অলক্ষ্যে কালো সিঁড়ির উপরে” কিম্বা স্বদেশ সেন যখন লেখেন-“ঘুম থেকে ওঠা আজ অন্য একরকম/ এই সহসাই ভালোলাগছে/ এ সকাল যেন হাতে ধরা যায়/ বোঝা যায় কাছে আছে রোদ”.... এই মূর্ত ভাষার সামনেও আমার তো কেবল দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করে একান্ত তন্ময়তা নিয়ে। আবার সমসাময়িক অনেকের লেখাই ভালো লাগে , নতুন ধারার কবিতা, ধারাকে ভাঙার, ভাষাচিন্তার সমীকরনগুলোকে উলটে পালটে দেখার মেধা নিয়েই নতুন কবিতা নির্মান করছে কবিরা। আর এভাবেইতো কবিতা ধারার মুক্তি। ভাস্কর চক্রবর্তীর সামাজিক বেড়াল যেখানে ক্রমাগত কোয়ান্টাম লজিক নিয়ে ফিরে ফিরে আসে নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের মহাকালের বেড়াল হয়ে। আর বাইনারী অপজিট থেকে আমরা দেখছি খোসা ছাড়াচ্ছে কবিতা, একসেস কম্যুইনিকেশনের দিকে ঘোর ছড়াচ্ছে।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতা আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

র: এ প্রশ্নের উত্তর বোধহয় আগের বক্ত্যবের এক্সটেনশানেই পাওয়া যাবে। আর আরও একটা কথা ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয় কবিতার কোনো শিক্ষক হয় না গুরু হয়না তবে পথপ্রদর্শক অবশ্যই থাকে, যা প্রবেশ্যতা সম্পর্কে বারংবার একটা বহুরৈখিক টেক্সট তার সামনে তুলে ধরে। যেকোনো অস্থির শিল্পভাষা থেকেই সে সৃজিত হতে পারে। তবে কবিতার ব্রম্ভসত্যে পৌঁছতে গেলে কবিকেই এই ইন্সপিরেসন থেকে খুঁজে নিতে হবে তার স্ব-অভিভাবকত্ব , তার নিজস্ব যাপন বসতি। চৌর্যবৃত্তি কবিকে কোনোদিনও তার নির্ভার নির্জনতায় পৌঁছে দিতে পারে না।

দু: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

র: দুটো দশকেই সম্ভবত কবিতা ধারার একটা সার্বিক মুক্তি লক্ষ্য করা গেছে। বাংলা কবিতার শেষ ষাট বছরের দিকে তাকালেই এটা খুব পরিস্কার হয়ে যায়। চল্লিশের দশক দ্যাখো- ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা, মার্ক্সবাদ, আর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্ত্তী প্রেক্ষাপটে সমকালের সংকট নিয়ে হাজির হলেন অরুন মিত্র, মঙ্গলাচরন চট্টোপাধ্যায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায় বা সমর সেনের মত সমাজমনস্ক শহুরে কবিরা। ‘লাল ইস্তেহার’, ‘কসারের ডাক’-কবিতায় দেখা গেল এক গুচ্ছ সামাজিক প্রগতিবাদী ইস্তেহার। পাশাপাশি রবীন্দ্রপ্রচ্ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে তিরিশের জীবনানন্দ দাশ, অমিয় চক্রবর্ত্তীর ধারা ধরে কিছু অনুভাবিত মায়াবী জগতের লক্ষনও রয়ে গেল। ষাটে এসে দেখা গেল ঘরোয়া মধ্যপন্থী সমবায় ,আত্মজৈবনিক একাকী অন্বষন , আর যার ফলে বাংলা কবিতায় বির্তকের হাত ধরে আজও অখন্ড ভগ্নাংশ হয়ে রইল হাংরির ক্ষুদে তেজস্ক্রিয় বোমা। কিন্তু সার্বিকভাবে দেখলে কবিতার ধারা মুক্তি সম্ভবত আশির দশক থেকেই শুরু হয়, কবিতার ডিকশন প্যার্টান প্রায় সর্বস্তরে নিঃশব্দে একটা কাব্যিক ফিউশন গড়ে ওঠে। নয়ের দশক আর শূন্য এই এক্সটেনশনটাকে এক্সপ্লয়েট করল আরও ভালোভাবে। প্রথাগত হিগেমনি ভেঙ্গে গিয়ে কবিতা নিয়ে কবিদের ভেতরেই একটা ব্যক্তিগত ডিপারচার দেখা গেল যার ফল বহুধারার কবিতা , এক একটা ভিন্ন ওয়ার্কশপ ভিন্ন হোমওয়ার্ক....কাব্যিক অস্তিবাদের উপর ঝুলিয়ে দিল এক অপর এক বহিরাগত নতুন,যাকে কোনো ইস্তেহারে বাঁধা যাবে না। যাকে কোনো কনভেনশনাল সম্বন্বয়ে ছোঁওয়া যাবে না। আমি নব্বই ও শূন্য দশকের কবিতাকে আন্দোলনের পর্যায়ে ফেলতে নারাজ। অপর কবিতা নতুন কবিতা এগুলোতো আরও বিভিন্ন ধারামুক্তির মতোই কিছু কয়েনেজ কিন্তু তার মধ্যে সন্মোহন কম স্থিরতা কম বরং স্ববিরোধ বেশী এক্সপেরিমেন্ট বেশি, কবির ব্যাক্তিগত এক্সপ্লয়টেশন কবিকে উন্নীত করছে প্রতিষ্টানের থেকে যৌথতার থেকে।সাথে সাথে প্রজন্মগত একটা স্বীকারোক্তি তো আছেই। আর এখন শূন্য উত্তর কবিতাকে নিয়ে তো রীতিমত সূত্রায়ন করা যেতে পারে, ভাষাকে নিয়ে এত চুরমার এত ভাঙচুর কবিতার এত স্বাধীন আড্ডা- নব্বই আর শূন্য তো দেখিয়েই দিল কবিতার আদতে কি চাই।একটা টোটালিটি, প্যানপ্যানানি থেকে বেরিয়ে এসে মিছিলের কবিতা থেকে বেরিয়ে এসে সমাজ উদ্ধার থেকে বেরিয়ে এসে কবিতাতো আসলে চেতনার গায়ে সেই লম্বা লম্বা অন্তর্জাত বিয়োজন। কোনো দশকওয়ারী চিহ্নায়ন নয় বরং বৈশিষ্ট্যের ভ্যারাইটিতেই নব্বই ও শূন্য দশকের কবিতার মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে বাংলা কবিতার প্রথাগত প্ল্যাটফর্মে মেরুকরন ঘটেছে । শূন্যকে স্বীকার করে তার জানলাগুলোকে দোহাট করে কবিতা কোথাও স্বতন্ত্র্য সাবালক হয়ে উঠছে।

দু: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

র: বাংলাদেশের কবিতার সার্বিক জগত বা ইতিহাস সম্পর্কে যদি বলা হয় তাহলে সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞান আমার নেই তবে, বাংলাদেশের বহু সময়ের বহু কবির কবিতা পড়ে যেটুকু মনে হয়েছে কবিতার ধারা মুক্তি যেটা খুব নিঃশব্দ ভাবে পশ্চিমবঙ্গে সেই আশির দশক থেকেই ঘটে চলেছে আর যার ফসল মনোরঞ্জণী ডেমোনস্ট্রেশনে একটা অপরের সন্ধান সেটা কোথাও মনে হয়েছে বাংলাদেশের কবিতায় অনেক পড়ে শুরু হয়েছে, আর তাই কবিতার মুখ্যতা হিসেবে আজও রয়ে গেছে কবিতার শান্ত ভঙ্গিটি মায়ার দ্রবটি, তবে অনেকেই নতুন এক্সপেরিমেন্ট করছেন প্রচলিত ধারনাকে অগ্রাহ্য করছেন আর ভালো কাজ তো কাঁটাতার মানে না, ছোঁওয়ার কৌশল নিয়ে ছুঁয়ে দেয়।

দু: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

র: অনেক কিছু। শূন্যের দশকে এসে এটাই তো কবিতার বড় পাওনা, আন্তর্জাতিকরন। আর কেবল শূন্য কেন, ব্লগ কালচার তো শূন্যের আগেও ছিল। নতুন কবিতা আন্দোলনের মূল বিষয়ের মধ্যে একটা ছিল ব্যক্তিগত মালিকানা থেকে কবিতা ধারার মুক্তি , যা নব্বইও তার স্টেটমেন্টের ভেতর দিয়ে প্রমানিত করে দিয়েছে যে কবিতা একটা সীমা অতিক্রমকারী কারক, যা আনন্দ ছড়িয়ে দেবে আর ব্লগ সাহিত্য তো সেই কাজটাই করছে। হাজার রকমের পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে কবিতার বহুরৈখিক লুকোচুরি আদতে একটা ব্রডার অ্যাসাইনমেন্টের দিকেই বাংলা কবিতাকে নিয়ে চলেছে। আমি নিজেও তো অনুপমের সম্পাদিত বাক এর সাথে যুক্ত, ৫৯তম পোস্টে তো দেখলাম গত এক মাসে পাঠসংখ্যা ৩৭৬৯। মার্কেট পলিসির বাইরে কবিতার সহজ স্মার্টনেসের এর চেয়ে বেশি আর কি চাই? তবে হ্যাঁ, প্রিন্ট মিডিয়া আর ওয়েভ মিডিয়া আমি এখনও মনে করি দুটো ভিন্নস্বত্ত্বা মূলত ওই দোকানে গিয়ে জিনিস হাতে ধরে চেখে দেখার মত আর কি তবে হ্যাঁ কবিতাকে আত্মস্থ করার জন্য এসব পরজীবী কাঠামোর তুল্যমূল্যতা নিতান্তই সিম্বলিক। সমবায়িক ও লক্ষ্য অভিমুখী পত্রপত্রিকার বাইরে কবিতার আনফ্রেমড বেনিয়ম তো ব্লগই ঘটিয়েছে।

দু: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

র: লিটলম্যাগ আর ব্লগ তো দুটো ভিন্ন জিনিস। ম্যাগাজিন শব্দটা আদি যুগে কেবল বাঁধানো পত্রপত্রিকা প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হত।পরবর্তীকালে দেখা গেল গনসংযোগের প্রায় প্রতিটা বিষয়কেই সে বহন করছে। হাজার হাজার ম্যাগাজিন তার হাজার হাজার বিষয়, বলা যেতে পারে জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ। সংযোজন হল লিটিল ম্যাগ শব্দটা। ক্ষুদ্রতর প্রেক্ষিতে বৃহত্তর পাঠকের কাছে পৌঁছোনোর প্রয়োজনে। অ্যাকাডেমিক লিটিল ম্যাগগুলিতে এল কবিতা গল্প আলোচনা বিষয়ভিত্তিক তথ্যানুসন্ধান আরও কত কি। আসলে ব্লগ ঠিক এ কাজটাই করতে চেয়েছে ওয়েভ মাধ্যমে। ব্লগের অ্যাক্সিসেবিলিটি হয়ত তাই অনেক বেশি কারন বিষয় ভিত্তিক লিটিল ম্যাগে সাধারনত লক্ষ্য করা যায় সাবজেকট ওরিয়েন্টেড রিডারস পার্টিসিপেশন। আন্তর্জাতিক যোগাযোগের পরিসর থাকায় খুব সহজেই ব্লগ ছড়িয়ে পড়তে পারে বৃহত্তর পরিসরে। তবে লিটিল ম্যাগ অনেক বেশী টেক্সুয়াল প্লেজার বহনক্ষম আর যেকোনো সঞ্চারমান অভিজ্ঞতার মতই লিটিল ম্যাগ থেকে যাবে বাংলা সাহিত্যের আমর সঙ্গী হয়ে কারন লিটিল ম্যাগের সিম্বলিজম, পুরাকথার ওপর ভিত্তি করেই বাংলা কবিতার বা সাহিত্যের ব্লগকালচার, যা কেবল পূর্বতন ন্যারেটিভ কে আরও কিছুটা পাঠ অভীপ্সা দিয়েছে।