লিটলম্যাগ আন্দোলন বলে কিছু নেই: প্রবীর ভৌমিকের সাথে আলাপ

Post date: Sep 20, 2012 7:58:18 AM

প্রকাশিত বই: তুমি আছ বিনাশে-নির্মাণে

ঘাসের উন্মাদ প্ররোচণা

সাবাতিনি ও অন্যান্য কবিতা

দুপুর মিত্র: একেবারেই প্রথম প্রশ্ন আমি আপনাকে যেভাবে জানি, তাতে আপনি বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গ উভয় জায়গাতেই কবিদের সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ। আপনি নিজেও একজন কবি। এক সময় শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মত কবিদের সাথে আপনি বেশ ঘনিষ্ঠভাবেই চলাফেরা করতেন আর এখনও উৎপল কুমার বসু, রাহুল পুরকায়স্থের মত কবিরা আপনার বেশ ঘনিষ্ঠ। সেই সূত্রে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কবিতা, কবিতার বেড়ে ওঠা, তফাত আপনি বেশ আন্তরিকভাবেই দেখেছেন। এসব বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলুন।

প্রবীর ভৌমিক: হ্যাঁ এটা ঠিক দুইবাংলার অনেক কবিরই আমি ঘনিষ্ঠ মানে চিনি আর কি। পশ্চিমবঙ্গে শ্যামল কান্তি দাস, কাজল চক্রবর্তী এরা আমার চেয়ে আরও বেশি খবর রাখেন। সেটা অসেনকখানিই সংগঠনগত কারণে অবশ্য। আমার মেলা-মেশাটা অনেকটাই ব্যক্তিগত পর্যায়ে। এ বিষয়ে নির্মলেন্দু গুণ বা অসীম সাহা পরবর্তীতে শামীমুল হক শামীমের মাধ্যমেই পরিচিত হয়েছি। আর শক্তি চট্টোপাদ্যায়ের সঙ্গে মেলামেশা অনেকেই করেছেন। জীবনানন্দ পরবর্তী শ্রেষ্ঠ কবি বলে আমি তাঁকে মনে করি। উতপল কুমার বসু অবশ্যই শক্তিশালী কবি। ৭০’ দশক থেকে অদ্যাবধি পশ্চিমবঙ্গে হাতে গোনা পাঁচ-সাতজন শক্তিশালী কবিদের মধ্যে রাহুল পুরকায়স্থ অন্যতম। কবি হিসাবে নয় একজন পাঠক হিসাবে দুই বাংলার অনেক কবিকেই আমি কাছ থেকে দেখেছি। তাঁদের ক্রমঅগ্রসরতার সাক্ষি হিসাবে নিজে গর্ব অনুভব করি। অনেকের অধ:পতনেরও নির্বিকার সাক্ষি।

দুপুর মিত্র: একসময় আপনি লিটলম্যাগের সাথে জড়িত ছিলেন। নিজেও লিটলম্যাগ বের করেছেন দীর্ঘসময় ধরে এবং তা কৃত্তিবাসের পরেই জনপ্রিয়ের বা গ্রহণযোগ্যতার সারিতে ছিল। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের লিটলম্যাগ, লিটলম্যাগ আন্দোলন, ব্যর্থতা, তরুণ কবি এসব বিষয়ে আপনার কাছে জানতে চাই।

প্রবীর ভৌমিক: 'ভগ্নাংশ' বলে একটা লিটলম্যাগাজিন করতাম আশির দশকে। খুবই অনিয়মিত ছিল সে পত্রিকা। কিছু সাড়া ফেলেছিল ঠিকই কিন্তু কৃত্তিবাসের পরেই তা জনপ্রিয় হয়েছিল এটা ঠিক নয়। কারণ 'শতভিষা' 'গণ্ডোত্রী' 'অনুক্ত' এবং 'পরিচয়'। পরবর্তীতে 'কবিতীর্থ' অনেক অনেক উল্লেখযোগ্য পত্রিকা। কৃত্তিবাস সত্যিই একটি আন্দোলন তুলে এনেছিল৫০’এর দশকে। এক্ষেত্রে সুনীল গঙ্গোপাধ্যয়কে অভিনন্দন জানাতেই হয়। ভাবুন তো সুনীল দা এক ছাতার তলায়, শক্তি, উৎপলকুমার, বিনয় মজুমদার, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের মতো লেখকদের কিভাবে জড়ো করেছিলেন। কথা সাহিত্যিক, কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পরে আমি সম্পাদক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জায়গা রাখি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি লিটলম্যাগ আন্দোলন বলে কিছু ছিল না। কিছু নেইও। যারা এসব আন্দোলনের কথা বলতেন বা বলেন তাদের দ্বি-চারিতা আছে। আপনি শুধু 'অনুষ্টুপ' পত্রিকার কথাটি ভাবুন। ৮-১০ ফর্মার অনুষ্টুপ ৭০ দশকে বিস্ফোরক পদার্থের মতো। আর আজ দুই থান ইট সমান মোটা। শারদীয় দেশের চাইতেও মোটা। আরো অনেক আছে। লাখ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন। গুণগত মান অবশ্যই আছে। কিন্ত লিটলম্যাগ আন্দোলন বলে কিছু নেই। কিছু সাহিত্যপ্রেমী, মেধাবী মানুষ, তরুণ, তরুণী নিজেদের উদ্যোগে ভাল সাময়িক পত্র প্রকাশ করছেন এখনও। কিন্তু কোন যৌথ আন্দোলন নেই। যাও বা ছিল সেটা কলকাতায় শেষ হয়ে গেছে সেদিন, যেদিন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় লিটলম্যাগ মেলা শুরু হয়েছে কলকাতার লন্ডন চত্বরে। আমার মনে হয় যে কোন সরকার যদি কোন কবি বা সাহিত্য পত্রিকার কাঁধে হাত রাখে সেই কবির বা পত্রিকার ইজ্জত নষ্ট হয়ে যায়। আর একটা দিক আছে, সেটা হল প্রতিষ্টান বিরোধিতা। এটা অনেকটা সোনার পাথর বাটির মতো। এমন দেখেছি আজ যাকে বা যাদের প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভাবছি কাল সেটা প্রতিষ্ঠানের মহীরুহ। অনেক ক্ষেত্রেই হয়েছে এটা। আন্দোলন বলছে না। আন্দোলন নয়। গ্রুপ আছে 'ক' পত্রিকার গ্রুপ 'খ' পত্রিকার লেখককে গুরুত্ব দেন না। এমনকি ব্যক্তিগত কুৎসা করতেও বাধে না। তবে সবটাই এরকম নয় নিশ্চয়। অনেক পত্রিকা আছে যারা তরুণ এবং শক্তিশালী লেখকদের লেখা ছাপে। না হলে আবুল বাশার, স্বপ্নময়, জয় গোস্বামী বা রাহুল পুরকায়স্থদের লেখা আমাদের সামনে এল কিভাবে। আর তরুণ কবি! দুই বাংলায় প্রচুর তরুণ কবি ভাল লিখছেন। ভাবনা চিন্তায়, আঙ্গিকে নতুনত্ব আনছেন। এগুলোই তো ইতিবাচক দিক তাই না। তথাকথিত আন্দোলনের বিভ্রান্তির চেয়ে এই প্রাপ্তি অনেক বেশি।

দুপুর মিত্র: বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে শিল্প-সাহিত্যে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় কাদেরকে আপনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন মানে সমসাময়িক কাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় এবং কেন?

প্রবীর ভৌমিক: এটি একটি ভাল প্রশ্ন তুলে এনেছেন। শুধু কবিতা বা গল্প নয়, বুদ্ধিবৃত্তি চর্চা। এ বিষয়ে আমি যেটা বলব সেটাই শেষ কথা নয়। তবে এ সময়ে বাংলাদেশের মজিদ মাহমুদ, কুমার চক্রবর্তী এরা কবিতার পাশাপাশি প্রবন্ধ লেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন। মজিদের প্রবন্ধর বই 'বিকল্প ভাবনা' বা কুমার চক্রবর্তীর 'অস্তিত্ব ও আত্মহত্যা' অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আবু হাসান শাহরিয়ারেরও কিছু কাজ আছে। আরও কাজও নিশ্চয় আছে তবে সবটা তো আমার জানা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে খোলাখুলি বলি এ ধরণের কাজ যতদূর জানি পশ্চিমবাংলায় কম। প্রবন্ধ সাহিত্যে আমার মতে বাঙলাদেশ অনেক ধনী। আহমদ ছফা, ফরহাদ মজহার, বদরুদ্দীন উমর, আব্দুল মান্নান সৈয়দ অনেক অনেক নাম বলা যায়।

দুপুর মিত্র: দু' বাঙলা মিলেই সমসাময়িক কাদেও কবিতা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় এবং কেন?

প্রবীর ভৌমিক: এ প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া খুবই অস্বস্তিকর। তবে আমার প্রিয় কবিদের মধ্যে আবু হাসান শাহরিয়ার, কুমার চক্রবর্তী, ব্রাত্য রাইসু, রহমান হেনরী, মজিদ মাহমুদ, চঞ্চল আশরাফ, মুজিব মেহদী এরা আছেন। ফরিদ কবির বেশ প্রিয় কবি আমার। তরুণদের মধ্যে অনেকেই ভাল লিখছেন বাংলাদেশে। পশ্চিমবঙ্গে আগেই বলেছি রাহুল পুরকায়স্থ আমার প্রিয়তম কবি। প্রিয় কবিদের মধ্যে আরও আছেন প্রজিত জানা, সংযুক্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়। চিরঞ্জীব বসু অত্যন্ত ভাল গদ্যকার হলেও কবিতায়ও শক্তিশালী। তরুণদের মধ্যে সৌরভ দে, দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়, হিন্দোল ভট্টাচার্য্য, দীপংকর বাগচী লিখেছেন এখন। মিতুল দত্তও একদম অন্যরকমভাবে লেখেন। আমি যাদের কথা বললাম এরা সবাই ৮০/৯০ বা শূন্য দশকের। দেখুন চটজলদি এভাবে বলা যায় না। তবে আমরা ৭০ এর দশক বলে যে হাকডাক, থামিয়ে দিচ্ছেন এরা। এমন অনেক কবি আছেন পশ্চিমবাংলায় এখন লিখছেন তাদের নাম হয়ত প্রকাশ্যে আসে না কিন্তু অলক্তা মাইতি, তুষার কান্তি রায়, অপূর্ব পাল এদের বিষয়ে আমি ভীষণ আগ্রহী। এ বিষয়ে একটা কথা জানাই প্রায় অব্যবসায়িকভাবে একটি প্রকাশনা করছেন উত্তম দত্ত(সুমুদ্রণ)। কলকাতা বই মেলা গেলে দেখবেন এদের কাজ।

দুপুর মিত্র: বাঙলা কবিতার কোন পরিবর্তন গুলো আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় মানে যে পরিবর্তনগুলো আপনি বেশ কাছে থেকে দেখেছেন সেসব পরিবর্তনের জায়গাগুলো নিয়ে একটু বলুন।

প্রবীর ভৌমিক: আমি একাডেমিক নই। তবে পাঠক হিসাবে দীর্ঘদিন কবিতার সঙ্গে থাকার ফলে কবিতার বাঁকগুলি আমার মতো করে ভাবতে পারি। সন্দেহ নেই জীবনানন্দও অত্যোজ্জ্বল, বিষণ্ন আলোয় যে বাঁক শুরু হয়েছিল সেই বাঁক ধরে ৫০ এর কবিরা পূর্বসূরীদের সমাজতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা, কবিতায় আরোপিত পাণ্ডিত্যেও বিপরীতে চলা প্রায়। এর মধ্যে এ্যালেন গিন্সবার্গের আগমন। যা পরবর্তীতে হাংরির উদ্ভবের প্রেরণা। যা বলছিলাম। জীবনানন্দেও হাত ধরে চললেও অচিরেই ৫০ এর কবিরা নিজেদের জায়গা চিনে নেন। এখানে আবার শঙ্খ ঘোষ বা আলোকরঙ্জনের কথা উঠবে দার্শনিক প্রজ্ঞার ওপর ভিত্তি করে এদের কবিতা এও একটা বাঁক বটে। ৬০ এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কবি থাকলেও আলাদা করে বলার কিছু নেই। ৫০ কে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তুষার চৌধুরী, পার্থপ্রতীম কাঞ্জিলাল প্রমুখ কবিরা বামপন্থি আন্দোলন বিশেষ করে নকশাল বাড়ি আন্দোলন বিশেষ প্রভাব ফেলে ৭০ এর ক্ষমতাশীল কবিদের ওপর- এইসব আন্দোলনের নেতিবাচকতা এবং ইতিবাচকতাসহ। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বাঁক অবশ্যই। ৮০-৯০ এর দশকে এভাবে কোন বাঁক না দেখলেও কয়েকজন শক্তিশালী কবি এসেছিলেন। যারা পরবর্তীদেও জ্ঞানে-অজ্ঞানে প্রভাবিত করবেন। এখন আপনারা যাকে শূন্য দশক বলেন তাদের সামনে অন্তহীন রাজনৈতিক শূন্যতা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, প্রনয় এর অপমৃত্যু, বিশ্বায়ন, প্রযুক্তির আস্ফালন এ সবের মধ্যে দাঁড়িয়ে লিখতে হচ্ছে। যাঁরা টিকে থাকবেন একটা নতুন বাঁকের জন্ম দিয়ে যাবেন বলে আমার মনে হয়। বিশ্বাসও করি।

দুপুর মিত্র: অনেকেই মনে করেন দশকভিত্তিক কবিতায় বাত বদলের ঘটনা ঘটে। সে হিসেবে ৭০-৮০-৯০ এ কোনও বাঁক বদল কি আপনার চোখে পড়েছে। পড়লে সেগুলো কি? না পড়লে কেন?

প্রবীর ভৌমিক: এর উত্তরটা আগের উত্তরের মধ্যে আছে। তবে বাংলাদেশেল ক্ষেত্রে বলতে পারি। ভাষা আন্দোলন একটি রাষ্ট্রকে কনসিভ করার আগ্রহ এবং জন্ম দেওয়া এতে করে ৭০ এর দশক অবধি বাংলাদেশের কবিতায় অনেক সরলীকরণ ছিল। কিন্তু ৮০ এর দশক থেকে দ্রুত এখানকার কবিরা নিজেদেও চিনিয়ে দিয়েছেন। মননে, আঙ্গিকে, শব্দায়নে এঁরা প্রায় গেরিলা বাহিনীর মতো প্রতিষ্ঠান এবং হয়ে ওঠা অপ্রতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান এবং যারা ছেড়া কাথায় শুয়ে প্রতিষ্ঠানের স্বপ্ন দেখে তাদের সদর দপ্তরে কামান দাগছে। সবাই পাড়ছে না। কিছুদিন প্রতিকূল স্রোতে হেঁটে অনুকূল আবহাওয়ায় আবার ফিরে এসেছেন। কিন্তু হতাশার কোনও জায়গা আমি দেখি না। তরুণরা উঠে আসছে। রংপুর থেকে, ঝিনাইদহ থেকে নওগাঁ থেকে। একদিন শহর ঘিরে ফেলবে এরা।

দুপুর মিত্র: সোশ্যাল কমিটমেন্ট ও কবিতা এই দুই বিষয় কি একসাথে চলতে পারে বা কবিতায় বা কবির জন্য সোশ্যাল কমিন্টমেন্ট কতটা গুরুত্ববহ?

প্রবীর ভৌমিক: কবিতা তো সোশ্যাল কমিন্টমেন্টেরই ফলশ্রুতি। যেমন ‘কেবল নিজের মুদ্রাদোষে আলাদা হওয়া’ এটা তো জীবনানন্দের একার কথা নয়। সমাজের এক অংশের কথা। আপনি সোশ্যাল কমিন্টমেন্ট বলতে বোধহয় রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার কথা বলছেন। হ্যাঁ কবিতা হয়ে উঠলে দুটোর একসঙ্গে মেলবন্ধনে অসুবিধে কোথায়। সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অমিতাভ দাশগুপ্ত, মনিভূষণ ভট্টচার্য এঁরা কাজ করেছেন। কিন্তু হয়েছে কি আজ হাতে পড়ে, এসব বামফ্রন্টের কবিতা তৃণমূলে কবিতা হয়ে উঠেছে। সোশ্যাল কমিন্টমেন্ট তো কবির থাকতেই হবে। একটা বড় আন্দোলন হবে, গণ হত্যা হবে বা মৌলবাদের আগ্রাসনের সময় কবি মুখ ফিরিয়ে প্রেম নামক হাস্যকর বস্তু বা লিবিডো নামক ভয়ংকর বস্তুর মধ্যে নিমজ্জিত থাকবেন তা হয় না। কথাটা তা নয় এই সোশ্যাল কমিন্টমেন্ট তো এখন দলতান্ত্রিক আনুগত্য। আমি সিপিএম আমার মতো কওে সোশ্যাল কমিন্টমেন্ট। আমি তৃণমূল আরেকরম সোশ্যাল কমিন্টমেন্ট। ফলে দলের কমিন্টমেন্ট থাকছে কিন্তু কবিতা এবং সোশ্যাইটি থাকছে না। একজন কবিকে মুক্ত মানুষ হতে হয় এটা আমার বিশ্বাস।

দুপুর মিত্র: আল মাহমুদের কবিতা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

প্রবীর ভৌমিক: আল মাহমুদ বাংলা ভাষাভাষি কবিতার ক্ষেত্রে জীবনানন্দ পরবর্তী সময়ে প্রথম সারির কবি। এ নিয়ে কোন কথা হবে না। তার কবিতা নিয়ে বিস্তর আলোচনার জায়গা এটা নয়। তবে শঙ্খ ঘোষ, বিনয় মজুমদার, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার নাম আসবে। আমার কাছে এটাই প্রথম সারি।

দুপুর মিত্র: একজন তরুণ কবির জন্য আপনার কি পরামর্শ থাকবে?

প্রবীর ভৌমিক: পরামর্শ দেওয়ার মতো বিজ্ঞ আমি নই। জীবনযাপন, অভিজ্ঞতা, পড়াশোনা আর অকপট থাকা উচিত একজন তরুণ কবির। দাদাধরা, গ্রুপ করা এসবের প্রয়োজন নেই- এইটুকুই বলা যায়।

দুপুর মিত্র: বাংলা কবিতায় কয়টা স্কুলিং দেখা গেছে। কোন স্কুলিংকে আপনি মনে করেন গুরুত্বপূর্ণ এবঙ কেন?

প্রবীর ভৌমিক: সব স্কুলিং এর মধ্যেই ঘোরাফেরা করা দরকার নিজেকে সমৃদ্ধ করবার জন্য। আমার নিজস্ব ঘরানা 'যা কিছু ব্যক্তিগত তাই পবিত্র’ আমার ভাবনায় ’কবিতার তুলো ওড়ে সারারাত্রি ঘুমের ভিতরে’। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে শঙ্খ ঘোষ বলেছিলেন 'এই শহরের রাখাল’। আমি ওই মেধাবী, উজ্জ্বল, স্বেচ্চাচারী রাখালের স্কুলিং এ শিক্ষারত। বোধহয় মৃত্যু অবধি থাকব। এ বিষয়ে কোন তর্কে যাব না।