আমার কাছে কবি হয়ে ওঠাটা ম্যাজিকের মতো: আয়শা ঝর্ণার সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Dec 19, 2013 5:24:14 PM

প্রকাশিত বই: ১.আঁধার যান (বাংলা একাডেমী, ১৯৯৬) ২.মাত্রমানুষ (পাঠক সমাবেশ, ২০০৩), ৪.উনুনের গান (ইত্যাদি, বাংলাবাজার,২০০৫) ৫.আয়না রক্ত হল্লা( ইত্যাদি, ২০০৭),৬.বাতাস তাতি শব্দ(বাঙলায়ন,২০১০), ৭.সিলভিয়া প্লাথের এরিয়েল-অনুবাদ গ্রন্থ(ঐতিহ্য,২০১০), ৮.শিল্প ও নারীসত্তা( সংবেদ,২০১২), ৯. গল্পের বই-চারকোল (২০০৮, পাঠসূত্র)।

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের সাথে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার সম্পর্ক থাকতেই হয় বলে মনে করেন কি? হলে কেন?

আয়শা ঝর্ণা: দেখুন লিটলম্যাগ আন্দোলনটা আমাদের সাহিত্যে আসে ইউরোপ থেকে। সেখানে যে কবি তার কবিতার এক্সপেরিমেন্ট করতে চান, বেরিয়ে আসতে চান ট্র্যাডিশনাল ফর্ম থেকে তাদের সবাইকেই লিটলম্যাগ অান্দোলনের ভেতর দিয়ে আসতে হয়। এই ধারণা পরবর্তীতে ভারতে আসে এবং পঞ্চকবি কিংবা হাংরি জেনারেশন বলুন এরা সবাই লিটলম্যাগ আন্দেলনের ফসল। প্রতিষ্টান কখনো নতুন কবিদের কবিতার এক্সপিরেমিন্টের স্থান দেয় না। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কিছু সীমাব্দ্ধতা আছে। তারা ভোক্তা সাধারণের কথা চিন্তা করেই সাহিত্যকর্ম ছাপে। ফলে আপনি লিটলম্যাগ করবেন অথচ দৈনিকেও লিখবেন তা তো হতে পারে না। এ্ই লিটলম্যাগ আন্দোলন কখনো একা হয় না, এতে একদল সমমনা কবির অংশগ্রহন থাকতে হয়। যেখানে সে তার সাহিত্যকাজে, ফিলোসফ্যি, মাহিত্যিক মতাদর্শ, ছাপানো, বিলিবন্টন এগুলো সব শেয়ার করে থাকেন। আর তা পুরোপুরিই নন-প্রোফিটএবল মানসিকতার জায়গা থেকেই করে থাকেন তারা। টি.এস.এলিয়ট, এজরা পাউন্ড, সিলভিয়া প্লাথ, র‌্যাবো, বোদলেয়ার, ভেরলেন, ভার্জীনিয়া উলফ, ক্যামু, কাফকা প্রত্যেকেই লিটলম্যাগ বা এ্যান্টিএস্টাবলিশমেন্ট নিভর আন্দোলনের ভেতর থেকে তাদের সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে এসেছেন। ভারতের সুবিমল মিশ্র, পঞ্চকবি প্রত্যেকেরই একটি পত্রিকা ও যুথবদ্ধতা ছিল। যখন কবিরা তাদের নিজেদের স্বরের সন্ধান পেয়ে যান এবং তাদের সাহিত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় মানে পাঠক তাদের কবিতা কিংবা গল্পপাঠে অভ্যস্ত হয়ে গেলে লেখক তার নিজ পথে চলতে থাকেন সেখানে কেউ চাইলে অাজীবন লিটরম্যাগের সাথে থাকেতে পারে কেউ নাও থাকতে পারে, এখানে বিরোধের জায়গা থাকে না। লিটলম্যাগের কন্টেন্ট এবং লেখকসূচী থেকেই তাকে নির্ধারণ করা যায়।

অন্যদিকে আমাকে এখানে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করতে হচ্ছে যে লিটলম্যাগ আর সাহিত্য পত্রিকা দু’টো ভিন্ন জিনিস। লিটলম্যাগ পত্রিকা তারা তাদের গোষ্ঠীবদ্ধ লেখক ছাড়াও নতুন কবিকে সার্ভ করে সেখানে প্রতিষ্ঠিত লেককের লেখা স্থান পাবে না। তারা কোন পুরুষ্কার কিংবা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা অথবা প্রতিষ্ঠিত লেখকের সুদৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে না। তারা চলে নিজস্ব গতিতে। আর যেহেতু এটি ননপ্রফিটএবল তাই অনেকটা অনিয়মিত এর পাবলিকেশন।

অন্যদিকে সাহিত্য পত্রিকা প্রতিষ্টিত অপ্রতিষ্ঠিত, নবীন, প্রবীণ সবার লেখাই ছাপতে পারে। সেখানে কোন রিজিডিটি থাকে না। অবশ্য এটা আমার মতামত। আমি নিজেও লিটলম্যাগ পত্রিকা থেকেই উঠে আসা। লিটলম্যাগের সাথে থাকতে পারলে আমার ভাল লাগত। কিন্তু এর কিছু সীমাবদ্ধতা সাথে আমার জেন্ডার সীমাবদ্ধতা, সামাজিক, পারিবারিক সীমাবব্ধতা সব মিলিয়ে সে আন্দোলনের সাথে থাকা হয়নি। পাঁচ লেখা শুরুর পাঁচ বছর আমি কোন দৈনিকে লিখিনি সুযোগ তাকা সত্ত্বেও। পরবর্তীতে নিজের মত করেই যাত্রা শুরু করেছিলাম, এখনো চলছি। আমাদের অনেক বন্ধু আছেন তারা এখানো লিটলম্যাগেই লিখে থাকেন, দৈনিকে লেখেন না।

লিটলম্যাগ এক ধরনের গোষ্ঠিব্দ্ধ সাহিত্য আন্দোলন হওয়ায় এর সুফল কুফল দু’টোই আছে। সুফল হলো আপনি আপনার সাহিত্যের একসপেরিম্নেট চালাতে পারেন পাঠকের তোয়াক্কা না করেই। এত করে লেখক তার একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেন। অন্যদিকে কুফল হলো এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত লেখকদের এক ধরনের সুপিরিয়র কমপেলক্স গ্রো করে। গ্রুপের মাঝে, বন্ধুদের মাঝে মানসিক দন্ধ শুরু হয় সাথে মাস পিপলের সাথে যোগাযোগ হয়ে ওঠে না। লেখক এক ক্ষুদ্র পরিসরে আটকে যান। তবে এটা সাত্যি যে কোন তরুণ কবিকে তার নিজের স্বর খুজতে হলে লিটলম্যাগের কাছে আশ্রয় নিতেই হয়।।

দুপুর মিত্র: বাংলাদেশে লিটলম্যাগ চর্চা, অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত এসব নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি? নতুন কিছু মনে হয়েছে কি?

আয়শা ঝর্ণা: বাংলাদেশ লিটলম্যাগ চর্চা অতীতে ছিল, বর্তমানেও আছে অদুর ভবিসত এও থাকবে এ নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। যুদ্ধপূর্ববর্তী লেখকগণ লিটলম্যাগ করেছেন আবার যুদ্ধপরবতি সময়েও ছিল। কিন্তু এই আন্দোলন সবচেয়ে বেশি উদ্ভাসিত হয় সত্তরের পরের সময়টাতে বিশেষ করে আশির দশক থেকে। তখন কিছু তরুণ কবি তাদের অগ্রজ কবির কবিতার বলয় থেকে বেরিয়ে এসে নতুন ধরনের কবিতা লিখতে আসেন ইস্তোহার দিয়ে। এর সুফলও বাংলাদেশের সাহিত্য পেয়েছে। ফলে আশির দশকের কবিদের কাবিতায় কবিতায় নতুন একটি মাত্রা পায়। এবং আমরা পাই শোয়েব শাদাব, বিষ্ণু বিস্বাস, সুব্রত অগাষ্টিন গোমজে, শান্তনু চৌধুরী, সাজ্জাদ শরীফ, কাজল শাহনেওয়াজ, আহমেদ নকীব, ব্রাত্য রাইসু, সুমন রহমানের মতো কবিরা। আরো অনেক প্রমিজিং কবি এসেছেন সে সময়ে তারা লিখছেন তাদের নিজস্ব স্বর থেকে।

আশির পরে নব্বইযে আসে এক ঝাক কবি তাদের উত্তরসূরী হয়ে (যদিও লেখকের জন্য দশকের বিভাজন এক ক্ষুদ্র গন্ডি)। তারা ইস্তেহার দিয়ে না এলেও তাদের লেখাকে আলাদা করা যায় আশির দশকের কবিতা কিংবা গল্প থেকে। নব্বইয়ের কবিরা এখন নিজেদের জায়গা থেকে লিখে যাচ্ছেন। বর্তমানেও এসেছেন অনেক তরুণ কবি, তারাও লিখছেন। ভবিষতেও যারা নিজের আলাদা স্বর খুজে বের করে তারাও লিখবেন লিটলম্যাগ কিংবা ওয়েবেম্যাগে, ব্লগে, ফেসবুকে। এতে করে অনেক ,মানসম্মত লেখা হয়তো প্রথমে পাবেন না কিন্তু লিখতে লিখতেই লেখক নিজের স্বর খুজে পান। লেখা চালিয়ে যাবার ব্যাপার, সেইসাথে পঠনপাঠন, চর্চার ব্যাপার। লেখকের সাথে নিজের বোঝাপড়ার ব্যাপারটিও থাকে যে সে আসলেই লিখবে কিনা!

তাদের লেখায় নিশ্চয়ই নতুন কিছু হয়েছে। অনেক ঝকঝকে নতুন, তরুণ কবি লেখক এসেছেন। তারা বেশ প্রস্তুতি নিয়েই এসেছেন বলে প্রতীয়মান হয়। এটি বাংলাসাহিত্যের জন্য এক ভাল লক্ষণ।

দুপুর মিত্র: ওয়েব ম্যাগ, ব্লগ ইত্যাদির মাধ্যমে একটা পাল্টা মিডিয়ার গঠন প্রক্রিয়া চলছে বলে আপনি মনে করেন কি? এখানে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার বিষয়গুলোকে কিভাবে দেখবেন। বা লিটলম্যাগের প্রতিস্থাপন হিসেবে ভাবা যায় কিনা?

আয়শা ঝর্ণা: দেখুন ওয়েব ম্যাগ লিটলম্যাগের পাল্টা মাধ্যম হতে পারে না। কারণ লিটলম্যাগ শুধু লেখা প্রকাশই করে না এখানে থাকে এক ধরণের যুথবদ্ধতা, শেয়ারিং, চিন্তার সরাসরি আদান প্রদান, মানবিক যোগাযোগ যা ভার্চুয়াল মাধ্যমে সম্ভব নয।

তবে ওয়েব কিংবা ব্লগ, ফেসবুক লেখকদের জন্য এক নতুন সম্ববনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। এখানে নতুন পুরাতন, কাঁচা, পোক্ত সব ধরনের লেখা লেখক ইচ্ছেমতো তার পেজে শেয়ার করতে পারেন। তবে এখানে একটু অসুবিধে হোল যে আপনি কিন্তু প্রিন্ট মিডিয়ার বিকল্প ভাবতে পারেন না। কারণ আমাদের দেশে এখানো বেশীরভাগ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার জানে না। আর তাছাড়া প্রিন্টভারসেন লেখা পড়ার মজাই আলাদা। কবিতার জন্য এটি ভাল মাধ্যম কিন্তু গল্প কিংবা উপন্যাস অথবা প্রবন্ধের ক্ষেত্রে আপনি কি বলবেন? হয়তো পড়া যায় কিন্তু পাঠক স্বস্তি পায় না।

দুপুর মিত্র: আপনার কাছে কবি হয়ে ওঠা বিষয়টা কি?

আয়শা ঝর্ণা: আমার কাছে কবি হয়ে ওঠাটা ম্যাজিকের মতো। কবিতা যে কখন আপনাকে কবি বানিয়ে ফেলবে এ মাহেন্দ্রক্ষনটি কবির অজানা। তবে কবি কিন্ত কেউ ইচ্ছে করলেই হতে পারে না। কবির ভেতর কিছু অতিন্দ্রীয় অনুভব থাকেতে হয যে অনুভবকে সে শব্দ দিয়ে সাজায়। সে নিজেও জানে না কখন তার হাতে উঠে আসবে একটি ভাল, তাজা কবিতা যা পাঠককে ভাবাবে অনুরণিত করবে। ‘ দ্যা ওয়েস্ট ল্যান্ড ‘ এমনই একটি কবিতা যেখানে কবি নিজেও জানতেন না কখন এটি হয়ে উঠবে একটি এপিক কবিতা। অথচ এ কবিতাটি টি.এস.এলিয়ট যখন লিখছিলেন তিনি নিজে মানসিকভাবে অসুস্থ। তার ডাক্তারের পরামরশে ট্রিটমেন্ট চলছিল্। ৪৩২ লাইনের এই এপিক কবিতাটি লিখে তিনি বিশ্ব সাহিত্যের দরবারে পাকাপোক্ত আসন করে নিচ্ছিলেন যে নিজেও জানতেন না। তবে কবির পঠন পাঠন তো থাকতেই হয়। তাকে বুঝে নিতে হবে কোনটি তার সময়ের, তার নিজের কবিতা যেটি কেবল তার স্বরকেই চিহ্নিত করে, তার সময়কে, তার চিন্তা অনুভবকে উপস্থাপিত করে। তারপর সেই হয়ে ওঠাটাকে নারিশ করা, নিজের ভেতর লালন করা, সেই সত্বাটাকে বাচিয়ে রাখা লেখার মাধ্যমে।

দুপুর মিত্র: কবিতা কি?

আয়শা ঝর্ণা: কবিতা আমার কাছে..একজন কবির একান্ত স্বর, অনুভব, অনুরনন, চিত্রক্ল্প, সুর, ছন্দ লয়ের এক টোটালিটি, শব্দের যাদুবাস্তবতা - যেখানে থাকে মহাজাগতিক সময়ের কিছু প্রতিফলন। যা তার সময়ের হয়েও অনন্তের। সেখানে পাঠক যুক্ত হয় তার নিজস্ব পঠন অভিজ্ঞতা আর অনুভবের জগত থেকে। কবিতা যেন কখনো এক ঝলক তাজা হাওয়া, কখনো দীর্ঘ যাত্রা, কখনো খন্ড চিত্রকল্প কখনো সময়ের কোলাজ। এ এক মহামায়া, জীবনের সাথে কিংবা প্রকৃতির সাথে, সময়ের সাথে শব্দের মাধ্যমে, ভাষার মাধ্যমে কবির বোঝপড়ার মেলবন্ধন ..।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বাংলা কবিতার প্রবণতাগুলো কি?

আয়শা ঝর্ণা: সমসাময়িক বাংলা কবিতার প্রবণতা আমি এখানো পুরোপুরি ধরতে পারিনি। তবে চেষ্টা করি। নিশ্চয়ই তারা ভাল লিখছেন। অনেকে এর মধ্যে তাদের কবিতার নিজস্ব ঘরানা পাঠকককে উপহার দিয়েছেন। আমি তো রিসারচান কিংবা কবিতা সমলোচক নই। তারাই ভাল বলতে পারেবন। তবে এটা সত্যি তাদের কবিতায় টোটালিটি নেই। আসবে হয়তোবা। ফিলোসফিক্যাল জায়গাটাও পরিষ্কার নয়। আমার হাতে কিংবা সন্মুখে যে কবির কবিতা অাসে পড়ী ভাল না লাগলে জোর করে পড়ি না। কেন পড়বো বরঞ্চ সে সময়ে নিজের কাজে ডুব দেই। দেখুন আমাদের এক জীবনে সময় কম। সে সময়ে যতটুকু নিজের কাজে করা যায় ততই নিজের জন্য ভাল। তারপর তো লীণ হয়ে যাব পৃথিবীর আকাশে বাতাসে মাটিতে। ঘাসফুল হয়ে হয়তো জন্মাবো আবার!

দুপুর মিত্র: সাহিত্য আন্দোলন কি কবিতাকে পরিবর্তন করে?

আয়শা ঝর্ণা: কিছুটা তো করেই। যে কোন আন্দেলনের একটা ইফেক্ট তো থাকেই। তা রাজণীতি থেকে শুরু করে সাহিত্যেও।

দুপুর মিত্র: আপনি কিভাবে কবিতা লিখেন?

আয়শা ঝর্ণা: খুবই অদ্ভুত একটা প্রশ্ন্। আমি প্রথম দিকে যখন কবিতা লিখতে শুরু করি তখন মাথায় মানে মগজের নিউরণে লিখতাম পরে তা কাগজে লিপিবদ্ধ করতাম। প্রথম দিকে কবিতা মাথায় ভুরবুর করতো। একটু ফসরত পেলেই কবিতার চিন্তায় ডুব দিতাম। আর প্রচুর পড়তাম অগ্রজ কবিদের কবিতা, গল্প, সিনেমা, নাটক, পেইন্টিং দেখতাম যা আমাকে আমার নিজের একান্ত সময়ে অনুরণিত করতো..পথে যেতে যেতেই মাথায় আসতো কোন লাইন কিংবা পুরো কবিতাটাই। আমি এক সময় আমার অনেক কবিতা মুখস্থ বলতে পারতাম। এখন আর কাজের চাপে সেভাবে লিখিনা কিংবা মুখস্থ বলতে পারি না। এখনো ভাবতে ভাবতে হয়তো কবিতা লেখার ডাইরী নিয়ে বসি তারপর লিখতে থাকি লাইনের পর লাইন। আমি সাধারনত: বানিয়ে বনিয়ে কবিতা কম লিখি যদি না আমাকে কোনকিছু অালোড়িত করে!

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক বিশ্ব কবিতা নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

আয়শা ঝর্ণা: সমসাময়িক বিশ্ব কবিতা ভাল। তবে মনের গভীরে দাগ কাটার মতো কবিতা রচিত হচ্ছে কম। অনেকের কবিতায় চিন্তার গভীরতা আছে, সময়ের প্রতিফলন বৈশ্বিক অস্থিরতা, কোন ফিক্সড ফিরোসফ্যিক্যল ভিউয়ের প্রতি বিশ্বস্ততা না থাকায় কবিতা যেন এলোমেলো ছুটছে। এর মূল কারণ হতে পারে বৈশ্বিক রাজনীতির অস্তিরতা, অথর্নৈতকি মন্দা, মানসিক যোগাযোগহীনতা।

দুপুর মিত্র: আপনার লেখালেখির শুরু কবে থেকে?

আয়শা ঝর্ণা: আমার কবিতা লেখার শুরু নব্বইয়ের এপ্রিল থেকে।

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

আয়শা ঝর্ণা: আমি কেন লিখি..আমি লিখি কারণ আমার লিখতে ভাল লাগে। বাকি সব কাজ শুধু জীবনে টিকে থাকার জন্য আর দশটা লোকের মতো। একটা সুন্দর কবিতা লিখতে পারলে আমার সে দিনটি খুব ভাল যায়্। পৃথিবীটাকে নতুন করে দেখি আমার মতো করে। সে আমি শুধুই আমি অন্য কারো সাথে তার কোন মিল নাই। সে তখন সামাজিক নয়, নিজের কাছে নিজেই অচেনা। আমি শুধু কবিতা লিখি না—অনুবাদ করি, প্রবন্ধ লিখি, ছোট গল্প লিখি..কিছু না কিছু লিখি আমি সব সময়।

দুপুর মিত্র: কবিতা লিখতে আপনার কতটুকু সময় লাগে?

আয়শা ঝর্ণা: কোন কিছু আমার ভাবনার জগতকে আলোড়িত করলে তা মাথায় লেখা হয় পরে কাগজে লিখি, তাই সে কবিতা লিখতে আমার বেশী সময় লাগে না। লাইনের পর লাইন আমি লিখে যাই। আমি কবিতায় কাটাছেড়া কম করি। কিন্তু ভাল না লাগলে আমি কবিতা লিখি না। অন্যকিছু লিখি।

দুপুর মিত্র: আপনি সাধারণত কোথা থেকে কবিতা লেখার বিষয় খুঁজে নেন?

আয়শা ঝর্ণা: কোন ফিক্সড বিষয় নিয়ে আমি কবিতা লিখি না। আমার চারপাশ, আমার ভাবনা, আমার ভাললাগা, কোন দৃশ্য, কোন সিনেমা কিংবা কোন পেইন্টিং অথবা কোন স্মৃতি কিংবা ঘটনা হয়ে ওঠে আমার কবিতার বিষয়। অবাক হবেন যে আমি একটা মৃত তেলাপোকাকে অনেকগুলো পিপড়া ওর এক একটা অংশ খুলে নিয়ে যাচ্ছে তা দেখেই লিখে ফেললাম একটি কবিতা। অথবা পথে যেতে যেতে কোন দৃশ্য, ছোটবেলার কোন স্মৃতি বর্তমানের মিশ্রণে তৈরী এক কবিতা। অনেক ভাবনা, চিত্রকল্প আর অন্তর্গত সুরের মিশ্রণে তৈরী হয় আমার কবিতা।

দুপুর মিত্র: একটি কবিতা লিখতে আপনার কেমন সময় লাগে?

আয়শা ঝর্ণা: আপনি একই প্রশ্ন দু’বার করেছেন। কতটুকু সময় আর কেমন সময় প্রায় কাছাকাছি। তবে মাঝে মাঝে আমার কবিতা লেখার দীর্ঘ এক বিরতি যায়।

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার বলে মনে করেন?

আয়শা ঝর্ণা: কবিতা লেখার জন্য কবির তো কিছু পূর্বব প্রস্তুতি থাকতেই হয়। নাহলে সে লিখবে কেন। প্রথম কথা হোল তার প্রচুর কবিতা পড়ার অভ্যাস থাকতে হবে সেইসাথে কবিতার জন্য ভালবাসা। কবিতার পূর্ব ইতহাস জানা থাকলে ভাল হয়। এরপর আসে শ্ব্দচয়ন, ছন্দ, চিত্রক্ল্প, ক্র্যাফটসম্যানমিপ। আসলে এগুলো পরে একজন কবি লিখতে লিখতেই শিখে নেন। একজন শিশু যেমন হাটি হাটি পা পা করে সোজা হয়ে হাঁটতে শেখে তেমনি একজন কবিও লিখতে লিখতেই তার প্রয়োজনীয় আনুসাঙ্গিক প্রস্ততি সেরে নেয়। আপনাকে ধন্যবাদ।