একটিই বিষয় আমি মেনে নিতে পারি না, সেটা হলো- গিরগিটির চলন অথবা ভণ্ডামি: কাজল চক্রবর্তীর সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Sep 6, 2012 4:18:59 PM

প্রকাশিত বই: আত্রেয়ী, নির্বাচিত রচনাসমগ্র (১ম,২য়,৩য় খণ্ড)

দুপুর মিত্র: জনপ্রিয় সাহিত্য বা কবিতা বলতে কি বোঝায়?

কাজল চক্রবর্তী: কি বোঝায়? উত্তরে চুপ থাকব। আমার বিচারে যেটুকু বুঝি সেটা বলতে হলে বলব, জনপ্রিয়তা বদলায় সমাজ বদলের সঙ্গে সঙ্গে। বর্তমানে সারা পৃথিবীতেই কবিতার জনপ্রিয়তা এবং কবিদের জনপ্রিয়তা শূন্য। সেখানে জনপ্রিয় সাহিত্য বা কবিতার কোন অবস্থান আছে বলে বিশ্বাস করি না। অথবা বলা যায় প্রমাণযোগ্য বিশ্বাসযোগ্যতা আমার নেই।

দু: আপনার মতে কবিতা লিখতে হরে কোন বিষয়গুলো মানা উচিত?

কা: একটা চড়ুই পাখির ফুড়ুত করে উড়ে যাওয়া অথবা একটা চড়ুই পাখিকে চিলের ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে যাওয়া - দুটো বিষয়ই কবিতার বিষয় হতে পারে। আমার বিশ্বাস যে কোন বিষয়ের ওপরেই কবিতা লেখা যায়- যদি তা ইন্দ্রিয়কে নাড়া দেয়। সেখানে আমি একটা জিনিস মানি সেটা হলো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নান্দনিকতা।

দু: সমসাময়িক কাদের লেখা ভাল লাগে এবং কেন?

কা: ভালোলাগা বিষয়টা আপেক্ষিক। নির্দিষ্ট কারো নাম বলা যাবে না। আমার ভালোলাগার আয়তক্ষেত্রটি (বর্গক্ষেত্র নয়) ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নান্দনিকতাকে ছুঁয়ে যাওয়া সকলের লেখাই ভালো লাগে। আর বর্গক্ষেত্র হলে বলব চারপাশের বন্ধুদের ভেতরে আবু হাসান শাহরিয়ার, নাসির আহমেদ আর কুমার চক্রবর্তীর পাশাপাশি এখানকার সৈয়দ হাসমত জালাল, সংযম পাল ও চৈতালী চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা।

দু: পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কবিতার মূল ফারাক কোনগুলো এবং কেন?

কা: ভারতের অঙ্গরাজ্য ও স্বাধীন রাষ্ট্রের ভেতরে যতটুকু ফারাক ঠিক ততটুকু ফারাকই রয়েছে দু'বাংলার কবিতায়।

দু: সাম্প্রতিক সাহিত্য চর্চার কোন বিষয়গুলো আপনি মেনে নিতে পারেন না এবং কেন?

কা: একটিই বিষয় আমি মেনে নিতে পারি না। সেটা হলো- গিরগিটির চলন, অথবা ভণ্ডামি। কেন পারি না? নিজে বিশ্বস্ত নই বলে।

দু: গল্প লেখার দৈন্যতার কথা বললে আপনি কোন বিষয়গুলো টেনে আনবেন?

কা: একটাই বিষয় সেটা হলো গরু। গরুকে গাছে যেমনি তোলা যাবে না, ঠিক সেভাবেই ওটাকে সামনে রেখে ভেদাভেদের ভেদ্যতাকে প্রদীপের আলোয় আনা যাবে না।

দু: আপনার কি মনে কথা সাহিত্যে বাংলা ভাষা অনেক পিছিয়ে আছে? হ্যাঁ হলে কেন না হলে কেন নয়?

কা: একটা সদ্যোজাত শিশুকে দেখে কেউ কি বলতে পারেন, শিশুটি বাবার মত দেখতে, না মায়ের মত? ঠিক এভাবে দেখলে বুঝবেন, শিশুটি নিজের মত দেখতে। একেবারে শিশুদের মতো দেখতে। তাহলে পিছিয়ে বা এগিয়ে থাকার প্রশ্ন করা অনুচিত। অতীতের ইতিহাসকে মান্য করে বর্তমান। তার চলন অব্যাহত। পাশাপাশি এটাও সত্য সে বিচলেন নেই, না হরে পৃথিবীময় ছড়িয়ে থাকা বাঙ্গালির কথ্য ভাষা বোঝা যেত।