অগ্রসরমানতার গান শুনতে পাচ্ছি: উমাপদ করের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Sep 11, 2013 5:44:49 PM

প্রকাশিত কবিতার বই – ঋতুপর্বের নাচ, কয়েক আলোকবর্ষ দূরে, পরিযায়ী চলো, ভাঙা পিয়ানোর পা এবং অপর বসন্ত।

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

উমাপদ কর: হা-হা-হা। এই বয়সে এসেও এই প্রশ্ন। কেন? তাড়নায়, প্রবৃত্তিতে, বাঁচতে হবে তো। পটি পেলে কি ঘুমোই? পটাই। বমি পেলে যতই চাপি না কেন একসময় ফিনকি ফোয়ারা। পিপাসা পেলে জল। শীতে উলেন। এই তো স্বাভাবিক। তো কবিতা পেলে কি করব? কবিতাই। কবিতা করি, লিখি। এইসব।

দুপুর মিত্র: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

উমাপদ কর: সবরকমের, যতরকম সে পারে। চোখে দেখা, কানে শোনা, নাকে গন্ধ, জিভে স্বাদ, ত্বকে স্পর্শ, এসব তো হলই। পরে মগজে শান, ঘষামাজা। চিন্তা চেতনাকে লাই দিয়ে প্রসারিত করা। কবিতার মধ্যে যাপন। তাই বলে সমাজ, মানুষ, নিসর্গ এসব বাদ দিয়ে নয়। আর একদম নিজস্ব কিছু তো থাকতেই হবে।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

উমাপদ কর: প্রায় সবারই। কোনো নাম নয়। যাঁরা জীর্ণ প্রচলকে বাদ দিতে পারে এবং সেই প্রক্রিয়ায় থেকে কবিতা করতে পারে তাদের কবিতা বেশি ভাল লাগে। আবার যাঁরা গড্ডল ধারাবাহিকতার মধ্যেও কিছু অন্যরকম কাজ করেন, বাঁক খাওয়ান, এবং নিজেকে স্বতন্ত্র করতে পারেন তাদের কবিতাও আমার ভাল লাগে।

দুপুর মিত্র: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

উমাপদ কর: আগেই বলে ফেলেছি। যদিও খারাপ কবিতা বলে কিছু হয় না। কবিতা হয়নি এমন বলা যায়। কবিতা না হলে সেটা আলোচনায় আসে না।

দুপুর মিত্র: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

উমাপদ কর: আমার মূল্যায়নে কিছু যাবে আসবে না। আমি সযত্নে এদের খেয়াল করি, পড়ি, ভালোবাসি। এরা বর্ষায় ভেজাবে, রোদে শুকোবে। মজা পাই /পাব বেশ। অগ্রসরমানতার গান শুনতে পাচ্ছি। সম্ভাবনায় ভরপুর। আবার এরইমধ্যে একদল দেখছি, যা সবকালেই থাকে, গতি ও প্রযুক্তির যুগ বলে হয়ত একটু বেশি, খুব তাড়াতাড়ি শর্টকাটে প্রচার প্রসার খ্যাতি যশ পুরস্কার এসব চাইছে। চাওয়া অন্যায় নয়। তবে এরকম চিন্তাভাবনা নিয়ে কতদূর যাবে তার কোনো ধারনা আমার নেই। আশা নিয়েই অপেক্ষায় থাকি।

দুপুর মিত্র: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

উমাপদ কর: ফারাকটা কোথায় দেখলে তুমি? স্থানিকতার একটা দিক তো থাকেই। তা বাদ দিলে রইল কাঁটাতার। কিন্তু ভাষা যে এক। নির্মাণ কৌশলও প্রায় লাগোয়া। রইল আবেগ চিন্তা-চেতনা আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদি। এ সময়ে প্রায় একই ধরনের প্রয়াস দেখা যাচ্ছে দুই স্থানিকতায়। দেখ ভাই, বাংলাদেশের সাহিত্য আমি যে প্রায় সর্বাংশে পড়ে ফেলেছি,তা নয়। যতটুকু পড়েছি বা বুঝেছি তার ভিত্তিতে বলা। ভুল হতেও পারে।

দুপুর মিত্র: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

উমাপদ কর: বিশেষ কী আর দেবে? সাহিত্যকে কিছুটা সহজে পাঠকের দরবারে হাজির করতে পারছে। তাতে সাহিত্যের কী? প্রশ্নটাই আমার কাছে সহজ নয়।

দুপুর মিত্র: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

উমাপদ কর: ব্লগ ও ওয়েবও তো লিটিলম্যাগ হতে পারে। লিটিলম্যাগ তো চরিত্রে। বল, প্রিন্ট মিডিয়া আর স্ক্রিন মিডিয়া। প্রযুক্তি তো ক্রম অগ্রসরমান। কে কার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে তা বলবে কাল। ঠিক এই মুহূর্তে আমার কাছে উভয়ই সমগুরুত্বপূর্ণ।

দুপুর মিত্র: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

উমাপদ কর: বোগাস। পড়া যায় না। চর্বিত-চর্বন। আসলে সাহিত্যিক তো সেখানে নিজে ঠিক করেন না তিনি কি লিখবেন। পাঠকের চাহিদার স্ট্যাটিকটিক্স নিয়ে লেখা হয় ও ছাপানো হয়। কী আর হবে?