পত্র-পত্রিকায় লেখা ছাপানোর জন্য অধৈর্য্য হয়ে পড়লে চলে না: শাহীন আখতারের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: Feb 19, 2014 6:35:18 PM

প্রকাশিত বই: পালাবার পথ নেই,  তালাশ, সখী রঙ্গমালা, ময়ূর সিংহাসন, বোনের সঙ্গে অমর লোকে,  আবারও প্রেম আসছে, শ্রীমতির জীবনদর্শন।

দুপুর মিত্র: আপনি কবে থেকে লেখালেখি শুরু করেছেন?

শাহীন আখতার: আমি নিয়মিত লিখছি নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে। স্কুল-কলেজে পড়ার সময় লিখেছি অল্প-স্বল্প।

দুপুর মিত্র: আপনার সবচেয়ে সফল কাজ কোনটা?

শাহীন আখতার: সফল যদি অধিক সংখ্যক বই বিক্রি বা পাঠক দিয়ে বিবেচিত হয়, তাহলে আমার সফল বই ‘তালাশ’। আমার একমাত্র বই যার জন্য আমি পুরস্কৃতও হয়েছিলাম।

 

দুপুর মিত্র: উপন্যাস লেখায় আপনি সুনির্দিষ্টভাবে কোন সমস্যায় বেশি পড়েন?

শাহীন আখতার: উপন্যাস লেখার জন্য নিরবচ্ছিন্ন সময় দরকার - চাকরি করি বলে, যা আমার নেই। আরও অনেক সমস্যা আছে। এক কথায় বললে এটা বড় সমস্যা।

 

দুপুর মিত্র: লেখার সময় আপনি কি শিডিউল করেন?

শাহীন আখতার: সে রকম কোনো সিডিউল করি না। তবে প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু লিখি।

 

দুপুর মিত্র: আপনি কি কম্পিউটারে লিখেন?

শাহীন আখতার: কম্পিউটারে লিখি।

 

দুপুর মিত্র: গল্প আর উপন্যাসের ভেতর আপনার পছন্দ কোনটাতে বেশি?

শাহীন আখতার: আজকাল উপন্যাস লিখতেই মনে হয় বেশি পছন্দ করি। এ মাধ্যমে নিরীক্ষাটা একটু বেশি করছি। ভাষা, আঙ্গিক, বিষয় - সব দিক থেকেই।

 

দুপুর মিত্র: উপন্যাস লেখার সাথে ধৈর্য্যের সম্পর্ক আছে কি?

শাহীন আখতার: উপন্যাস লেখার সঙ্গে ধৈর্য্যের সম্পর্ক আছে মনে হয়। বিশেষ করে পত্র-পত্রিকায় লেখা ছাপানোর জন্য অধৈর্য্য হয়ে পড়লে চলে না। সাহিত্য সম্পাদকরা উত্ত্যক্ত করলেও না। নিবিষ্ট হয়ে লেখার জন্য এটা জরুরি।

 

দুপুর মিত্র: লেখার আগে কি আপনি আউটলাইন করেন?

শাহীন আখতার: একটা ছকের মতো করি। একটা ভার্চুয়াল ম্যাপের মতো দাঁড় করাই -ঘরবাড়ি, চরিত্রগুলোর গতিবিধি ইত্যাদির।

 

দুপুর মিত্র: আপনার গদ্যশৈলী কি আলাদা? কিভাবে এটা আলাদা?

শাহীন আখতার: আমার গদ্যশৈলী কিছুটা আলাদা মনে হয়। হালে হচ্ছে - সখী রঙ্গমালা ও ময়ূর সিংহাসনে। সখী রঙ্গমালায় আমাদের লোকগানের আমেজ আনতে চেয়েছি। শব্দ, উপমা, বাক্যগঠনে এর কিছু আলামত আছে। ময়ূর সিংহাসনে - মোগলদের লেখাপত্র পড়ে ওদের কথা বলার ভঙ্গি কিছুটা রপ্ত করে রিপ্রডিউজ করার চেষ্টা করেছি। তবে বাক্যালঙ্কার পরিহার করেছি যতটা সম্ভব। এ ব্যাপারে পাঠক আরও ভালো বলতে পারবেন।

 

দুপুর মিত্র: নিজের কোন কাজটির জন্য খুব তৃপ্ত বোধ করেন?

শাহীন আখতার: আপাতত ময়ূর সিংহাসন লেখে কিছুটা তৃপ্তিবোধ করছি। দীরঘ সময় নিয়ে লিখেছি। রিরাইট করেছি, শল্যচিকিৎসকের মতো কাটা-ছেঁড়া করেছি, যাতে আমার যতখানি সামর্থ, পুরোটারই প্রতিফলন ঘটে এখানে।

 

দুপুর মিত্র: আপনি কি বিশেষ কোনও পাঠককে সামনে রেখে লিখেন না বিশেষ অডিয়েন্সকে?

শাহীন আখতার: আমি ভাবি, যারা বাংলা পড়তে জানেন, সবাই আমার লেখা পড়বেন।

 

দুপুর মিত্র: সাহিত্যের কি সামাজিক বাধ্যবাধকতা আছে? এ নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

শাহীন আখতার: আপাতদৃষ্টিতে থাকতে পারে আবার নাও পারে। সামাজিক দায়বদ্ধতা মোটাদাগের বিষয় নয়। একটা ভালো লেখা থেকে সমাজ নানাভাবে উপকৃত হয়।

 

দুপুর মিত্র: আপনার লেখার কক্ষ নিয়ে কিছু বলুন?

শাহীন আখতার: আমার লেখার কক্ষটি বেশ খোলামেলা। কক্ষসংলগ্ন বারান্দা আছে। বড় দুটি জানালা আছে। তবে কম্পিউটারের সামনে বসলে বাইরের দৃশ্য অদৃশ্য হয়ে যায়।

 

দুপুর মিত্র: আপনি কি বেশি পড়া পছন্দ করেন?

শাহীন আখতার: ছোটবেলা থেকেই আমি বইয়ের পোকা। পড়তে ভালো লাগে। বই পড়তে পড়তে ঘুমাই।

 

দুপুর মিত্র: আপনি কি গল্প খুব দ্রুত শেষ করতে পছন্দ করেন?

শাহীন আখতার: আপশোস, আমার গল্প দ্রুত শেষ হয় না। আগে হতো।

 

দুপুর মিত্র: উপন্যাস লিখতে আপনি সাধারণত কতটুকু সময় নেন?

শাহীন আখতার: উপন্যাস লিখতে বিস্তর সময় নিই। কয়েক বছর। অথচ আমার প্রথম উপন্যাস ‘পালাবার পথ নেই’ পাঁচ-ছ মাসে লিখেছিলাম।

 

দুপুর মিত্র: আপনি সাধারণত কোনও গল্প বা উপন্যাসের কিভাবে শুরু করতে জোর দেন? চরিত্র না বাক্যকে? না কোনও ডায়ালগকে?

শাহীন আখতার: বাক্যের ওপর সাধারণত জোর দেই। এমনও হয়েছে একটা ডায়লগ দিয়ে গল্প শুরু করেছি।

 

দুপুর মিত্র: লেখে ফেলার পর কি আপনার কখনও এমন হয়েছে যে পুরো লেখাই মানে গল্প বা উপন্যাসকে আপনাকে নতুন করে লিখতে হয়েছে?

শাহীন আখতার: না, গল্প বা উপন্যাস লিখে ফেলার পর পুরোটা নতুন করে লিখতে হয়েছে - এমন কখনো হয়নি। লেখার মাঝপথেই আমি বদলাই বা লেখার ফাঁকে ফাঁকে। রাতে হয়তো লিখলাম। দুপুরে অফিস থেকে ফিরে কম্পিউটার খুলে লেখাটা ভালো লাগলো না। বাদ দিয়ে নতুন করে আবার শুরু করলাম।

 

দুপুর মিত্র: লেখার আগে আপনি কি সমাপ্তি ঠিক করে রাখেন?

শাহীন আখতার: শেষটা কীভাবে হবে, বেশিরভাগ সময়ই তা জানা থাকে না। সখী রঙ্গমালার ক্ষেত্রে শেষটা আমার জানা ছিল। ময়ূর সিংহাসনের শেষ পৃষ্ঠাটা মাথায় আসে একেবারে শেষ মূহুর্তে । এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উপন্যাসের বেশ কিছু অংশ আমাকে বদলাতে হয়েছে।

 

দুপুর মিত্র: লেখালেখিকে কি সংগ্রাম মনে হয় আপনার?

শাহীন আখতার: শুরু করাটা বেশ কষ্টের। এলোমেলো ড্রাফট। তারপর কাহিনিতে ঢুকে গেলে, এর সঙ্গে মিশে যাই - বিশেষত উপন্যাসের বেলায়। তখন লেখা থেকে দূরে থাকাটাই কষ্টের মনে হয়। ঘোরলাগা ভাবটা তখন বেশ উপভোগ করি। তখন প্রাত্যহিক সমস্যাগুলো দিব্যি এড়িয়ে চলা যায়।

 

দুপুর মিত্র: লেখার পর আপনি সাধারণত কোন বন্ধুর সাথে শেয়ার করেন?

শাহীন আখতার: লেখার বিভিন্ন পর্যায়ে শেয়ার করার ইচ্ছা হয়। মুখে মুখে বলিও সুযোগ পেলে নানাজনকে। যারা আমার বন্ধু এবং বইয়ের পাঠক।