ডায়াস্পোরা হল সোনার পাথরবাটি: কবি সুবোধ সরকারের সাথে একান্ত অনলাইন আলাপ

Post date: Apr 28, 2012 6:45:44 AM

কবি সুবোধ সরকার। ২০০০ সালে তিনি পেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার। বেরিয়েছে কবিতা (১৯৭৮-৮০), একা নরকগামী (১৯৮৮), রাজনীতি করবেন না (১৯৯৭), ভালো জায়গাটা কোথায় (২০০১), জেরুজালেম থেকে মেদিনীপুর (২০০১), সব রাস্তা রোমে যায় না (২০০১), কাল্লু (২০০৩), মণিপুরের মা (২০০৫), যা উপনিষদ তাই কোরাণ (২০০৬), প্রতিবাদের কবিতা (২০০৭), Route Map 25 সহ ২০ টিরও বেশি কাব্যগ্রন্থ। তাঁর স্ত্রী, কবি মল্লিকা সেনগুপ্তর সাথে যৌথভাবে প্রকাশিত করেছেন কাব্যগ্রন্থ "সুবোধ মল্লিকা স্কোয়ার"। তার জন্ম পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। সাহিত্যের নানা বিষয় নিয়ে একান্ত অনলাইন আলাপে বসেছিলাম আমরা। সেই আলাপ পাঠকের সামনে আনতে পেরে আমি আনন্দিত।

দুপুর মিত্র: মানুষ কি কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে কবিতা লিখা শুরু করে ?

সুবোধ সরকার: না, একটা ছেলে যখন ক্রিকেট ব্যাট হাতে তুলে নেয়, সে কি ভাবে? ভাবে, দেখিনা একটু খেলে। তবে অনেকেই ভাবে আমি শচিন হব।

দু: এই ক্ষেত্রে বাংলা কবিতার শচিন হিসেবে কাদেরকে আপনি মনে করেন?

সু: সবাই।

দু: কী বললেন, বিশ্বায়ন? আপনার এই কবিতাটি আমার খুব প্রিয়। এর প্রেক্ষিত নিয়ে কিছু বলবেন?

সু: কোন কবিতা?

দু: আমি আমেরিকায় গিয়ে শুনে এলাম

লোকে ওখানেও বলছে:

দিনকাল যা পড়েছে

তুমি তোমার খাবারের কাছে ঠিক সময়ে

পৌঁছতে না পারলে

অন্য একজন পৌঁছে যাবে।

সু: মন্দার বাজার নিয়ে লেখা। তবে যে কোনও দেশের ক্ষেত্রই হতে পারে।

দু: বিশ্বায়নের অর্থনীতি আর বিশ্বায়নের সংস্কৃতি বা ডায়াস্পোরা নিয়ে ইদানিং যেসব কথা হচ্ছে সেসব ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি?

সু: এটা বিরাট প্রশ্ন। উত্তর দিতে গেলে রাত হয়ে যাবে। ক্ষিদে-তৃষ্ণা আছে তো।

দু: হা হা হা না সংক্ষেপে

সু: সোনা মানে আমেরিকা। ওরাই তো লেখক। আমরা আবার লেখক নাকি? আরে ওদের কথা ছাড়। পাথর মানে ইন্ডিয়া। ডায়াস্পোরা হল সোনার পাথর বাটি।

দু: অনেক সুন্দর বলেছেন দাদা। আপনার তো ২০ টির উপরে বই প্রকাশিত হয়েছে। তার সবগুলই কবিতা। তারমানে কবিতাকেই আপনি বেশি পছন্দ করেন। এর কারণ যদি কেউ জানতে চায় তাহলে কি বলবেন?

সু: আমি উপন্যাস লিখিনি। কবিদের উপন্যাস হয় না। একমাত্র ব্যতিক্রম সুনীলদা।

দু: কবিদের উপন্যাস হয় না। নিশ্চয়ই এতে কোনও কারণ আছে। সেটা কি বলবেন?

সু: উপন্যাসকে উপন্যাস হতে হয়। ন্যাকামি চলে না।

দু: আপনি প্রায় ১৫ বছরে ধরে ভাষানগর পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। এই দীর্ঘ সম্পাদনার অভিজ্ঞতা থেকে আপনার কি মনে হয়, পত্রিকা কবিতার জন্য বিশেষ কিছু করে?

সু: সিন্স ১৯৮৯। ভাষানগরের বয়স হল ২৩। কবিতার পত্রিকা করেছিলাম। এবং এখনও করি কবিদের জন্য। ওদের লেখার জায়গা চাই। আর এছাড়া একটা উত্তেজনা আছে। রাত্রি জাগরণ আছে। লড়াই আছে। মান্যের মতকে সম্মান করতে হয়। এগুলো শেখা যায়। অন্যের মতও।

দু: দু:খিত । আমি পত্রিকার সময়টা ভুল বলেছি। সাহিত্য কি কোনও ইজম দ্বারা তাড়িত হয় বা নতুন সাহিত্য সৃষ্টিতে ইজমের গুরুত্ব আছে বলে মনে করেন কি? বা ধরুণ মার্কসবাদী সাহিত্য এরকম করে আলাদা ভাবে সাহিত্য চর্চার দরকার আছে বলে মনে করেন কি?

সু: তবে বার বার বন্ধ হয়ে গেছে। আবার বেরুচ্ছে। এবার আর বন্ধ হবে না।

দু: আচ্ছা । সাহিত্য কি কোনও ইজম দ্বারা তাড়িত হয় বা নতুন সাহিত্য সৃষ্টিতে ইজমের গুরুত্ব আছে বলে মনে করেন কি? বা ধরুণ মার্কসবাদী সাহিত্য এরকম করে আলাদা ভাবে সাহিত্য চর্চার দরকার আছে বলে মনে করেন কি?

সু: না , আমি করি না। আমি করি না। আমি করি না।

তিনবার বললাম। কিন্তু কে আমার কথা শুনবে। ইজমের দাপটে যা বেড়ে চলেছে তাতে প্রাণটা যায় যায় করে। ওগুলো ক্লাসরুমে ভাল শোনায়। সাহিত্যের পাঠক পাত্তা দেয় না।

দু: ২০০০ সালে আপনি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। পুরস্কার কি সাহিত্যকে কিছু দেয় বলে আপনার মনে হয়েছে?

সু: কি দেয় কি দেয় না আমি জানি না। আমি ওই একটা পুরস্কার পেয়েছিলাম। ১০ হাজার টাকার। তারপর নিন্দা পেয়েছি ফাও হিসেবে। যারা পুরস্কার দেন তারা আমাকে পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য মনে করে না। অনেক গল্প আছে, সেগুলো বলার এখনও সময় আসে নি।

দু: একটা গল্প বলা যাবে কি?

সু: না।

দু: সাম্প্রতিক কবিতা চর্চা বা কবিতা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

সু: কিভাবে মূল্যায়ন করে? কেউ শুনে না। সবাই এখন লেখক হয়ে গেছে। যাগ্যে যাগ্যে। যে যার মত লিখে যাক। ভাল থাকুক। পয়সা করুক। ফ্ল্যাট কিনুক। গাড়ি কিনুক।

দু: কবিতা- শিল্প - সাহিত্যের সঙ্গে একটা বড় ধরণের ভোগের যোগাযোগ ঘটে গেছে। বোঝা যাচ্ছে। এটা নিশ্চয়ই সাহিত্যের জন্য ক্ষতিকর?

সু: ঠিক বুঝলাম না।

দু: না মানে আমি বলছিলাম বুর্জোয়া সভ্যতা পর্নো সংস্কৃতিতে ইনভেস্ট করে বেশি । কারণ ওখানে টাকা আছে? কবিতাও কি তাহলে সেদিকে যাচ্ছে?

সু: সেটা কি করে হবে? সেটা যদি কোনোদিন হয়, তবে বুঝব। সকলের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সকলের তো আর মাথার খারাপ হতে পারে না।

দু: মল্লিকা দির এই কবিতাটি আমার খুব প্রিয়। উনার সম্পর্কে কিছু বলবেন? ছড়া যে বানিয়েছিল, কাঁথা বুনেছিল

দ্রাবিড় যে মেয়ে এসে গমবোনা শুরু করেছিল

আর্যপুরুষের ক্ষেতে, যে লালন করেছিল শিশু

সে যদি শ্রমিক নয়, শ্রম কাকে বলে ?

সু: কবিতাটা আসলে একটা প্রশ্ন। প্রশ্নটা মল্লিকা ওই দাদুটিকে করেছিল। প্রশ্নটা ওর আগে কবিতায় আর কেউ করে নি। প্রশ্নটা হল। মেয়েরা কি বিপ্লবীদের সেবাদাসী হবে?

দু: হুম। আমি এই কবিতাটি আমার অনেক কমরেড বান্ধবীদের পড়ে শুনিয়েছি। সত্যি এ কবিতা আসাধারণ একটা জায়গাকে সামনে আনে। কবিতার বিষয় বৈচিত্র্য নিয়ে আপনার কি মনে হয়। মানে কোন বিষয়ের উপর কবিতা লেখা বেশি প্রয়োজন ছিল কিন্তু তা আদৌ হয়। বা কম হচ্ছে।

সু: এটা বলা যাবে না। যার যা খুশি তাকে সেটাই লেখতে দাও।

দু: সুনীল দা আপনাদের সময়কার কবি বন্ধুদের নিয়ে কিছু বলবেন যা আমাদের জন্য শিক্ষনীয়। বা যেখান থেকে আমাদের সাবধান হওয়া দরকার।

সু: সেটা আমি কি করে বলি?

দু: তরুণ কবিদের ব্যাপারে আপনি কিছু বলতে ইচ্ছুক?

সু: না। ওরা শুধু শুনতে চায়। বলতে চায় না। এটাও একটা ছোট্র পলিটিক্স।

দু: কেমন ?

সু: x এর কথা বললে যদি y রাগ করে।

দু: কেউ রাগ করবে না। বলেন দাদা।

সু: xyz সবাই ভাল লিখছে।

দু: হাহাহা