দাদা ধরিনি কখনো: কবি সুবীর সরকারের সাথে অনলাইন আলাপ

Post date: May 31, 2012 5:23:41 AM

সুবীর সরকার

জন্ম- ০৩/০১/১৯৭০

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ- যাপনচিত্র/বরফবিষয়ক সেমিনার/শোক ও শ্লোকের দিনলিপি/কান্নাবিষয়ক ২৪ রিল/টাইগার প্রোজেক্ট/বিনোদন বিচিত্রা/জ্যোৎস্নাগিটার/চর্যাপদের হরিণ

প্রকাশিত গদ্যগ্রন্থ-- শোলোকগাথা/এপিটাফের চূড়ান্ত পর্ব

সন্মান -- কবিতা পাক্ষিক সন্মান/যুবনাশ্ব পুরষ্কার/বিবৃতি সম্মান

দুপুর মিত্র: আপনি কেন কবিতা লিখেন?

সুবীর সরকার: কবিতা আমার স্বপ্ন,অস্তিত্ব,যাপন। এক ধরনের ট্রমা। আত্মপ্রকাশের সুপুরিবাগান। কবিতা না লিখে আমার আর কোনো উপায় নেই।

দু: উত্তরবাংলার কবিরা আপনাকে কেন পছন্দ করে না?

সু: সেটা ঠিক বলতে পারবো না। তবে আমি বাংলাভাষার কবি। ব্যাকরণে আটকে থাকিনি। সভা সমিতি আলো মাইক এড়িয়ে চলি। দাদা ধরিনি কখনো। নিজস্ব লেখাপড়া হাটগঞ্জলোকায়তের ভিতর আমার নিমজ্জন। তাই উত্তরবাংলায় আমি হয়তো বেমানান। তবে তরুণেরা আমার আলো ও আত্মীয়।

দু: লোকায়ত গান সংকলন নিয়ে আপনি কাজ করছিলেন বলে শুনেছি। এ নিয়ে কিছু জানাতে চান?

সু: আমি নিম্নবর্গীয় জনমানুষের ভিতর অন্তহীন ঘুরে বেড়াই।লোকাচার লোকগানে হাটফেরত মানুষের একা একা বাড়ি ফেরা আবহমানের কবরখানা আমাকে জীবনের ভিতর লিপ্ত হতে তাড়িত করেছে।এই বিষয়গুলি নিয়ে আমার গদ্য বই-- শোলোকগাথা,কবিতীর্থ প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে।

দু: তিরিশের দশক বাংলা কবিতার আত্মহত্যার দশক। ইউরোপীয় আধুনিকতার অন্ধ অনুকরণ এই দশক দিয়েই শুরু হয়। আপনার কি এরকম মনে হয়?

সু: হ্যাঁ,আমি আপনার সাথে একমত।তেমন না হলে বাংলা কবিতা অনেক আগেই সাবালক হতো।

দু: কলকাতায় বাংলা সাহিত্য বেঁচে থাকবে বলে মনে করেন কি?

সু: কলকাতা হল সামন্তপ্রভুদের রাজসভা।আমার তাতে আগ্রহ নেই।সামন্ত তন্ত্র কখনো টেকে কি ?কবিতা বরাবরই মফস্বল দিয়ে ঘেরা এক অনবদ্য বিবাহবাজনা।

দু: মফস্বলের কবিতা আর নগরের কবিতা বলে আলাদা করে কিছু আছে কি? থাকলে তা কেমন?

সু: কবিতা কবিতাই।শহর-মফস্বল আবার কেন!জীবনানন্দ রুপসী বাংলা লিখেছিলেন আবার বেলা অবেলা কালবেলাও তো লিখেছিলেন।আসল সত্য হচ্ছে কবির দেখার চোখ ও গভীরতর বোধ।

দু: কবিতা লেখার জন্য একজন কবির কি ধরণের প্রস্তুতি দরকার?

সু: কবি যতই অগোছালো,এলোমেলো যাপনেই থাকুন না কেন কবির একটা সচেতন প্রস্তুতি প্রযোজন। পড়তে হবে,হাটগঞ্জে তুমুল ঘুরেবেড়াতে হবে,মানুষ দেখতে হবে।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার ভাল লাগে এবং কেন?

সু: আমি দশকে বিশ্বাসী না হয়েও বলি,আমি ৯ দশকের কবি।আমার সমসাময়িক অনেক কবিই আমাকে আলোকিত করেছেন।তার মধ্যে কয়েকজন _____ বিভাস রায় চৌধুরী, অংশুমান কর, আবীর সিংহ, প্রদীপ কর, অনিন্দিতা গুপ্ত রায়, যশোধরা রায় চৌধুরী, বিপ্লব চৌধুরী, রাজর্ষি চট্টোপাধ্যয়, সাম্যব্রত জোয়ারদার, সুমন গুণ, সুদীপ্ত মাজী, রোশনারা মিশ্র, তাপশ কুমার লায়েক । আর বাংলাদেশের মুজিব মেহদী, ওবায়েদ আকাশ, মাসুদার রহমান, আমিনুর ইসলাম, রিষিণ পরিমল, মজনু শাহ, টোকন ঠাকুর, রনজু রাইম, সরকার আমিন।

দু: সমসাময়িক কাদের কবিতাকে আপনার খারাপ লাগে এবং কেন?

সু: এই প্রশ্নের কোন উত্তর বস্তুত আমি খুঁজে পাইনি।

দু: নব্বই ও শূন্য এই দুই দশককে আপনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

সু: ৯০ দশক নিরীক্ষা ধর্মী,লোকজীবনকে উপ্সথাপনার প্রয়াস,প্রান্তের প্রাধান্য আর ০ দশক বহুমাত্রিক,জীবনের উচ্ছাসময় ক্যানভাস,তবে সেভাবে দানা বাঁধেনি।

দু: পশ্চিমবঙ্গের কবিতা আর বাংলাদেশের কবিতার ফারাকটা কোথায়?

সু: পশ্চিমবঙ্গের কবিতাকে ৫২-র ভাষা আন্দোলন,৬৯-র গন আন্দোলন,৭১-র মুক্তি্যুদ্ধ ও সামরিক শাসনের মোকাবিলা করতে হয়নি।আবার বাংলাদেশের কবিতাকেও উদ্বাস্তু সমস্যা,নকশাল আন্দোলন দেখতে হয়নি।তবে ভাষা ও জাতীয়তাবোধ ও আশ্চর্য এক প্রকৃতির ঘোর, জলজলার মায়া, কুপির আলোয় হাটবাজার বাংলাদেশের কবিতাকে স্বাতন্ত্র এনে দিয়েছে।

দু: ব্লগ সাহিত্যকে কি বিশেষ কিছু দিচ্ছে?

সু: ব্লগের আবশ্যিকতা অবশ্যই রয়েছে।ভাষা ও কবিতা চর্চার বিশ্বব্যাপী বিনিময় এতে হয়।

দু: লিটলম্যাগের চাইতে ব্লগ গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয় কি? হলে কেন না হলে কেন নয়?

সু: না না,ব্লগ ও লিটিল ম্যাগাজিন দুটি আলাদা মাধ্যম।লিটিল ম্যাগাজিনের কোন বিকল্পে আমি কখনই আস্থাবান নই।অনেকটা তাৎক্ষনিক ও চিরন্তনতার বিষয়।

দু: দৈনিকে সাম্প্রতিক সাহিত্য বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

সু: ওখানেতো অর্ডারি লেখাপত্তর স্তূপাকারে সঞ্চিত হয়।সাহিত্যের ক্ষতিই করে।তবে আশ্চর্য কিছু লেখা,সামান্য হলেও ওখানে আমরা ব্যাতিক্রমী হলেও পাই।